আশুরার ঐতিহাসিক ঘটনা সমূহ - Ashurar Ghotona
12:32:01 12/03/2023
আশুরার ঐতিহাসিক ঘটনা সমূহ: ঐতিহাসিক দিক দিয়ে এ দিনে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে । এ দিনে আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়, ফেরেস্তাদের নির্দেশ দেয়া হয় আদম (আঃ) কে সিজদা করতে । বেহেস্ত থেকে তাকে দুনিয়ায় প্রেরণ করা হয় এবং আরাফাতে আদম ও হাওয়ার মিলন হয়। এদিনে নূহের প্লাবন হয় এবং এ দিনেই আবার তিনি প্লাবনের পরে নৌকা থেকে নেমে আসেন । এ দিনে ইব্রাহীম (আঃ) নমরুদের আগুন থেকে মুক্তি পান। এ দিনে ইউনুস (আঃ) মাঠের পেট থেকে বেরিয়ে আসেন।
৬০ হিজরী/ ৬৮০ খ্রীষ্টাব্দে এ দিনে ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে স্মরণকালের মানব ইতিহাসের নির্মমতম হৃদয়বিদারক ঘটনা সংঘটিত হয় । রহমাতুল্লিল আলামীনের প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র, ফাতেমা দুলাল, চতুর্থ খলীফা হযরত আলী (রাঃ)-এর পুত্র ইমাম হুসাইন (রাঃ) সপরিবারে এদিন শাহাদাত প্রাপ্ত হন দামিশক অধিপতি ইয়াজিদের দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনীর হাতে ফোরাতের কিনারে ।
নীতি ও আদর্শের জন্য, সত্য ও ন্যায়ের জন্য অকাতরে অবলীলাক্রমে প্রাণদানের এ ধরনের নজীর বিরল। অপ্রতিরোধ্য ও দুর্বার শক্তির মোকাবিলায় দুর্বলের প্রতিরোধের যে ইতিহাস সেদিন আশুরাতে কারবালার প্রান্তরে রচিত হয়েছে, তা কালজয়ী। কালানুক্রমে তা বিস্ময়করভাবে শিক্ষণীয় হয়ে রয়েছে মানবজাতির জন্য । তাই কবি বলেছেনঃ “ইসলাম জিন্দা হোতা হায় কারবালাকে বাদ।' আশুরার তাৎপর্য কেবল কারবালার ঘটনাতে নিহিত নয়। যেহেতু কারবালার ঘটনা ঐতিহাসিক দিক দিয়ে সময়ের নিরিখে নিকটতর তাই এর আবেদন স্বাভাবিকভাবেই অধিক। মানব ইতিহাসের সূচনা লগ্ন থেকেই এই আশুরাতে সংঘটিত ঘটনাবলী মানবজাতির জন্য দিকনির্দেশনা হয়ে রয়েছে ।
ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের ক্রান্তিকালে করণীয় এ বর্জনীয় নির্দেশনা এ আশুরার ঘটনাবলীতে বিদ্যমান । প্রতি বছর এ দিনটি ঘুরে ঘুরে দুনিয়ার মানুষের কাছে আসে । এদিনের আবেদন চির অমলিন, চির ভাস্বর।
দুর্বল ও অসহায়ের মহান আল্লাহ । শক্তি ও অসত্য অপসৃত হবেই ।
শক্তির জোরে ও ক্ষমতার মোহে যারা নেশাগ্রস্থ তাদের বিরুদ্ধে অসহায় ও দুর্বলদের অপ্রতিরুদ্ধ প্রতিবাদের ইতিহাস এ দিন ।
ইরাকের ফোরাত ও ব্যবিলন, মিশরের নীলনদ এখনও বিদ্যমান। আমরা কি এখানে সংঘটিত ঘটনাবলী স্মরণ করি? আশুরা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় অতীতের করুণ কাহিনী। স্মরণ করিয়ে দেয় ফিরাউন ও নমরুদের পরিণতি 1
সাড়ে পাঁচ হাজার বছর পূর্বে শক্তিধর ক্ষমতাদর্পী নমরুদের বিরুদ্ধে সেদিন ইব্রাহীম (আঃ) যে দৃঢ় ঈমানে বলিয়ান হয়ে মোকাবিলা করেছিলেন, আজ আশুরা সে কথাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। তাই কবি বলেছেন, 'আজও যদি পাওয়া যায় ইব্রাহীমের ঈমান' লেলিহান আগুন সৃজিবে আবার মনোরম উদ্যান'
মর্সিয়া ও তাজিয়া, আলোচনা ও আনুষ্ঠিকতায়ই যেন এই মহান আশুরা অবশিষ্ট না হয়ে পড়ে। এদিনটি যে আবেদন নিয়ে আমাদের কাছে এসেছে, আমরা সে আবেদনের জবাব দেই। আমরা যেন অসত্যের কাছে মাথানত না করি। আমরা যেন ন্যায় ও সত্যকে সমুন্নত রাখতে যে কোন ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকি। আমরা যেন কেবল মহান আল্লাহকেই ভয় করি । আশুরা উন্মোচিত করুক নতুন দিগন্ত ।
কারবালার প্রান্তরে আশুরার শহীদ হযরত হুসাইনকে মহান আল্লাহ বিজয়ী হযরত হুসাইনের চাইতে অধিক কার্যকরী আবেদনময়ী করে রেখেছেন তার দ্বীনের জন্য। হযরত হুসাইনের সেদিনের দৃঢ়প্রত্যয় অতুলনীয় আত্মত্যাগের দীক্ষা প্রতি আশুরায় উম্মতকে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যে কোন আত্মত্যাগের প্রেরণায় উজ্জীবিত করে ।