আপনি কেন বক্তৃতা শিখবেন? : আপনি কি বক্তৃতা করেন? না করে থাকলে আপনিও বক্তৃতা করুন। আপনি কেন সব সময় শ্রোতা থাকবেন? আপনার কি কোন আদর্শ নেই? আপনার জীবনের কি কোন মিশন নেই? আপনি কি চান না মানুষের মধ্যে উন্নত মানের দৃষ্টিভঙ্গি ও চেতনা সৃষ্টি হোক। মানুষ আপনার পছন্দের জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করুক? মানুষ আপনার দল বা আপনার পছন্দের দলকে সমর্থন করুক, তা কি আপনার কাম্য নয়?
আপনি কি চান না সমাজ থেকে অন্যায়, অনাচার, সন্ত্রাস, দুর্নীতি এবং যাবতীয় অশান্তি ও দুষ্কৃতি দূর হোক? আপনি কি চান না সমাজে সত্য, ন্যায়, সততা, সেবা ও যাবতীয় কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হোক? আপনি কি চান না মানুষ সত্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হোক এবং অসত্য ও মন্দের বিরুদ্ধে হোক বিক্ষুব্ধ?
এসব ব্যাপারে আপনি কি আপনার কোনো দায়িত্ব আছে বলে মনে করেন না? যদি এসব ব্যাপারে আপনার জবাব ইতিবাচক হয়, তবে অবশ্যই আপনি বক্তৃতা করুন। কারণ-
(১) দ্বীন প্রচারের একটি বিশেষ মাধ্যম হচ্ছে বক্তৃতা, বক্তৃতাতে আছে মানুষের মনকে আকর্ষণ করার বিশেষ শক্তি।
(২) বক্তৃতা আদর্শ প্রচারের বলিষ্ঠ হাতিয়ার।
(৩) বক্তৃতা শ্রোতার বিবেকে নাড়া দেয়। তাকে সচেতন করে তোলে। (৪) বক্তৃতা জ্ঞান দান করে,বুঝ সৃষ্টি করে ।
(৫) বক্তৃতা শ্রোতার ভুল ধারণা দূর করে দেয়।
(৬) বক্তৃতা শ্রোতার মনে ভক্তি ও ভালোবাসা সৃষ্টি করে।
(৭) বক্তৃতা শ্রোতাদের নিজ মতে বা আদর্শে আনার একটি বিরাট শক্তি। (৮) বক্তৃতা শ্রোতাদের মতামত সৃষ্টি করে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের শক্তি যোগায়। (৯) বক্তৃতা শ্রোতার সমর্থন যোগায়।
(১০) বক্তৃতা উৎসাহিত করে।
(১১) বক্তৃতা শ্রোতাদের আবেগাপ্লুত করে।
(১২) বক্তৃতা শ্রোতাদের উদ্বুদ্ধ ও উদ্বেলিত করে।
(১৩) বক্তৃতা বক্তার জনপ্রিয়তা সৃষ্টি করে।
(১৪) বক্তৃতা বক্তার ব্যক্তিত্ব তৈরী করে।
(১৫) বক্তৃতা ঐক্যমত্যে আনার এবং ঐক্যবদ্ধ করার মোক্ষম হাতিয়ার।
(১৬) বক্তৃতা মানুষকে কাজে লাগানোর সুনিপুণ কৌশল ।
(১৭) বক্তৃতা হৃদয়ের উপর প্রভাব সৃষ্টি করে।
(১৮) বক্তৃতা শ্রেষ্ঠ যোগাযোগ প্রক্রিয়া, বাস্তব গণমাধ্যম।
(১৯) বক্তৃতা আদর্শ সমাজ গড়ার মাধ্যম।
(২০) বক্তৃতায় আছে অদ্ভুত আকর্ষণ শক্তি ।
(২১) বক্তৃতা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতার যুদ্ধে জয় লাব করার
শাণিত অস্ত্র। তাই আমরা সকলেই বক্তৃতা করি। নিজের জীবনের উদ্দেশ্য সফল করি ।
বক্তৃতা কি?
বক্তৃতা একটি শক্তিশালী কৌশল। বক্তৃতা একটি আর্ট। বক্তৃতা অর্থ হচেছ বলা, যা ব্যক্ত করা হয়। মূলতঃ বক্তৃতা হলো সমবেত জনমণ্ডলীর সম্মুখে বা অডিও, কিংবা অডিও ভিজুয়্যাল, অথবা ইন্টারনেট প্রচার ও যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে বিশেষ উদ্দেশ্যে, বিশেষ বিষয়ে এবং বিশেষ জনমণ্ডলীকে লক্ষ্য করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশেষ ভঙ্গিতে উপস্থাপিত সুবিন্যস্ত উক্তি, যার অপর নাম বক্তব্য ও আলোচনা।
বক্তৃতা যে কতো রকম, কতো বিচিত্র তার ধরণ-প্রকৃতি সে হিসেব করা বড় কঠিন। আমাদের দেশ এবং তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই বক্তৃতার বৈচিত্র্য ব্যাকরণ বিচারে বর্ণনা করা প্রায় অসাধ্য। তবে কতিপয় প্রকার প্রকরণ তো প্রথায় পরিণত হয়েছে। উদ্দেশ্য আয়োজন ও কাঠামোগত দিক থেকে বক্তৃতার ধরণ বৈচিত্র্য নিম্নরূপ-
১) জনসভা বা সমাবেশে নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা । ২) অডিও বা অডিও ভিজুয়্যাল যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তৃতা। ৩) পার্লামেন্ট সদস্যদের বক্তৃতা।
৪) দলীয় কর্মী সভায় বক্তৃতা ।
৫) দলীয় পরামর্শে ও নিবাহী পরিষদের সভায় বক্তৃতা। ৬) অধঃস্তন নির্বাহী কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা । ৭) উপ-কমিটিতে সুপারিশ তৈরীর উদ্দেশ্যে বক্তৃতা।
৮) মতামত কিংবা আদর্শ প্রচারের উদ্দেশ্যে সুধী সমাবেশে বক্তৃতা। ৯) সেমিনারে বক্তৃতা।
১০) সিম্পোজিয়াম বা আলোচনা সভার বক্তৃতা।
১১) বিতর্ক অনুষ্ঠানের বক্তৃতা ।
১২) টেলি কনফারেন্স বা সিন্ডিকেট বক্তৃতা ।
১৩) ছাত্রদের উদ্দেশ্যে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকদের বক্তৃতা। ১৪) প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে শ্রেণীকক্ষে প্রশিক্ষকের বক্তৃতা।
১৫) ধর্মীয়গ্রন্থের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে দেওয়া বক্তৃতা।
বক্তৃতা প্রশিক্ষণ ও নির্বাচিত ইসলামী বক্তৃতা ১৬) বিশেষ উদ্দেশ্যে জনতাকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বক্তৃতা। ১৭) উত্তেজিত বিশৃংখল জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বক্তৃতা। ১৮) শান্তি স্থাপন এবং উন্নয়ন ও সেবা কাজে উদ্বুদ্ধ করণমূলক বক্তৃতা।
১৯) পণ্য বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্যানভাসারের বক্তৃতা।
২০) প্রশিক্ষণমূলক সাপ্তাহিক বক্তৃতা।
২১) প্রশিক্ষণমূলক মাসিক বক্তৃতা। ২২) প্রতিযোগিতামূলক বক্তৃতা। ২৩) সম্মিলিত বক্তৃতা।
২৪) কোন অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তৃতা।
আমাদের দেশে শ্রেণী ক্ষেত্র ও পরিবেশ ভেদে উপরোক্ত ধরনের বক্তৃতাসমূহ চালু রয়েছে। নিজ নিজ অবস্থানে প্রত্যেক প্রকার বক্তৃতারই রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।
উপরে বক্তৃতার যেসব প্রকার প্রকরণের কথা আলোচনা করা হলো, এর মধ্যে আপনি কোন প্রকারের বক্তা?
এতো প্রকারের মধ্যে আপনি শুধু এক প্রকারের বক্তা। নাকি সর্ব প্রকার বক্তা? তবে আপনার প্রকার যাই হোক, আপনি দক্ষ প্রভাব বিস্তারকারী ও জনপ্রিয় বক্তা হোন। এজন্য কৌশল আয়ত্ব করুন। সময় ও প্রস্তুতির দিক থেকে আপনাকে দুই ধরনের বক্তৃতা করতে হতে পারে ।
১) পূর্ব নির্ধারিত বক্তৃতা Set Spech
২) উপস্থিত বক্তৃতা Extempore Spech
নির্ধারিত বক্তৃতার ক্ষেত্রে তো আপনি প্রস্তুতি নেবার সুযোগ পাবেন। কিন্তু উপস্থিত বক্তৃতার ক্ষেত্রে সে সুযোগ পাওয়া যায় না। আপনি হঠাৎ বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আদিষ্ট। তখন আপনাকে উপস্থিতভাবেই বক্তৃতা করতে হবে। তাই বক্তৃতার নিয়মও কৌশলগুলো আপনার আয়ত্বে থাকা বাঞ্ছনীয়।