দুশ্চিন্তায় কি চুল পাকে? - Does anxiety cause hair loss?
দুশ্চিন্তায় কি চুল পাকে?
টেনশন বা মানসিক চাপ আমাদের শরীরের উপর বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে, যার মধ্যে অন্যতম হলো চুল পাকা। অনেকে বলে থাকেন যে বেশি দুশ্চিন্তা করলে চুল দ্রুত সাদা হয়ে যায়। কিন্তু এর পেছনে কি কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে? আসলে, মানসিক চাপ এবং চুল পাকার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
চুল পাকার প্রক্রিয়া
আমাদের মাথার ত্বকে মেলানিন নামে একটি রঞ্জক পদার্থ (পিগমেন্ট) থাকে, যা চুলের রং নির্ধারণ করে। মেলানিন উৎপাদন কমে গেলে বা বন্ধ হয়ে গেলে চুল সাদা বা ধূসর হতে শুরু করে। সাধারণত, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলানিন উৎপাদন ধীরগতির হয়, যার ফলে চুল পেকে যায়। তবে কিছু বিশেষ কারণের জন্য অল্প বয়সেও চুল পেকে যেতে পারে, যার মধ্যে অন্যতম হলো মানসিক চাপ।
টেনশন ও চুল পাকার সম্পর্ক
গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত মানসিক চাপ আমাদের শরীরে কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়, যা চুলের রং পরিবর্তনের জন্য দায়ী হতে পারে।
১. স্ট্রেস হরমোনের প্রভাব
যখন কেউ অতিরিক্ত টেনশনে থাকেন, তখন শরীর কর্টিসল (Cortisol) নামক একটি স্ট্রেস হরমোন উৎপন্ন করে। এটি শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সচল রাখতে সাহায্য করলেও অতিরিক্ত কর্টিসল উৎপন্ন হলে তা শরীরের কোষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে চুলের ফলিকলে। এর ফলে মেলানিন উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং চুল দ্রুত সাদা হতে শুরু করে।
সাস্থসম্মত উপায়ে তৈরি ১০০%-খাঁটি-ঘি
২. অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের ভূমিকা
টেনশন দীর্ঘস্থায়ী হলে শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বৃদ্ধি পায়। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হল এমন একটি অবস্থা যেখানে ফ্রি র্যাডিক্যাল নামে ক্ষতিকর কণাগুলো শরীরের সুস্থ কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি চুলের ফলিকলে অবস্থিত মেলানোসাইট কোষগুলোর ক্ষতি করতে পারে, যা মেলানিন উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং চুল ধূসর বা সাদা হয়ে যায়।
৩. নার্ভাস সিস্টেমের ভূমিকা
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক চাপ আমাদের নার্ভাস সিস্টেমের ওপর প্রভাব ফেলে এবং সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে সক্রিয় করে তোলে। এতে নরএপিনেফ্রিন (Norepinephrine) নামক এক ধরনের রাসায়নিক উৎপন্ন হয়, যা চুলের ফলিকলে থাকা স্টেম সেলগুলোর ক্ষতি করতে পারে। ফলস্বরূপ, নতুন জন্ম নেওয়া চুলে মেলানিন উৎপাদন হয় না, এবং তা ধূসর বা সাদা হয়ে যায়।
টেনশনজনিত চুল পাকা প্রতিরোধের উপায়
১. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা:
- মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম মানসিক চাপ হ্রাস করে এবং শরীরের হরমোন ব্যালান্স ঠিক রাখে।
-
সঠিক খাদ্যাভ্যাস:
- পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন বি-১২, আয়রন, জিঙ্ক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত খাবার খেলে চুল সুস্থ থাকে।
- সবুজ শাকসবজি, বাদাম, ডিম ও দুধ মেলানিন উৎপাদনে সহায়তা করে।
-
ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার:
- গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান ও অ্যালকোহল অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়িয়ে চুল পাকার গতি বাড়ায়।
-
স্ট্রেস কমানোর জন্য ব্যায়াম:
- নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে এন্ডোরফিন (Endorphin) নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা টেনশন কমাতে সাহায্য করে।
উপসংহার
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চুল পাকা স্বাভাবিক ব্যাপার হলেও অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে অল্প বয়সেও চুল ধূসর বা সাদা হয়ে যেতে পারে। স্ট্রেস হরমোন, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও নার্ভাস সিস্টেমের পরিবর্তনের কারণে মেলানিন উৎপাদন ব্যাহত হয়, যা চুল পাকার অন্যতম কারণ। তবে সঠিক জীবনযাপন, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা কিছুটা প্রতিরোধ করা সম্ভব।