Narrow selection

আন্তর্জাতিক হিজাব সংহতি দিবস নারী ও পর্দা পটভূমি - Hijab Porar Bidhan


02:30:36 12/04/2023

আন্তর্জাতিক হিজাব সংহতি দিবস নারী ও পর্দা পটভূমি :

৩ সেপ্টেম্বর, আন্তর্জাতিক হিজাব সংহতি দিবস। ফ্রান্স সরকার সে দেশের মুসলিম বালিকাদের স্কুলে স্কার্ফ বা হিজাব নিষিদ্ধ করে আইন করার প্রতিবাদে ও হিজাব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়া হয় । এ দিবসে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা কর্মসূচি পালিত হয় । কানাডা, জর্ডান, তুরস্ক, লন্ডন স্কটল্যান্ড, চিলি, ফ্রান্স, জার্মানি, লেবানন, ফিলিস্তিন, স্পেন, সুদান, এবং যুক্ত রাষ্ট্রের হস্টন ও টেক্সাসে এ দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছে জন সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান ।

বর্তমান সময়ে বিভিন্ন মুসলিম দেশের বিশেষ করে ইরাক, চেচনিয়া, বসনিয়া, ফিলিস্তিনের মুসলমানদের যেখানে সঙ্কটময় অবস্থা, সে সময়ও মুসলমানরা মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা শুনতে পায়, যা মুসলমানদের অন্তরে আনন্দ সৃষ্টি করে। তেমনি একটি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বৃটেনে । বাংলাদেশে জন্মলাভ করা একটি পরিবার বর্তমানে স্থায়ীভাবে নাগরিকত্ব অর্জন করেছে বৃটেনে, যুক্ত রাজ্যে। মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করেছে। স্কুলে মেয়ে ভর্তি হয়ে পড়া লেখা শুরু করল । ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী মেয়ে যখন প্রাপ্ত বয়স্কা হল, স্কুলে যাওয়ার সময় বোরকা-স্কার্ফ পরে স্কুলে গেল, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে নিষেধ করল যে, বোরকা- স্কার্ফ পরে আসা যাবেনা এবং তাকে সে পোশাক তার স্কুলে প্রবেশ করতে দেয়নি। মেয়েটির নাম 'সাবিনা, সে আদালতে মামলা করল, আমার ধর্মীয় অধিকার, মানবাধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে। আমি আমার ধর্মীয় পোষাক পরে স্কুলে যাব । 

আদালতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা হওয়ার পর নিম্ন আদালত রায় দিল স্কুলের পক্ষে এবং মেয়ের বিপক্ষে। অর্থাৎ স্কুলে যাওয়ার সময় উড়না পরে, স্কার্ফ পরে যাওয়া যাবেনা, স্কুলের ইউনিফর্ম পরে যেতে হবে, অথচ একজন প্রাপ্ত বয়স্কা মেয়ের যতটুকু পর্দা, তা সে পোষাকে হয়না । এরপর উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের রায়কে নাকচ করে দিয়েছে এবং এ মর্মে রায় প্রদান করেছে। যে, এই মেয়ে তার ধর্মীয় পোষাক পরিধান করে স্কুলে যেতে পারবে। আলহামদুলিল্লাহ্ । এর মধ্যে আরেকটি বিশেষ সংবাদ হল এই, উচ্চ আদালতে এই রায় পাওয়ার জন্য যিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন, তিন হলেন বৃটেনের প্রধান মন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী। তিনি সে মেয়ে ও তার অবিভাবকের পক্ষে, পর্দার পক্ষে বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করেছেন। আর সে বিশেষ ভূমিকার কারণে উচ্চ আদালত থেকে বৃটেনে এই রায় হয়েছে যে, মুসলিম মেয়েরা পর্দা করে, উড়না পরে স্কুলে যেতে পারবে। এটা মুসলমানদের জন্য একটি আনন্দের সংবাদ ।

আমরা বলতে চাই, কুরআনে কারীম এবং আল্লাহর নবীর সুন্নাহ ও হাদীস একজন মুসলমান নারীর জন্য শালীনতা রক্ষায় হেজাব আবশ্যক করেছে, ফরজ করেছে। একজন মহিলার উপর নামায যেমন ফরজ নামাযের চেয়েও তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ফরজ হল তাকে হিজাব পরিধান করতে হবে। ইসলাম নারীকে পর্দা করার আদেশ দিয়ে নারীর উপর অবিচার করেনি, জুলুম করেনি বরং একজন নারীর মর্যাদাকে সমুন্নত করার জন্য এই ব্যবস্থা করেছে। পর্দা নারীর জন্য অবরোধ নয়, নারীর প্রতিভা বিকাশের জন্য অন্তরায় নয়, বরং পর্দা হল তার সম্মান, এটা তার অলংকার, এটা তার মর্যাদা। আমি বলতে চাই, পর্দা মানে একটা উড়নার নাম নয়, বোরকার নাম নয়, আবরণের নাম নয়, পর্দা একটা পোষাকের নাম নয়, পর্দা হল একটি প্রতীক, শালীনতার পক্ষে, রুচির পক্ষে, আদর্শের পক্ষে, শ্রীলতার পক্ষে ।

আমি কয়েকটি পর্বে এই আলোচনাকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে চাই। এই পর্বে আমি দেখাতে চাই, সরাসরি আল কোরআন একজন নারীকে কোন ধরনের পোষাক পরিধান করার জন্য নির্দেশ দান করেছে এবং পর্দাকে কি হিসাবে চিত্রায়ন করেছে। দ্বিতীয় আলোচনা হবে যে, ইসলাম বা আল কোরআন নারীর উপর পর্দাকে ফরজ করার কারণে নারীকে অবরুদ্ধ করেনি, অপমান করেনি । তাদের অধিকারকে খর্ব করেনি । বরং অষ্টাদশ শতাব্দী, ঊনবিংশ শতাব্দী, বিংশ শতাব্দী এবং এক বিংশ শতাব্দী এই কয়েক শত বছর পর্যন্ত ইউরোপে নারী স্বাধীনতার যে আন্দোলন হয়েছে এবং ইউরোপীয়রা শালীনতা ও পর্দার উপর যে আঘাত করেছে, তার ফলাফল কি দাঁড়িয়েছে? ইউরোপীয় সমাজ বিজ্ঞানীদের লেখা থেকেই তা আমি প্রমাণ করতে চাই। তারা হতাশ হয়েছে, আফসোস করছে, তারা পর্দাকে আঘাত করার মাধ্যমে উন্নতি লাভ করতে পারেনি । 

তারা স্বীকার করে বলেছে, পর্দা না থাকার কারণে আমাদের শালীনতার ক্ষতি হয়েছে, আমাদের সমাজের ক্ষতি হয়েছে, আমাদের পরিবারের ক্ষতি হয়েছে । তাদের লেখা থেকেই এটা আমি প্রমাণ করতে চাই । আল কোরআন পর্দার মাধ্যমে নারীর সম্মানের নব দিগন্ত উম্মোচন করেছে, ইজ্জত ও শান্তি রোডম্যাপ প্রদর্শন করেছে।

পর্দা কি?

আসুন, এবার আমরা সরাসরি কোরআনে করীমের কাছে যাই, আল-কোরআন কি বলে, পর্দা বলতে কোরআন কি বুঝায়? আমাদের সমাজে আমরা মনে করি পর্দা মানে হচ্ছে একটি কালো বোরকা। আমি মনে করি পর্দা মানে কালো বোরকা নয় । পর্দার সংজ্ঞা হল ইসলামের দৃষ্টিতে নর এবং নারীর এতটুকু দুরত্ব বজায় রাখা যে দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে একজন আরেকজনের প্রতি যৌন কোন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, এই দূরত্ব বজায় রাখাকে বলা হয় পর্দা । এখন একজন মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় ঠিকই বোরকা-নেকাব ইত্যাদি পরিধান করেছে কিন্তু তাকে দেখা যায় একটি সহপাঠী ছেলের হাতে হাত ধরে ঘুরে বেড়াতে, আড্ডা দিতে। ইসলাম এটাকে পর্দা বলেনা, এ বোরকা পর্দা হয়নি, এটা পর্দার নামে প্রহসন হয়েছে। নারীদেরকে এখন দেখা যায়, অত্যন্ত উজ্জল ঝকঝকে নজর কাড়া বোরকা পরতে। 

তারা মনে করে, আমরা পর্দানসীন মেয়ে। না, এটা পর্দা নয়। আপনি একজন নারীর সাথে মোবাইলে বা ইন্টারনেটে রসালো আলাপ করছেন, একজন আরেকজনকে দেখতে পাচ্ছে না, মনে করছেন পর্দার তো কোন ব্যাঘাত হয়নি । ইসলামের দৃষ্টিকোন থেকে বলতে চাই, আপনি বেপর্দা হয়েছেন। একশ' মাইল দূরত্ব বজায় রেখেও মোবাইল ফোন আপনাকে সংযুক্ত করে দিয়েছে, এটা পর্দা হয়নি। বোরকা হয়েছে, পর্দা হয়নি। দূরত্ব হয়েছে, পর্দা হয়নি। কোরআনে কারীম থেকে তেলাওয়াত করে আমি আপনাদেরকে শুনাবো পর্দা মানে বোরকা নয়। পর্দা মানে নেকাব নয় । পর্দা মানে দূরত্ব নয়, পর্দা মানে হচ্ছে একটা শালীনতা, নর-নারীর এতটুকু শারীরিক ও মানসিক দূরত্ব বজায় রাখা যার কারণে একজনের উপর আরেক জনের যৌন কোন আকর্ষণ সৃষ্টি হতে না পারে; যে কোন মাধ্যমে দূরত্ব বজায় রাখাকেই পর্দা বলা হয় । 

মনে করুন একজন তালত ভাই বেড়াতে আসল তালই সাহেবের বাড়ীতে, তালত ভাই এর সাথে তালতো বোনের দেখা হচ্ছেনা, বেড়ার ওপাশ থেকে তারা এমনই রসালো আলাপ করছে যাতে শলীনতার উপর কিন্তু আঘাত হয় । যাতে করে একজনের প্রতি আরেকজনকে দেখছেনা, মাঝে বেড়া আছে, প্রাচীর আছে । আমি বলতে চাই, এখানে প্রাচীর থাকতে পারে, দেয়াল থাকতে পারে কিন্তু পর্দা হয়নি। দুজনই বেপর্দা হয়ে গেল। তাহলে পর্দা হল ব্যাপক এক মূল্যবোধ ও কনসেপ্টের নাম। পর্দা কোন কাপড়ের নাম নয় । হ্যাঁ, কাপড় কখনো পর্দা হিসেবে ব্যবহার হতে পারে। দেয়াল কখনো পর্দা হিসেবে ব্যবহার হতে পারে, একমাত্র বোরকাটাই পর্দা নয়।

পর্দা হল শালীনতার একটা কনসেপ্ট। পর্দা হল রুচির প্রতীক। যার মাধ্যমে সমাজ যৌন প্রভাব থেকে বিমুক্ত হতে পারে । এটাই হচ্ছে পর্দার টার্গেট। পর্দা সম্পর্কে দুটি সূরায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিশদ আলোচনা করেছেন । একটি সূরার নাম হল 'নূর'। নূর হল আলো। এই সূরা মুসলিম উম্মাহকে আলো দেখিয়েছে। আলোকিত করেছে আমাদের চিন্তা, আমাদের মনন, আমাদের জীবনকে। এই সূরা আলোকিত করেছে মানবতাকে । এই সূরার নাম তাই আলোর সূরা। কাজেই এই সূরায় বর্ণিত আলো বাদ দিয়ে যদি অন্য কোন কর্মপন্থাকে অবলম্বন করা হয় সেটা স্পষ্ট অন্ধকার। এই সূরাতে আল্লাহ পাক আলোকিত মূল্যবোধ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। অতএব এই কনসেপ্টের বাইরে যে ধারণা, সেটা হবে অন্ধকার, বর্বরতা অসভ্যতা ও অশালীনতা।


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color