Narrow selection

ইসমাইল নাকি ইসহাককে কুরবানীর নির্দেশ


10:26:41 12/03/2023

শইসহাক নয়, ইসমাইলকে কোরবান করার নির্দেশ এসেছে

আল্লাহর খলীল হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর সন্তান হযরত ইসমাইল (আঃ) কে কোরবান করার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে: কোরআনের ভাবধারায় এটাই বুঝা যায়। কারণ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর প্রথম সন্তান হলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ), হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর দু'জন স্ত্রী ছিল। একজন হলেন তার দাসী হাজেরা (আঃ), তার থেকে যে সন্তান হয় তার নাম ছিল ইসমাঈল, আর অন্য স্ত্রী সারা, তার তেকে যে সন্তান হয়, তার নাম হল ইসহাক। তবে ইসহাক হল পরে আর ইসমাঈল (আঃ) হল প্রথম সন্তান।

বাইবেলেও এ তথ্য বর্ণিত হয়েছে। আর যুক্তিও তাই বলে। বার্ধক্য অবস্থায় প্রথম যে সন্তান হয়েছে তার প্রতিই বেশি ভালবাসা থাকে, তাকে যদি কোরবানি করতে বলা হয় তখনই মন বেশি কষ্ট পাবে । এটাই স্বাভাবিক আল্লাহ যেহেতু বলেছেন এটা স্পষ্ট পরীক্ষা কাজেই ২য় সন্তানের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা ছিল না। এই পরীক্ষা ছিল প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে। এটা আমাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেও আমরা উপলব্ধি করতে পারি ৷

একজন বাবার যখন কয়েকজন সন্তান হয় সবচেয়ে বেশি মমতা, মায়া ও আগ্রহ থাকে প্রথম সন্তানের প্রতি, এটা স্বাভাবিক। কারণ প্রথমবারই নতুন অভিজ্ঞতা হয় যে, সন্তানের বাবা হচ্ছে তিনি কাজেই আল্লাহ যে সন্তানকে জবাই করার নির্দেশ দান করেছেন তিনি ইসহাক ছিলেননা। তিনি ছিলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ)

ঈমান দীপ্ত সন্তান হযরত ইসমাঈলের (আঃ) অন্তরে ঈমানের আলো জ্বলছে, হযরত ইসমাঈল (আঃ) সর্বাত্মক সহযোগিতা আশ্বাস দিয়ে তার বাবাকে বলেন, বাবা- আমি আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি, আপনি আমাকে জবাই করার সময় আপনার কাপড়কে ভাল করে গুটিয়ে ফেলবেন। কারণ, জবাই করার পর ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হবে আর সে রক্ত যদি আপনার জামায় লাগে এবং রক্ত নিয়ে যদি বাড়িতে ফিরে যান, আমার মা যদি সে রক্ত দেখে তিনি সহ্য করতে পারবেন না।

কাজেই আপনি আমাকে জবাই করার আগে আপনার জামাকে সরিয়ে রাখবেন । তাছাড়া আমাকে শোয়ানোর সময় সোজাভাবে শুইয়ে আমার গলায় আপনি ছুরি দেবেন না। কারণ আপনি সোজা করে শুইয়ে যদি আমাকে জবাই করেন আমার চেহারার দিকে আপনার দৃষ্টি পড়লে আপনার জন্য ছুরি চালানো অত্যন্ত কঠিন হবে। আমাকে উপুড় করে ফেলবেন এবং গলার পিছন থেকে আমাকে জবাই করবেন। তৃতীয় : ছুরি ভাল করে ধার দিয়ে নিবেন । যাতে জবাই শুরুর সাথে সাথে কাজ সেরে যায়। যত দেরি হবে অত বেশি। আপনার কষ্ট হবে । 

এই পরামর্শ গুলো দিয়েছিল বাবাকে সন্তান । যিনি জানেন যে এখন জবাই হয়ে যাবে, তারা জানতেন না যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আসল জবাই চান না । বাবা এবং পুত্র তারা দুজনেরই ধারণা, আল্লাহ জবাই চাচ্ছেন, রক্ত চাচ্ছেন। কাজেই দিতেই হবে। এই পরীক্ষা ছিল লোমহর্ষক, কঠিন। আল্লাহ নিজেই যাকে কঠিন পরীক্ষা বলে অভিহিত করেছেন। একজন ঈমানদারকে সারাজীবন অসুস্থতা দিয়ে বা অভাব দিয়ে যদি আল্লাহ পরীক্ষা করেন, সে পরীক্ষার সাথে এই ১ ঘন্টার পরীক্ষার কোনই তুলনা হতে পারেনা । আর এই পরীক্ষা আল্লাহর দরবারে এতই প্রিয় হয়েছে যে, কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ প্রতি বৎসর চান তার বান্দারা ওটাকে আবার যেন রূপায়িত করে দেখায়।

হযরত ইব্রাহিম খলিলের স্মৃতি আল্লাহ হজ্জের মাধ্যমে ধরে রেখেছেন । হজ্ব মানেই হচ্ছে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর স্মৃতি। তিন বাইতুল্লাহ নির্মাণ করেছেন । আল্লাহর নির্দেশে মা এবং সন্তানকে ফেলে তিনি চলে গেলেন ৷ মা পানির জন্য ছুটাছুটি করছে, আল্লাহর দরবারে তা ছিল অত্যন্ত প্রিয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হাজীদেরকে বলেন, যাও ছাফা মারওয়াতে ৭ বার দৌঁড়াদৌড়ি কর। আমার প্রিয় খলীল তাঁর স্ত্রীকে ফেলে আসার কারণে তাঁর স্ত্রী সন্তানের পানির জন্য ছুটাছুটি করেছেন।

তোমরাও ছুটাছুটি কর । তার পরে জমজমের পানি পেয়েছেন। সন্তানের পা থেকে জমজমের পানির একটি ঝর্ণাধরা তিনি দেখতে পেলেন, অবাক হলেন। আল্লাহ বলেন, তোমরাও যাও পানি পান করে। আস। অর্থাৎ পুরা ঘটনাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রতি বছর হাজীদের মাধ্যমে আবার যেন অভিনীত করে থাকেন। আল্লাহর দরবারে খলীলের কোরবানি অত্যন্ত প্রিয় হয়েছে। জবাই করতে যখন লাগলেন, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, হে জিবরীল : তুমি বসে আছ? তুমি তাড়াতাড়ি যাও । হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ছুরিকে অত্যন্ত ধারালো করলেন, তাফসীরে কুরতবীতে আমি এই ঘটনা পড়েছি।

ঘটনাগুলো বিশুদ্ধ সনদ দ্বারা প্রমাণিত না হলেও তাফসীরে ঘটনাগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। এটা ঐতিহাসিক ঘটনা। বিশুদ্ধ সনদের মাধ্যমে বর্ণিত নয় । বর্ণনায় আছে, ছুরির ধারালো দিক দিয়ে তিনি কাটতে চেষ্টা করেন । কিন্তু ছুরি বার বার উল্টে যায় এবং ধারালো দিক না চলে উল্টো দিকটি চলতে থাকে। তাতে কিছুই হয়না, অপর এক বর্ণনায় আছে, পিঠের পিছনের দিকে সামান্য ছোট ছোট লোম ছিল, ঘাড়ের কেশ। সেগুলো কেটে গেল । তিনি অবাক হয়ে দেখলেন যে এক পোঁচ দেওয়ার পর একটু কাটে ছুরি ফিরিয়ে আনার পূর্বেই তা জোড়া লেগে যায় ।

বার বার ছুরি চালানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু বারবার একটু লোম কাটা যায় পরে। আবার তা জোড়া লেগে যায় । তিনি অদ্ভুদ ব্যাপারটি চিন্তা করলেন, কি ব্যাপার, আল্লাহ কি আমার কোরবানি গ্রহণ করছেন না? তিনি অস্থির হয়ে পড়লেন, এবং আরো জোরে করতে লাগলেন। হযরত জিবরীল যখন আল্লাহর নির্দেশ হয়ে নামলেন, আল্লাহ বললেন,

وفديناه بذبح عظيم

আমি তার জন্যে বড় আকারের এক জন্তুকে প্রেরণ করে দিলাম । জান্নাত থেকে আমি তার জন্য বড় আকারের জন্তু প্রেরণ করলাম। আমার খলিল যখন কোরবান করতে নেমেছেন কোরবান করবেনই, তবে তার সন্তান নয়, জন্তুটিকে তিনি জবাই করবেন। হযরত ইব্রাহিম তো ছুরি চালানো নিয়ে ব্যস্ত, তিনি এদিক ওদিক তাকাননি। হযরত জিবরীল উপর থেকে আওয়াজ দিয়ে আসেন। 'আল্লাহু আকবার' 'আল্লাহু আকবার' বলে তিনি চিৎকার করে নামলেন।

আর আল্লাহর ডাক শুনে নিচ থেকেই হযরত ইসমাঈল (আঃ) বললেন- 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার' তারপর তারা সকলে পড়লেন 'আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ' । মহান আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা। এর পর হযরত জিবরীল (আঃ) বললেন- হে আল্লাহর খলীল, আল্লাহ আপনার এই কাজকে অত্যন্ত পছন্দ করেছেন । আল্লাহ নিজেই ডাক দিয়ে বলেন,

وناديناه آن یا ابراهیم

আমি ইব্রাহীমকে ডেকে বললাম, হে ইব্রাহিম তুমি যা স্বপ্ন দেখেছিলে সে স্বপ্নকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তুমি বাস্তবায়ন করতে পেরেছ, তোমার পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ হয়ে গেল । তুমি উত্তীর্ণ ।

আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেন-

قد صدقت الرؤيا انا کذ لک نجزى المحسنين

“আমি এভাবেই তোমাকে তোমার কাজের প্রতিদান দেব, যেভাবে সৎ মানুষদেরকে আমি তাঁদের কাজের প্রতিদান দিয়ে থাকি।” তুমি পাশ করেছ এবং জেনে রাখ তোমার এই পরীক্ষা ছিল কঠিন পরীক্ষা। একটি ভেড়া আল্লাহ প্রেরণ করেছেন। এ কারণে অনেক আলেম এই মতামতও দিয়েছেন যে, গরু-ছাগল কিংবা উট কোরবানীর চেয়ে ভেড়া কোরবানি করা ভাল । যেহেতু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর সন্তানের পরিবর্তে যে জন্তুকে প্রেরণ করেছিলেন সে জন্তু ছিল ভেড়া।

তবে অন্যান্য জন্তু দিয়েও কোরবান করলে হয়ে যাবে। অন্য বর্ণনায় আছে কোরবানিকৃত জন্তুর গায়ের মধ্যে যতগুলো পশম অতগুলোর বিনিময়ে আল্লাহ তাঁকে ছওয়াব দান করবেন । যেহেতু ভেড়ার পশম সবচেয়ে বেশি এজন্য ছওয়াবও বেশি পাওয়া যায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-

وتركنا عليه في الآخرين

এ কাজ আমার এতই ভাল লেগেছে যে, পরবর্তী সকলের মাঝে এ কাজকে আমি অব্যাহত রেখেছি । হযরহত ইব্রাহিম (আঃ) এর স্মরণ কেয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আসবে সবাইকে করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ ঘটনা বর্ণনা করে বলেন,

سلام على ابراهيم

ইব্রাহিমের জন্যে অভিবাদন। আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও শুভেচ্ছা। যারাই হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর মত এখলাস নিয়ে আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্যে কোরবানি করবে তাদের প্রতিও সালাম। তাদের জন্যেও আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত এবং বরকত।

এজন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের মধ্যে যাদেরকে সামর্থ দিয়েছেন তাদের কোরবান করা ওয়াজিব । যিলহাজ্বের ১০ তারিখ, না পারলে ১১ তারিখ, না পারলে ১২ তারিখ পর্যন্ত কোরবানি করা যায়। তিন দিন পর্যন্ত কোরবান করা যায়। মুসলমান, প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ এবং যাদেরকে আল্লাহ স্বচ্ছলতা দান করেছেন, সে দিন যাদের কাছে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার পরিমাণ টাকা

অতিরিক্ত থাকবে তার উপর কোরবান করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। তাঁকে কোরবান করতেই হবে । আর কোরবান করতে হবে ঈদের নামাজের পর । আল্লাহর নবী সতর্ক করে বলেছেন-

من لم يضحى فلا يقربن مسجدنا

যে ব্যক্তি সচ্ছল অথচ কোরবান করেনা, সে যেন আমাদের মসজিদে উপস্থিত না হয় ।

অন্য রেওয়ায়াতে আছে-

فلا يقربن مصلنا

যে ব্যক্তি স্বচ্ছলতা থাকার পরেও কোরবান করেনা, সে যেন আমার ঈদগাহেও উপস্থিত না হয় ।

কাজেই সামর্থবান ব্যক্তিদেরকে হযরত ইব্রাহীমের স্মৃতিবাহী কোরবান করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে ।


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color