ঠান্ডা লাগলে গলা ব্যথা করে কেন?
ঠান্ডা লাগলে গলা ব্যথা করে কেন? ঠান্ডা লাগলে গলা ব্যথা হওয়া খুবই সাধারণ একটি শারীরিক সমস্যা, যা প্রায় সবাই কখনো না কখনো অনুভব করেছেন। এটি সাধারণত ভাইরাসজনিত সংক্রমণ বা ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে হয়ে থাকে। তবে এর সুনির্দিষ্ট কারণ কী, এবং কেন ঠান্ডা লাগলে গলার ব্যথা হয়? এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
আপনার কি ডলার প্রয়োজন? বিস্তারিত
ঠান্ডা লাগা ও সংক্রমণের সম্পর্ক
শরীর যখন ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়, তখন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সামান্য দুর্বল হয়ে পড়ে। এই দুর্বলতার সুযোগ নেয় বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঠান্ডা লাগার ফলে যে গলা ব্যথা হয়, তা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে ঘটে।
১. ভাইরাসজনিত সংক্রমণ:
সাধারণ ঠান্ডা (Common Cold) এবং ফ্লু (Influenza) হলো গলা ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ। রাইনোভাইরাস (Rhinovirus), ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এবং করোনাভাইরাসের মতো ভাইরাসগুলো যখন শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে, তখন আমাদের শরীর তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। এতে গলায় প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং ব্যথা অনুভূত হয়।
২. ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ:
স্ট্রেপ্টোকক্কাস (Streptococcus) নামক ব্যাকটেরিয়া গলায় সংক্রমণ ঘটালে "স্ট্রেপ থ্রোট" নামক রোগ হতে পারে, যা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। যদিও ঠান্ডা লাগার কারণে এটি হয় না, তবে দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের কারণে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ঠান্ডা লাগার ফলে গলায় ব্যথার অন্যান্য কারণ
১. শ্লেষ্মা জমে যাওয়া:
ঠান্ডা লাগলে নাক বন্ধ হয়ে যায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শ্লেষ্মা গলায় নেমে আসে। এটি গলার টিস্যুগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং অস্বস্তি বাড়িয়ে দেয়। ফলে গলা ব্যথা অনুভূত হয়।
২. গলার শুষ্কতা:
ঠান্ডা আবহাওয়ায় বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়, যা গলা শুষ্ক করে ফেলে। শুষ্ক গলা সহজেই সংবেদনশীল হয়ে পড়ে এবং ব্যথা অনুভূত হয়। বিশেষ করে যারা রাতে খোলা মুখে শ্বাস নেন, তাদের মধ্যে এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায়।
৩. অতিরিক্ত কাশি ও গলার চাপ:
ঠান্ডা লাগলে সাধারণত কাশি হয়। অতিরিক্ত কাশি গলার টিস্যুগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে শুকনো কাশি হলে গলা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
গলা ব্যথা প্রতিরোধ ও নিরাময়ের উপায়
- গরম পানীয় পান করা: আদা চা, মধু মিশ্রিত গরম পানি বা গরম স্যুপ গলার ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- লবণ পানি দিয়ে গার্গল করা: এটি গলার জীবাণু কমাতে এবং প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- বাতাসের আর্দ্রতা বজায় রাখা: ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করলে গলা শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- প্রয়োজনে ওষুধ গ্রহণ: ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল বা অন্য ব্যথানাশক ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা যেতে পারে।
উপসংহার
ঠান্ডা লাগলে গলা ব্যথা হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা মূলত ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, শ্লেষ্মা জমে যাওয়া, গলার শুষ্কতা এবং অতিরিক্ত কাশির কারণে হয়ে থাকে। সঠিক যত্ন ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।