ইব্রাহীম (আ)-কে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ - Throwing Ibrahim (as) into the fire
05:27:15 12/04/2023
হযরত ইব্রাহীম (আ)-কে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ : হযরত ইব্রাহীম (আ) মূর্তিগুলোর অক্ষমতা সম্পর্কে যে নির্ভিক পরিষ্কার উক্তি করলেন, বাদশাহ নমরূদ তার কোন জবাব দিতে পারেনি। দরবারের উপস্থিত লোকজন চিন্তা করে দেখল, ইব্রাহীম (আ) যে কথা বলছে, তা সম্পূর্ণ খাঁটি। সত্যই তারা নিজেদের হাতে গড়া এ মাটির পুতুলগুলোকে পূজা করে কি ফল পেতেছে। তাদের মনের এ প্রশ্ন তারা প্রকাশ করতেই যাচ্ছিল, কিন্তু বাদশাহর ভয়ে তাদের আর সাহস হল না। ওদিকে বাদশাহ নমরূদ আজরের এ অল্পবয়স্ক ছেলেটির সাথে যুক্তিতে পরাজিত হয়ে পরাজয়জনিত গ্লানি এবং অপমানের জ্বালায় মনে মনে ফুঁসে উঠেছিল।
সে ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে তার আমলাদেরকে আদেশ করল, এ স্পর্ধিত ছেলেটি ধৃষ্টতা ও স্পর্ধার সীমাতিক্রম করেছে। এর সাহস দেখে অবাক হয়ে গিয়েছি। আর একে বাড়তে দেয়া যায় না। এর বিষদাঁত এ মুহূর্তে ভেঙ্গে দেয়া দরকার। তোমরা ব্যবস্থা শুরু কর, বড় একটি অগ্নিকুন্ড প্রজ্জ্বলিত কর। একে সে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে জ্বালিয়ে মারতে হবে এবং এ ঘটনা প্রকাশ্যে লোকের সামনে অনুষ্ঠিত হবে, যাতে লোকজন দেখে শিখতে পারে, কেউ এ জাতীয় অপরাধ করলে তার জন্য এরূপ চরম শাস্তি ভোগ করতে হয়।
বাদশাহ নমরূদের আদেশ শিরোধার্য, অবশ্য পালনীয়; সুতরাং সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিকুন্ড নির্মাণ ও প্রজ্জ্বলিত করার আয়োজন শুরু হয়ে গেল। এক বিশালাকৃতির খোলা ময়দানে যমিন খুড়ে বিরাট আয়তন বিশিষ্ট একটি গভীর গর্ত তৈরি করা হল। পাহাড় হতে রাশি রাশি বিরাট কাঠ এনে ঐ গর্তমধ্যে সাজানো হতে লাগল। এরপর হাজার হাজার মণ তৈল ঢেলে কাঠ ভিজিয়ে তাতে অগ্নিসংযোগ করা হল। ঘন ঘোর কৃষ্ণবর্ণ ধূম্ররাশি মাথায় ধারণ করে বিশ্বগ্রাসী অগ্নিরাশি বেশি গর্জনে জ্বলে উঠল। তার তাপে চারপাশে বহুদূর এলাকা পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে গেল।
কথিত আছে যে, উক্ত অগ্নিকুন্ডের দৈর্ঘ্য ছিল চব্বিশ মাইল, প্রস্থও ছিল চব্বিশ মাইল এবং তার গভীরতা ছিল একশত গজ। অগ্নিকুন্ড যখন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল তখন আগুনের তাপে তার চারদিকে কেউ যেতে পারছিল না। আগুনের শিখা এতদূর উঁচু হয়ে উঠল যে আকাশে অন্ততঃ অর্ধমাইল উপরে উড্ডয়নরত পাখিগুলোও তার তাপে মারা গিয়ে মাটিতে পড়ে যেতে লাগল। তখন সকলে এ সমস্যায় প্রমাদ গণে চিন্তা করতে লাগল, কিভাবে অগ্নিকুণ্ডের নিকটবর্তী হয়ে হযরত ইব্রাহীম (আ)-কে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা যাবে। কারও মাথায় কোন বুদ্ধি খেলল না ।
পাপীষ্ঠ ইবলীস এসব ব্যাপারে দূরে থেকেও লক্ষ্য রেখেছিল। সে দেখল যে, তার মানুষেরা এক জটিল সমস্যায় পতিত হয়েছে। তারা তারই নির্দেশিত পথে বেশ সুন্দরভাবে অগ্রসর হচ্ছিল, কিন্তু সহসা এক প্রতিবন্ধকতায় তাদের গতি বাধাগ্রস্থ হয়েছে। সে ভেবে দেখল যে, এ প্রতিবন্ধকতাকে তার নিজের গিয়েই অপসারণ করে দিতে হবে, নতুবা তারা এপথে আর অগ্রসর হতে পারবে না। এরূপ চিন্তা করে সে নিজে এক সাধু দরবেশের বেশ ধরে নমরুদের আমলাদের কাছে উপস্থিত হল এবং তাদেরকে এরূপ একটি পরামর্শ দিল যে, তোমরা বিরাট একটি চরখ গাছ স্থাপন কর। এরপর উক্ত চরখ গাছের সাহায্যে ইব্রাহীমকে আগুনের কুণ্ডলিতে নিক্ষেপ কর।
ইবলীসের পরামর্শানুযায়ী বিরাট একটি চরখ গাছ তৈরি করে তার একপ্রান্তে হযরত ইব্রাহীম (আ)-কে বেঁধে সকলে উক্ত চরখ গাছের অপরপ্রান্ত ধরে শূন্যে উত্তোলন করার চেষ্টা করল; কিন্তু কোনক্রমেই তারা উক্ত চরখ গাছের অপরপ্রান্ত শূন্যে উঠাতে পারেনি। কথিত রয়েছে যে, কাফেরগণ যখন হযরত ইব্রাহীম (আ)-কে শূন্যে উঠাইবার চেষ্টা করছিল তখন প্রায় চার হাজার লোক চড়খ গাছের অপরপ্রান্ত ধরে যথাসাধ্য চেষ্টা করেও তা শূন্যে উঠাইতে সক্ষম হল না।
সকলেই চিন্তিত হয়ে পড়ল যে, এখন কিভাবে কাজ সমাধা করা যায়। এমন সময় পাপাত্মা ইবলীস এসে বলল যে, যদি সারা পৃথিবীর মানুষ একত্র হয়েও এভাবে চেষ্টা কর তবুও হযরত ইব্রাহীম (আ)-কে আগুনের কুন্ডলিতে নিক্ষেপ করতে পারবে না। কেননা সত্তর হাজার ফেরেশতা চরখ গাছের একপ্রান্ত চেপে ধরেছে। অতএব তোমরা যদি এখানে প্রকাশ্যভাবে চল্লিশজন পুরুষের সাথে চল্লিশজন অপরিচিতা রমণীর সঙ্গম করাতে পার তা হলে ফেরেশতাগণ এখান হতে বিদায় হয়ে যাবে। তখন তোমরা অতি অনায়াসে ইব্রাহীম (আ)- কে শূন্যে উঠিয়ে আগুনের কুন্ডলিতে নিক্ষেপ করতে পারবে।
ইবলীসের একু পরামর্শানুযায়ী অগণিত লোকের সামনে প্রকাশ্যে সেভাবে চল্লিশজন পুরুষের সাথে চল্লিশজন রমণীর সঙ্গম করানো হল। এ মারাত্মক নির্লজ্জ কান্ড সংঘটিত হওয়ার কারণে পুণ্যবান ফেরেশতা সকল সেখান হতে বিদায় হয়ে গেল। আর এ সুযোগে নমরূদের কর্মচারীগণ চরখ গাছ শূন্যে উঠিয়ে হযরত ইব্রাহীম (আ)-কে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করল।
কথিত আছে যে, কাফেরগণ যখন ইব্রাহীম (আ) কে আগুনের কডলিতে নিক্ষেপ করতে উদ্যত হয়েছিল তখন চারহাজার কাফের চরখ গাছের প্রাপ্ত ধরে তা শূন্যে উঠানোর চেষ্টা করেছিল। তাদের মধ্যে স্বয়ং হযরত ইব্রাহীম (আ) এর মূর্তিপূজক কাফের পিতা আজরও ছিল। কেননা সেও তার ছেলের উপরে অত্যন্ত নারাজ এবং অসন্তুষ্ট ছিল। এ দৃশ্য দেখে হযরত ইব্রাহীম (আ) আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানিয়েছিলেন যে, হে মাবুদ, দেখছি আজ আমার প্রাণ শেষ করার কাজে স্বয়ং আমার জন্মদাতা পিতা পর্যন্ত শরীক হয়েছে, সুতরাং আমাকে সাহায্য করতে আজ আপনি ব্যতীত আর কেউই নেই।
বর্ণিত রয়েছে যে, আল্লাহর প্রিয় দোস্ত ইব্রাহীম (আ) যখন কাফেরদের দ্বারা উত্তোলিত চরখ গাছ হতে অগ্নিকুন্ড ছুটে পড়ছিলেন, ঠিক সে মুহূর্তে আল্লাহর নির্দেশে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হল, যেন ফেরেশতাগণ আল্লাহর বন্ধুর ঐ চরম সঙ্কটকে প্রত্যক্ষ করে। তাঁর জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া জানাতে পারে। সত্যই এ লোমহর্ষক হৃদয়বিদারী দৃশ্য দেখে আসমানের সকল ফেরেশতাগণ শিহরিয়ে উঠলেন এবং সকলে মিলে আল্লাহর দরবারে আকুল ফরিয়াদ করলেন, হে মাবুদ, তুমি তোমার এ খালেছ বন্ধু হযরত ইব্রাহীম (আ)-কে নমরূদের জ্বলন্ত আগুন হতে বাঁচিয়ে রাখ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁদের ফরিয়াদ কবুল করলেন এবং ফেরেশতা জিব্রাইল (আ) কে আদেশ করলেন, ওহে জিব্রাইল, তুমি সমস্ত ফেরেশতাকে নিয়ে আমার খনীলের কাছে
জলদি উপস্থিত হও এবং তাঁর নিকট জিজ্ঞেস কর, সে তোমার নিকট হতে কি সাহায্য কামনা করে। জিব্রাইল হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর নিকট চোখের পলকে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর খলীল, বলুন আমাকে এখন কি করতে হবে? আপনি হুকুম করলে আমি ফেরেশতাগণকে নিয়ে আমাদের ডানার আঘাতে নমরূদের এ অগ্নিকুণ্ডকে এ মুহূর্তে সাত সমুদ্রে নিক্ষেপ করতে পারি।
হযরত ইব্রাহীম (আ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে জিব্রাইল, এ কি আল্লাহর ইচ্ছা, না আপনি আপনার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন? জিব্রাইল (আ) বললেন, এ আল্লাহ আমাকে বলেননি, তবে আমি বলছি। তখন হযরত ইব্রাহীম (আ) বললেন, ভাই জিব্রাইল, আপনাকে আল্লাহ যা বলেছেন, আপনার শুধু তাই করা কর্তব্য অন্য কিছু নয়।
জিব্রাইল (আ) বললেন, তবে আপনি বলুন, আপনি আমার নিকট এ সঙ্কটজনক মুহূর্তে কি সাহায্য পেতে চান
জবাবে হযরত ইব্রাহীম (আ) বললেন, আমি আপনার নিকট হতে কোন প্রকার সাহায্য পেতে চাইনা। আমি সাহায্য কামনা করি সে মহান মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে।
হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর কথা শুনে ফেরেশতা জিব্রাইল একেবারে নীরব হয়ে গেলেন। তিনি আর কোন কথা বললেন না। এদিকে হযরত ইব্রাহীম (আ) এতক্ষণে আগুনের প্রায় নিকটবর্তী হয়ে গেছেন, এখন শুধুমাত্র আগুনের স্পর্শ হওয়াটুকু বাকী। কিন্তু ঠিক এ মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালার পাক যবান হতে জোড়ে আওয়াজ হল : 'ঝুলনা ইয়া নারু কুনী বারদার্ট ওয়া সালামান আলা ইব্রাহীম।
অর্থাৎ হে আগুন, আমার দোস্ত ইব্রাহীমের জন্য হিমশীতল ও শান্তিদায়ক হয়ে যাও। হযরত ইব্রাহীম (আ) অগ্নিকুণ্ডে পতিত হলেন ঠিকই, কিন্তু তা আর তখন অগ্নিকুন্ড রইল না। তাঁর পতিত হবার পূর্ব মুহূর্তে তা এক সুন্দর সুস্নিগ্ধ বাগিচায় পরিণত হল। হযরত ইব্রাহীম (আ) তারই মধ্যে পতিত হলেন, এবং পরম শান্তি লাভ করলেন। কথিত আছে যে, ফেরশতা জিব্রাইল (আ) তখন অবাক হয়ে একদৃষ্টিতে হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর দিকে তাকিয়ে রইলেন। তা দেখে হযরত ইব্রাহীম (আ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কি ভাই জিব্রাইল, আপনি এমন আশ্চার্যহলেন কি কারণে?
জিব্রাইল জবাব দিলেন, হে আল্লাহর খলীল। আমি আল্লাহর কুরদত এবং রহমতের কথা চিন্তা করছি আর ভাবছি, আপনার অভূতপূর্ব ছবরের দৃশ্য দেখে। সত্যি বলতে কি, আপনার অভাবনীয় ধৈর্য এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা দেখে আমি বিশ্বয়ে অভিভূত হয়ে পড়েছি। ধৈর্য এবং নির্ভরতার এমন দৃষ্টান্ত আমি আর কখনও দেখিনি ।
অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হবার পরবর্তী ঘটনা
হযরত ইব্রাহীম (আ) অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হবার পরে বাদশাহ নমরূদ তার সমস্ত লোকজনসহ সকলে দেখল যে, অগ্নিকুন্ডের চারদিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। অথচ তার মধ্যস্থলের আগুন নিভে, সেখানে একটি সুন্দর ফুলের বাগান সৃষ্টি হয়েছে। আর তার কেন্দ্রস্থলে একখানা স্বর্ণ পালংকে হযরত ইব্রাহীম (আ) আসীন হয়ে পরম আনন্দে আল্লাহ তায়ালার গুণগান করছেন। এ আশ্চার্য ঘটনা দেখে বাদশাহ নমরূদ আফসুস করে বলল, হায়, আমার এত শ্রম-চেষ্টা ব্যর্থতায় পরিণত হল। এ আশ্চর্য ঘটনা চোখের সামনে দেখে বহুসংখ্যক কাফের তখনই হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর প্রচারিত সত্যধর্মে দীক্ষিত হল।
কিন্তু এ ঘটনায় পাপীষ্ঠ নমরূদের মন আবার বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। সে হযরত ইব্রাহীম (আ)-কে হত্যা করার জন্য আবার উদ্যোগী হয়ে তার লোক-লশকরকে বলল যে, ইব্রাহীমের সাথে আগুন নিজের ধর্ম পালন না করলেও আমরা ইব্রাহীমকে অন্যভাবে হত্যা করব। এম তোমরা, এবার তাকে লক্ষ্য করে চারদিক হতে একাধারে বড় বড় পাথরখন্ড এবং ঢিলসমূহ নিক্ষেপ করতে থাক। দেখি এখন ইব্রাহীম কিসের জোরে নিজেকে বাঁচাতে পারে।
বৃষ্টিপাতের মত ঢিল ও পাথরখন্ড বর্ধিত হতে লাগল, কিন্তু আল্লাহর অসীম কুদরতে একটি ঢিলও তাঁর নিকট পৌঁছল না। ঢিলাগুলো সবই বাতাসের সাথে শূন্যে ভাসতে লাগল। বাদশাহ নমরূদ এবার তাঁর চেষ্টা ব্যর্থ হল দেখে হযরত ইব্রাহীম (আ)-কে লক্ষ্য করে বলল, হে ইব্রাহীম। এতক্ষণে আমার মনে হচ্ছে যে, তোমার আল্লাহ সত্যই অদ্বিতীয় ও তিনি অসীম শক্তির অধিকারী। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। এবার আমি তাঁর উপরে ঈমান আনতে প্রকৃত, তবে আমার একটি শর্ত থাকবে। তা তোমার নিকট বলব। তার আগে তুমি ওখান হতে বের হয়ে আমার নিকটে এস।
হযরত ইব্রাহীম (আ) বের হয়ে নমরূদের নিকট আসলেন, এরপর বললেন, বল দেখি, তুমি আল্লাহর উপর ঈমান আনতে কি শর্ত প্রয়োগ করতে চাও?
তখন নমরূদ বলল, আমি তোমার সামনেই আল্লাহর নামে মোট একলক্ষ চার হাজার উট, দুম্বা, বকরী এবং গাভী কোরবানী করব। তারপর আমি আমার খাজাঞ্চিখানাগুলো হতে বিশটি খাজাঞ্চিখানার সমস্ত স্বর্ণ ও রৌপ্য আল্লাহকে উপহার দেব। আমার তাঁর নিকট শুধু দাবী এই যে, আমি তাঁর ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ এবং আমার এ সমস্ত উপঢৌকন প্রদানের বদলে তিনি আমাকে এরূপ কেরামতী দান করবেন, যা তোমাকে দান করেছেন। যার বদৌলতে তুমি আমাদের সকলকে আশ্চয়ান্বিত করে দিয়েছ।
নমরূদের কথা শুনে হযরত ইব্রাহীম (আ) বললেন, তুমি আমার মহান আল্লাহর সম্পর্কে কোন ধারণাই করতে পারনি। তিনি কারও নিকট হতে কোন রকম ঘুষ রেসওয়াত গ্রহণ করেন না। তিনি যাকে কিছু দান করে থাকেন, তার বদলে কোন কিছুই আল্লাহ পাক দাবী করেন না। আর ওহে অবুঝ বাদশাহ! তুমি যে তাঁকে উপহার বা উপঢৌকন দিতে চাও, এ কার মাল ও দৌলত? এ কি তোমার? তুমি কোথায় এসব পেয়েছ। এগুলো সবই তো তোমার প্রতি তাঁর করুণার দান। তুমি যে এ বিশাল ভূ-খণ্ডের অধিপতি হয়েছ এও শুধু তাঁরই মর্জীর ফল। আল্লাহর মর্জী না হলে তুমি এর কোন কিছুরই মালিক হতে নাঃনিজেকে বাদশাহ বলে প্রকাশ করতে পারতে না। এ পর্যন্ত বলে হযরত ইব্রাহীম (আ) নিজের ঘরে চলে গেলেন। এদিকে বাদশাহ নমরূদ তাঁর কথাগুলো শুনে চিন্তান্বিত হয়ে পড়ল ।
সে ভাবতে লাগল, ইব্রাহীম (আ)-এর কথাগুলো তো অত্যন্ত পরিষ্কার, কোন জড়তা বা অস্পষ্টতা নেই তাঁর কোন একটি বাক্যে । নিশ্চয়ই সে তার অদৃশ্য আল্লাহ প্রদত্ত শক্তিতেই এই শক্তিমান। আমি তো তার সাথে কোনদিন কোন কথায়, কোন যুক্তিতে, বা শক্তিতে এঁটে উঠলাম না। তবু কেন আমি তাঁর সে আল্লাহর উপরে অর্থাৎ সকলেরই আল্লাহর উপরে বিশ্বাস
আনব না? হঠাৎ নমরূদ উঠে তার প্রধান উজীরের কাছে গিয়ে ব্যস্ততার সাথে বলল, উজীর! চল আর দেরি করে ফল নেই, চল আমরা ইব্রাহীম(আ) এর নিকট গিয়ে তাঁর খাঁটি ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করি।
নমরুদের প্রধান উজীর ছিল অত্যাস্ত কঠিন হৃদয়ের বেঈমান। তার অন্তরে পাপ ও আল্লাহর সাথে অবাধ্যতার ক্লেদরাশি এমন অদ্ভূত রূপ ধারণ করছিল, যেখানে পুণ্যের সামান্য লেশটুকু ঢুকার কোন পথ ছিল না। সে বাদশাহর এ ভাব লক্ষ্য করে তাকে নানা প্রকার অমূলক কথা দ্বারা প্রবোধ দিতে শুরু করল যে, জাঁহাপনা, আপনি হয়ত ইব্রাহীম (আ) এর আগুন হতে বেঁচে থাকার খুবই গুরুত্ব প্রদান করছেন, আসলে এ ব্যাপারটি তেমন মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। ইব্রাহীম নিরাকার খোদার কথা মুখে যতই বলুক, মূলে সে আগুনের উপাসক।
আমি অতি বিশ্বস্তসূত্রে এ তথ্য উদ্ধার করেছি। আগুনের ভক্ত এবং উপাসক বলেই তাকে অগ্নি দ্বারা দক্ষিভূত হতে হয়নি, সুতরাং আপনি তার ছলনায় পরে যদি নিজের ইজ্জত-সম্মান বিসর্জন দিয়ে একটা কিছু করে বসেন, তা হবে আপনার ভবিষ্যতের অনুশোচনার একমাত্র কারণ। তাছাড়াও বিশেষ কথা হল, সমগ্র রাজ্যের প্রজাগণ যেখানে আপনাকে প্রভু জ্ঞানে পূজা করে, আপনি তাদের সকলকে প্রতিপালন করেন, সেখানে আপনি নিজেই যদি কল্পিত কোন ব্যক্তিকে নিজের প্রতিপালক বলে স্বীকার করেন তা হলে আপনি দেশের প্রজা বা জনসাধারণের নিকট মুখ রাখবেন কি করে?
আর আপনার এতদিনকার ভূমিকা সম্পর্কই বা আপনি তাদের কাছে কি বলবেন, তা একটু ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। উত্তীরের এ ধরনের কথায় নমরূদের মনের অবস্থা পরিবর্তিত হল। সে তার ধর্মান্তরের সদিচ্ছাকে পায়ে ঠেলে সম্পূর্ণরূপে যে নমরূদ ছিল, সে নমরূদই রয়ে গেল।