আদম (আ) কে সিজদার নির্দেশ
05:25:44 06/16/2024
আদম (আ) কে সিজদার নির্দেশ: ফেরেশতাদের নির্দেশ দেয়া হল,তোমরা তার সামনে সিজদাবনত হও। সঙ্গে সঙ্গে সব মালায়েকা নির্দেশ পালন করল কিন্তু ইবলীস (শয়তান) গর্বভরে সে নির্দেশ পালন করতে সোজাসোজি অস্বীকার করল। ঘটনার এই অংশটুকু পবিত্র কুরআন শরীফের নিচের আয়াতগুলোতে বর্ণনা করা হয়েছে।
অর্থাৎ যখন ফেরেশতাদের বললাম, আদমের প্রতি নত হও, তখন ইবলীস ছাড়া সকলেই তন হল সে অমান্য করল ও অহংকার করল। সুতরাং সে প্রত্যাখ্যানকারীদের অন্তর্ভূক্ত হল। এবং আমি বললাম,হে আদম, তুমি ও তোমার সঙ্গিনী স্বর্গে বসবাস কর এবং যথা ও যেথা ইচ্ছা ভক্ষণ কর। কিন্তু এ বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়ো না, হলে তোমরা অত্যাচারিদের অন্তর্ভূক্ত হবে। (সূরা ঃ বাক্বারাহ, আয়াতঃ ৩৪-৩৫)
অর্থাৎ আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করি, এর পর তোমাদের রূপদান করি এবং তারপর ফেরেশতাদেরকে আদমের নিকট নত হতে বলি ইবলীশ ছাড়া সকলেই নত হয়। যারা নত হল সে তাদের অন্তর্ভূক্ত হল না। (সূরা ঃ আ‘রাফ, আয়াত ১১)
অর্থাৎ, আমি তো মানব সৃষ্টি করেছি ছাঁচেঢালা শুষ্ক ঠনঠনে মৃত্তিকা থেকে এবং এর পূর্বে সৃষ্টি করেছি জ্বিন, অত্যুঙ্ক বায়ুর উত্তাপ থেকে। স্মরণ কর, যখন তোমার প্রভু ফেরেশতাগণকে বললেন, আমি ছাঁচে ঢালা শুষ্ক ঠনঠনে মৃত্তিকা থেকে মানব সৃষ্টি করেছি যখন আমি ওকে সুঠাম করব এবং তাতে রূহ সন্চার করব তখন তোমরা ওর প্রতি সিজদাবনত হও। তখন ফেরেশতারা সকলেই সিজদা করল কিন্তু ইবলীস করল না, সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হতে অস্বীকার করল। (সূরাঃ হিজর, আয়াত ঃ ২৬-৩১)
অর্থাৎ, এবং স্বরণ কর, আমি যখন ফেরেশতাদের বলেছিলাম, আদমের প্রতি নও হও, তখন সকলেই নত হল ইবলীস ছাড়া সে জ্বিনদের একজন, সে তার প্রভুর আদেশ অমান্য করল। তবে কি তোমরা আমার পরিবর্তে ওকে এবং ওর বংশধরকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করছ? ওরা তো তোমাদের দুশমন।এই সীমালংঘনকারীদের প্রতিফল অতিশয় মন্দ। (সূরাঃ কাহফ, আয়াত, ঃ ৫০)
অর্থাৎঃ স্বরণ কর তোমার প্রভু ফেরেশতাদের বলেছিলেন, আমি মানবে সৃষ্টি করেছি কর্দম থেকে যখন আমি ওকে সুটাম করব এবং ওতে আমার রূহ সন্চার করব তখন তোমরা ওর প্রতি সিজদাবনত হও, তখন ফেরেশতারা সকলেই সিজদাবনত হল-কেবল ইবলীস ছাড়া সে অহংকার করল এবং সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের অন্তর্ভুক্ত হল।(সূরাঃ ছোয়াদ, আয়াতঃ ৭১-৭৪)
এফিলিয়েট মার্কেটিং করে উপার্জন
সিজদা করতে ইবলীসের অস্বীকৃতি ও কৃটতর্ক
যদিও আল্লাহ তাআলা অদৃশ্য সম্পর্কে অবহিত এবং অন্তরের রহস্যাদি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল,যদিও তার কাছে অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যত একাকার তবু তিনি পরীক্ষার উদ্দেশ্যে ইবলীসকে প্রশ্ন করলেন।
অর্থাৎঃ তিনি বললেন,আমি যখন তোমাকে নির্দেশ দিলাম তখন কী তোমাকে নিবৃত্ত করল তুমি নত হলে না? ইবলিস উত্তরে বলল,আমি তার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আমাকে (তুমি) আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছ,আর তাকে মৃত্তিকা দিয়ে।(সূরাঃ আরাফ,আয়াতঃ১২)
ইবলীসের বক্তব্য ছিল,আমি আদম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। কেননা, তুমি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছ। আর আগুন চায় উচ্চতা তথা উচ্চ বিদ্যা। অপরদিকে আদমকে সৃষ্টি করেছ মৃত্তিকা দিয়ে। অতএব, মর্তবার ক্ষেত্রে আগুনের সাথে কি মৃত্তিকার তুলনা চলে? অথচ হে প্রভু তুমি আগুনের সৃষ্টিকে মৃত্তিকার সৃষ্টির সামনে সিজদাবনত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছ? এটা কি ধরনের ন্যায়বিচার? আমি সর্বক্ষেত্রে আদম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ,অতএব আমার সামনে তার সিজদাবনত হওয়া উচিত,না তার সামনে আমার? কিন্তু দুর্ভাগ্য ইবলীস তার আত্মম্ভরিতার কারণে একথা ভুলে বসল সে এবং আদম উভয়ই আল্লাহর সৃষ্টি তখন সৃষ্টি হাকিকত বা মূলতত্ব সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর চেয়ে বেশি জানা তার পক্ষে বা অন্য কোন সৃষ্টির পক্ষেই তো সম্ভব নয়।
সে তার দাম্ভিকতা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এই সোজা কথাটিও বুঝতে পারল না,কোন সৃষ্টির মর্তবার ক্ষতি বৃদ্ধি ঐ উপাদানের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় না যার দ্বারা তার খমীর তৈরি করা হয়েছে বরং ঐ সমস্ত গুণাবলীর ভিত্তিতে নির্ধারত হয়,যা বিশ্ব স্রষ্টা তার মধ্যে সন্নিবেশিত করেছেন।
মোটকথা,ইবলীসের উত্তর যেহেতু দাম্ভিকতা ও অহংকার ভিত্তিক ছিল তাই আল্লাহ তা‘আলা তার কাছে একথাটি স্পষ্ট করে দিলেন যে,তুমি তোমার স্রষ্টার হক ও মর্তবাকে পর্যন্ত অস্বীকার করে বসেছ এমন কি তাকে অত্যাচারী আখ্যা দিয়েছ এবং একথা বুঝে উঠতে পারেনি তোমার অজ্ঞতাই তোমাকে ন্যায় ও সত্য থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। অতএব এই দৌরাত্ম্যের কারণে তোমার কৃত-কর্মই একমাত্র প্রাপ্য।
ইবলীসের অবকাশ কামনা
ইবলীস যখন দেখল, বিশ্বস্রষ্টার নির্দেশের বিরোধিতা, আত্মম্ভরিতা সেচ্ছাচারিতা ও আল্লাহ তাআলা সাথে অন্যায় আচরণের অভিযোগে সে মহান প্রভু আল্লাহর করূণা ও রহমত থেকে বিদূরিত এবং জান্নাত থেকে চিরবন্চিত হয়েছে তখনও সে তওবা (অনুতাপ) ও লজ্জাবোধ-এর পরিবর্তে আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা জানাল, কিয়ামত পর্যন্ত আমাকে সুযোগ দিন এবং সেদিন পর্যন্ত আমার জীবন-কাল বর্ধিত করুন।
আল্লাহর ইচ্ছাও তাই। অতএব ইবলীসের প্রার্থনা মন্জুর করা হল। এটা শুনে ইবলীসের শয়তানি আরো যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। সে বলতে লাগল, যে আদমের কারণে আমার ভাগ্যে এই অপমান ও বন্চনা জুটেছে আমি সেই আদমের সন্তানদের চলার পথরূদ্ধ করে দেব। ডানে-বামে, আশে-পাশে ও চতুর্দিকে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে আমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব এবং তাদের অধিকাংশকেই তোমার অবাধ্য ও অকৃতজ্ঞ করে ছাড়ব। অবশ্য যারা তোমার একনিষ্ট দাস তারা আমার প্রতারণায় প্রতারিত হবে না বরং নিজেদেরকে সব সময়ই রক্ষা করে চলবে।
আল্লাহ তাআলা বললেন, এতে আমার কোন পরোয়া নেই। আমার বিধান হল, যে যেমন করবে সে তেমন পাবে। অতএব যে আদম সন্তান আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং তোমার অনুসরণ করবে সে তোমারই সাথে (জাহান্নামে) শাস্তি ভোগ করবে। তুমি আপন লান্চনা ও দুর্ভাগ্য নিয়ে এখান থেকে দূর হও এবং তোমার ও তোমার অনুসারীদের চিরস্থায়ী শান্তির অপেক্ষা কর। পবিত্র কুরআন শরীফের নিম্নোক্ত আয়াতসমূহে এ সমস্ত ঘটনার উপর আলোকপাত করা হয়েছে।
অর্থাৎ ঃ (আল্লাহ বললেন,) আমি যখন তোমাকে নির্দেশ দিলাম তখন কী তোমাকে নিবৃত করল যে, তুমি নত হলে না? সে বলল, আমি তার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছ এবং তাকে কাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছ।
তিনি (আল্লাহ) বললেন, এখান থেকে নেমে যাও, এখানে থেকে অহংকার করবে এটা হতে পারে না। সুতরাং বের হয়ে যাও, তুমি অধদের শামিল।
সে বলল, পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত আমাকে সুযোগ দিন। তিনি বললেন, যাদেরকে সুযোগ দেয়া হয়েছে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হলে। সে বলল, তুমি আমার সর্বনাশ করলে, এজন্য আমিও তোমার সরল পথে মানবের জন্য নিশ্চয় ওঁৎ পেতে থাকবো। অতপর আমি তাদের কাছে আসব তাদের সামনে, পিছনে ডান ও বাম দিক থেকে এবং তুমি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবে না।
তিনি (আল্লাহ) বললেন, এখান থেকে ধিকৃত ও বিতাড়িত অবস্থায় বের হয়ে যাও। মানবের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে নিশ্চয় আমি তোমাদের সকলের দ্বারা জাহান্নাম পরিপূর্ণ । (সূরাঃ আরাফ আয়াতঃ ১২-২৮)
অর্থাৎঃ আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস, তোমার কি হল তুমি সিজদাকারীদের গণ্য হলে না? সে বলল, আপনি ছাঁচে ঢালা শুষ্ক ঠনঠনে মৃত্তিকা থেকে যে মানব সৃষ্টি করেছেন আমি তাকে সিজদা করবার নই।
আল্লাহ বললেন, তবে তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও, কারণ তুমি অভিশপ্ত এবং কর্মফল দিবস পর্যন্ত তোমার প্রতি রইল অভিশাপ। সে বলল, হে আমার প্রভু, পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত আমাকে সুযোগ দাও।
আল্লাহ বললেন যাদেরকে সুযোগ দেয়া হয়েছে তুমি তাদের গণ্য হলে অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিবস পর্যন্ত।
সে বলল, হে আমার প্রভু তুমি যে আমার সর্বনাশ করলে তার কসম, আমি পৃথিবীতে মানবের কাছে পাপ কর্মকে শোভন করে তুলব এবং আমি ওদের সকলেরই সর্বনাশ সাধন করব, তবে ওদের মধ্যে যারা তোমার খাঁটি দাস তাদেরকে নয়।
আল্লাহ বললেন, এটাই আমার কাছে পৌঁছার সরল পথ,বিভ্রান্তদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে তারা ছাড়া আমার বান্দাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা থাকবে না। অবশ্য তোমার অনসারীদের সকলেরই নির্ধারিত স্থান হবে জাহান্নাম।(সূরাঃ হিজর আয়াতঃ ৩২-৪৩)
অর্থাৎঃ তোমার প্রভু বললেন,হে ইবলীস, আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি তার প্রতি সিজদাবনত হতে তোমাকে কে বাধা দিল? তুমি কি ঔদ্ধতা প্রকাশ করলে, না তুমি উচ্চ মর্তবাসম্পন্ন ইবলীস বলল, আমি আদম থেকে শ্রেষ্ঠ । আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং ওকে সৃষ্টি করেছেন কাদা থেকে। তিনি বললেন, তুমি এখান থেকে বের হও কারণ তুমি অভিশপ্ত এবং তোমার উপর আমার এই অভিশাপ স্থায়ী হবে কর্মফল দিবস পর্যন্ত ।
সে বললো, হে আমার প্রভু আপনি আমাকে সুযোগ দিন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।তিনি বললেন, যাদেরকে সুযোগ দেয়া হয়েছে তুমি তাদেরই গণ্য হলে-অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত । ইবলীস বললো,আপনার ক্ষমতা কসম আমি ওদের সকলেরই সর্বনাশ সাধন করবো। তবে ওদের মধ্যে আপনার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের নয়। তিনি বললেন, আমিই সত্য এবং আমি সত্যই বলছি তোমার দ্বারা ও তোমার অনুসারীদের দ্বারা আমি জাহান্নাম পরিপূর্ন করবোই।(সূরাঃ ছোয়াদ, আয়াতঃ ৭৫-৮৫)