আদম (আ) এর জীবনী

আদম (আ) এর জীবনী : হযরত আদম (আ) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে একথাটি পরিষ্কার করে দেওয়া প্রয়োজন ইলমগত দিক থেকে মানবের অস্তিত্ব লাভে প্রশ্নটি আজ তর্ক- বিতর্কের একটি নতুন দরজা খুলে দিয়েছে।অর্থাৎ ইরতেকা বা ক্রমবিবর্তনবাদের দাবিকে আদিতে মানব বর্তমান গঠন কাঠামো বা আকার-আকৃতিতে সৃষ্টি হয়নি বরং অস্তিত্বের জগতে বিভিন্ন রূপ অতিক্রম করে সে  বর্তমান রূপ ধারণ করেছে।

কেননা জীবনের উৎসকনা  পদার্থ ও উদ্ভিদের বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ বছর পর্যন্ত ক্রমোন্নতির বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে সর্বপ্রথম লাবনা (পানির জোক)-এর রূপ ধারণ করে।এরপর সেই পরিমাণ দীর্ঘ সময়ে প্রাণীর বিভিন্ন ছোট-বড় ধাপ অতিক্রম করে তা মানবের বর্তমান আকৃতি ধারণ করেছে।অপরদিকে দীন বলে, বিশ্বস্রষ্টা প্রথম  মানব কে আদম আকৃতিতেই সৃষ্টি করেছেন।এরপর হাওয়া আকৃতিতে তারই স্বজাতীয় আর একটি মানবী সৃষ্টি করে পৃথিবীতে মানবের বংশ বিস্তারের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।

আর এরাই হচ্ছে সেই মানব যাদেরকে বিশ্বস্রষ্টা অন্যান্য সৃষ্টির উপর মর্বা প্রদান করেছেন , যাদের উপর তার আমানতের গুরুভার পার অর্পণ করেছেন এবং যাবতীয় সৃষ্টিকে তাদের অনুগত করে খেলাফত বা প্রতিনিধিদের মর্তবা দ্বারা তাদেরকে সম্মানিত করেছেন।

অর্থাৎ আমি তো সৃষ্টি করেছি মানুষকে শ্রেষ্ঠতম চেহারায়। (সুরা ত্বীন , আয়াতঃ৪)

অর্থাৎ আমি তো আদম সন্তানকে (যাবতীয় সৃষ্টির উপর) মর্তবা দান করেছি। (সূরা: বানী ইসলাঈল , আয়াত ঃ৭০)

অর্থাৎঃ নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি সৃষ্টি করছি।(সূরা: বাকারাহ.আয়াত : ৩০)

অর্থাৎঃ  আমি তো আকাশ পৃথিবী ও পর্বতমালার প্রতি এই আমানত অর্পণ করতে চেয়েছিলাম। তারা ভয়ে বহন করতে অস্বীকার করল, কিন্তু মানব তা বহন করলো। নিশ্চয়ই মানুষ  অনাচারী এবং ও অতিশয় অজ্ঞ।( সূরা আহযাব,  আয়াত  ঃ৭২)

এখন প্রশ্ন, বিবর্তনবাদ ও দীনের মধ্যে এই সংঘাত চিরদিন অবশিষ্ট থাকবে না দুই মতে মধ্যে একটা সম্মিলন ঘটানো যাবে -বিশেষ করে যখন জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা এ বিষয়টি পরিষ্কার করে দিয়েছে দ্বীনী ইলম ও সাধারণ জ্ঞানের মধ্যে প্রকৃত পক্ষে কোনো সংঘাত নেই। আর কোথাও বাহ্যিক দৃষ্টিতে এমনটি দৃষ্টিগোচর হলেও তা সাধারন জ্ঞানের কোন না কোন দিক আবৃত থাকার কারণেই হয়ে থাকে।কেননা ,বহুক্ষেত্রে দেখা গেছে যখনই  জ্ঞানের আবৃত দিকটি উন্মোচিত হয়েছে তখনই  দীন ও ইলমের সংঘাত বিদূরিত হয়েছে এবং হুবহু সেই বিষয়টি উজ্জ্বল রূপে প্রতিভার হয়েছে যার উল্লেখ অহীয়ে  ইলাতীতে   (আল্লাহর বাণীতে) রয়েছে।

অপর কথায় বলতে গেলে সাধারণ ইলম ও দীনের মধ্যে যখনই কোন সংঘাত দেখা দিয়েছে তখনই সাধারণ ইলমকে পিঠাটান দিয়েছে এবং অহীয়ে হলাহির মীমাংসাই শেষ পর্যন্ত অটুট রয়েছে।এই প্রেক্ষিতে এখানেও স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠে, তবে এ বিষয়ের মীমাংসা কি এবং তা কিভাবে?

উত্তর হল, এখানেও সাধারণ ইলম (বিবর্তনবান) এবং দীনের মধ্যে কোন সংঘাত নেই।

যেহেতু বিষয়টি খুব সূক্ষ্ম এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যার দাবিদার, তাই এখানে এর আলোচনা সম্ভব নয়। অবশ্য এই গন্থের অন্য কোনো কোথাও এ সর্ম্পকে আলোচনা করা হবে।

তবে এখানে একটি বিষয় অবশ্য স্মরণ রাখা উচিত প্রথম মানব (মানব জাতির আদি পিতা আদম ) চাই বিবর্তনবাদের থিওরী অনুযায়ী স্তরে স্তরে মানব আকার ধারণ করুন কিংবা সৃষ্টির আদিকালেই তিনি মানবরূপে আবির্ভূত হন-সাধারণ ইলম এবং দীন উভয়ই এ ব্যাপারে একমত বর্তমান মানবই সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।আর বুদ্ধি ও বিবেকের এই প্রতিমাকে তার যাবতীয় কাজ-কর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে এবং তাকে নির্দিষ্ট বিধি-বিধানও মেনে চলতে হবে।

সংক্ষেপে বলতে গেলে, মানব কিভাবে সৃষ্টি হল, অথবা কিভাবে অস্তিত্বে এল-এসব প্রশ্ন অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে এ বিশ্বে মানবের আবির্ভাব কি কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই হয়েছে? নাকি তাদের অস্তিত্বের পিছনে কোন মহৎ লক্ষ্য রয়েছে? তাদের কথাবার্তা এবং কাজ-কর্মের কি কোন প্রভাব প্রতিক্রিয়া নেই? তার দৈহিক ও আত্মিক মর্তবা কি কোন গুরুত্ব বহন করে না? নাতি তার ইলম ও প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণতার জীবন কি নিজের মধ্যে কোন গভীর তত্ব বহন করে? তার অতীত ও বর্তমান কি ভবিষ্যতের সাথে সম্পূর্ণ সম্পর্কহীন? নাকি ভবিষ্যতের সাথে অতীত ও বর্তমানের নিবিড় সর্ম্পক রয়েছে?

যদি এ সমস্ত উত্তর নেতিবাচক না হয়ে ইতিবাচক হয় তবে তো স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিতে হবে মানবের সৃষ্টি নিয়ে বাকবিতন্ডা না করে তার অস্তিত্বের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কেই চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। আর শেষ পর্যন্ত একথা মেনে নিতেই হবে এই সেরা সৃষ্টির অস্তিত্ব নিঃসন্দেহে একটি বিরাট লক্ষ্যের ইংগিতবাহী। আর এ হেতুই তার চারিত্রিক মর্তবা নির্ধারক একটি মাসালে আলা (সর্বশ্রেষ্ঠ ) অবশ্যই থাকা চাই এবং তার সৃষ্টিরও একটি উদ্দেশ্য থাকা চাই।‘

    এ হেতুই পবিত্র কুরআন, মহান সৃষ্টি মানবের ইতিবাচক নেতিবাচক উভয় দিক ব্যাখ্যা করে তার অস্তিত্বের মহাত্ম ঘোষণা করেছে এবং বলেছে, বিশ্বস্রষ্টার যাবতীয় সৃষ্টির মধ্যে মানুষের সৃষ্টি হচ্ছে শ্রেষ্ঠতম চেহারায়। এজন্য সে সৃষ্টি জগতে সর্বাধিক সম্মান ও মর্তবার  প্রেক্ষিতে নিঃসন্দেহে আল্লাহর আমানতের পতাকাবাহী ‘খলীফাতুল্লাহ (আল্লাহর প্রতিনিধি) পদে সমাসীন হওয়ার যোগ্য। আর যখন এত বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে সন্নিবেশিত করা হয়েছে তখন এটা কি করে সম্ভব কোন উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য ছাড়াই সে অস্তিস্ব লাভ করেছে?

    অর্থাৎ “মানব কি মনে করে তাকে এমনি ছেড়ে দেয়া হবে। (সূরা ঃ ক্বিয়ামাহ, আয়াত ঃ ৩৬)

বরং যুক্তি এ বলে বুদ্ধি –বিবেকের এই প্রতিমাকে সম্স্ত সৃষ্টি থেকে বাছাই করে পাপ-পুণ্য নির্ধারণের অনুভূতি শক্তি (তাকে) প্রদান করা হোক এবং নেকী করার এবং বদী থেকে বেচেঁ থাকার দায়িত্বভার তার উপর ন্যস্ত করা হোক।

    অর্থাৎ ঃ অতপর আমি কি তাকে (মানবকে ) দুইটি পথ (নেকী বদী ও পুণ্যের ) দেখাই নাই?“ (সূরা ঃ বালাদ, আয়াত ঃ১০)

মোটকথা কুরআনের দাওয়াত ও আহবান, নির্দেশ ও নিষেধ পথ প্রদর্শন ও হেদায়েতের লক্ষ্যবস্তু  হচ্ছে শুধু এই সত্তা যাকে ইনসান বা মানব নামে নামে আখ্যায়িত করা হয়।

    আর এ পরিপ্রেক্ষিতে কুরআন প্রথম মানবের সৃষ্টিতাত্ত্বিক অবস্থাসমূহের বিস্তারিত বর্ণনার প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করে তার প্রথম ও শেষ লক্ষ্যস্থল সম্পর্কিত বিষয়াদি বর্ণনার উপরই গুরুত্ব আরোপ করেছে।

মানব বিশ্বে হযরত আদম (আ) কি প্রথম মানব? নাকি তার পূর্বেও এ বিশ্বে মানবের অস্তিত্ব ছিল এবং তাদেরওে একজন আবুল বাশার, বা আদি পিতা ছিলেন?

কোন কোন ভূপষ্ঠ বিশেষজ্ঞ একথা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যা বর্তমান মানবজাতির পূর্বে বিশ্বে আর এক জাতিয় মানবের অস্তিত্ব ছিল।আজ থেকে ৩০ হাজার পূর্বেকার ঐ মানব জাতির নাম তিয়ান্দর তাল। ওদের সাথে বর্তমান মানব বংশের কোনই সম্পর্ক ছিল না। বরং তারা ছিল সম্পূর্ণ পৃথক। একটি বংশ, যাদের অস্তিত্ব পুরোপুরি লোপ পেয়েছে। অতপর মানব জাতির অবির্ভাব ঘটেছে।

কিন্তু তাদের এই ধারণা অনুমান ভিত্তিক ও কল্পনা প্রসূত , যা মানবীয় অস্থিপিজ্ঞরের গবেষণার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেছে।পবিত্র কুরআন আমাদেরকে এ সম্পর্কে কোন সংবাদ দেয় নি, এমনকি এ সম্পর্কে কোথায় কোন ইশারা-ইঙ্গিত ও করেনি। রাসূলুল্লাহ (স) –এর বাণীতেও এ সম্পর্কে কোন ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। অতএব আমাদের ইয়াকীন –বিশ্বাসের জন্য সেই পরিমাণ ইলমই যথেষ্ট যা আমরা সরাসরি কুরআন ও অহীয়ে ইলাহীর মাধ্যমে পেয়েছি।

মূলতঃ এধরনের জ্ঞানগত আলোচনা –পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ইসলামের শিক্ষা এটাই,যেসব বিষয় নিশ্চিত বিশ্বাস ও প্রত্যক্ষ পর্যায়ে পৌছে গেছে এবং কুরআনের জ্ঞান ও অহীয়ে এলাহী যার তাৎপর্যকে অস্বীকার করে না (আর পবিত্র কুরআন প্রত্যক্ষ ও প্রকাশ্য) বিষয়কে কখনো অস্বীকার করে না) তাকে নিঃসন্দেহে মেনে নিতে হবে। কেননা এ ধরনের তাৎপর্যকে অস্বীকার করা অযথা পক্ষপাতিত্ব ও হীনমন্যতারই পরিচায়ক ।

আর যে সব বিষয় এখনো বিশ্বাস ও দৃঢ়তার ঐ পর্যায়ে পৌছতে পারেনি যাকে প্রত্যক্ষ ও প্রকাশ্য ইলম আখ্যা দেয়া যেতে পারে (যেমন বর্তমান আলোচ্য বিষয়,) সে সব বিষয় সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতসমূহের নতুন নতুন অর্থ মতলব বের করা এবং জোর-জরদাস্তিমূলকভাবে সেগুলোকে আধুনিক গবেষণার সাথে সামাজ্ঞস্য বিধানের চেষ্টা করা মোটেই উচিত নয়।কেননা গবেষণাপ্রসূত সিদ্ধান্ত বার বার পরিবর্তিত হতে পারে, কিন্তু কুরআনের ইলমও কখনও পরিবর্তিত পর্যালোচনার হতে পারে না। এযাবত ইলম পর্যালোচনার মাধ্যমে যে সব বিষয়ের সিদ্ধান্ত দৃঢ়  বিশ্বাস ও প্রত্যক্ষের পর্যায়ে পৌছে গেছে সে সব বিষয়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গেছে তাদের সম্পর্কে সে সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয়েছে যা পবিত্র কুরআন অনেক পূর্বেই স্পষ্ট করে দিয়েছিল।

হ্যাঁ কোন মুফাসসির যদি কুরআনের আয়াতের এমন কোন ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন যা ঐ বিষয়ের হাকীকত ও প্রকৃতির বরখেলাফ তবে তার সে ব্যখ্যার উপর গুরুত্ব না দিয়ে বাস্তবতার নিরিখে আয়াতে কুরআনীর তাৎপর্য বিশ্লেষণই পবিত্র কুআনের দাবি, যা তোমরা কি বুঝ না। তোমরা কি ভেবে দেখ না? প্রভৃতি আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যাতে মানব জাতিকে প্রতিটি বিষয় চিন্তাগবেষণা করে দৃষ্টি দেবার প্রতি বার বার আহবান জানানো হয়েছে।

    এ সাথে একথাটিও মনে রাখা উচিত এ আলোচনা শুধু ঐ সব বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ যেসব ইতিহাস-ভূগোল এবং বস্তুজগতের অপরাপর জিনিসের সাথে সম্বন্ধ রাখে পবিত্র কুরআন এই সব বিষয় সম্পর্কে ঠিক ততটুকু আলোকপাত করছে যতটুকু আলোকপাত দ্বারা এসবের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মোটামুটি প্রতিভাত হয়।

অবশিষ্ট বিষয় সেসবের সম্পর্কে ঈমান ও ইসলামের আকায়েদ বিশ্বাস ও কাজকর্মের সাথে রয়েছে,সেসবের ব্যাপারে পবিত্র কুরআন ইলমে হাকীকীর (অহীয়ে এলাহী মাধ্যমে স্পষ্ট ভাষায় যা কিছু বলে দিয়েছে তাতে পরিবর্তন পরিবর্ধনের যেমন কোন সুযোগ নেই তেমনি প্রয়োজন নেই কোন চিন্তা গবেষণা বা পর্যালোচনার। যেমন আল্লাহর সত্তা, আখিরাতের অস্তিত্ব, ফেরেশতাসমূহ, রসূলগণ ও ভাগ্য সম্পর্কে ঈমান-বিশ্বাস কিংবা সালাত সিয়াম-হজ্জ-যাকাতের তাৎপর্য ইত্যাদি। এসব বিষয়ের জ্ঞান ইলমের ইয়াকিনী (অহীয়ে এলাহী) উপর নির্ভরশীল। অতএব এসবের মধ্যে কোনরূপ পরিবর্তন পরিবর্ধন অচিন্তীনীয়।

      এ বিষয়টি অবশ্যই প্রণিধানযোগ্য যে প্রথম মানব আদম কখন সৃষ্টি হলেন? আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির সাথে সাথে, না কি একটি অনির্দিষ্টকাল অতিবাহিত হবার পর?

ইহুদী খ্রিস্টান এবং কোন কোন মুসলিম বিজ্ঞজনের মতামত এই আল্লাহ তাআলা সবকিছু সৃষ্টির ক্ষেত্রে সিত্তাতা আইয়াম (ছয় দিন) এর যে মেয়াদ নির্ধারণ করেছেন, শুক্রবার হল সে মেয়াদেরই একটি দিন, সেদিন হযরত আদিম (আ)-কে সৃষ্টি করা হয়।

অর্থাৎ  তোমাদের প্রভু আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেন, অতপর তিনি আরশে সমাসীন হন। (সূরা ঃ আ‘রাফ, আয়াত ৫৪)

কিন্তু এ অভিমত জ্ঞানগত, ইতিহাসগত ধর্মগত-কোনদিক দিয়েই সঠিক নয়। ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা কিসের ভিত্তিতে একথা বলেন, বা এ সম্পর্কিত কি কি দলীল প্রমাণ তাদের হাতে আছে তা আমরা জানি না। তবে আমরা বিস্ময়বোধ করি এ ভেবে, আল্লামা সুবুকীর মত ব্যক্তি এ ভিত্তিহীন কথাটাকে কিভাবে মেনে নিলেন? কিভাবে অনুসরন করলেন তিনি এ ভ্রান্ত মত?

গভীরভাবে ;চিন্তা ভাবনার পর অবশ্য একথা বলা যেতে পারে আল্লামা সুবুকীর এ ভ্রান্তি সহীহ মুসলীমের সেই হাদিসের কারণেই হয়েছে-যা ফাযায়েলে জুমুআ‘ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং যাতে বলা হয়েছে, রসুল্লল্লা (স) ইরশাদ করেছেন, আদম (আ)- কে শুক্রবার দিন সৃষ্টি করা হয়েছে হাদীছে শুধু এতটুকুই বলা হয়েছে। সুবুকী নিজের পক্ষ থেকে এখানে একটি মত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তা হলো, এ জুমুআ‘ হচ্ছে সিত্তাতা আইয়াম-এর অন্তর্গত মুক্রবার দিন। সুবুকী ভ্রান্তি এখানেই।

প্রকৃত অবস্থা এ পবিত্র কোরআনের অনেক স্থানে বিভিন্ন সৃষ্টির উল্লেখ আছে, কিন্তু একটি মাত্র স্থানেও আদম (আ) সৃষ্টির উল্লেখ নেই। অথচ এটা স্বীকার্য হযরত আদম (আ) হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, আকাশ পৃথিবী উল্লেখের চেয়ে যার উল্লেখ ছিল অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা খোদ কোরআনের ভাষায়ই তিনি আশরাফুল মাখলুকাত (সৃষ্টির সেরা) ও খলীফাতুল্লাহ ফিল আরদ (পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি) তবি এটা কি করে বলা যায় যে, তার মত একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে সিত্তাতা আইয়াম (ছয়দিন) –এর কোন এক দিনে সৃষ্টি করা হয়েছে, কিন্তু আয়াতে তার কোন উল্লেখ করা হয়নি?

মূল আয়াতে দু‘টি কথার উল্লেখ আছে। প্রথমটি হলো পৃথিবী ও আকাশ সৃষ্টির কথা, আর দ্বিতীয়টি হলো ইসতাওয়া আলাল আরশ(আরশে সমাসীন হওয়ার)-এর কথা। আয়াতের কোথাও আদম (আ) এর সৃষ্টি সম্পর্কে পরিষ্কার তো দূরের কথা, ইশারা ইঙ্গিতেও কিছু বলা হয়নি। উপরন্তু কুরআনে যেখানে যেখানে কোন না কোন ভাবে হযরত আদম (আ) এর উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে ঘৃণাক্ষরেও তার জন্মের দিন সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

তার জন্মের সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। অতএব পরিষ্কার কথা হলো, প্রকৃতপক্ষে আকাশ পৃথিবী সৃষ্টির হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ বছর, বরং একটি অনির্দিষ্টকার অতিবাহিত হবার পর(যে সম্পর্কে দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞাতা আল্লা্হ তাআলাই ভাল জানেন) হযরত আদম (আ) কে কোন এক শুক্রবারে সৃষ্টি করা হয়েছে। সিত্তাতা আইয়াম-এর শুক্রবার দিন কাউকেই সৃষ্টি করা হয় নি। বরং ঐ দিবস ইসতাওয়া আলাল আরশ তথা আরশে সমাসীন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে আর এ কারণেই শুক্রবার ‍দিন বা ছুটির দিবস হিসাবে নির্ধারিত হয়েছে।

হযরত আদম () সম্পর্কিত আয়াতে কুরআনী

পবিত্র কুরআন শরীফে হযরত আদম (আ) এ বর্ণনা ২৫বার এসেছে যার বিস্তারিত বর্ণনা এ আলোচনার শেষে তথ্য কণিকায় দেয়া হয়েছে ঃ পবিত্র কুরআন শরীফে নবীদের মধ্যে সর্বপ্রথম আবুল বাশার (মানব জাতির পিতা) হযরত আদম (আ) এ বর্ণনা এসেছে। সূরা বাকারা,আরাফ, ইসরা এবং ত্বয়াহায় নাম ও গুণাবলীর সাথে সূরা হাজর ও সোয়াদে শুধু গুণাবলীর সাথে এবং আলে ইমরান, মায়েদা, মারইয়াম এবং ইয়াসিনে পরোক্ষভাবে হযরত আদম (আ) এর বর্ণনা দেখতে পাওয়া যায়।

উপরে উল্লেখিত সূরা ও আয়াতসমূহে বর্ণনা ভঙ্গি, প্রয়োগ কৌশল ইত্যাদি ক্ষেত্রে হযরত আদম (আ) এর বর্ণনা বিভিন্ন রূপ পরিলক্ষিত হলেও লক্ষ্য ঘটনার প্রেক্ষিতে তাৎপর্য সর্বত্রই এক ও অভিন্ন যা উপদেশ প্রদানের লক্ষ্যে সময় –সুযোগ অনুযায়ী বিভিন্ন বার বিভিন্ন ভঙ্গিতে পেশ করা হয়েছে।

পবিত্র কুরআন ঐ সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনাকে শুধু এজন্য বর্ণনা করে না এসব ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দাবিদার বরং তার এই বর্ণনার একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে যেন এসব ঘটনা থেকে সৃষ্ট পরিণাম মানবের হেদায়েত ও পথ-প্রদর্শনের কাজে লাগে-যার ফলশ্রুতিতে তারা যেন এ বিশ্বাস পোষণ করে আল্লাহ এক অনস্বীকার্য সত্তা এবং তারই মহাশক্তিশালী হাতের ইঙ্গিতে বিশ্বজগত পরিচালিত হচ্ছে, আর সেই দীন অনুসরণের মধ্যে মুক্তি, সাফল্য এবং সর্বপ্রকার উন্নতি নিহিত-যে দীনের নাম প্রকৃতির দীন বা ইসলাম।

মহান কুরআনের এও একটা কুদরতী দিক বিভিন্ন সূরায় সেই সূরার বিষয়বস্তু অনুযায়ী বিভিন্ন আকৃতিতে ও বিভিন্ন ভঙ্গিতে একই ঘটনা বর্ণিত হলেও তার মৌলিকতায়, তার গাম্ভীর্যে অথবা তাৎপর্যে এতটুকু পার্থক্যও দৃষ্টিগোচর হয়নি। বরং কোথাও রয়েছে ঘটনার বিশদ বর্ণনা আবার কোথাও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।কোথাও ঘটনার একটি দিক উপেক্ষা করা হলেও অন্যত্র তার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিকটি বিশেষভাবে পেশ করা হয়েছে।

এক স্থানে কোন ঘটনার আনন্দদায়ক এবং উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী পরিণামের দিকটি তুলে ধরা হলেও অন্যত্র মূল ঘটনায় কোনরূপ পরিবর্তন না করেই তার আতংকজনক উভয় দিকই পেশ করা হয়েছে। বরং কোন কোন স্থানে একই সাথে আনন্দদায়ক ও আতংকজনক উভয় দিকই পেশ করা হয়েছে। কিন্তু এ কারণে মূল ঘটনার তাৎপর্য এবং গাম্ভীর্যের মধ্যে কোথাও সামান্য মাত্র হেরফেরও পরিলক্ষিত হয়নি।

এ অবস্থা নিঃসন্দেহে সর্বজ্ঞাত ও মহাশক্তিশালী আল্লাহর পবিত্র বাণীর পক্ষেই সাজে। এটা এমন একটা কুদরতী ঘটনা যা মানবের চুড়ান্ত ইলম ও অলংকার সমৃদ্ধ ভাষার আয়ত্বের সম্পূর্ণ বাইরে।

অর্থাৎ: তবে কি তারা কুরআন সম্বন্ধে অনধাবন করে না? এটা যদি আল্লাহ ছাড়া অপর কারো (বাণী) হত তবে তারা এতে অনেক অসংগতি পেত।

কেমন নারীকে বিবাহ করা উচিত

মুখের ব্রণ দূর করার সহজ উপায়

আমাদের ইউটিউব ইউটিব চ্যানেল

Leave a Comment