আল্লাহর ভয় করা সম্পর্কে আয়াত ও হাদিস
আল্লাহর ভয় করা সম্পর্কে আয়াত ও হাদিস
আল্লাহর ভয়ে কান্না করা ইসলামে একটি মহৎ গুণ। কুরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যারা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে। নিচে এ বিষয়ে কুরআনের আয়াত ও হাদিস উল্লেখ করা হলো:
কুরআনের আয়াত
আল্লাহভীরুদের কান্না
اَللّٰهُ نَزَّلَ اَحۡسَنَ الۡحَدِیۡثِ كِتٰبًا مُّتَشَابِهًا مَّثَانِیَ ٭ۖ تَقۡشَعِرُّ مِنۡهُ جُلُوۡدُ الَّذِیۡنَ یَخۡشَوۡنَ رَبَّهُمۡ ۚ ثُمَّ تَلِیۡنُ جُلُوۡدُهُمۡ وَ قُلُوۡبُهُمۡ اِلٰی ذِكۡرِ اللّٰهِ ؕ ذٰلِكَ هُدَی اللّٰهِ یَهۡدِیۡ بِهٖ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ مَنۡ یُّضۡلِلِ اللّٰهُ فَمَا لَهٗ مِنۡ هَادٍ ﴿۲۳﴾
আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম বাণী, সাদৃশ্যপূর্ণ একটি কিতাব (আল কুরআন), যা বারবার আবৃত্তি করা হয়। যারা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের গা এতে শিহরিত হয়, তারপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়ে যায়। এটা আল্লাহর হিদায়াত, তিনি যাকে চান তাকে এর দ্বারা হিদায়াত করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন হিদায়াতকারী নেই। (সুরা আয-জুমার: ২৩)
আল্লাহর নৈকট্য লাভকারীরা কাঁদে
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ
“নিশ্চয়ই মুমিনগণ তারাই, যাদের সামনে আল্লাহর নাম উচ্চারিত হলে তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে।” (সুরা আল-আনফাল: ২)
আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত কান্না
وَيَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ يَبْكُونَ وَيَزِيدُهُمْ خُشُوعًا
“আর তারা কাঁদতে কাঁদতে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং এটি তাদের বিনম্রতা বৃদ্ধি করে।” (সুরা আল-ইসরা: ১০৯)
আল্লাহর বান্দারা কাঁদে
إِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهِ إِذَا يُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ يَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ سُجَّدًا
“যারা পূর্বে জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়েছে, যখন তাদের কাছে কুরআন তেলাওয়াত করা হয়, তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে থাকে।” (সুরা মারইয়াম: ৫৮)
আল্লাহভীরুরা বিনয়ী ও অনুতপ্ত
وَ عِبَادُ الرَّحۡمٰنِ الَّذِیۡنَ یَمۡشُوۡنَ عَلَی الۡاَرۡضِ هَوۡنًا وَّ اِذَا خَاطَبَهُمُ الۡجٰهِلُوۡنَ قَالُوۡا سَلٰمًا
“রহমানের বান্দারা তারা, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন অজ্ঞরা তাদের সাথে কথা বলে, তখন তারা বলে, ‘সালাম’।” (সুরা আল-ফুরকান: ৬৩)
হাদিস
কিয়ামতের দিন আল্লাহর ছায়া পাবেন
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “সাত শ্রেণির মানুষ কিয়ামতের দিন আরশের ছায়ায় স্থান পাবে। তাদের মধ্যে একজন হলো সেই ব্যক্তি, যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং অশ্রু বিসর্জন করে।” (বুখারি, মুসলিম)
জাহান্নামের আগুন হারাম
রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।” (তিরমিজি)
আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া
রাসূল (সা.) বলেছেন, “দুটি চোখ কখনো জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না একটি চোখ, যা আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে; এবং একটি চোখ, যা রাতের বেলা পাহারা দিয়েছে।” (তিরমিজি)
আল্লাহর ভয়ে এক ফোঁটা অশ্রু
নবী (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে এক ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (ইবনে মাজাহ)
কান্নার মাধ্যমে হৃদয় নম্র হওয়া
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে হৃদয় আল্লাহর ভয়ে কেঁদে, সেই হৃদয় কখনো কঠোর হয় না।” (আহমাদ)
জাহান্নামের কঠিন শাস্তি
فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ
“তোমরা সেই আগুন থেকে বেঁচে থাকো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যা অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।” (সুরা আল-বাকারা: ২৪)
আল্লাহর শাস্তি কঠোর
إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُورًا
“নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালকের শাস্তি এমন কিছু নয় যা অবহেলা করা যায়।” (সুরা আল-ইসরা: ৫৭)
জাহান্নামের খাদ্য ও পানীয়
لَيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ إِلَّا مِنْ ضَرِيعٍ لَا يُسْمِنُ وَلَا يُغْنِي مِنْ جُوعٍ
“তাদের জন্য সেখানে থাকবে কেবল কাঁটাযুক্ত গাছ, যা তাদের পুষ্টি যোগাবে না এবং ক্ষুধাও নিবৃত্ত করবে না।” (সুরা আল-গাশিয়াহ: ৬-৭)
জাহান্নামের তীব্র আগুন
وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ
“এর ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর এবং এতে নিয়োজিত ফেরেশতারা কঠোর স্বভাবের ও শক্তিশালী।” (সুরা আত-তাহরিম: ৬)
মুমিনদের কান্না ও অনুতাপ
إِنَّ الْمُجْرِمِينَ فِي عَذَابِ جَهَنَّمَ خَالِدُونَ
“নিশ্চয়ই অপরাধীরা জাহান্নামের শাস্তিতে স্থায়ীভাবে থাকবে।” (সুরা যুখরুফ: ৭৪)
আপনার কি ডলার প্রয়োজন? যোগাযোগ করুন 01303 483365
হাদিস
জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন।” (তিরমিজি)
কিয়ামতের দিন কান্না ও হাসি
রাসূল (সা.) বলেছেন, “যদি তোমরা আমার জানা বিষয়গুলো জানতে, তবে তোমরা বেশি কাঁদতে এবং কম হাসতে।” (বুখারি, মুসলিম)
জাহান্নামের ভয়ে কান্নার ফজিলত
রাসূল (সা.) বলেছেন, “দুটি চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না—একটি চোখ, যা আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে; এবং একটি চোখ, যা ইসলামের রক্ষায় পাহারা দিয়েছে।” (তিরমিজি)
জাহান্নামের ভয়ে কাঁদার প্রতিদান
রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (ইবনে মাজাহ)
কান্নার দ্বারা হৃদয় নম্র হওয়া
রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে হৃদয় আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, সেই হৃদয় কখনো কঠোর হয় না।” (আহমাদ)
কবর সম্পর্কে
মৃত্যুর পর কবর একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যেখানে মানুষকে একা থাকতে হবে। কবরের আজাব (শাস্তি) থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মহান আল্লাহর কাছে কাঁদা, ক্ষমা চাওয়া ও নেক আমল করা মুমিনের কর্তব্য। ইসলামে কবরের ভয়কে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে এবং অনেক কুরআনের আয়াত ও হাদিসে এটি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। নিচে কবরের ভয়ে কান্না করার গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও হাদিস উল্লেখ করা হলো।
কুরআনের আয়াত
কবরের জীবন সত্য
ثُمَّ أَمَاتَهُ فَأَقْبَرَهُ
“অতঃপর তিনি তাকে মৃত্যুবরণ করান এবং কবরস্থ করেন।” (সুরা আবাসা: ২১)
এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, মৃত্যু ও কবরের জীবন অবধারিত। তাই আমাদের উচিত কবরের শাস্তির কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা।
কবরের শাস্তি কঠিন হতে পারে
এখানে বলা হয়েছে যে, মৃত্যুর পর মানুষ বারজাখে থাকবে, যা কবরের জীবন। এটি কষ্টকর বা শান্তিময় হতে পারে, যা নির্ভর করে মানুষের আমলের ওপর।
وَمِن وَرَائِهِم بَرْزَخٌ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ
“তাদের সামনে রয়েছে বারজাখ (কবরের জীবন), যা কেয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে।” (সুরা মুমিনুন: ১০০)
অপরাধীদের জন্য কঠিন শাস্তি
النَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوًّا وَعَشِيًّا
“তাদের (ফেরাউন ও তার অনুসারীদের) সামনে সকাল-সন্ধ্যা আগুন পেশ করা হয়...” (সুরা গাফির: ৪৬)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, কবরের শাস্তি কেয়ামতের আগেই শুরু হয়। এটি চিন্তা করলেই মানুষের অন্তর কেঁপে ওঠে।
মৃত্যুর পর জবাবদিহিতা
وَقِفُوهُمْ إِنَّهُم مَّسْئُولُونَ
“তাদের থামিয়ে রাখো, নিশ্চয়ই তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে।” (সুরা আস-সাফফাত: ২৪)
কবরের প্রথম রাতেই মুনকার-নাকির ফেরেশতা প্রশ্ন করবেন, যা মানুষকে ভীত করে তোলে।
নেককারদের জন্য শান্তি
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا
“যারা বলে, 'আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ' এবং তারপর দৃঢ়তার সঙ্গে চলে, তাদের ওপর ফেরেশতারা অবতীর্ণ হন এবং বলেন, ‘ভয় করো না ও দুঃখ করো না’।” (সুরা হা-মিম সাজদা: ৩০)
সৎকর্মশীলদের জন্য কবর শান্তির জায়গা হবে, তাই আমাদের উচিত আল্লাহর অনুগত হওয়া।
হাদিস:
রাসূল (সা.) কবরের ভয়ে কাঁদতেন
হযরত বরাআ ইবনে আযিব (রা.) বলেন, “একদিন নবী (সা.) একটি কবরের পাশে বসে কাঁদলেন এবং বললেন, ‘হে ভাইগণ! কবরের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য প্রস্তুতি নাও’।” (ইবনে মাজাহ)
কবর প্রথম পরীক্ষা
নবী (সা.) বলেন, “কবর আখিরাতের প্রথম ধাপ। যদি কেউ এখানে সফল হয়, তাহলে তার পরবর্তী জীবন সহজ হবে। আর যদি সে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার পরবর্তী জীবন কঠিন হবে।” (তিরমিজি)
কবরের শাস্তির দৃশ্য
রাসূল (সা.) বলেছেন, “আমি যদি আশঙ্কা না করতাম যে, তোমরা কবর দাফন বন্ধ করে দেবে, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম যেন তিনি তোমাদেরকে কবরের শাস্তি শুনিয়ে দেন।” (মুসলিম)
কবরের ভয়ে কান্না
হযরত উসমান (রা.) যখন কবরের পাশে যেতেন, তখন তিনি এত বেশি কাঁদতেন যে দাড়ি ভিজে যেত। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলতেন, “আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘কবর আখিরাতের প্রথম ধাপ। যে এতে রক্ষা পাবে, তার জন্য পরবর্তী ধাপ সহজ হবে। আর যে এতে ব্যর্থ হবে, তার জন্য পরবর্তী ধাপ কঠিন হবে’।” (তিরমিজি)
কবরের আযাব থেকে বাঁচার দোয়া
নবী (সা.) প্রতিদিন দোয়া করতেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কবরের শাস্তি থেকে আশ্রয় চাই।” (বুখারি, মুসলিম)
উপসংহার
কবরের জীবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানুষের জন্য পরীক্ষার জায়গা, যেখানে নেককাররা শান্তি পাবে এবং পাপীরা শাস্তি ভোগ করবে। তাই আমাদের উচিত কবরের ভয় মনে রাখা, গুনাহ থেকে বাঁচা এবং আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করা। কবরের আযাব থেকে রক্ষা পেতে পাঁচটি কার্যকর উপায় হলো:
১. আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া
২. নিয়মিত সালাত আদায় করা
৩. ভালো কাজ করা ও গুনাহ পরিত্যাগ করা
৪. রাসূল (সা.)-এর শেখানো দোয়া পড়া
৫. আল্লাহর ভয়ে কান্না করা ও বিনয়ী হওয়া
আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন এবং আখিরাতে শান্তি দান করুন। আমিন