আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ , আমার কি হয়েছে জানি না আজ কয়েক দিন হলো সুধু বিতর্কিত এখতেলাফি বিষয় নিয়ে অনেক পোস্ট করছি ।
আমি আগে অনেক পপুলার একজন ফেসবুকার ছিলাম । আমার একটা ছদ্দনামে ফেসবুক আইডি ছিল – প্যারাসিটামল বাবা – সেই আইডিতে প্যারা ও তার বউ এর বিভিন্ন বিষয়ে কথাকপন হত – সরকারের ব্যর্থতা, শিক্ষা ব্যবস্তা, দেশেল হালচাল, বিদেশি বিভন্ন বিষয় নিয়ে রম্য আলাপ আলোচনা হতো প্যারা ও তার বউ এর মাঝে। আমার খেয়াল আছে কোন একটা পোস্টে আমি ৫ হাজার লাইক ও পেয়েছিলাম ।
ফেসবুক চালাই ২০১১ থেকে । তখন নিজ ধর্মের ভিতরে এতো কামড়া কামড়ি পাই নাই । সামহোয়ার-ইন ব্লগে মোধ্য রাতের অশ্বরহি নামে – ব্লগে উপস্থিত থাকতাম – নাস্তিক দের বিষ মাখানো যুক্তিতে অনেক সরল মনের ছেলেদের নাস্তিক হতে দেখেছি – আবার ইসলাম পন্থিদের তুখোর যুক্তি তর্ক নাস্তিক দের কুপকাত হতে দেখেছি ।
ফেসবুক আস্তে আস্তে আরো জনপ্রিয় হতে লাগলো । সেই সময় কিছু কিছু বিতর্ক আসতে লাগলো । হানাফি কওমি পন্থি আলেম দের সাথে হানাফি কওমি পন্থি সুন্নাত ওয়াল জামাতের সাথে = পীর দের কর্মকান্ড – মিলাদ – নামাজের পরে বাধ্যতা মূলক মোনাজাত করতেই হবে – সিন্নি – জননে জুলুস – মিলাদুন নবী পালন ইত্যাদি নিয়ে ভিষণ করম তর্ক শুরু হলো ফেসবুক কেন্দ্রিক ।
( এই সব সিন্নী পন্থি দের একটা বিষয় ভালো তারা কোন দিন দলিল ও দেখাতে যায় নাই বা মুখেও বলে নাই যে ইমাম আবু হানিফা সিন্নি রাধতো – বা মিলাদ পড়তো = মানে তাদের কর্ম কান্ড কেনা ভাবেই আবু হানিফা রাহঃ (ফিকা শাস্ত্রবিদ) উপর বর্তায় না )
এবং এটা বরাবর চলতে লাগলো – এখনো হয় । তাদের কোন দলিল তো পেতামই না – খালি অমুকে করছে – অমুকে করছে ইত্যাদি বয়ান ।
গেলো ৮ – ১০ বছর ফেসবুক গরম হতে লাগলো আহলুল হাদিস দের বিষয় নিয়ে । প্রথমে বুঝে উঠতে পারিনি – পরে মনে মনে আহলুল হাদিস হয়েও গেছিলাম । পরে আরো ঠান্ডা মাথায় বুঝতে শুরু করলাম – নাহ এ তো উপরে ঠিকঠাক ভিতরে সদর ঘাট ।
তার পরপরই ইউটিয়ুব জনপ্রিয় হয়ে উঠলো – পেলাম হৃদয়ের শান্তির খোরাক দিতে পারা একজন – ডা. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গির স্যার রাহঃ কে ( পীর সাহেব ফুরফুরা – পাক্কা সহিহ হানাফি ) । উনার বয়ান আবার নতুন করে ভাবতে বাধ্য করলো । নতুন করে বুঝতে শুরু করলাম ।
এদিকে তরুন রা আহলুল হাদিস হতে শরু করলো – অনেক অনেক নতুন আহলুল হাদিস এখন – ভালো অনেক ভালো – কিন্তু এক তাবে-তাবেইন ( ইমাম আবু হানিয়া রাহঃ অনেকে তাবেইন বলে অনেকে তাবে-তাবেইন ও বলে ) এর সুন্নাহ ( এদের মাধ্যমে রাসূল সাঃ ও সাহাবা দের সুন্নাহ প্রতিষ্ঠিত হয় ) যেখানে চলমান – তার ভিতর নতুন করে অন্য সুন্নাহ কেন ঢুকানোর চেষ্টা ? যা ফেৎনা সৃষ্টি করতে শুরু করলো ।
ইমাম আবুহানিফা ( ফিকা শাস্ত্রবিদ ) কে ভুল ধরতে, হাদিস ব্যবহার করা হয় বুখারি মুসলিম দিয়ে । ইমাম আবু হানীফা রাহঃ ( ফিকা শাস্ত্রবিদ ) – জন্ম ৮০ হিঃ – – বুখারি শরিফ এর লেখক ( হাদিস সংগ্রাহক ) – ইমাম বুখারী জন্ম ১৯৪ হিঃ আর – মুসলিম শরিফ এর লেখক ( হাদিস সংগ্রাহক ) ইমাম মুসলিম জন্ম ২০৪ হিঃ -। চিন্তা করেন বুখারি – মুসলিম রাহঃ ইমাম আবুহানিফা ( ফিকা শাস্ত্রবিদ ) কত পরে দুনিয়াতে এসছেন । বুখারি – মুসলিম রাহঃ এরা হলেন ইমাম আবুহানিফা রাহঃ এর ছাত্রদের ছাত্রদের ছাত্র । বিষয়টা কি সহজে বুঝে আসছে ?
ইমাম আবুহানিফা ইসলাম ( কুরআন সুন্নাহ ) শিখেছে সাহাবা রাঃ গনদের থেকে ( এটা নিয়ে একটু মত পার্থক্য আছে ) ও সাহাবা রাঃ গনদের নিকট জন ও ঘনিষ্টজন দের থেকে । ( এই মতামত ১০০% সহিহ ) – তাহলে ইমাম আবু হানীফা রাহঃ ইসলামের শিক্ষা ও বুঝ কি অন্য দের সাথে তুলনা করলে চলবে ? এই সহজ সাধারন বিষয়টা কেন বুঝনে না ?
এরপরেও – আবার বলি এরপরেও – ইমাম আবু হানীফা রাহঃ বলেছেন – স্পষ্টতই যদি দেখা যায় আমার মতামত কোন বিশুদ্ধ ইতিহাসের সাথে সাংর্ঘষিক – তা ছুড়ে ফেলে দিতে । কত পরিষ্কার ছিলেন তারা ।
সাভাবিক ভাবেই কওমি হানাফি দের সাতে আহলুল হাদিস দের সংঘর্ষ্য শুরু হলো – অনলাইন ও অফলাইনে – অতি আবেগি হানফিরা ( আমি বলবো বাঙ্গালি জাতিয়তা ) নতুন তরুন আহলে হাদিস দের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে লাগলো – যা আহলুল হাদিস দের পক্ষে তরুন মনে আরো শক্ত অবস্থান আসতে লাগলো । মসজিদ ভাগ হতে লাগলো । অথচ উচিত ছিল গোছানো যুক্তি প্রমান দলিল রেডি করে গুছিয়ে – মাজহাবের উপকারিতা ও প্রয়োজনিয়তা পেশ করা । তা না করে উল্টোটা করলো । সব ঘোলা করে এখন সঠিক পথে আসছে হানফি আলেম রা ।
এর আগে ও পরে = ডা: জাকির নায়েক নিয়ে অনেক কাহিনি হয়ে গেলো – কওমি হানাফিরা বেচারা কে ধুয়ে দিত সব মাহফিলে – জামাতে ইসলাম ও আহলে হাদিস রা এটা নিয়ে উল্টো ধুয়ে দিত কওমি হানাফি দের ।
চলতো এমনই – বড় একজন কওমি আলেম – যার নামে অন্ধ সবাই – সে একদিন বললো ডা: সাহেব অমুক অমুক দিনের টিভি আলোচনায় অমুক অমুক কথা বলেছে – পরে মিলিয়ে দেখি পুরা ভুয়া কথা – খুব রাগ হলো সেদিন ।
মাঝে আমার প্রানের ডা: সাহেব অনেক জুলুমের স্বীকার হলেন – তার অনেক অভিজ্ঞতা হলো – কওমি হানাফিদের মোধ্য মাওলানা ত্বকি উসমানি দাঃ বাঃ সাতে সম্পর্ক হতে শরু হলো – জ্ঞান পিপাসু ডা: জাকির দাঃ বাঃ সাহেব আরো জানলেন আরো শিখলেন ।
( বর্তমান জীবিত শ্রেষ্ট ইসলামি দ্বায়ি ডাঃ জাকির নায়েক – বর্তমান জীবত শ্রেষ্ট ইসলামি অর্থনিতি বিষয়ক আলেম ত্বকি উসমানি )
- কওমি ও বেরলভি হানাফিদের সাথে দূরুত্ব কোমতে শুরু করলো সম্পর্ক অনেক গাঢ়ো হলো – তার ও অনেক গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্তে পরিবর্তন দেখা গেলো । এর পর অনেক বার অনেক যায়গায় মাজহাব পালনের উপকারিতা – এবং মাজহাবের পক্ষ্যে অনেক কথা তিনি বলেছেন । তার অনেক অনেক ভিডিও ইন্টারনেটে আছে । এরপর অনেক লা-মাজহাবি দের কাছে ডা: জাকির খারাপ হয়ে গেছেন । কি খেলা ।
আমি ইসলাম পেলাম অনেকের উৎসাহে – আমার পরিবেশ সমাজ আমাকে ইসলাম দিল । কেমন ইসলাম ? হ য ব র ল । তারপর কওমি আলেম দের দেখলাম বুঝলাম – তাদের জ্ঞান পরিধি বুঝলাম – তাদের ইতিহাস পড়লাম – ( অনেকের টাই পড়েছি ) – বুঝলাম ।
উপলব্ধি হলো = একটা ফেরকা চালু হয়ে গেলে তা চলতেই থাকে । হোক সেটা ছোট পরিসরে বা বড় পরিসরে । কিন্তু মুছে ফেলা যায় না । টিকে থাকেই । শিকড় উপড়ে ফেলেতে চাইলেও ২ – ৩ শত বছর লাগবে ।
সবই ফেরকা । বাতিল ফেরকা বা হক ফেরকা । আমারা কেউ কাউকে বাতিল মনে করি – আবার কেউ কাউকে হক মনে করি ।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ কে অনু সরনে সকলেই একমত । ডা: জাকির কে প্রশ্ন করা হয়েছিল কাদের কে অণুসরন করবো ? তার উত্তর ছিল: আহলে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ ।
অনেক ওলামায়ে কেরামের মতামত হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এর অন্তুভুক্ত সকল মাজহাব – ( সালাফি আকিদা ও হাম্বলি মাজহাব এক ও অভিন্ন ) এরাও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এর অন্তভুক্ত । বাকি থাকে যারা নিজেদের লা-মাজহাবি দাবি করে তারা – এরা কোন ভাবেই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এর মোধ্য পরে না ।
ইসলামি ইতিহাস থেকে এই কথা প্রমানিত যে আমাদের বড় বড় তাবেই ইমাম গন সাহাবাদের রাঃ থেকে ও সাহাবাদের রাঃ এর ঘনিষ্টজন থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা থেকে ইসলামি একটা ভাবধারা চালু করে । যেটা পরবর্তিতে মাজহাব ( ফুকাহে কেরাম মতামত বা স্কুল আরো বিভিন্ন অর্থ আছে ) নামে প্রসিদ্ধ হয় ।
তো ইমাম আবু হানিফা রাহঃ ( ফিকা শাস্ত্রবিদ ) এর মাজহাব ( ফুকাহে কেরাম মতামত বা স্কুল আরো বিভিন্ন অর্থ আছে ) যে যে দেশে বা অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা পায় – সেই সেই দেশে বা অঞ্চলে যদি মাজহাবের অন্য ইমাম – ধরুন ইমাম শাফেয়ি রাহঃ ( ফিকা শাস্ত্রবিদ ) যদি নিজে ভ্রমনে আসতেন বা শাফেয়ি মাজহাবের কোন আলেম ( ইমাম শাফেয়ি রাহঃ এর ছাত্র ) যদি ভিন্ন কোন ইমামের অঞ্চলে আসতেন , তখণ তারা সেই অঞ্চলের ইমামের সন্মানে , সেই ইমামের মতাদর্শ অনুযায়ি ইবাদত করতেন । কারন তারা উভয়ি সহিহ । উভয় সঠিক ।
আর রাসূল সাঃ তো বলেও গেছেন তার পরের প্রজন্ম তার পরের প্রজন্ম তার পরের প্রজন্ম কে মেনে চলতে । এই হাদিস সবাই জানেন – হাদিস ও সহিহ । এই হাদিস মান্য করতে যদি চান তাহলে তো অণ্য একটা ইমামের মাজহাব ( ফুকাহে কেরাম মতামত বা স্কুল আরো বিভিন্ন অর্থ আছে ) যে খানে প্রতিষ্ঠিত সেখানে এসে আপনি হাম্বলি মাজহাব ঢুকাতে পারেন না । যদি তা করতেই চান – বা করার চেষ্টা অব্যহত রাখেন তাহলে আপনি ফেৎনা ছড়ানোর দায়ে বিচারের মুখমুখি হবেন – আর আপনাকে প্রতিহত করাও ন্যায়ের কাজ ।
এই ব্যপার টা ডা: আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গির স্যার অনেক বার বলেছেন – বুঝিয়েছেন ।
তোমরা সুুধু এক মাজহাব ( ফুকাহে কেরাম মতামত বা স্কুল আরো বিভিন্ন অর্থ আছে ) মানো অন্য গুলো মানো না কেন ?
এর উত্তর দিয়ে লেখা শেষ করবো ইনশাহ আল্লাহু তায়ালা। অনেক ইসলামি গবেষক বলেছেন এক মাজহাবের সাথে অন্য মাজহাবে অনেক মিল । সুধু নামাজে আর কিছু কিছু বিষয়ে পার্থক্য আছে । সেটাও বেশি না । তবে খেয়াল রাখতে হবে সকল মাজহাবেই ইমাম ই সন্মানিত ও সহিহ ।
এক মাজহাব মানতে গিয়ে দেখা গেয়ে – সালাফি – শাফেয়ি – হাম্বলি – মালেকি – যাই বলুন এর সবটাই মানা হয় – কত পার্সেন্ট মানা হয় ? – গবেষনায় দেখা গেছে ৮০% – ৮৫% বা আরো বেশি – আরো বেশি । মানে একটা যদি পুরো পুরি মানেন অন্যটা অটোমেটিক মানা হয়ে যাবে । বরং ভিন্ন ভিন্ন মাজহাব থাকার কারনে রাসূল সাঃ ও সাহাবাদের সুন্নাহ সারা পৃথিবীতে জিবিত রাখা সম্ভব হয়েছে । এক ব্যাক্তি দল বা গোষ্টির পক্ষে সব সুন্নাহ পালন অসম্ভব । ভিন্ন ভিন্ন মাজহাব ভিন্ন সুন্নাহ পালনে – সকল সুন্নাহর আমল পৃথিবীতে বিরাজমান ।
অনেক আলেম দের ব্যাপারে অনেক কথা প্রচলিত আছে । পৃথিবীতে এমন ইহুদিদের ও খৃষ্টান পরিচালিত ইসলামি মাদ্রাসা পাওয়া গেছে । যখন মুসলিমদের সাথে রাজনৈতিক , ময়দানে উভয় স্থানে ইহুদি ও খৃষ্টানরা মার খাচ্ছিলো তখন তারা বিকল্প চিন্তা করে । মুসলিম দের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে মুসলিম দের শক্তি দূর্বল করতে তারা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে তাদের সন্তানদের আলেম বানাতে থাকে । ইতিমোধ্য হক পন্থিদের সাথে লড়াই করতে থাকা – ভন্ডদের কে তারা সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকে । খুজে খুজে কড়া ভন্ডদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে থাকে ।
কিছু আলেম দের দেখবেন তারা যে দেশেই থাকুক – সেই দেশের সরকারের কোন ভুল ধরবেন না । সেই সরকার যতই অন্যায় করুক । তারা চুপ থাকবে , এবং উল্টো সরকারের গুনগান গাইবে । বুঝবেন এরা ঐ ধাচের ।
ইহুদিদ ও খৃষ্টান এই সব কর্মকান্ডে জোড়লো গতি বাড়াতে লাগলো – যাতে করে মুসলিমরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে – আর ইহুদি ও খৃষ্টান রা তাদের উদ্দেশ্য পুরোনে সক্ষম হয় । এর শুরু টা হয়েছিল অনেক আগে।
আর প্রতিফলিত হয়েছিল তুরস্ক ইসলামী খেলাফতের বিরুদ্ধে প্রথম ফতোয়া জারি করে নিজ দেশের তুরস্ক একদল আলেম । আর তুরস্ক ইসলামী খেলাফত অস্বীকার করেছিল খেলাফতের অধিনে থাকা সৌদিরও একদল আলেম – তারা স্বাথীন সৌদি আরব এর জন্য তুরুস্ক খেলাফত থেকে বিছিন্ন হতে – বিদ্রহ করলো। যাদের পিছনে বৃটিশ কলকাঠির প্রমান সংগ্রহিত আছে জোড়ালো ভাবে ।
আল্লাহ আমাদের মাফ করে দিক । সবাইকে বুঝার তাওফিক দান করুন । আমিন ।
[ সবাইকে অনুরোধ করবো লেখাটা শেয়ার করতেঃ আহলে হাদিস হানাফ দ্বন্দ নিয়ে অনেকের কাছে পরিষ্কার একটা ম্যাসেজ দেওয়া চেষ্টা করেছি – আমার জ্ঞান থেকে – ধন্যবাদ ]