Narrow selection

​​​​​​​নবীজী (সা.)-এর মাদানী জীবন - History of prophet Muhammad


15:06:31 12/09/2023

নবীজী (সা.)-এর মাদানী জীবন

الحَمدُ لِاهلِهِ وَالصَّلوةُ لِاهْلِهَا أَمَّا بَعْدُ! فَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ ـ بِسمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ أَذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ

بأَنَّهُمْ ظُلِمُوا وَإِنَّ اللهَ عَلَى نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ - صَدَقَ اللهُ الْعَظِيمُ .

অদ্যকার বক্তৃতা অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী সুধী শ্রোতা! আজকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সকলেই অবগত আছেন, আর তা হলো- 'নবীজী (সা.) এর মাদানী জীবন। নির্ধারিত এ বিষয়ে ওপর আমি আমার আলোচনাকে দুটি স্তরে ভাগ করেছি-

১. হিজরতের সংক্ষিপ্ত ঘটনা।

২. মাদানী জিন্দেগীর সংক্ষিপ্ত রূপরেখা।

রাসূলে কারীম (স.) একাধারে ১০টি বছর আরব গোত্রগুলোকে বিশেষ ভাবে মক্কার কাফেরদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন। আরবের এমন কোন মাহফিল আর মজলিস বাদ নেই, যেখানে গিয়ে তিনি লোকদেরকে সত্যের দিকে আহ্বান করেননি। এভাবেই দীর্ঘ সময়ের পথ পাড়ি দিয়ে আওস গোত্রের কিছু লোকের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মদীনায় ইসলামের যাত্রা করার তওফীক দিলেন। মদীনায় ইসলামের প্রসার হবে এটা আল্লাহর দরবারে মঞ্জুর ছিল। এ জন্যই তো দেখা যায় ইসলামের কল্যাণেই আওস ও খাজরাজ গোত্রের দীর্ঘদিনের ঝগড়া মিটে যায়।

বাইয়াতে আকাবার গিরিপথ বেয়ে ইয়াসরিব মদীনাতুন্নবী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে। ফলে মুসলমানরা একে একে মক্কা ছেড়ে মদীনায় পাড়ি জমান। এক সময় হযরত রাসূলে কারীম (সা.) ও হযরত আবু বকর (রা.) হিযরত করলেন। পথিমধ্যে সাওর পর্বতের গুহায় আত্মগোপন করেন। আল্লাহ তাঁদেরকে গায়েবী মদদে বাঁচালেন। যার বিস্তারিত ঘটনা আপনাদের সবারই জানা আছে।

প্রিয় সাথী ও বন্ধুগণ!

মদীনায় প্রবেশের পূর্বে রাসূলে কারীম (সা.) কোবা নগরীতে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। ১৪ দিন কোবায় অবস্থানের পর নবী (সা.) মদীনার দিকে রওয়ানা দিলেন। পথিমধ্যে যার বাড়ি অতিক্রম করতেন তিনিই স্বীয় গৃহে আতিথ্য গ্রহণ করার অনুরোধ করেন। এভাবে তিনি আল্লাহর ইঙ্গিতে এক সময় মদীনায় চলে আসলেন। প্রিয়নবী (সা.) নগরীতে প্রবেশ করার সাথে সাথে পর্দানশীন মহিলা ও শিশু বাচ্চারা উন্মুক্ত ছাদের উপরে এসে আনন্দে গাইতে লাগল।

طَلَعَ الْبَدْرُ عَلَيْنَا مِنْ ثَنِيَّةِ الْوَدَاعَ - وَجَبَ الشُّكرُ عَلَيْنَا مَا دَعى لِلهِ دَاع جِئْتَ شَرَّفْتَ الْمَدِينَةَ مَرْحَبًا يَا خَيْرَ دَاعٍ - أَيُّهَا الْمَبْعُوثُ فِيْنَا جِئْتَ

بِالْأمْرِ الْمُطَاع

প্রিয় ছাত্র ভাইয়েরা আমার!

এবারে আলোচনা করবো দ্বিতীয় বিষয় তথা মাদানী জিন্দেগীর সংক্ষিপ্ত রূপরেখা নিয়ে। যেহেতু হিজরতের সময় থেকেই হিজরী সনের গণনা শুরু হয়েছে, তাই আমি হিজরী সন অনুযায়ী রাসূল (সা.) এর মাদানী জিন্দেগীর চিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরবো, ইনশাআল্লাহ ।

১ম হিজরী : মসজিদে নববী নির্মাণ করা হয়। নবীর সহধর্মিনীদের জন্য মসজিদের পাশেই বাসভবন নির্মাণ, আযানের সূচনা, ইয়াহুদীদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি, মুহাজির-আনসার ভাই ভাই সম্পর্ক নির্ধারণ করা, আসহাবুস সুফ্ফা প্রভৃতি।

২য় হিজরী : বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়, সাবাকের যুদ্ধ, হযরত ফাতেমা (রা.) এর বিবাহ, এই বছরেই রমযানের রোযা ফরয, সদকাতুল ফিতরও এই বছরই ওয়াজিব হয়। জামাআতের সাথে ঈদের নামাযের হুকুম ২য় হিজরীর এক অনন্য ঘটনা ।

৩য় হিজরী : জঙ্গে উহুদ যাতে মুসলমানরা প্রথমে বিজয়ী হন কিন্তু রাসূলের (সা.) একটি আদেশ অমান্য করায় সাময়িক বিপর্যয় নেমে আসে। এ ছাড়া ৩য় হিজরীর উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল- ৩য় হিজরীর ১৫ই রমযান হযরত হাসান (রা.) জন্মগ্রহণ করেন। নবীজী (সা.) হযরত হাফসা বিনতে উমরকে বিবাহ করেন। হয়রত উসমান গনীর (রা.) সাথে উম্মে কুলসুম (রা.) এর বিবাহ হয়, এবছরেই উত্তরাধিকার আইন জারী হয়।

৪র্থ হিজরী : সারিয়ায়ে আবি সালামা, সারিয়ায়ে আব্দুল্লাহ ইবনে উনাইস, বিরে মাউনা প্রভৃতি ঘটনা এবছরে সংঘটিত হয়। এ বছরের শাবান মাসে হযরত হুসাইন (রা.) জন্মগ্রহণ করেন। এ বছরের শাওয়াল মাসে হযরত রাসূলে কারীম (সা.) হযরত উম্মে সালামা (রা.) কে বিয়ে করেন। এ বছরেই উম্মাহাতুল মুমিনীন যায়নাব বিনতে খোজায়মা (রা.) ইন্তেকাল করেন।

৫ম হিজরী : গজওয়ায়ে আহযাব সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে মুসলমানরা আল্লাহর গায়েবী সাহায্যে সম্মুখযুদ্ধ না করেই বিজয়ী হয়। গাযওয়ায়ে মোরাইশী, হযরত জুওরাইরিয়া কে প্রিয়নবী (সা.) বিবাহ করেন। যিনার শাস্তি হিসাবে ১০০ বেত্রাঘাতের নির্দেশ জারী করা হয়। তায়াম্মুমের হুকুম, সালাতে খাওফ, যিহারের কাফ্ফারা প্রভৃতি বিধান এ বছর কার্যকরী করা হয়।

৬ষ্ঠ হিজরী : হুদাইবিয়ার সন্ধি চুক্তি সংঘটিত হওয়ার পূর্বে সাহাবাদের নিকট থেকে রাসূল (সা.) হযরত উসমান হত্যার বদলা নেওয়ার জন্য বাইয়াতে রিযওয়ান গ্রহণ করেন। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.), আমর বিন আস (রা.) এর ইসলাম গ্রহণ ছিল এবছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনা

৭ম হিজরী : খায়বার অভিযানে হিংস্র জীব-জন্তু, গাধা, খচ্চর ইত্যাদি হারাম সাব্যস্ত হয়। নিকাহে মুতা এ বছরেই হারাম হয়। কাযা ওমরা এ বছরই আদায় করা হয়।

৮ম হিজরী : মুতা অভিযান পরিচালিত হয়, রমযানে মক্কা বিজয় হয়, তখন নবীজী (সা.) একে একে কাবা শরীফে রাখা মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলেছিলেন আর বলেছিলেন-

جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا -

'সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত, মিথ্যার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।'

তাছাড়া ঐ বছরেই হুনাইন, আওতাস ও তায়েফের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। হযরত আমর ইবনুল আসের (রা.) নেতৃত্বে প্রিয়নবী (সা.) একদল মুজাহিদকে খুযাআহ গোত্রের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন।

৯ম হিজরী : তাঈ গোত্রের আদীবিন হাতেম (রা.) এর ইসলাম গ্রহণ, বনু আসাদ, বনু ফেযারা, বনু কেন্দা, প্রমুখ গোত্র ও সম্প্রদায়ের মাঝে ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

১০ম হিজরী : নবীজী (সা.) বিদায়ী হজ্জ সংঘটিত হয়, কুরআন শরীফের সর্বশেষ সূরা নাসর অবতীর্ণ হয়। বিদায়ী হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে নবুওতী দায়িত্বের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হয়।

রাসূল আরাবী (সা.) বলেন- তোমরা আমার একটি কথা হলেও লোকদের নিকট পৌঁছে দাও। ইসলামের ইতিহাসে বিদায়ী হচ্ছে রাসূল (সা.) প্রদত্ত ভাষণের প্রতিটি কথা স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে।

১১তম হিজরী : ১১তম হিজরীর রবিউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখ ১০ দিন অসুস্থ থাকার পর রাসূল (সা.) এই পৃথীবি ছেড়ে চিরস্থায়ী জগতে রফিকে আলার সান্নিধ্যে চলে যান। নবীজী (সা.) এর জানাযায় কেউ প্রথমে পুরুষরা তারপর স্ত্রীলোক ও সর্বশেষ শিশুরা নবীজী (সা.) এর জানাযায় শরীক হন। জানাযা শেষে হযরত আলী (রা.), ফজল বিন আব্বাস (রা.), উসামা বিন যায়েদ, আব্দুর রহমান বিন আওফ (রা.) মুবারক লাশ কবরে স্থাপন করেন। মহানবী (সা.) মাদানী যিন্দেগী অনুযায়ী বিশ্ব মুসলিমকে জাগ্রত হওয়ার তাওফীক দান করুক (আমীন)

আল্লাহতে যার পূর্ণ ঈমান

কোথা সে মুসলমান,

কোথা সে শিক্ষা আল্লাহ ছাড়া

ত্রিভুবনের ভয় করিত না যারা,

আযাদ করিতে এসেছিল যারা,

সাথে লয়ে পাক কুরআন।

ومَا تَوْفِيقِي إِلَّا بِاللَّهِ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أَنيُبِ

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color