Narrow selection

​​​​​​​মসজিদে খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমানো - Eating and sleeping in the mosque


01:31:02 12/04/2023

মসজিদে খাওয়া দাওয়া ও ঘুমানো কি  জায়েয?

উত্তর : তাবলীগ বিরোধীরা তাবলীগ জামাতের ব্যাপারে ভ্রান্ত মন্তব্য করে যে, তারা ছামানাপত্র নিয়ে মসজিদে মসজিদে গমন করেন। তারা দাওয়াত দিলে ঘরে ঘরে গিয়ে দেয় না কেন? তারা আল্লাহর ঘরে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া, ঘুমান ও নানা কার্যকলাপে লিপ্ত। এগুলো কি আল্লাহর ঘরের সাথে বেয়াদবী নয়? তারা শুধু দাওয়াতের নামে আল্লাহর ঘরের সাথে বেয়াদবী করে পাপকার্য করে থাকে।

উত্তর : আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারী ওলাময়ে কেরাম তাদের এ ভ্রান্ত মন্তব্যের জবাবে বলেন। হ্যাঁ, জামাতে তাবলীগরাও বলেন আল্লাহর ঘরে অনর্থকভাবে খাওয়া-দাওয়া, ঘুমান, কথা-বার্তা বলা বেয়াদবী ও গুনাহ । কিন্তু দ্বীন ধর্মের স্বার্থে যেমন দ্বীনি এলেম অর্জন ও দ্বীনি দাওয়াত প্রচারের ক্ষেত্রে মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা না থাকলে ইবাদতের নিয়তে বা ইতিকাফের নিয়তে নিয়ম কানুন মেনে মসজিদে থাকা জায়েজ আছে ।

আর বর্তমান যুগের তাবলীগ জামাআতীরা অনর্থকভাবে কোন মসজিদে থাকে না। শুধু খাওয়া দাওয়া, ঘুমান তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়, বরং তাদের উদ্দেশ্য দ্বীন শিক্ষা করা এবং অপরের কাছে দ্বীন পৌঁছে দেওয়া। আর দ্বীন প্রত্যেকটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে কিংবা নিজে দ্বীন শিখতে হলে নিজ সাংসারিক পারিবারিক ঝামেলা থেকে মুক্ত হতে হয় । অন্যথায় এ লক্ষ উদ্দেশ্য সহজেই অর্জিত হয় না, কারণ এ উদ্দেশ্যে বের হলে উদ্দেশ্য সারাক্ষণ সেটাই হয়ে থাকে । আর পারিবারিক ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে বিভিন্ন দূর দূরান্ত গ্রাম অঞ্চলে যেতে হয়। কারণ দাওয়াত শুধু নিজ এলাকায়ই সীমিত নয়। আর নিজ এলাকায় থাকলে পারিবারিক ঝামেলা থেকে পুরাপুরি মুক্ত হওয়া যায় না । এ জন্য বিভিন্ন জেলায় গ্রাম গঞ্জে শহরে দরে যেতে হয় আর সেখানে তো তাদের ঘর-বাড়ী বা থাকার কোন ব্যবস্থা নেই, তাই তারা সাবধানতার সাথে মসজিদে অবস্থান করেন। এবং তাদের এ অবস্থানের উদ্দেশ্য আল্লাহ তা'আলার ইবাদত ও ই'তিকাফ । 

কেননা যতক্ষণ মসজিদে অবস্থান করেন, ততক্ষণ কুরআন তিলাওয়াত, কুরআন শিক্ষা, নামায, দরূদ, তাছবীহ ও অন্যান্য ইবাদতের মধ্যে লিপ্ত থাকেন। আর মসজিদ থেকে বের হয়ে মানুষকে আল্লাহর ই‘বাদতের প্রতি আহবান করেন আর পুরুষদের মসজিদে অবস্থান ও ঘুমানোর প্রসঙ্গে বুখারী শরীফের ১ম খণ্ড ৬৩ পৃষ্ঠায় একটি অধ্যায় উল্লেখ আছে । তা হলো ৩ অর্থ- পুরুষদের মসজিদে ঘুমান প্রসংঙ্গ অধ্যায়। এ অধ্যায়ের মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর থেকে একটি হাদীস বর্ণিত

انه كان ينام وهو شاب اعزب لا اهل له في مسجد النبي (ص).

অর্থ- আব্দুল্লাহ বিন ওমর মসজিদে নববীতে ঘুমাতেন অথচ তিনি অবিবাহীত যুবক ছিলেন । (বুখারী ১ম)

فجاء فقال يا رسول الله هو في المسجد راقد فجاء رسول الله (ص) وهو مضطجع قد سقط رداؤه عن شقه واصابه تراب فجعل رسول الله

সাহল বিন সায়াদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন হুযুরে আকরাম (সাঃ) একদা ফাতেমা (রা) এর বাড়ীতে আসলেন কিন্তু বাড়ীতে আলী (রা) কে পেলেন না। হযতর ফাতেমা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন তোমার চাচার ছেলে কোথায়? তিনি উত্তরে বললেন, তার ও আমার মাঝে সামান্য মনোমালিন্য হয়েছে । অতঃপর আমার উপর অত্যন্ত রাগ হয়ে বেরিয়ে গেলেন ও আমার সাথে কোন কথা বললেন না। 

হুযূর (সাঃ) সাহাবীদের বললেন, দেখ তিনি কোথায়? অতঃপর এক সাহাবী এসে বলল হে আল্লার রাসূল  তিনি মসজিদে ঘুমিয়ে আছেন। অতঃপর হুযূর (সাঃ) সেখানে আসলেন। এমতাবস্থায় তিনি চিৎ হয়ে শুয়ে ছিলেন এবং তার শরীর হতে চাদর মাটিতে পরে গিয়েছিল ও তার শরীরে মাটি লেগে গিয়েছে। হুযূর (সাঃ) মাটি মুছে দিচ্ছেন, আর বলছেন হে মাটিওয়ালা  উঠ, হে মাটিওয়ালা ওঠ। (বুখারী) 

উল্লেখিত হাদীস ও অন্যান্য হাদীসের মাধ্যমে সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, প্রয়োজনে মসজিদে ঘুমান বা অবস্থান করা জায়েয আছে। সুতরাং তাবলীগ বিরোধীদের যে মন্তব্য তা ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন।

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color