মোবাইল চালালে কি ব্রেন টিউমার হতে পারে
মোবাইল চালালে কি ব্রেন টিউমার হতে পারে?
আজকের যুগে মোবাইল ফোন আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে অনেকেই চিন্তিত থাকেন, মোবাইল ব্যবহারের ফলে ব্রেন টিউমার বা মস্তিষ্কের ক্যান্সার হতে পারে কিনা। বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে বিভিন্ন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, এবং কিছু গবেষণায় মোবাইল ফোনের বিকিরণের (radiation) সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায় না যে মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে সরাসরি ব্রেন টিউমার হয়।
মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন ও ব্রেন টিউমার
মোবাইল ফোন মূলত রেডিওফ্রিকোয়েন্সি (RF) বিকিরণ নির্গত করে, যা অয়নাইজিং নয়। অয়নাইজিং রেডিয়েশন যেমন এক্স-রে বা গামা রশ্মি ডিএনএ-কে পরিবর্তন করতে পারে এবং ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু মোবাইল ফোনের নন-আয়নাইজিং রেডিয়েশন শরীরের টিস্যুকে উষ্ণ করতে পারে, তবে এটি ডিএনএ পরিবর্তন করার মতো শক্তিশালী নয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা (IARC) মোবাইল ফোনের বিকিরণকে "সম্ভাব্য কার্সিনোজেনিক" (possibly carcinogenic) বা সম্ভাব্য ক্যান্সারের ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। তবে এখনো প্রমাণ পর্যাপ্ত নয় যে এটি ব্রেন টিউমার বা অন্যান্য ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
সাস্থসম্মত উপায়ে তৈরি ১০০%-খাঁটি-ঘি
গবেষণাগুলোর ফলাফল
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় না। যেমন, ২০১০ সালে প্রকাশিত "Interphone Study" মোবাইল ফোনের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের সঙ্গে ব্রেন টিউমারের সরাসরি সম্পর্ক খুঁজে পায়নি।
তবে কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে গ্লিওমা (এক ধরনের ব্রেন টিউমার) হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা বেড়ে যেতে পারে। যদিও এটি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়, তবুও বিজ্ঞানীরা সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন।
সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
যদিও মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে ব্রেন টিউমার হওয়ার প্রমাণ স্পষ্ট নয়, তবে সতর্কতা অবলম্বন করা ভালো। কিছু সাধারণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে:
- হ্যান্ডস-ফ্রি ডিভাইস ব্যবহার করুন – মোবাইল ফোন কানের কাছে বেশি সময় ধরে রাখার পরিবর্তে ইয়ারফোন বা স্পিকার ব্যবহার করুন।
- সল্প সময় কথা বলুন – ফোনে দীর্ঘ সময় কথা বলার অভ্যাস কমান।
- মোবাইল ফোন শরীর থেকে দূরে রাখুন – ঘুমানোর সময় ফোন মাথার কাছে না রেখে দূরে রাখুন।
- লো নেটওয়ার্কে ফোন ব্যবহার এড়িয়ে চলুন – সিগন্যাল দুর্বল হলে মোবাইল ফোন বেশি রেডিয়েশন নির্গত করে, তাই এ ধরনের পরিবেশে ফোন ব্যবহার কমানো ভালো।
উপসংহার
বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে সরাসরি ব্রেন টিউমার হয় বলে নিশ্চিত কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তবে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের অভ্যাস পরিবর্তন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। গবেষণা চলমান রয়েছে, এবং ভবিষ্যতে নতুন তথ্য প্রকাশিত হলে তা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।