Narrow selection

আদর্শ শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য সমূহ - Characteristics of an ideal teacher


04:58:35 12/04/2023

আদর্শ শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য সমূহ : একজন আদর্শ উস্তাদের একটি অন্যতম বিশেষ গুণ হলো ইখলাস। ইখলাস ব্যতীত কোন আমলই মহান আল্লাহর নিকট গ্রহযোগ্য নয়। কাজেই পাঠদানের ক্ষেত্রে প্রত্যেক শিক্ষকের একান্ত কর্তব্য হলো, মহানবী সা. এর আদর্শকে সামনে রাখা ও সর্বতোভাবে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করা। তাহলেই একজন শিক্ষক শিক্ষকতার যথার্থ হক আদায় করতে পারবেন। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শিক্ষাদানের এ মহৎ কাজটি সম্পূর্ণরূপে অহংকারমুক্ত হতে হবে। 

এ সম্পর্কে হযরত আবু হোরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সা. ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’য়ালা, ওলামায়ে কিরামকে সম্বোধণ করে জিজ্ঞাসা করবেন, আমি তোমাকে যে ইলমে দ্বীন দান করেছিলাম, তুমি তার কতটুকু হক আদায় করেছ? উত্তরে তারা বলবেন, আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টি হাসিলের জন্যই ইলমে দ্বীন শিক্ষা করে তা মানুষকে শিক্ষা দিয়েছি। প্রত্যুত্তরে আল্লাহ তায়ালা বলবেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা । তখন আরশ, কুরসী ও ফেরেশতাগণও বলবেন, মিথ্যুক কোথাকার, তুমি ইলমে দ্বীন এজন্য শিক্ষা করেছ ও তা অপরকে শিক্ষা দিয়েছ, যাতে মানুষ তোমাকে বড় আলেম বলে । দুনিয়াতে তোমাকে বড় আলেম বলা হয়েছে, সুতরাং তোমার ইলমে দ্বীন শিক্ষা গ্রহণ ও শিক্ষা দানের যে উদ্দেশ্য ছিল তা পূর্ণ হয়ে গেছে । অতঃপর আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের আদেশ দিবেন, তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাও! তখন ফেরেশতাগণ তাকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে উপুর করে নিক্ষেপ করবে। (মুসলিম)

মুহাদ্দেসীনে কিরাম লিখেছেন, হযরত আবূ হোরায়রা রা. আলোচ্য হাদীসখানা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনবার বেহুশ হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। অতঃপর পানির ছিটা দিলে তাঁর সম্বিত ফিরে আসে। সুতরাং উস্তাদগনের সর্বদা এমর্মে দোয়া করা উচিত যে, আল্লাহ তায়লা যেন আমাদের নিয়তকে খালেস করার তাওফীক দান করেন এবং অহংকার থেকে হেফাযত করেন। শিক্ষাদানের যে সামান্য খেদমত করছি, এর অসীলায় আপনার শাহী দরবারে আমার হৃদয় নিংড়ানো প্রার্থনা এ যে, আপনি দয়া করে বান্দার এ আবেদন মঞ্জুর করুন!

অনেক বুযুর্গ বলে থাকেন, কিতাবের মধ্যে সবকের চিহ্ন দিতে যে কাগজ ব্যবহার করা হয়, শিক্ষকের উচিত হবে এর ওপর ইখলাস শব্দটি লিখে রাখা ৷ এতে প্রত্যহ যখন সবক পড়াতে যাবেন ও কাগজটির প্রতি নজর পড়বে, তখনই মনের মধ্যে দোলা দিবে যে, এ পড়া ও পড়ানোর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। অনুরূপ যখনই ঘর থেকে বেড় হবেন, তখন মনে মনে বলবেন, আল্লাহ তায়ালার সন্তষ্টি হাসিলের জন্য ইলমে দ্বীন শিক্ষা করেছি এবং তা-ই এখন শিক্ষা দিতে যাচ্ছি। হে আল্লাহ! আমাকে কল্যাণবহ ইলম দান কর ও এর অসীলায় আমাকে হেদায়াত নসীব কর ।

হযরত মাওলানা সাঈদ আহমদ খান রহ. বলেন, কিতাব পড়ানো শুরু করার আগে একজন শিক্ষকের উচিত যে, তিনি এভাবে নিয়ত খালেস করে নিবেন যে, আমি তালেবে ইলমদের যা কিছু শেখাচ্ছি তা সবই একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য। প্রতিদিন ক্লাশে উপস্থিত হয়ে সর্বার্থে এ নিয়ত করে নিবেন যে, আমি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্যই ইলমে দ্বীন শিক্ষা করেছি, সেখানে আমার কোন পার্থিব স্বার্থ উদ্দেশ্য ছিল না। অন্তরে এরূপ নিয়ত বদ্ধমূল থাকার পর যদি তাকে সম্মানী হিসেবে কিছু দেয়া হয় তবে সেটা হবে রব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে তার কর্মের অগ্রীম হাদিয়া স্বরূপ। এতে তার পরকালের সওয়াব ও প্রতিদান হতে সামান্যতম ঘাটতি হবে না।

নবী-রাসূলগণ যখন মানুষকে আল্লাহ তায়ালার দিকে আহ্বান করতেন, তালীম তরবিয়ত দিতেন তখন একথা বলতেন, হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের নিকট এ দাওয়াতের ও তালীমের কোন প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদানতো আল্লাহ তায়ালা নিজেই দিবেন পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করছেন,

وَ مَا اسْتَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى رَبِّ الْعَالَيْنَ

অর্থাৎ, আমি তোমাদের কাছে এর কোন বিনিময় চাই না, বরং এর যথার্থ বিনিময় মহান রাব্বুল আলামীন নিজে আমাকে প্রদান করবেন। (সূরা শুয়ারা : আয়াত-১০৯)

মহান আল্লাহ পরকালে নিষ্ঠাপূর্ণ এ মহান কাজের প্রতিদান দিবেনই, উপরন্তু ইহকালেও বঞ্চিত করবেন না। অনন্তর মহান স্রষ্টা কতইনা দয়ালু।

কেউ যখন আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ইলমে দ্বীন শিক্ষা দিবেন তখন তাহাকে মহান আল্লাহ অভাব ও ক্ষুধপিপাসায় মারবেন, কষ্ট দিবেন তা কি হতে পারে? না কখনই হতে পারে না। তবে বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কখনো কখনো বিপদাপদ ও নানাবিধ পরীক্ষার সম্মুখীন করতে পারেন ।

কালামে পাকে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصابرين -

অর্থাৎ, এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের-(সূরা বাকারা : আয়াত-১৫৫)

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color