দরুদ ও সালাম রাসূলে কারিম (সা.) এর নিকট পৌঁছান হয়

দরুদ ও সালাম রাসূলে কারিম (সা.) এর নিকট পৌঁছান হয়

পূর্বে উল্লেখিত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, নবী কারিম (সা.) নিজের জন্য কিয়াম করাকে অপছন্দ করতেন। তাই সাহাবায়েকেরাম রাসূলে কারিম (সা.) এর চরম ভালবাসা ও গভীর মুহাব্বত পোষণ করা সত্ত্বেও তাঁকে স্বচক্ষে দেখে এবং তিনি যখন স্ব -শরীরে সাহাবাদের সামনে উপস্থিত হতেন তখন তারা দাঁড়াতেন না। তাহলে বর্তমান যুগে মিলাদ মাহফিলে কিয়াম করার কি যুক্তিকতা থাকতে পারে? যদি  কেহ বলে যে, রাসূলে আকরাম (সা.) মিলাদ মাহফিলে হাজির হন তাই তার সম্মানে দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করি।

তার উত্তর হল প্রথমত: এ ধরণের আক্বিদা বা বিশ্বাস করাই শিরক এবং রাসূলের শানে চরম বেয়াদবী। কেননা রাসূলে কারীম (সা.) এর জীবদ্দশায় তিনি যখন মক্কায় ছিলেন তখন তিনি মদিনায় বা বদর উহুদে ছিলেন না। যখন তিনি মদিনায় ছিলেন তখন তিনি মক্কায় বা মিনা, আরাফায় ছিলেন না। মোট কথা তিনি জীবদ্দশায় একই সময় একাধিক স্থানে অবস্থান করার কোন প্রমাণ তাঁর জীবনে পাওয়া যায় না।

এমন কি কিয়ামত পর্যন্ত কেউ এ ধরণের প্রমাণ দেখাতে পারবে না। সুতরাং বিশ্ব ভুবনে একই সময়ে হাজারো স্থানে প্রচলিত মিলাদের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তাহলে একই সময় হাজারো স্থানে রাসূলে কারীম (সা.)  ইন্তেকালের পর হাজির হওয়া সম্ভব কিনা? বিবেককে জিজ্ঞাসা করলেই উত্তর পাওয়া যাবে। কিছুতেই সম্ভব না। একই সময়ে হাজারো নয়, লাখো কোটি স্থানে এমন কি সর্ব স্তরে হাজির ও বিদ্যমান থাকার সিফাত বা গুণ হলো এক মাত্র আল্লাহ্ পাকের। এ বৈশিষ্ট্য এক মাত্র আল্লাহ্ পাকের জন্য খাছ। অতএব কোন নবী-রাসূল, কুতুব, আবদাল বা অন্য কারও উক্ত সিফাত সাব্যস্ত করা ষ্পষ্ট শিরক বলে গণ্য হবে।

দ্বিতীয়তঃ যদি মিলাদ মাহফিলে রাসূলে কারীম (সা.) কে হাজির হওয়ার বিষয়টা মেনে নেওয়া যায়, তাহলে প্রশ্ন জাগে মিলাদ মাহফিলের খবর তিনি কিভাবে জানলেন। উত্তরে যদি বলা হয় তিনি মদীনায় শুয়ে দুনিয়ার সব খবর রাখেন তাহলে এটাতো স্পষ্ট শিরক।

কেননা তখন তো নবী করিম (সা.) কে আলিমূল গায়িব মানা ও বিশ্বাস করা হলো। অথচ এগুণ বা সিফাত তো এক মাত্র আল্লাহ্ পাকের জন্য খাস। উল্লেখিত আক্বিদা ও বিশ্বাস নিয়ে যারা প্রচলিত মিলাদ ও কিয়াম করে তারা নেকীর পরিবর্তে শিরকের গুণাহ্ কামাই করে।

তৃতীয়তঃ মিলাদ মাহফিলে নবী কারীম (সা.) কে যদি হাজির হওয়ার বিষয়টা মেনে নেওয়া হয় তাহলে প্রশ্ন জাগে তিনি কখন আসেন এবং আমরা তার সম্মানে কখন কিয়াম করি? কোন দিক দিয়ে আসেন, আমরা কোন দিকে মুখ করে দাঁড়াব। অতএব নবীর আগমনের সাথে সাথে যদি দাঁড়ান না হয় এবং আমাদের দাঁড়ান যদি নবীর পিছনে রেখে হয় উভয়টাই নবীর শানে চরম বেয়াদবী হবে। বিধায় বিষয়টি একেবারেই অজানা। অতএব, শুধু মাত্র ধারণা ও নিজের খেয়াল খুশিতে এবং আবেগের বসতঃ হয়ে কোন আমল করা শরীয়ত সম্মত নয়।

চতুর্থত: নবী কারীম (সা.) কে যদি মিলাদ মাহফিলে হাজির হওয়া মেনে নেওয়া হয়, তাহলে রাসূলে আকরাম (সা.) কে দরুদ ও সালামের কাঙ্গাল মনে করা হয়। যা বিশ্বনবী (সা.) এর শানে চরম বেয়াদবী। কেননা বাদশা কোনদিন প্রজার নিকট খাজনা বা টাক্স আদায় করার জন্য প্রজার বাড়ীতে বাড়ীতে ধরনা ধরে না। যদি তা ধরে তাহলে বাদশাহর  বাদশাহী থাকবেনা এবং উক্ত বাদশাকে কোন প্রজা মান্য করবে না।

এতে বাদশাহর চরম ভাবে মানহানি হবে। বাদশাহর কাজ হলো খাজনা বা টাক্স আদায়ের জন্য লোক নিয়োগ করা। তারা এ কাজের আঞ্জাম দেবে এবং খাজনা টাক্স আদায় করে তারা বাদশাহর নিকট পৌঁছে দেবে। এটাই দুনিয়ার নিয়ম। অতএব, মহান আল্লাহ্ পাকের নিজামও এটাই। এ জন্যই তো আল্লাহ্ পাক অসংখ্যা ফেরেস্তা সৃষ্টি করে বান্দার খেদমতের জন্য বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত করে রেখেছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় আল্লাহ্ পাক একদল ফেরেশতা সৃষ্টি করে বিশ্ব নবী (সা.) এর দরবারে দরুদ ও সালাম পৌঁছানোর কাজে নিয়োজিত রেখেছেন। কিয়ামত পর্যন্ত যারাই রাসূলে কারীম (সা.) এর উপর দরুদ ও সালাম পাঠ করবে আল্লাহ্ পাকের নিয়োজিত ফেরেস্তাগণ তা বিশ্বনবী (সা.) এর নিকট পৌঁছাবেন।

বিশ্ব নবী (সা.) হলেন দোজাহানের বাদশা, তিনি দরুদ ও সালামের কাঙ্গাল নন। দরুদ ও সালাম পাঠকরা এটা উম্মতের লাভ। কেননা যে রাসূলে কারীম (সা.) এর উপর এক বার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ্ পাক তার উপর ১০টি রহমত দান করবেন।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বিদা হলো দোজাহানের বাদশা বিশ্বনবী (সা.) তার শাহী মহল পবিত্র মদীনায় রওজা পাকে বরযখি জীবন নিয়ে স্ব-অবস্থানে আছেন। উম্মতের দরুদ ও সালাম এবং যাবতীয় তথ্য নিয়োজিত ফেরেস্তাগণ নিয়মিত ভাবে আল্লাহ্ পাকের হুকুমে বিশ্বনবী (সা.) এর শাহী দরবারে পৌঁছাচ্ছেন। হাদিস

عن عبد الله ابن مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله ملئكة سياحين فى الارض يبلغونى من امتى السلام – دارمى ٢٧٧٤

অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এরশাদ করেছেন আল্লাহ্র কতক ফেরেস্তা রয়েছেন, যারা  পৃথিবীতে ভ্রমন করেন এবং আমার উম্মতের সালাম আমার নিকট পৌঁছিয়ে দেন। দারমী, হাদিস নং ৭৭৪।

عن ابى هريرة (ضـ) قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صلى علي عند قبرى سمعته ومن صلى علي نائبا ابلغته – دارمى ٢٧٧٤

অর্থ : হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার কবরের নিকট এসে আমার উপর দরুদ পাঠ করে আমি তা শুনতে পাব, আর যে ব্যক্তি দূর থেকে আমার উপর দরুদ পাঠ করবে তা আমার নিকট পৌঁছানো হবে। বায়হাকী, হাদিস নং- ১৫৭৩।

অতএব, হাদিস দুই খানার আলোকে স্পষ্ট ভাবে বুঝে আসলো যে, প্রচলিত মিলাদ-কিয়াম করার পক্ষে যত যুক্তি থাকুক না কেন, কোন যুক্তিই শরীয়তে গ্রহণ যোগ্য নয়। যদি বলা হয় রাসূলের নাম শুনলেই দাঁড়াতে হবে, তখন প্রশ্ন হবে কালেমার শেষে রাসূলের নাম, আযানের মধ্যে রাসূলের নাম, বক্তার মুখে রাসূলের নাম, পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতে রাসূলের নাম, হাদিস পড়ার সময় ইত্যাদিতে রাসূল (সা.) এর নাম শুনলে দাঁড়ান হয় না কেন?

অন্যান্য পোস্ট পড়ুন

translate

Leave a Comment