রুচি কমে যাওয়ার কারণ কী কী?
রুচি কমে যাওয়ার কারণ কী কী? রুচি বা ক্ষুধামন্দা হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে খাদ্যের প্রতি আকর্ষণ কমে যায় এবং খাওয়ার ইচ্ছা থাকে না। এটি স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি উভয়ভাবেই হতে পারে। রুচি কমে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক কারণ থাকতে পারে। অনেক সময় এটি সাময়িক সমস্যা হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। নিচে রুচি কমে যাওয়ার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আলোচনা করা হলো।
আপনার কি ডলার প্রয়োজন? বিস্তারিত
১. শারীরিক কারণ
(ক) সংক্রমণ ও জ্বর
যেকোনো ভাইরাসজনিত বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ যেমন ফ্লু, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, অথবা কোভিড-১৯ হলে শরীরে শক্তির ঘাটতি দেখা দেয়। এই সময় খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হয় এবং ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।
(খ) হজমজনিত সমস্যা
গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি, বদহজম, অথবা ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS)-এর মতো রোগ থাকলে রুচি কমে যেতে পারে। যাদের হজম শক্তি দুর্বল, তারা অনেক সময় খাবার খেতে ইচ্ছুক থাকেন না।
(গ) লিভার বা কিডনি সমস্যা
যারা দীর্ঘদিন ধরে লিভারের সমস্যা (যেমন হেপাটাইটিস, ফ্যাটি লিভার) বা কিডনির সমস্যা (যেমন কিডনি ফেইলিউর) নিয়ে ভুগছেন, তাদের ক্ষুধা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায়।
(ঘ) ক্যান্সার ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ
ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, অথবা দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ (যেমন যক্ষ্মা) থাকলে ক্ষুধা কমে যেতে পারে। এ ধরনের রোগে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং খাবারের প্রতি আগ্রহ হ্রাস পায়।
২. মানসিক কারণ
(ক) দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ
অতিরিক্ত মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বা হতাশা থাকলে ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় কাজের চাপ, পরীক্ষার টেনশন, বা ব্যক্তিগত জীবনের সংকটের কারণে মানুষ খাওয়ার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলে।
(খ) বিষণ্ণতা (ডিপ্রেশন)
বিষণ্ণতা হলে সাধারণত ক্ষুধামন্দা দেখা যায়। অনেক সময় বিষণ্ণ ব্যক্তিরা দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকেন বা খাওয়ার ইচ্ছা অনুভব করেন না।
(গ) অনিদ্রা
যারা পর্যাপ্ত ঘুম পান না বা ইনসমনিয়ায় ভুগছেন, তাদের শরীর ও মস্তিষ্ক দুর্বল হয়ে যায় এবং রুচি কমে যেতে পারে।
৩. ওষুধ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণ
(ক) কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক ওষুধ, কেমোথেরাপি, বা কিছু মানসিক রোগের ওষুধ ক্ষুধা কমিয়ে দিতে পারে।
(খ) কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন
যারা ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের অনেক সময় কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে খাবারের স্বাদ-গন্ধ কমে যায়, ফলে ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।
৪. খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা
(ক) অনিয়মিত খাবার গ্রহণ
অনিয়মিত সময়ে খাবার খেলে বা দীর্ঘ সময় না খেলে ক্ষুধা কমে যেতে পারে।
(খ) অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার
অতিরিক্ত তৈলাক্ত, মসলাযুক্ত, বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে হজমে সমস্যা হয় এবং রুচি কমে যেতে পারে।
উপসংহার
রুচি কমে যাওয়া সাময়িক বা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। এটি দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সুস্থ জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্যকর খাবার, এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া রুচি ঠিক রাখতে সাহায্য করতে পারে।