Narrow selection

সাহাবাগণ কিভাবে অর্থ উপার্জন করতেন - How did the Companions earn money?


16:00:03 12/03/2023

সাহাবাগণ কিভাবে অর্থ উপার্জন করতেন

হযরত আলী (রাঃ) এর অর্থ উপার্জনের মাধ্যম

নবী করীম (সাঃ) নসিহত করেই ক্ষান্ত হননি, মদীনায় তিনি যে ইসলামী সমাজ-ব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন সেখানে সৎকর্মশীল শ্রমিকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করে দেখিয়েও দিয়েছেন ।

আমরা জানি, তিনি তাঁর প্রাণাধিকা মেয়ে হযরত ফাতিমা (রাঃ) কে হযরত আবু বকরের (রাঃ) মত ব্যবসায়ী প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও হযরত আলীর (রাঃ) মত একজন শ্রমজীবির হাতেই তুলে দিয়েছিলেন । যাকে ইহুদীর ক্ষেতে মজুরী খাটতেও দেখা যায়।

হযরত আলী নিজে তাঁর মেহনতী যিন্দেগীর কথা বর্ননা করতে যেয়ে বলতেন- মদীনায় থাকাকালীন একবার ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে শহরতলির দিকে কাজের তালাশে বের হয়ে পড়লাম । এক স্থানে একটি মেয়েকে মাটি জমা করতে দেখতে পেলাম। মনে হল সে হয়ত তা ভিজাবে। তখন এক একটি খেজুরের বিনিময়ে এক এক বালতি পানি তুলে দেওয়ার কাজে লেগে গেলাম । পর্যায়ক্রমে ষোল বালতি পানি তুললাম। এতে আমার হাতে ফোসকা পড়ে গেল। কাজ সেরে পানির কাছে গেলাম, হাত মুখ ধুলাম। মেয়েটি আমাকে ষোলটি খোরমা পারিশ্রমিক দিয়ে দিল। তা নিয়ে নবী করীমের কাছে আসলাম । সবিস্তার উক্ত ঘটনা বর্ণনা করার পর নবী করীমও আমার সঙ্গে তা খেলেন।

হযরত আলী (রাঃ) মেহনতী হয়েও মুসলমানদের মধ্যে কতটুকু মর্যাদার অধিকারী তা সকলেই জানে। তাই আমরা দেখি, মুসলিম সমাজ তাঁর মত একজন শ্রমজীবিকে নিজেদের রাষ্ট্রপ্রধান বানিয়ে নিতেও দ্বিধা করেনি। খলীফা হয়ে যাওয়ার পরও তিনি খেটেছেন।

হযরত ওমর রা. এর অর্থ উপার্জনের মাধ্যম

দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রাঃ) ও একজন রাখাল ছিলেন। মক্কার অদূরবর্তী কাদীদ থেকে দশ মাইল দূরে জান জান ময়দানে তাঁকে উট চরাতে হত। খিলাফতের পর একবার এই মাঠ দিয়ে তিনি যাচ্ছিলেন। পূর্বস্মৃতি জেগে উঠল, চোখে পানি নেমে এল। সঙ্গীদেরকে তখন নিজের কথা বর্ণনা করতে যেয়ে বললেন- এমন এক সময় ছিল, যখন ঘোড়ার জিনের মামুলি এক টুকরো কাপড় পরে এই মাঠে আমি উট চরাতাম। পরিশ্রান্ত হয়ে বসে পড়লে পিতা বেদমভাবে প্রহার করতেন । আর আজ, আল্লাহ ছাড়া আমার উপর কেউ হাকিম নেই।

আবু হুরায়রা রা. এর অর্থ উপার্জনের মাধ্যম

হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) রেওয়ায়েতে হাদীস যার উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল, তিনিও ছিলেন শ্রমজীবি সাহাবাগণের অন্যতম। মদীনায় দরবারে নববীতে হিজরত করে চলে আসার পর একটি মেয়ের বাসায় থাকতেন। শ্রমের বিনিময়ে তাঁকে জীবিকা চালাতে হত। তিনি নিজে বলেন- আমি বুছরা-বিনতে গাজওয়ানের ঘরে খাবার এবং এক জোড়া জুতার বিনিময়ে কাজ করতাম। তারা উটে আরোহন করলে তা হাঁকিয়ে নিয়ে যেতাম এবং নেমে আসলে তাঁদের খেদমত করতাম। একদিন আমাকে ঐ মেয়ে আদেশ করল খালি পায়ে নেমে যাও, আবার উট দাঁড়ানো রেখেই এতে উঠে বস। অর্থাৎ জুতা জোড়া পরার এবং উট বসাবার সময়টুকুও দিত না। আল্লাহর অসীম কুদরত দেখ, আজ ঐ মেয়ে-ই আমার অর্ধাঙ্গিনী বলে পরিচিতা। বিয়ের পর একদিন তাকে (রসিকতা করে) বললাম- জুতা না পরে এবং উট না বসিয়েই এতে চড়ে বস।

এর চেয়ে বেশী আর সামাজিক সাম্য কি হতে পারে যে, একজন মেহনতী তারই মালিককে অনায়াসে বিয়ে করে নিতে পারে। অহেতুক আভিজাত্যের অহমিকা যেখানে কোন বাধারই সৃষ্টি করতে পারে না ।

ইসলাম এক একজন শ্রমজীবির জন্যও অফূরন্ত সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে দিয়েছে। তার জীবনে পরিমেয় সুযোগ এনে দিয়েছে । তাই আমরা দেখি, ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় একজন মজুরও রাষ্ট্রীয় কর্ণধার পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।

আবু হুরায়রা (রাঃ) পরে মদীনার গভর্নর হয়েছিলেন। এক দিন তিনি কাত্তার জাতীয় কাপড় দিয়ে নাক ঝাড়ছিলেন আর নিজেকেই বলেছিলেন বাহ বাহ আবু হুরায়রা আজ কাত্তার দিয়ে নাক ঝাড়ছে। কিন্তু একদিন তোমার এমন অবস্থা ছিল যে, এই মদীনাতেই ক্ষুধায় অস্থির হয়ে মসজিদে এসে হযরত আয়েশা (রাঃ) হুজরা এবং মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানে বেহুশ হয়ে পড়ে থাকতে। আর লোকেরা পাগল মনে করে ঘাড়ে এসে চাপ দিয়ে ধরত। এর পর তিনি পূর্বোল্লিখিত ঘটনাটি বর্ণনা করে বললেন-

ইয়াতিম হয়ে জন্মেছি, সম্বলহীন অবস্থায় আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করেছি এবং আমি একজন বেতনভুক্ত শ্রমিক ছিলাম। ঐ আল্লাহরই সকল প্রশংসা যিনি ইসলামকে মজবুত করেছে। যারা আবু হুরায়রাকে কর্তৃত্বের অধিকারী হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color