মুমিন মুসলমানদের দাওয়াত দেয় কেন? - Why does the believer invite Muslims?
02:03:29 12/04/2023
মুমিন মুসলমানদের দাওয়াত দেয় কেন?
উত্তর : মুসলমানগণকে দাওয়াত দেয়া শুধু বৈধ নয়, আদেশও। এ আদেশ কুরআনে রয়েছে, হাদীসে রয়েছে, ইতিহাসে রয়েছে, রয়েছে রাসূলের (সা:) বাস্তব জীবনের আমলেও। সব আছে, নেই শুধু জানা। না জানা না থাকার প্রমাণ নয় । নিচে ৪টি ইতিহাস, ৫টা হাদীস ও ৩টি আয়াত প্রমাণ স্বরূপ পেশ করা হচ্ছে-
ইতিহাস ভিত্তিক দলীল :
(ক) স্বয়ং রাসূল (স) কাররা, সিরিয়া ও ইয়েমেন প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় এবং আবদে কায়েস ও বনু হারিছ গোত্রের মুমিন-মুসলমানদের কাছেই তাবলীগ ও তালিমের জন্যেই অনেক জামাত পাঠিয়েছিলেন ।
(খ) ফাতহুল কাদির নামক কিতাবের ঘোষণা- সাহাবায়ে কিরাম (রা) তাবলীগের উদ্দেশ্যে কুষ্ণ ও কারকীসিয়া সফর করেছেন। হযরত ওমর, হযরত সাকিল বিন ইয়াসার ও হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুগাফফার (রা) প্রমুখের এক জামাত সিরিয়া প্রেরিত হয়েছিল । এসব জামাত মুসলমানদের উদ্দেশ্যেই প্রেরিত হয়েছিল।
(গ) কায়স ইবনে আসিমের (রা) মীরত্বে তামীমের বিভিন্ন মুসলিম গোত্রেই তাবলীগের উদ্দেশ্যে ৯ম হিজরী/ ৬৩১ খ্রি. ১২ জনের এক জামাত বের হয়েছিল।
(ঘ) রাসূলুল্লাহ (সা) আব্দুল্লাহ বিন তারিকের নেতৃত্বে আফল ও কাররা গোত্রের মুসলমানদের কাছেই ৬২৫ খ্রি. ৬ জনের এক জামাত পাঠান। তাঁরা হচ্ছেন-
হযরত মারছায, আসিম, হাবিব, খালিদ, জায়দ ও আবদুল্লাহ । ইস্তিয়াবের ইবারত-
قَد بَعَثَ رَسُولُ اللهِ (ص) لِعَضْلٍ وَقَارَةٍ مَرْ ثَذَ بْنَ أَبِي مَرْتَنِ، عَاصِمَ بْنَ ثَابِتٍ حَبِيبَ بنَ عَدِي، خَالِدَ بْنَ الْبُكَيْرَ، زَيْدَبْنَ دَثَنَةٌ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ طَارِقِ لَيَتَفْقَهُوا فِي الدِّينِ وَيُعَلِّمُهُمُ الْقُرْآنَ وَشَرَائِعَ الْإِسْلَامِ الْإِسْتَعَابُ لِابْنِ الْبَرمَعَ الْإِصَابَةِ.
হাদীস ভিত্তিক দলীল :
(ক) আবদে কায়সের মুসলিম প্রতিনিধি দলকে নবীজী (সা.) দাওয়াত দিয়ে তাঁদেরকেও দাওয়াত দেবার আদেশ দিয়ে বলেন, এ কথাগুলো মুখস্থ করে নেও এবং নিজের বংশাবলীর কাছে পৌঁছে দেবে অর্থাৎ দাওয়াত দেবে । উল্লেখ্য যে নিজর বাংশাবলীর মধ্যে মুসলমান ছিল ।
(খ) হযরত আসিম বিন ওমর (রা) থেকে বর্ণিত হচ্ছে, নবী করিম (সা.) আযল ও কাররা গোত্রের মুসলমানদের কাছে ৬ জনের একটা জামায়াত পাঠিয়েছিলেন ।
(গ) নবীজী (সা.) হযরত মুয়াজ ও আবু মুসা (রা.) কে ইয়ামানের মুমিনদের কাছেই পাঠিয়েছিলেন ।
عَنْ جَرِيرٍ ابْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ بَايَعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى إِقَامِ
الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَواةِ وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ (حَيَاةُ الصَّحَابَهِ).
অর্থাৎ রাসূল (সা.) হযরত জারীর ইবনে আব্দিল্লাহ (রা.) থেকে ৩টি কাজ করার জন্যে শপথ পড়িয়েছিলেন। ১. নামায কায়েম করা ২. যাকাত আদায় করা ও ৩. দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানদের কাছে তাবলীগ করা ।
(ঙ) হাদীসে দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানের কাছে তাবলীগ করার আদেশ আছে-
عَنْ قَيْسٍ سَمِعْتُ جَرِيرًا يَقُولُ بَايَعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّ اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى
شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلوةِ وَإِيتَاءِ الزَّكوة وَالسَّمْعَ وَالطَّاعَةِ وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ .
অর্থাৎ আমি আল্লাহর রাসূলের (সা.) কাছে শপথ পড়েছি কালিমায়ে শাহাদাতের ওপর সাক্ষ্য দেয়ার জন্যে, নামায কায়েম করার জন্যে, যাকাত আদায়ের জন্যে, শোনা ও মানার জন্যে এবং সমস্ত মুসলমানের কাছে তাবলীগ করার জন্যে। (নাসায়ী ও মুসলিম)
কুরআন ভিত্তিক দলীল-
অর্থাৎ, দাওয়াত দিতে থাকো, কেননা, দাওয়াত মুমিনদের উপকারে আসবে । উক্ত হাদীসে (মুসলমানগণ) ও আয়াতে (মুমেনগণ) শব্দ ব্যবহার করে এ আয়াতে আল্লাহপাক বিশেষ করে মুমিন-মুসলমানদেরকে দ্বীন বুঝিয়ে দাওয়াত দেবার আদেশ দিয়েছেন। তাইতো আল্লাহ তা'আলা বলেন-
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُوْلِهِ - سورة النساء.
অর্থাৎ, হে ঈমানদার বান্দাগণ- তোমরা ঈমান আনো। এ আয়াতে আল্লাহপাক ঈমানদারদেরকেই সম্মোধন করে ঈমানের দাওয়াত দিয়েছেন আরও নবায়ন করার উদ্দেশ্য । কারণ, তিনি চান নির্ভেজাল, খাঁটি ও তাজা ঈমান ।
قُلْ لَّمْ تُؤْمِنُوا وَلَكِنْ قُوْلُوْا أَسْلَمْنَا وَلَنَا يَدْخُلِ الْإِيْمَانُ فِي قُلُوبِكُمْ وَإِنْ
تُطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ لا يَلتُكُمْ مِّنْ أَعْمَالِكُمْ شَيْئًا .
অর্থাৎ, তোমরা ঈমানদার নও, কিন্তু মুসলমান । যদি তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা) আনুগত্য কর তবে তোমাদের বিন্দুমাত্র আমলও নষ্ট করা হবে না । এখানেও আল্লাহ তাআলা মাসজিদে নববীতে নবীর পেছনে নামায সম্পাদনকারী মুসলমানগণকেই ঈমানের ও আমলের দাওয়াত দিয়েছেন । দাওয়াত দেবার আদেশও দিয়েছেন, দিয়েছেন ক্ষমারও। এ আয়াত থেকে জানা যায়, রাসূলের (সা.) জামানায় ঈমানহীন মুসলমানও ছিল । নবীর যুগে ৫ শ্রেণীর মানুষ ছিল, আজও আছে- (ক) খাঁটি মুসলমান, (খ) খাঁটি কাফের, (গ) পাপী মুসলমান, (ঘ) মোনাফেক মুসলমান, (ঙ) ঈমানহীন মুসলমান ।
তাবলীগ বিরোধী নামধারী মুসলমানরাতো বিভিন্ন মৌসুমে ওয়াজ-মাহফিল আয়োজন করে থাকে। বেশিরভাগ মীলাদ-মাহফিলই করে থাকে। যদি তাদেরকে প্রশ্ন করা হয় এই ওয়াজ এর ব্যবস্থা করেন কেন? তখন তারা উত্তর দেয় যে, এটাতো দ্বীনের দাওয়াত । নবীজীতো এই দাওয়াতের কাজ করেছেন। এখন তাদের প্রতি প্রশ্ন- আচ্ছা, আপনারাতো এই মাহফিল কাফেরদের জন্য করেনি, বরং মুসলমানদর জন্যই করেছেন, তাহলে আপনারা কি মুসলমানদেরকে দাওয়াত দেন? নবীজীতো কাফেরদেরকে দাওয়াত দিতেন । এই প্রশ্নের যে উত্তর, তাবলীগীদের প্রতি যে প্রশ্ন করা হয়, তারও সেই উত্তর । এখন তাবলীগ বিরোধীরা কোথায় যাবে? আসলে বুঝতে বাকী নেই, এ সকল ভণ্ড ও মূর্খের দলগুলোকে যত পদ্ধতিতেই বুঝানোর চেষ্টা করা হয়, তাদের অবস্থা হলো- বিচার মানি, তবে তালগাছ আমার ।
বর্ণিত ইতিহাস, হাদীস, কুরআন ও নবীর বাস্তব জীবনের কর্মপন্থা এবং মুসলমানদের ঈমানী অবস্থা তাদের দাওয়াতের সুস্পষ্ট প্রমাণ দিচ্ছে। না দেওয়া কুরআন হাদীস বিরোধী । অতএব, মুসলমানদের মাঝে তাবলীগ করা ও দাওয়াত দেওয়া বিদআত নয়, বরং বিধান ।
এই তাবলীগ সেই তাবলীগ নয় কি?
তাবলীগ বিরোধীরা নবীর সুন্নাতের ও আল্লাহর বিধানের বিরোধীতা করার জন্য বহু শয়তানী দলিল ও যুক্তি পেশ করে। এসব যুক্তি ও দলিল নিজেদের মনগড়া বানানো মাত্র । মহান আল্লাহ তা'আলা যেই তাবলীগ করার জন্য তার নবীকে নির্দেশ দিয়েছেন, সেই তাবলীগ কারীদেরকে কাফের বলতে পারে কতবড় ইবলিস হলে? লেংড়া শয়তান আর লিডার শয়তান না হলে এমন কথা বলতে পারে না।
তারা বলে, নবী যুগের তাবলীগ ও আমাদের বর্তমান সময়ে তাবলীগের কাজের মধ্যে ব্যবধান রয়েছে। আর তা হলো আমাদের যামানার তাবলীগ জামাতের লোকেরা তাবলীগ করে মুসলমানদের কাছে। আর মাহানবী (সা:) তাবলীগ করেছিলেন সরাসরি কাফিরদের কাছে। এ বিষয়টা বাহ্যিকভাবে তাবলীগ বিরোধীদের জন্য একটি বড় হাতিয়ার। তারা একে পুঁজি বানিয়ে বলতে শুরু করেছে যে, নবীর তাবলীগ ছিল ইসলামের তাবলীগ । কাফিরদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার তাবলীগ।
আর বর্তমানের তাবলীগ হচ্ছে মুসলমানদের কাছে করা তাবলীগ। আর এটা কুফুরী। কারণ কেউ কোন ঈমানদারকে বেঈমান মনে না করলে তাকে ঈমানের দাওয়াত দেয় না। তারা সাধারণ মুসলমানদের বেঈমান মনে করে তাই তারা কাফের। এই কারণে বর্তমান যামানার তাবলীগ জামাত কাফের। আসলেই কি তাই? প্রশ্ন নং-১ : নবীজী (সা.) কাফেরদেরকে দাওয়াত দিতেন আর তাবলীগীরা
তাবলীগে বাঁধা দেয়া মুনাফেক-বেঈমানদের কাজ
আল্লাহর পথে তাবলীগে বাঁধা দেয়া কার কাজ? পূর্বে বলা হয়েছে, দুই দল শয়তান রয়েছে যারা মানুষদেরকে জাহান্নামের দিকে ডাকে এবং মহান আল্লাহর হক পয়গাম মানুষের কাছে পৌঁছাতে বাঁধা দেয়। একদল জীন শয়তান, আরেক দল মানুষ শয়তান । সুতরাং তাবলীগ করে কারা আর বাঁধা দেয় কারা? এই দু প্রশ্নের জবাব এখন সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার। তাবলীগ করা নবী ও নায়েবে নবীদের কাজ। আর তাবলীগের বাঁধা দেয়া বে-দ্বীন, গোমরাহ মুনাফেক ও কাফিরদের কাজ ।