Narrow selection

শবে বরাতে করণীয় ও বর্যণীয়


11:05:29 12/03/2023

শবে বরাতে করণীয় ও বর্যণীয়

বাস্তবতা, তাৎপর্য ও করণীয়: আজকের এই রাত মহিমান্বিত রাত, মর্যাদাপূর্ণ ও ফজিলত পূর্ণ রাত । আজকের এই রাত ওয়াজ নসীহতের কোন রাত নয় । আজকের রাত হচ্ছে তওবার রাত। আজকের রাত হচ্ছে রহমত ভিক্ষার রাত। আজকের রাত হচ্ছে আল্লাহর কাছে চাওয়ার রাত। কান্নার রাত। মাগফিরাত প্রার্থনার রাত। কাজেই আমরা দীর্ঘ আলোচনায় যাবো না। বরং আজকের রাতের তাৎপর্য, আজকের রাতে আমাদের করণীয় বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা পেশ করার চেষ্টা করব।

শবে বরাতের আসল নাম

আজকের এই রাতের নাম হাদীসের ভাষায় 'লাইলাতুন নিসফ মিন শাবান' বা শাবানের মধ্য রাত । আমরা এই রাতকে শবে বরাত কিংবা লাইলাতুল বরাত বলে থাকি। কিন্তু কোরআন এবং হাদীসে এই রাত্রের এই নাম কোথাও আসেনি । কাজেই আমরা এখন থেকে বলার সময় এই রাত্রের নাম দেব শা'বানের মধ্যরাত । কোরআন ও হাদীস যে রাত্রের যে নাম দিয়েছে সে রাত্রের সে নামই ব্যববহার করতে হবে। আমি এই রাতের তাৎপর্য সম্পর্কে গবেষণা করার জন্য প্রায় এক হাজার কিতাবের একটি সিডি ওপেন করেছি।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শুকরিয়া যে, তিনি বিজ্ঞানকে কোরআন-সুন্নাহর সেবায় ব্যবহার করাচ্ছেন, যেই গবেষণা করার জন্য আগে এক মাস, এক বৎসর সময় লাগত সেই গবেষণাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কম্পিউটার সিডি-এর মাধ্যমে কয়েক মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন করার সুযোগ দান করেছেন। 

এক হাজার কিতাবের মধ্যে রয়েছে তাফসীরের কিতাব, হাদীসের কিতাব, ইতিহাসের কিতাব, বিজ্ঞানের কিতাব, মহা মনিষীদের জীবনী কোষ। সিডিতে আজকের এই রাতের তাৎপর্য সম্পর্কে ৪০ খানা বিভিন্ন কিতাব থেকে আমি হাদীস বের করেছি। এ সব হাদীস পর্যালোচনা করে বুঝতে পেরেছি যে, এই রাত সম্পর্কে | বোখারী শরীফে কোন আলোচনা নেই । এই রাত সম্পর্কে মুসলিম শরীফে কোন আলোচনা নেই । আমাদেরকে কোরআন হাদীসের ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকা দরকার। কোরআন-সুন্নায় যে রাতকে যতটুকু গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সে রাতকে  ততটুকু গুরুত্ব দিতে হবে। বেশীও নয়, কমও নয়। বেশী করলে তা হবে বেদআত । কম করলে তা হবে পাপাচার ।

বরাত ও কদরের পার্থক্য

লাইলাতুল বরাত এবং লাইলাতুল কদর দু'টি রাত। এই রাত্রিদ্বয়ের পার্থক্য কোথায় আমাদেরকে জানতে হবে। অনেক মানুষকে দেখা যায়, লাইলাতুল বরাত নামের রাতের জন্য পাগল। অনেক কিছুই তারা সে রাত্রে করে থাকে । কিন্তু লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কোনই ধারণা তাদের নেই। মনে রাখতে হবে হাজার বরাতের রাত্রকে যদি এক পাল্লায় দেওয়া হয় আর অন্য পাল্লায় যদি লাইলাতুল কদরকে দেওয়া হয় লাইলাতুল কদরের পাল্লা হাজার রাত্র থেকে অনেক ভারি হবে । কাজেই যার গুরুত্ব যতটুকু ইসলাম দিয়েছে ততটুকু বুঝতে পারাই হচ্ছে আসল ইসলাম ।

হাদীসের কিতাব সমূহে শবে বরাত

হাদীসের ছয়টি গ্রন্থ হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বোখারী শরীফ, (আল্লাহর কিতাব এর পরে শ্রেষ্ঠ কিতাব সকল মুসলমান এ ব্যাপারে একমত । সকল আলেম একমত। আল্লাহর কিতাবের পর সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাবের নাম বোখারী শরীফ ।...

اصح الكتب بعد كتاب الله الصحيح للامام البخاري

(২) সহীহ মুসলিম শরীফ (৩) সুনানে আবু দাউদ (৪) সুনানে নাসায়ী (৫) সুনানে তিরমিজী (৬) সুনানে ইবনে মাজাহ। এ ছয় কিতাবের মধ্যে চার কিতাবে লাইলাতুল বরাত সম্পর্কে কোন আলোচনা আসেনি । অর্থাৎ বিশুদ্ধতার দিক হতে প্রথম শ্রেণীর চার গ্রন্থ যথা : বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ ও নাসায়ী এসব কিতাবে ১৫ই শা'বানের রাত সম্পর্কে কোন বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায়না । তবে তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ শরীফে এ রাত সম্পর্কে দু'একটি হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে। হ্যাঁ, ছয় গ্রন্থের বাইরে হাদীসের অন্যান্য কিছু কিতাবে এ রাতের আলোচনা এসেছে। তন্মধ্যে বিশুদ্ধ একটি কিতাবের নাম হল সহীহ ইবনে হাব্বান ।

যাতে ইমাম ইবনে হাব্বান বিশুদ্ধ সব হাদীস চয়ন করেছেন। এ কিতাবে এই রাত্র সম্পর্কে আলোচনা এসেছে। চারজন বিখ্যাত ফেকাহর ইমামদের মধ্যে একজন হচ্ছেন ইমাম আহমদ (রহঃ)। তিনি হাদীসের যে গ্রন্থ সংকলন করেছেন তার নাম হল 'মুসনাদ'। সেই কিভাবে এই রাত সম্পর্কে হাদীসে এসেছে। তবে আমরা পূর্বেই বলেছি হাদীসের গ্রন্থ সমূহে এই রাত্রকে কোথাও লাইলাতুল বরাত বলা হয়নি। এই রাত সম্পর্কে নিম্নরূপ শিরোনাম ব্যবহৃত হয়েছে :

باب ما جاء في ليلة النصف من شعبان

“শাবানের মধ্যরাত সম্পর্কে বর্ণনা” । তাহলে আজ থেকে আমরা এই রাতের নাম জেনে নিলাম যে, এই রাতের নাম হচ্ছে 'শা'বানের মধ্যরাত। তার আরবী নাম হচ্ছে bhai jail ill আমাদের সমাজে এ রাতের প্রচলিত নাম হল ‘শবে বরাত' । 'শব' শব্দটি হল ফার্সি। অর্থ হল রাত। আর 'বরাত' মনে হচ্ছে বন্টন। কাজেই ‘শবে-বরাত' অর্থ দাঁড়ায় বন্টনের রাত। এ নাম জন সাধারণে বহুল প্রচলিত হলেও কোরআন-হাদীসে এ নাম ব্যবহৃত হয়নি ।

গুরুত্ব ও তাৎপর্য 

এবার আলোচনা করতে চাই আজকের এই রাতের গুরুত্ব, তাৎপর্য এবং এই রাতে আমাদের করণীয় সম্পর্কে। এই রাত সম্পর্কে হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে রয়েছে- হযরত আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, এক রাতে আল্লাহর রাসূল আমার ঘরে থাকার পালা ছিল, রাতে তিনি আমার সাথে আমার ঘরে শুয়েছেন। হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর আমি আশে পাশে অনেক খুঁজে দেখলাম যে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বিছানায় নেই । আমি সন্দেহ করলাম, কি ব্যাপার, আল্লাহর রাসূল কি আজকে আমাকে ছেড়ে অন্য কোন স্ত্রীর ঘরে চলে গেলেন? আজকের রাততো আমার হক্ব । জেনে রাখা দরকার, যাদের একাধিক স্ত্রী আছে তাঁদের সপ্তাহ কিংবা মাসকে প্রত্যেক স্ত্রীর জন্য বরাদ্ধ করতে হয় ।

যদি দু'জন থাকে, এক মাসকে দু'ভাগে ভাগ করতে হবে। ১৫ দিন এক স্ত্রীর ঘরে, আর ১৫ দিন অন্য স্ত্রীর ঘরে । ১৫ দিন তার ঘরে থাকা তার জন্য ওয়াজিব, থাকতেই হবে । শারীরিক সঙ্গম করার প্রয়োজন নেই । কিন্তু থাকতে হবে। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, আজ রাত্রে তো আল্লাহর রাসূল আমার ঘরে থাকার কথা, তিনি কোথায়? তার মনে সন্দেহ জাগল । আল্লাহর রাসূলকে খোঁজার জন্য তিনি বের হয়ে গেলেন, বের হয়ে দেখলেন মসজিদে নববীর পার্শ্বে জান্নাতুল বাকী কবরস্থান, (যেখানে অসংখ্য সাহাবার কবর আছে) সেখানে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি যিয়ারত করছেন । আল্লাহ রাসূল যখন টের পেয়ে গেলেন যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) এসেছেন তখন তিনি হযরত আয়েশার সাথে কথা বললেন, জিজ্ঞাস করলেন-

يا عائشة اتخافين ان يظلم الله ورسوله عليک

হে আয়েশা! তোমার কি এ মর্মে আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহ এবং তার রাসূল তোমার উপর জুলুম করবেন? তোমার প্রাপ্য হজ্ব তিনি নষ্ট করবেন? তুমি কি ভয় করছো? জেনে রাখ আল্লাহ এবং তার রাসূল কারো হক্ক নষ্ট করতে পারেনা । কোন মানুষের উপর জুলুম করতে পারেনা। বান্দার হক্ককে নষ্ট করতে পারেনা। তোমার সাথে থাকা তোমার হক্ব । কিন্তু হে আয়েশা, জেনে রাখ, আজকের রাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাত। এই রাত্রে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রথম আসমানে অবতরণ করেন, সূর্য অস্ত যাওয়ার পরেই। অর্থাৎ মাগরিব থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রহমত নিয়ে বান্দাদেরকে রহমত দান করার জন্য প্রথম আসমানে আসেন।

ফয়জুল কাদীর কিতাবে এই হাদীসের ব্যাখ্যায় লেখক বলেন: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রথম আসমানে নাজিল হওয়ার অর্থ হল আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রহমতের দৃষ্টি বান্দাদের প্রতি নিস্তদ্ধ করার জন্য তার রহমত তিনি প্রেরণ করেন । হে আয়েশা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দয়া নিয়ে আজকের এই রাতে প্রথম আসমানে নাজিল হন এবং প্রচুর সংখ্যক মানুষের গোনাহকে তিনি ক্ষমা করেন, লক্ষ লক্ষ মানুষের গোনাহকে তিনি মাফ করেন। 'গানাম ' একটি গোত্রের নাম । আরব জাতির মধ্যে 'গানাম' গোত্র হচ্ছে অধিক সংখ্যক ছাগল লালন পালনের জন্য বিখ্যাত। এই গোত্রের হাজার হাজার ছাগলের লক্ষ লক্ষ কেশ পরিমাণ মানুষের গোনাহকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ক্ষমা করে দিবেন । আজকের এই রাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

হে আয়েশা! এজন্যেই আমি যারা কবরের মধ্যে শুয়ে আছে তাঁদের যিয়ারত করতে গেলাম। তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। তাদেরকে দেখার জন্য আজকে পবিত্র রাতে আমি এসেছি। তোমার প্রতি জুলুম করে অন্য কোন স্ত্রীর ঘরে আমি যাইনি । এই হাদীস ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন । এই হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, রাত হচ্ছে তাওবার রাত, এই রাত হচ্ছে আল্লাহর কাছে পাওয়ার রাত, চাওয়ার রাত । এই রাত হচ্ছে আল্লাহর দরবারে কাঁদার রাত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন গোনাহ মাফ করার জন্য প্রস্তুত । আমাকে মাফ চাইতে হবে ।


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color