Narrow selection

লোক দেখানোর জন্য কান্না করলে কি শাস্তি হবে?


ইসলামের দৃষ্টিতে লোক দেখানোর জন্য কান্নার শাস্তি : ইসলামে হৃদয়ের প্রকৃত আবেগ প্রকাশ করার অনুমতি রয়েছে, বিশেষত যখন কেউ দুঃখ বা বেদনার সম্মুখীন হয়। তবে, যদি কেউ লোক দেখানোর জন্য কাঁদে, সেটিকে রিয়া বা আত্মপ্রদর্শন হিসেবে গণ্য করা হতে পারে, যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। লোক দেখানোর জন্য কান্না করা আসলে নিছক অভিনয়, যা মানুষকে প্রতারিত করার একটি মাধ্যম হতে পারে। ইসলাম এমন সকল কাজকে নিরুৎসাহিত করে, যেখানে অন্তর ও বাহ্যিক আচরণের মধ্যে গোপন পার্থক্য থাকে।

 

রিয়া বা আত্মপ্রদর্শন এবং এর ভয়াবহতা

ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মপ্রদর্শন (রিয়া) একটি মারাত্মক গুনাহ। হাদিস অনুযায়ী, রিয়া এমন একটি গুণ, যা শিরকের কাছাকাছি। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

"আমি তোমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি ভয় পাই ছোট শিরকের ব্যাপারে।"
সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন: "হে আল্লাহর রাসুল! ছোট শিরক কী?"
তিনি বললেন: "এটি হলো রিয়া (লোক দেখানো)।" (মুসনাদ আহমাদ, ৫/৪২৮)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কান্না করা, দান-সদকা করা, নামাজ পড়া, রোজা রাখা বা অন্য কোনো ইবাদত করা আল্লাহর দৃষ্টিতে অত্যন্ত গর্হিত কাজ। যদি কেউ মানুষের প্রশংসা অর্জনের জন্য বা অন্যদের চোখে নিজেকে ভালো মুসলিম হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য কাঁদে, তাহলে এটি একটি ধোঁকাবাজি এবং এর জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারিত হতে পারে।

 

লোক দেখানোর জন্য কান্নার শাস্তি

কুরআন ও হাদিসের আলোকে, যারা রিয়া বা আত্মপ্রদর্শনের মাধ্যমে ইবাদত বা অন্য কোনো কাজ করে, তাদের জন্য কঠোর পরিণতির কথা বলা হয়েছে। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন:

"অতএব, দুর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদের জন্য, যারা তাদের সালাতের ব্যাপারে উদাসীন এবং যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে।" (সুরা মাউন: ৪-৬)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, যদি কেউ ইবাদতকে শুধু লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করে, তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না এবং এতে শাস্তির বিধান রয়েছে। তদ্রূপ, যদি কেউ কান্নাকাটি করে শুধু অন্যদের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য বা নিজেকে সংবেদনশীল ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরার জন্য, তাহলে এটি ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় এবং কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত।

হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য কোনো কাজ করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে লোকদের সামনে লাঞ্ছিত করবেন।" (সহিহ মুসলিম: ২৯৮৬)

এই হাদিস থেকে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, যারা দুনিয়াতে রিয়ার মাধ্যমে অন্যদের চোখে নিজেকে ভালো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে, আল্লাহ তাদেরকে কিয়ামতের দিন অপমানিত করবেন এবং তাদের আমল গ্রহণ করা হবে না।

 

আত্মশুদ্ধি ও খালেস নিয়তের গুরুত্ব

ইসলামে নিয়ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

"নিশ্চয়ই সব কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল।" (সহিহ বুখারি: ১)

যদি কেউ সত্যিকারের আবেগ থেকে কাঁদে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তা করে, তাহলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যদি উদ্দেশ্য হয় মানুষকে দেখানো, তবে তা সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং এতে শাস্তি হতে পারে।

 

ওয়াইল কূপের পরিচয়

ইসলামের দৃষ্টিতে, জাহান্নাম হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে অবাধ্য ও পাপী মানুষদের জন্য নির্ধারিত কঠিন শাস্তির স্থান। কুরআন ও হাদিসে জাহান্নামের ভয়াবহতা সম্পর্কে অনেক বর্ণনা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো "ওয়াইল" (وَيْلٌ) নামে একটি ভয়ংকর কূপ, যা জাহান্নামের সবচেয়ে গভীরতম অংশে অবস্থিত। এই কূপ সম্পর্কে মহান আল্লাহ এবং রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন।


 

কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:

"অতএব, দুর্ভোগ (وَيْلٌ) সেইসব ব্যক্তিদের জন্য, যারা নিজ হাতে কিতাব লেখে, তারপর বলে, 'এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে'—এটি তারা করে, যাতে এর বিনিময়ে সামান্য লাভ অর্জন করতে পারে। তাদের হাত যা লিখেছে, তার জন্য দুর্ভোগ (ওয়াইল), এবং তারা যা উপার্জন করেছে, তার জন্য দুর্ভোগ!" (সুরা আল-বাকারা: ৭৯)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, যারা আল্লাহর বাণী বিকৃত করে, নিজেদের স্বার্থে ধর্মীয় বিধান পরিবর্তন করে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করে, তাদের জন্য রয়েছে "ওয়াইল" নামক শাস্তির স্থান।


 

যে সমস্ত লোকদের ওয়াইল কূপে রাখা হবে

হাদিস ও কুরআনের বিভিন্ন ব্যাখ্যা থেকে বোঝা যায় যে, নিম্নলিখিত শ্রেণির মানুষদের জন্য এই কূপ নির্ধারিত হয়েছে:

 

১. নামাজে উদাসীন ও রিয়া করা ব্যক্তি

আল্লাহ বলেন:

"অতএব, দুর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদের জন্য, যারা তাদের সালাতের ব্যাপারে উদাসীন এবং যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে।" (সুরা আল-মাউন: ৪-৬)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ অবহেলা করে বা নামাজ পড়ে কিন্তু শুধুমাত্র লোক দেখানোর জন্য, তারা জাহান্নামের গভীর কূপে শাস্তি পাবে।

 

২. প্রতারণাকারী ও ওজনে কম দেওয়া ব্যক্তি

আল্লাহ তাআলা বলেন:

"ধ্বংস (وَيْلٌ) সেই প্রতারণাকারীদের জন্য, যারা মাপজোখে কম দেয়।" (সুরা আল-মুতাফফিফীন: ১-৩)

যারা ব্যবসায় বা লেনদেনে প্রতারণা করে, মাপে ও ওজনে কম দেয়, তারা এই কূপে শাস্তি পাবে।

 

৩. মুনাফিক বা দ্বিমুখী চরিত্রের মানুষ

রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

"মুনাফিকরা জাহান্নামের নিম্নস্তরে থাকবে।" (সুরা আন-নিসা: ১৪৫)

মুনাফিকরা বাইরে মুসলিম সেজে থাকে কিন্তু অন্তরে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। তাদের স্থান হবে জাহান্নামের গভীর কূপে।

 

৪. অহংকারী ও গর্বিত ব্যক্তি

রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি অহংকারবশত এক টুকরো কাপড়ও লম্বা করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার প্রতি দৃষ্টি দিবেন না।" (সহিহ মুসলিম: ২০৮৫)

যারা অহংকার ও আত্মম্ভরিতায় লিপ্ত, তারা কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।


 

ওয়াইল কূপের শাস্তি কেমন হবে?

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ওয়াইল এমন একটি কূপ, যা এত গভীর যে, যদি তার মধ্যে একটি পাথর ফেলা হয়, তবে তা তলানিতে পৌঁছাতে ৭০ বছর সময় লাগবে! (তিরমিজি: ২৫৭৭)

এই কূপের শাস্তি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। সেখানে আগুনের জ্বলন্ত শিখা থাকবে, এবং যেসব মানুষ সেখানে যাবে, তারা চিরস্থায়ী যন্ত্রণার শিকার হবে।


 

উপসংহার

ওয়াইল কূপ হলো জাহান্নামের অন্যতম কঠিন শাস্তির স্থান, যেখানে নামাজ অবহেলা করা ব্যক্তি, প্রতারক, মুনাফিক ও অহংকারী লোকদের রাখা হবে। তাই আমাদের উচিত আল্লাহর আনুগত্য করা, নামাজ ঠিকমতো পড়া, সৎভাবে জীবনযাপন করা এবং সত্য ও ন্যায় পথে চলা।

 

আপনার কি ডলার প্রয়োজন? যোগাযোগ করুন 01303 483365

সাস্থসম্মত উপায়ে তৈরি ১০০%-খাঁটি-ঘি

আমাদের ইউটিউব ইউটিব চ্যানেল


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color