আদম ও হাওয়া (আ) এর জন্ম ও বিবাহ
05:11:04 06/16/2024
আদম ও হাওয়া (আ) এর জন্ম ও বিবাহ
হযরত আদম (আ) দীর্য়সময় পর্যন্ত একাকী জীবন-যাপন করেন, তবে তাঁর জীবন-যাপন ও আয়েশ আরামের ক্ষেত্রে যেন একটা শূন্যতা অনভূত হতে থাকে। তাঁর স্বভাব ও মনমেজাজ যেন একজন সঙ্গী ও অন্তরঙ্গকে খুজতে থাকে। অতএব আল্লাহ তায়ালা হাওয়াকে সৃষ্টি করলেন।
হাওয়ার সৃষ্টি কিভাবে হলো? কুরআনে এ সম্পর্কে এতটুকু বর্ণনা রয়েছে- তিনি তা থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করলেন। কুরআনের এই ভাষ্য, হাওয়ার সৃষ্টি রহস্যের উপর বিস্তারিত কোন আলোকপাত করছে না। তবে এ প্রশ্নের দুটি উত্তর হতে পারে। একঃ হাওয়াকে হযরত আদমের পাজর থেকে তৈরি করা হয়েছে যেমন একথা সর্বত্র প্রচলিত আছে এবং এমনিভাবে বাইবেলেও এর উল্লেখ রয়েছে। দুই আল্লাহ তাআলা মানব বংশকে এভাবে সৃষ্টি করেছেনপুরুষের সাথে তারই স্বজাতীয় অন্য একটি মাখলুক (সৃষ্টি) তৈরি করেছেন যাকে স্ত্রীলোক বলা হয় এবং যে পুরুষের জীবন সঙ্গিনী হয়ে থাকে।
আয়াতের ব্যাখ্যায় তাত্ত্বিকদের মতামত, উল্লেখিত দ্বিতীয় মতামতেরই অনুরূপ যার অর্থ হচ্ছে, কুরআন কেবল হযরত হাওয়ার সৃষ্টির ব্যাপারে যে তত্ত্ব প্রকাশ করছে তা হলো, এরাও পুরুষদেরই স্বগোত্রীয় এবং পুরূষদের মতই সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, নারীজাতি পুরুষের পাঁজর থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। যেমনঃ স্ত্রীলোকদের সাথে নম্র ও সহানুভুতিশীল আচরণ কর, কেননা এদেরকে পাঁজর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। (আল হাদিস)
ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের উপায়
ইবনে ইসহাক, এর যে অর্থ করেছেন তা হলো, হাওয়াকে আদমের বাম পাঁজর থেকে পয়দা করা হয়েছে। কিন্তু ইবনে ইসহাকের চেয়ে উঁচু স্তরের তাত্বিক ও সমালোচক আল্লামা কুরতুবী এর যে অর্থ করেছেন তা হলো, নারীজাতিকে মূলতঃ পাঁজরার সাথে তুলনা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, নারীজাতির সৃষ্টির সূচনা পাঁজরা থেকেই হয়েছে এবং এদের অবস্থা পাজরারই মত-যদি এদের কক্রতাকে সোজা করতে চাও তবে তা ভেঙে যাবে। অতএব পাঁজরার ক্রতা সত্ত্বেও যেমন তা থেকে কাজ নেয়া হয় এবং ত্রুটি (বক্রতা) দূর করার চেষ্টা করা হয় না তেমনি নারীজাতির সাথেও নম্র ও সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে। যদি তাদের সাথে রূঢ় আচরণ করা হয় তবে তাদের সাথে সম্বন্ধ মধুর হওয়ার চেয়ে বরং আরো তিক্ত হয়ে উঠবে।
হযরত হাওয়া (আ) এর জন্ম সম্পর্কে আরেকটি মতামত হলঃ আল্লাহর নিকট হযরত আদম (আ) এর দীর্ঘদিন একাকী জীবন-যাপন তার নিকট বিরক্তিকর হয়ে উঠা অজানা থাকল না, আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের লক্ষ্য করে বললেন, ওহে ফেরেশতাগণ! আমি আদমের জন্য জনৈক সঙ্গিনী বানাতে চাই যাতে হযরত আদম (আ) পরিপূর্ণ শাস্তি ও সুখ অনুভব করতে পারে। অতঃপর একদিন ঐ উদ্দেশ্যেই আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আ) এর চোখে গভীর ঘুমের আমেজ বুলিয়ে দিলেন, তিনি ঘুমের কোলে ঢলে পড়লেন।
এফিলিয়েট মার্কেটিং করে উপার্জন
এ ঘুম তার এতই গভীর হয়েছিল যে, ঘুমের মধ্যে এক বিরাট কান্ড ঘটে গেল অথচ তিনি কিছুই টের পেলেন না। তার ঘুমের মধ্যে ফেরেশতাগণ আল্লাহ তায়ালার আদেশ অনুযায়ী তার বাম পাজড়ের একখানা হাড় বের করে নিয়ে আল্লাহর নিকট পেশ করলেন। আল্লাহ তায়ালা নিজের কুদরত বলে তা দ্বারা এক পরমা সুন্দরী যুবতী সৃষ্টি করে তাকে বেহেশতী পোশাকে সজ্জিত করে ফেরেশতাগণকে আদেশ দিলেন,একে আদমের পাশে বসিয়ে দাও। ফেরেশতাগণ আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী তাই করল। হযরত আদম (আ) এর কোন কিছুই জানতে পারলেন না।
এ সুন্দরী রমণীর নাম রাখা হল,হাওয়া। একে আল্লাহ এমন অপূর্ব রূপ দান করলেন,যে দুনিয়ার অন্যান্য সকল নারীর রূপ একত্র করলেও তার হাজার ভাগের এক ভাগ হবে না।
আল্লাহর ইঙ্গিতে বিবি হাওয়া তার কোমল হস্ত ঘুমন্ত হযরত আদম (আ) এর অঙ্গে অতি কোমলভাবে বুলিয়ে দিতে লাগলেন। এতে হযরত আদম (আ) এর ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনি চোখ মেলে নিজের পাশে এমন এক সুন্দরী রমণীকে দেখে পরম বিস্ময়বোধ করলেন। তার মনে প্রশ্ন জাগল, কে এ সুন্দরী রমণী? এমনটি তো তিনি আর কখনও দেখেননি। আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আ) কে লক্ষ্য করে বললেন,হে আদম আমি তোমার মনের অশান্তি দূর করার জন্য তোমার জন্যই একে সৃষ্টি করেছি। এ রমণী তোমার জীবনের চির সঙ্গিনী ও তোমার সুখ দুঃখের সমভাগিনী হবে।
আল্লাহ পাকের সৃষ্টি রহস্যের নিগৃঢ় কারণে ও হযরত হাওয়া (আ) এর অপূর্ব সৌন্দর্যে হযরত আদম (আ) ইতিমধ্যেই হযরত হাওয়া (আ) এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন এবং তারই প্রভাবে তিনি নিজের হাত বাড়িয়ে হযরত হাওয়া (আ) কে নিজের দিকে আকর্ষণ করতে উদ্যত হলেন। সাথে সাথে আল্লাহর তরফ হতে সতর্ক বাণী উচ্চারিত হল,বিরত থাক আদম বিবাহ না করা পর্যন্ত তুমি হাওয়া (আ) কে স্পর্শ করো না। এটা তোমার জন্য সিদ্ধ হবে না।
আল্লাহ পাকের বাণী শুনে হযরত আদম (আ) বললেন,হে আমার রব আপনি হাওয়া (আ) এর সাথে আমার বিবাহ পড়িয়ে দিন। এরপর স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আ) এর সাথে বিবি হাওয়ার বিবাহ পড়িয়ে দিলেন। এ বিবাহ অনষ্ঠান সাত স্তর যমিন ও সাত স্তর আসমানের সকল ফেরেশতা, বেহেশতের তুয়া বৃক্ষের নিচে জমায়েত হয়ে আনন্দোৎসবে মেতে উঠেছিল।
হযরত আদম (আ) হযরত হাওয়া (আ) এর প্রতি অধিকতর আসক্ত হয়ে আবার তাকে আকর্ষণ করার উদ্যোগ নিলেন। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর পক্ষ হতে আওয়াজ আসল,হে আদম আগে তুমি বিবি হাওয়া (আ) এ মহরানা আদায় করে লও। মহরানা আদায় করার আগে সে তোমার জন্য বৈধ ও হালাল হবে না। একথা শুনে হযরত আদম (আ) বললেন,হে আল্লাহ সকল বস্তুর মালিকই তো তুমি,সারা জাহান তোমার মালিকানাধীন,আমার তো কোনকিছুই নেই। আমি কি দিয়ে তার মহরানা আদায় করব?
তখন আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করলেন,হে আদম তুমি দশবার দরূদ শরীফ পাঠ করে আমার প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ (সা) এর উপর বখশিস কর। তাতেই তোমার মহরানা আদায় হয়ে যাবে। এর পর আল্লাহ তাদের আদেশ করলেন,তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবার করতে থাক। আর তোমার তা হতে স্বাচ্ছন্দে যা ইচ্ছা খেতে পার,কিন্তু ঐ গাছটির নিকটবর্তী হইও না। তা হলে তোমার নিজেরা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
হযরত আদম (আ) যে জান্নাতের অধিবাসী ছিলেন এবং যেখান থেকে তাকে পৃথিবীতে অবতরণের হুকুম দেয়া হয়েছিল সেটা কোন জান্নাত ? সেই জান্নাতুল মাওয়া –যা কিয়ামতের (বিচার দিবস) পর বিশ্বাসীদের ঠিকানা হবে ? নাকি। জান্নাতে আরদী যা এই ভূ-পৃষ্টের উচ্চ কোন সুদৃশ্য স্থানে আদমের শাসন পরিচালনার জন্য তৈরি করা হয়েছিল ? জমহূর উলামায়ে ইসলামের মতামত হল, এটা সেই জান্নাতুল মাওয়া যার অঙ্গিকার আল্লাহতায়ালা মুমিনদেরকে দিয়েছেন। তাদের মতে বাহ্যিক অর্থে আয়াতে কুরআনী ও হাদীসে রসূল তাই প্রমাণ করে। যেমনঃ অর্থাৎঃ আমি বললাম, হে আদম, তুমি ও তোমার সঙ্গিনী জান্নাতে বসবাস কর। (সূরাঃবাক্বারাহ, আয়াতঃ৩৫)
এখানে জান্নাতকে আরবী ব্যাকরণ অনুযায়ী আলিফলাম-সহযোগে উল্লেখ করা হয়েছে (আলজান্নাহ) এবং এটা একথারই দলীল, এ জান্নাত হচ্ছে সেই বিখ্যাত জান্নাত, যার উল্লেখ কুরআনে বিভিন্ন স্থানে রয়েছে এবং কিয়ামতের শেষ বিচারের পর যা হবে মুমিনদের বাসস্থান। যদি এটা অন্য কোন পৃথক স্থান হত তবে প্রথমে তার যথার্থ পরিচয় দিয়ে তারপর চেনাজানা স্থানের মত নিচের শব্দগুলোর মাধ্যমে তার উল্লেখ করা হত। অর্থাৎঃ তোমরা সবই এ স্থান থেকে নেমে যাও। (সূরাঃবাক্বারাহ, আয়াতঃ৩৮)
হাবোতঃ অবতরণ উপর থেকে নিচের দিকেই হয়। সুতরাং এটা জান্নাতে মাওয়া, জান্নাতে আরদী নয়। মুসলিমের একটি দীর্ঘ হাদীসে নিম্নলিখিত বাক্যটি রয়েছে। আল্লাহতায়ালা মানবকে সমবেত করবেন। তখন মুমিনরা দন্ডায়মান হবে ।এমতাবস্থায় জান্নাত তাদের কাছাকাছি করা হবে। অতপর তারা আদম (আ) বলবেন, তোমাদেরকে জান্নাত থেকে তোমাদের পিতার ভুলের কারণে কি বহিষ্কার করা হয়নি?
অপর দিকে একদল আলিমের মতামত হলো, এই জান্নাত ছিল বিশ্বেরই কোন একটি স্থান জান্নাতুল মাওয়া নয়। তারা তাদের কথার সমর্থনে বলেন, কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় আল্লাহ তাআলা আদম ও হাওয়াকে সেখানে পানাহারের জন্য মুকাল্লাফ (যার উপর বাধ্যতামূলকভাবে কোন দায়িত্ব চাপানো হয়) করেছিলেন। তিনি তাদের উপর একটি বৃক্ষের ফল না খাওয়ায়ে ব্যাপারটিও বাধ্যতামূলক করে দিয়েছিলেন।
তাছাড়া আদম সেখানে সুখ নিদ্রায় বিভোর থাকতেন এবং ইবলীসও সেখানে প্রবেশ করতে পারত। আর এসব হচ্ছে এমন সব ব্যাপার যা শুধু পৃথিবীর সাথে সম্পৃক্ত। জান্নাতুল মাওয়ায় এ সমস্ত বিষয়ের কোন অস্তিত্ব থাকতে পারে না। কেননা সেখানে কারো উপর বাধ্যতামূলকভাবে কোন দায়িত্ব চাপানো হয় না এবং প্রবেশ করার পর সেখান থেকে কাউকে বহিষ্কার করেও দেয়া হয় না। অনেক বড় বড় আলিমও এই মত পোষণ করেন।
উল্লেখিত দুটি মতামত ছাড়াও এক্ষেত্রে আরো দুটি মতামত আছে। এখন এ বিষয়ে সর্বমোট চারটি মতামত হলো।
যেমনঃ
১. এটা জান্নাতুল মাওয়া।
২. এটা জান্নাতে আরদী।
৩. জান্নাতুল মাওয়া ও জান্নাতু আরদী ছাড়া এটা অপর আর একটি জান্নাত যা শুধু উপরোক্ত উদ্দেশ্য বানানো হয়েছিল।
এ ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করে বিষয়টি আল্লাহরই হাওয়ালা করে দেয়া সমীচীন।
এ আলোচনা অনেক দীর্ঘ। হাফিয ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীর তার রচিত তারিখুল বেদায়া ওয়ান নেহায়া গ্রন্থে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং দলীল প্রমাণ ও দৃষ্টান্তসহ প্রত্যেকটি মতামত বর্ণনা করেছেন। বিস্তারিত আলোচনার জন্য উল্লেখিত গ্রন্থটি অধ্যয়ন করা যেতে পারে।
যাহোক প্রকৃত অবস্থা আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন। তবে যাবতীয় দলীল-প্রমাণাদির প্রেক্ষিতে আমাদের মতামত এ ঘটনাটি নিঃসন্দেহে জান্নাতুল মাওয়াতেই ঘটেছিল এবং হযরত আদম (আ) এর পানাহার, শয়ন স্বপ্ন আর শয়তানের প্ররোচনা দানের যাবতীয় ঘটনা তখনই ঘটেছিল যখন পর্যন্ত মানবের উপর কোন কাজ করা না করার বাধ্যতামূলক দায়িত্ব অর্পন করা হয়নি। আর এজন্য মানবের পৃথিবীতে আগমন হয়েছে এবং এখানে আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের হকদার হওয়ার জন্য এসব ঘটনা ঘটার দরকারও ছিল
অতএব যদি চুড়ান্ত অভিমত এই হয় এখানে জান্নাত অর্থ জান্নাতুল মাওয়া, তবে প্রশ্ন হতে পারে, হযরত আদম এবং হাওয়া (আ) সেখান থেকে পৃথিবীর কোন অন্চলে অবতরণ করেছিলেন? এর উত্তরে বলা যায়- কিছু কিছু দুর্বল উক্তি আছে হযরত আদম (আ) হিন্দুস্তানে এবং হযরত হাওয়া (আ) জেদ্দায় অবতরন করেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে উভয়ে আরাফা প্রান্তরে (হেফাযে) পরস্পরের সাথে মিলিত হয়েছিলেন। এ কারণে হজ্ব পালনের এ প্রান্তরের নাম (আরাফাত) রাখা হয়েছে। কেননা এখানেই তারা একে অপরের সাথে পুনরায় পরিচিত হয়েছিলেন।
কিন্তু কুরআন শরীফ ঘটনার এই দিকটি চেপে গেছে। কেননা এতে হেদায়েতের কিছু নেই। তবে স্বাভাবিক বিচার বুদ্ধি এ কথাই বলে আদম ও হাওয়া (আ) কে একই স্থানে অবতীর্ণ করা হয়েছিল, যাতে আল্লাহ তাআলার বিজ্ঞতাপূর্ণ নিয়মের অধীন শিগগীর মানব বংশ বিস্তারের কাজ শুরু হয়ে যায় এবং এই মাটির ধরার উত্তরাধিকারীরা আল্লাহর পৃথিবী আবাদ করে মনুষ্যত্বের সর্বোচ্চ মর্তবা খেলাফতে আরদীর পুরাপুরি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম হয়।
ঐ জান্নাতের অর্থ জান্নাতুল মাওয়া-এই মতাবলম্বী উলামায়ে কেরাম-এর উপর তাদের বিরুদ্ধবাদীরা এ মর্মে প্রশ্ন উত্থাপন করেন জান্নাতুল মাওয়ার অপর নাম যেহেতু জান্নাতুল খুলদ, অতএব হযরত আদম (আ) কে ইবলীসের এ কথা বলার কি অর্থ থাকতে পারে আমি তোমাকে চিরস্থায়ী বৃক্ষের অনুসন্ধান দেব।
এর উত্তরে প্রথম দলের আলিমগণ জান্নাতে আরদী-মতাবলম্বী উলামায়ে কেরামকে এ মর্মে পাল্টা প্রশ্ন করেন, যদি এটা জান্নাতে আরদী হয়ে থাকে তবে এ ধ্বংসশীল জগতে কি করে ইবলীস হযরত আদম (আ) এর সাথে এই মর্মে সাক্ষাৎ করতে পারে, পৃথিবী এবং তার যাবতীয় দ্রব্যাদি অবশ্যই ধ্বংসশীল তবে এখানে একটি চিরস্থায়ী বৃক্ষও রয়েছে? কেননা ধ্বংসশীল জগতে চিরস্থায়ী কোন জিনিস থাকতে পারে এমন কথা হযরত আদম (আ) তো দূরের কথা, একজন সাধারণ বুদ্ধি সম্পন্ন মানবও মেনে নিতে পারে না।
ভূ- স্তর বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে জান্নাতে আরদীঃ
যারা এ জান্নাতকে জান্নাতে আরদী বলে মনে করেন তাদের মধ্যে যারা ভূ-স্তর বিশেষজ্ঞ তাদের মতামত হলো, হিন্দুস্থানের যে অন্চলে এই জান্নাত অবস্থিত ছিল সে অঞ্জলের অস্তিত্ব এখন আর ভূপৃষ্ঠে নেই। করায়ে মাও, নামক এই অন্চলটি বিশ্বে আবাদ ছিল বটে, কিন্তু বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং পর পর কয়েকটি, ভূমিকম্পের কারণে হাজার হাজার বছর পূর্বে তা ভারত মহাসাগরে বিলীন হয়ে গেছে।যখন দুর্ঘটনা ঘটে তখন এ ভূ-ভাগে বসবাসকারীদের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ৬০মিলিয়ন (ছয় কোটি) যাদের সবাই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ জান্নাতের অবস্থান ছিল সেখানেই, যেখান থেকে দজলা (টাইগ্রীস) ও ফুরাত (ইউফেটিস)নির্গত হয়েছে।