মুহাম্মাদ সা. এর জননীর মৃত্যু
12:56:49 01/02/2025
মুহাম্মাদ সা. এর জননীর মৃত্যু
যখন মহানবী সা. এর বয়স চার অথবা ছয় বছর হল তখন মদীনা থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় আবওয়া নামক স্থানে তাঁর সম্মানিতা জননী দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন। মুগলতাঈ পৃঃ১০
শৈশবকাল, বয়স ছয় বছর। পিতার ছায়া পূর্ব থেকেই উঠে গেছে। জননীর স্নেহের কোলও শেষ হল। কিন্তু এই ইয়াতীম যেই করুণার কোলে লালিত পালিত হবেন তিনি তো এসব কারণ-উপকরণ থেকে অমুখাপেক্ষী।
আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যু
পিতা-মাতার পর মহানবী সা. এর দাদা আব্দুল মুত্তালিবের নিকট তিনি থাকতে লাগলেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার এটাই দেখানো উদ্দেশ্য ছিল যে, এই কচি শিশু কেবলমাত্র রহমতের কোলে লালিত পালিত হবেন। উপায়-উপকরণের স্রষ্টা তাঁর লালন-পালনের দায়িত্ব নিজেই নিয়েছেন। যখন তাঁর বয়স আট বছর দুইমাস, দশ দিন হল তখন আব্দুল মুত্তালিবও দুনিয়া থেকে চলে গেলেন।
মহানবী সা. এর সিরিয়া যাত্রা
এরপর মহানবী সা. এর আপন চাচা আবু তালিব তাঁর অভিভাবক হলেন। তিনি তাঁর নিকট থাকতে লাগলেন। যখন তাঁর বয়স বার বছর দুই মাস দশ দিন হল তখন আবু তালিব ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়ার সফরের ইচ্ছা করলেন। মহানবী সা. কে সাথে নিয়ে সিরিয়ায় গেলেন। রাস্তায় তাইমা নামক স্থানে অবস্থান করলেন।
মহানবী সা. এর সম্পর্কে ইয়াহুদীদের এক বড় আলেমের ভবিষ্যদ্বাণী
মহানবী সা. তাইমা নামক স্থানে অবস্থান করতেছিলেন, ঘটনাক্রমে ইয়াহুদীদের এক বড় আলেম যাকে বুহাইরা রাহেব বলা হত; মহানবী সা. এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। মহানবী সা. কে দেখে আবু তালিবকে সম্বোধন করে আমার বললেন, এই ছেলে কে,যে আপনার সাথে আছে? আবু তালেব বলল, ভাতিজা। বুহাইরা বলল, আপনি কি তাঁর প্রতি দয়াবান এবং তাঁকে হিফাজত করতে চান? আবু তালিব বলল, অবশ্যই। এটা শুনে বুহাইরা রাহেব আল্লাহর শপথ করে বললেন, যদি তুমি তাঁকে সিরিয়াতে নিয়ে যাও তাহলে ইয়াহুদীরা তাঁকে হত্যা করে ফেলবে। কেননা, ইনি আল্লাহর নবী যিনি ইয়াহুদীদের ধর্মকে রহিত করে দিবেন। আমি তাঁর গুণাবলী আসমানী কিতাবে পেয়েছি।
উপকারিতাঃ বুহাইরা রাহেব যেহেতু তাওরাতের আলেম ছিলেন এবং তাওরাতে মহানবী সা. এর পরিপূর্ণ শারীরিক গঠনের কথা উল্লেখ রয়েছে । এজন্য তিনি তাঁকে চিনে ফেলেছিলেন যে, তিনিই শেষ নবী, যিনি তাওরাত রহিতকারী এবং ইয়াহুদী আলেমদের কর্তৃত্ব শেষ করে দিবেন। বুহাইরার বলার দ্বারা আবু তালিবের আশঙ্কা সৃষ্টি হল এবং মহানবী সা. কে মক্কা মুয়ায্যামায় পাঠিয়ে দিলেন। -মুগলাতঈ ১০
দ্বিতীয়বার সিরিয়া সফর
মক্কা মুয়ায্যামায় সে সময় খাদীজা নামক এক ধনাঢ্য নারী ছিলেন। সাথে সাথে তিনি বুদ্ধিমতি ও অভিজ্ঞতাসম্পন্না ছিলেন। যে সব গরীব লোকদেরকে তিনি বিচক্ষণ ও নির্ভরযোগ্য মনে করতেন তাদেরকে নিজের সম্পদ ন্যস্ত করে বলতেন যে, অমুক স্থানে গিয়ে বিক্রি করে আস। এ পরিমাণ তোমাকেও প্রদান করা হবে।
রাসূলুল্লাহ সা.এর নবুওয়াত যদিও সে সময় প্রকাশিত হয়নি; কিন্তু তাঁর ধর্মভীরুতা, বিশ্বস্থতা সারা মক্কাবাসীদের মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিল। প্রত্যেকেরই তাঁর মনোনিত ও পুতপবিত্র চরিত্রের উপর আস্থা ছিল। মহানবী সা. “আল আমীন” উপাধীতে প্রসিদ্ধ ছিলেন। এই প্রসিদ্ধি ও শ্রেষ্ঠত্ব খাদীজার কাছেও গোপন ছিল না। এজন্য তিনি ইচ্ছা করলেন যে,নিজ ব্যবসা মহানবী সা.কে ন্যস্ত করে মহানবী সা. এর বিশ্বস্থতার দ্বারা উপকৃত হবেন।
রাসূলুল্লাহ সা. এর নিকট বলে পাঠালেন যে, যদি আপনি আমাদের বাণিজ্যিক মাল সিরিয়াতে নিয়ে যান তাহলে আপনার সেবার জন্য আমরা এক গোলাম সাথে পাঠিয়ে দিব এবং অন্যদেরকে লভ্যাংশ থেকে যে পরিমাণ দেয়া হয় তার থেকে বেশি দ্বারা আপনার খেদমত করা হবে।
নবী কারীম সা. যেহেতু অত্যন্ত সাহসী এবং প্রশস্ত মনের অধিকারী ছিলেন, তাই তিনি তৎক্ষণাৎ এই দূরবর্তী সফরের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন এবং খাদীজার গোলাম মাইসারাকে সাথে নিয়ে ১৬ই যিলহজ্ব সিরিয়ার দিকে রওয়ানা হলেন। সেখানে সেই পণ্য অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে অধিক লাভে বিক্রি করে দিলেন এবং সিরিয়া থেকে অন্য পণ্য ক্রয় করে প্রত্যাবর্তন করে মক্কায় খাদীজার কাছে মাল অর্পণ করে দিলেন। খাদীজা সেই মাল মক্কায় বিক্রি করলেন। তাতে প্রায় দ্বিগুণ লাভ হল । সামসিরিয়ার রাস্তায় যখন এক স্থানে মহানবী সা. অবস্থান করতেছিলেন, নাস্তুর নামক এক পাদ্রী মহানবী সা.কে দেখলেন। পূর্বের আসমানী কিতাবে শেষ নবীর যেসব গুণাবলী লিপিবদ্ধ ছিল মহানবী সা. এর মাঝে দেখে চিনে ফেললেন। রাহেব মাইসারাকে চিনতেন।
এজন্য তাকে জিজ্ঞেস করলেন তোমার সাথে এ লোকটি কে? সে বলল, মক্কা মুয়ায্যামার অধিবাসী কুরাইশদের এক সম্ভ্রান্ত যুবক । তিনি বললেন, ইনি নবী হবেন।-মুগলতাঈ পৃ-১২