টি ও টার ব্যবহার - Use of T and Tar
05:12:51 12/04/2023
টি ও টার ব্যবহার : 'টি' এর সঠিক ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে আমরা মোটেই সচেতন নই, সুতরাং এ বিষয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। দুঃখের বিষয়, এ সম্পর্কে আমারও জ্ঞানের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তবু আজ এখানে আমার জানার পরিধিতে সামান্য কিছু আলোচনা করছি।
নীচের বাক্যটা দেখো-
গোসল সেরে কলসিটি ভরে বধু ঘরে ফিরছিলো।
সেরে-ভরে-ঘরে, পরপর এই তিনটি শব্দের বিন্যাস একটি সুন্দর সুরছন্দ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু লেখক 'টি' অব্যয় যোগ করে বাক্যের সৌন্দর্য নষ্ট করেছেন। তিনি যদি গোসল সেরে কলসি ভরে বধু ঘরে ফিরছিলো' লিখতেন তাহলে সুন্দর হতো। কেননা 'টি' হলো বিশিষ্টতানির্দেশক অব্যয়। আর এখানে কলসিকে বিশেষভাবে নির্দেশ করার অর্থবহতা নেই। সুতরাং বিশিষ্টতানির্দেশক অব্যয়েরও প্রয়োজন নেই।
পক্ষান্তরে- 'জলপূর্ণ কলসিটি কাঁখে করে বয়ে নিতে বধুর কষ্ট হচ্ছিলো।'- এ বাক্যে 'টি' অব্যয়ের প্রয়োজন রয়েছে। কেননা এখানে বিশেষভাবে জলপূর্ণ কলসিটি নির্দেশ করা উদ্দেশ্য। লেখক বন্ধুর কষ্টের কারণটির দিকে পাঠকের দৃষ্টি বিশেষভাবে আকর্ষণ করতে চাচ্ছেন।
ইংরেজীতে 'দি' এবং আরবীতে 'আল' এর বহুল ব্যবহার দেখা যায়, কিন্তু বাংলায় 'টি' অব্যয় প্রয়োগে সংযম শ্রেয়। তাই সাধারণ ক্ষেত্রে ঘরটিতে কোন লোক নেই'। না বলে ঘরে কোন লোক নেই' বলা সঙ্গত। তদ্রূপ- সাথে সাথে কলমটা নিয়ে লিখতে বসে গেলাম' না বলে 'সাথে সাথে কলম নিয়ে লিখতে বসে গেলাম' বলা ভালো, কারণ এখানে মূল বক্তব্য হচ্ছে লিখতে বসা, কলমের কথা এসেছে প্রসঙ্গত। সাথে সাথে লিখতে বসে গেলাম বললেও বক্তব্যের কোন বিঘ্ন ঘটত না।
আমার কলম হারিয়ে গেছে। এ বাক্যের উদ্দেশ্য হবে সাধারণভাবে 'কলম হারিয়ে যাওয়ার খবর দেয়া। পক্ষান্তরে আমার কলমটা হারিয়ে গেছে', এবাক্যের উদ্দেশ্য হবে আমার কলমই যে হারিয়েছে সেটা বিশেষভাবে বলা। কিংবা হারিয়ে যাওয়া কলমটার কোন বিশেষত্ব ছিলো, তা বোঝানো। অথবা এজন্যও হতে পারে যে, কলমটা শ্রোতার কাছে পরিচিত। সুতরাং 'টি' অব্যয় প্রয়োগের আগে ভেবে নিতে হবে যে, আমার বক্তব্যের উদ্দেশ্য কী? টি ও টা এর মাঝেও ব্যবহারগত পার্থক্য রয়েছে, ক্ষুদ্রতা বা অন্তরঙ্গতা বা স্নেহ বোঝাতে 'টি' ব্যবহার করা হয়, আর বড় বা অনাদৃত বস্তু বোঝাতে "টা' ব্যবহৃত হয়। তাই কলসিটি এবং কলসটা বলা হয়।
কলসিটা এবং কলসটি বলা হয় না। তদ্রুপ 'বইটি তো বেশ চমৎকার' এবং 'বইটা একদম বাজে' বলতে হবে, 'বইটা তো বেশ চমৎকার' এবং 'বইটি একদম বাজে' লিখলে লোকে তোমাকেই বাজে বলবে। একই কারণে 'ছেলেটি বখে গেছে' না বলে, 'ছেলেটা বখে গেছে' বলতে হবে।
অবশ্য বড়-ছোট, প্রিয়তা- অপ্রিয়তা কিছুই যদি বোঝানো উদ্দেশ্য না হয়, বরং সাধারণভাবে বস্তুটা নির্দেশ করা উদ্দেশ্য হয় তাহলেও 'টা' অব্যয় আসে। যেমন- “টুপিটি মাথায় দাও'। বললে টুপিটির প্রতি বক্তার বিশেষ ঝোঁক বোঝা যাবে। পক্ষান্তরে বিশেষ কিছু বোঝানো উদ্দেশ্য না হলে টুপিটা মাথায় দাও' বলতে হবে। 'আরিফ ছেলেটা ভালো/মন্দ। হিংসা জিনিসটা ক্ষতিকর'। 'বসন্ত ঋতুটা বড় আরামের'। ইত্যাদি ক্ষেত্রে টা ব্যবহার করা হয়েছে এজন্য যে, এখানে শুধু আরিফের অবস্থা বোঝানো উদ্দেশ্য, তার প্রতি প্রিয়তা বা অপ্রিয়তা প্রকাশ করা উদ্দেশ্য নয়, তদ্রূপ হিংসার ক্ষতিকরতা সম্পর্কে বলাই শুধু উদ্দেশ্য, হিংসার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা উদ্দেশ্য নয়।
নামের সঙ্গে টি ও টা যুক্ত হয় না। তবে বক্তার মনের বিশেষ ভাব বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন- 'বশিরটা গেলো কোথায়?' এ বাক্যে বোঝা যায় যে, বশিরের অনুপস্থিতির প্রতি বক্তার বিরক্তি রয়েছে। 'বশিরটি বেশ চালাক' এ বাক্যে বোঝা যায় যে, বশিরের প্রতি বক্তার বিশেষ প্রীতি রয়েছে। কিন্তু এই সব ভাব প্রকাশের জন্য সম্মানিত ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে 'টি বা টা' এর ব্যবহার চলবে না।
নীচের বাক্যটা দেখো, শত্রুরা ত্রিশটি লাশ রেখে পালিয়ে গেলো।'
এখানে টি এর পরিবর্তে টা হওয়াই সঙ্গত ছিলো। তাছাড়া 'রেখে' শব্দটার ব্যবহার স্থান-কাল উপযোগী হয়নি। কেননা তাড়াহুড়া ও ভয়-ভীতির সময় মানুষ রেখে যায় না, ফেলে যায়।