১০ মুহাররাম বা আশুরা তাৎপর্য - 10 Muharram
12:48:08 12/03/2023
১০ মুহাররাম বা আশুরা তাৎপর্য : নামের তাৎপর্য: আরবী বছর গণনায় মুহাররম মাস প্রথম। এটি নাম বাচক বিশেষ্য নয়, গুণবাচক বিশেষণ । সৃষ্টির শুরু থেকে এ মাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। মুহাররম সম্মানিত, মর্যাদাবান বিধায় একে বিশেষিত করা হয় । পরে আসল নাম 'সফর আউয়াল' বাদ পড়ে যায় এবং মুহাররম তদস্থলে মাসের নামে পরিণত হয় ।
মুহাররম মাসের ১০ তারিখ আশুরা নামে খ্যাত। আশুরা আরবী । এর অর্থ দশম মাস । এদিনটি ঐতিহাসিকভাবে প্রণিধানযোগ্য। এ দিনে প্রাচীন আরবরা কাবার দরওয়াজা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখত ।
আশুরা মানে কারবালা দিবস নয় :
বছরের মহান ঐতিহাসিক দিবস 'আশুরা' সমাগত। এ দিন মানবতাকে স্মরণ করিয়ে দেয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কথা। এসব ঘটনার রয়েছে ইতিহাসের জোয়ার-ভাটা ও উত্থান-পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আমাদের সমাজে অনেকের ধারণা, আশুরা মানেই কারবালা। আশুরাকে তারা কারবালার দিবস হিসেবে পালন করে । ‘হায় হুসাইন হায় হুসাইন' বলে মাতম করে। রাস্তায় রাস্তায় রেলী বের করে । অদ্ভুদ মঞ্চ সজ্জা করে। রাতের গভীরে হঠাৎ ব্যান্ড পার্টির মাধ্যমে উৎপাত সৃষ্টি করে । মানুষকে করে ফেলে হতবিহ্বল ও আতঙ্কিত । এসব আজগুবী কাজ কারবার মানেই আশুরা নয়।
'আশুরা' দিবসে সংঘটিত বহু ঘটনার একটি হল কারবালার ট্রাজেডি এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু কারবালার দুঃখবহ ঘটনাই একমাত্র 'আশুরা' নয়। কারণ ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর যুগেও 'আশুরা' পালিত হত । তখনও কিন্তু কারবালার ঘটনা সংঘটিত হয়নি। কাজেই কারবালার ঐতিহাসিক ঘটনার কারণে আশুরার মর্যাদা ও তাৎপর্য সৃষ্টি হয়নি। এ দিনটির তাৎপর্য পৃথিবীর সূচনা হতেই চলে আসছে। বরং আমরা বলতে পারি, কারবালার ঘটনা 'আশুরার দিনে সংঘটিত হওয়ায় এ ঘটনা অনেক বেশী তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে।
আশুরার দিন রোযা রাখতে হবে। এটি গুরুত্বপূর্ণ নফল রোযা । তবে তার পূর্বে ও পরে আরেকটি রোযা সংযোগ করতে হবে। যাতে ইহুদীদের রোযা প্রথা থেকে মুসলমানদের আশুরা পালন ভিন্ন মাত্রা পায়। এ দিনে মাতম করা, হানাহানি করা, কারবালার ঘটনাকে মঞ্চস্থ করা ইসলাম সম্মত যেমন নয়, তেমনি যুক্তি সঙ্গতও নয়। এ ঘটনা মঞ্চস্থ করলে আজকের মুসলিম উম্মাহর কি কল্যাণ? কি উপকার? বরং কারবালার শিক্ষা কি তাই-ই সেমিনার, সেম্পোজিয়াম, সভা-মাহফিলের সর্বত্র উচ্চারিত হওয়া উচিৎ এবং সে অনুযযায়ী আমাদের জীবনকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন ।
আশুরার দিন ভাল খাবারের আয়োজন করতে হবে। মুরগী জবাই করতে হবে- . এমন ধারণা ও কুসংস্কার আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে । “এ দিন ভাল খেলে, পুরা বছরে রিজিকের ফরাগত বা স্বাচ্ছন্দ হবে।” এ জাতীয় কথিত হাদীস আমাদের আলেমদের মুখে শুনা যায়। মূলত : এ ধরনের আমল যোগ্য কোন বিশুদ্ধ হাদীস বর্ণিত হয়নি ।
হিজরতের পর মদীনায় এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতে পেলেন যে, ইয়াহুদীরা এদিনে রোযা রাখছে। তিনি জানতে পারলেন যে, এ দিনে মুসা (আঃ) সিনাই পাহাড়ে আল্লাহর তরফ থেকে তাওরাত লাভ করেন, এ দিনেই তিনি বনী ইসরাঈলকে ফিরাউনের বন্দীশালা থেকে উদ্ধার করেন এবং এ দিনেই তিনি বনী ইসরাঈলদের নিয়ে লোহিত সাগর অতিক্রম করেন আর ফিরাউন সেই দরিয়ায় ডুবে মারা যায় । তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য মদীনায় ইয়াহুদীরা এ দিনেই রোযা রাখে।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: মুসার (আঃ) সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তোমাদের চাইতে ঘনিষ্ঠ ও অগ্রাধিকারমূলক । এর পর তিনি ঐ দিনই রোযা রাখলেন এবং উম্মতকেও রোযা রাখতে বললেন । তবে ১০ম মুহাররমের স্থলে ৯ম ও ১০ম দু'দিন রোযা রাখতে বললেন । ২য় হিজরীতে রমজান মাসের রোযা ফরজ করা হলে আশুরার রোযা নফল হয়ে যায়। তবে রমজানের রোযার পর আশুরার রোযার ফযিলত সর্বাধিক ।