বদর যুদ্ধের ইতিহাস
বদর যুদ্ধের ইতিহাস
মদীনা মুনাওয়ারা থেকে প্রায় আশি মাইল দূরে একটি কূপের নাম বদর। সেই নামেই একটি গ্রাম আবাদ হয়েছে। এই মহান জিহাদ সেই অধ্যুসিত ভূমিতেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার সার-সংক্ষেপ হল নিম্নরূপ-ঃ
কুরাইশদের চির অহংকার ও প্রভাব- প্রতিপত্তির মূল ভিত্তি ছিল সিরিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের লভ্যাংশ। এজন্য রাজনৈতিক নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজন ছিল তাদের শক্তি চূর্ণ-বিচূর্ণ করার জন্য তাদের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যধারাকে বন্ধ করেদেয়া।
সাস্থসম্মত উপায়ে তৈরি ১০০%-খাঁটি-ঘি
একদা কুরাইশদের এক বড় বাণিজ্য কাফেলা সিরিয়া থেকে আসছিল। নবী কারীম সা. এটি সম্পর্কে অবগত হলে দ্বিতীয় হিজরীর ১২ রমজানুল মুবারকে তিন শত চৌদ্দজন মুহাজির ও আনসার নিয়ে নিজেই আগমন করেন। রাওহা নামক স্থানে উপনীত হয়ে তাঁবু ফেললেন। (রাওয়া মদীনার দক্ষিণ দিকে চল্লিশ মাইল দূরত্বে এক স্থান) এদিকে কুরাইশী বাণিজ্য নেতা তা জানতে পারল। এজন্য সে ঐ রাস্তা বর্জন করে সমুদ্র কুল দিয়ে বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে চলল এবং তৎক্ষণাৎ মক্কায় একজন অশ্বারোহীকে এই বলে রওয়ানা করে দিল যে, কুরাইশরা যেন পূর্ণ শক্তির সাথে সহসাই ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং নিজেদের বাণিজ্য কাফেলা হেফাজত করে। কুরাইশরা প্রথম থেকেই মুসলমানদের মূলোচ্ছেদের পরিকল্পনা আঁটছিল।
এ খবর মক্কায় পৌছা মাত্রই তড়িৎবেগে নয় শত পঞ্চাশ জন নওজোয়ানের একটি বড় বাহিনী, যাদের মধ্যে একশত ঘোড়সোয়ার, সাত শত উট ছিল, মহানবী সা. এর মোকাবেলায় যাত্রা করল। সেই বাহিনীতে কুরাইশদের বড় বড় নেতা এবং ধনী লোক সবাই শরীক ছিল ।
সাহাবীদের আত্মোৎসর্গ : রাসূলুল্লাহ সা. যখন তা জানতে পারলেন, তখন তিনি সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করলেন। সিদ্দিকে আকবার ও অন্যান্য সাহাবী নিজের জান ও মাল পেশ করে দিলেন। উমাইর ইবনে ওয়াক্কাস রা. সে সময় কম বয়স্ক ছিলেন, এজন্য মহানবী সা. তাকে জিহাদে অংশ গ্রহণ থেকে বিরত রাখলেন। তিনি ক্রন্দন করতে লাগলেন। তখন তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। তিনিও জিহাদে শরীক হলেন। -কাণ্ডুল উম্মাল ৫/২৭০
আনসারদের মধ্য হতে খাযরাজ গোত্রের সরদার হযরত সাআদ বিন উবাদা রা. দাঁড়িয়ে বললেন, আল্লাহর শপথ আপনি আদেশ করলে আমরা সমুদ্রে ঝাঁপ দিব। (সহীহ মুসলিম) করয ইবনে জাবের মহারো
বুখারীর বর্ণনায় রয়েছে, হযরত মেকদাদ রা. আরজ করলেন, হে আলস্নাহর রাসূল, আমরা আপনার ডানে, বামে, আগে, পেছনে থেকে যুদ্ধ করব। একথা শোনে মহানবী সা. অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। সামনে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দিলেন। বদরের নিকট পৌঁছলে জানা গেল যে, আবু সুফিয়ান স্বীয় বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে বের হয়ে গেছে এবং কুরাইশদের বিশাল সৈন্য বাহিনী ঐ ময়দানের অন্য প্রান্তে আস্তানা গেড়েছে। কাফেলা চলে যাবার পরেও আবু জেহেল লোকদেরকে এই পরামর্শ দিল যে, যুদ্ধ স্থগিত করা হবে না ।
মুসলিম বাহিনী একথা শুনে সামনে অগ্রসর হল। কিন্তু কুরাইশরা প্রথমেই সেখানে পৌঁছে এমন জায়গা আয়ত্ব করে নিয়েছে, যা যুদ্ধের ময়দানের জন্য উত্তম ছিল। পানির সব স্থানও সে দিকেই ছিল। মুসলমানরা সেখানে পৌঁছলে এমন বালুময় ভূমি তাদের অংশে পড়ল যে, সেখানে চলাও দুস্কর ছিল। তাছাড়া পানির কোন নাম নিশানাও ছিল না।
গায়েবী সাহায্যঃ কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বিজয় ও সাহায্যের ওয়াদা করেছেন। এমনই উপকরণ তৈরী করে দিলেন যে, ঐ সময়ই বৃষ্টি বর্ষিত হল। যার ফলে জমিনের বালু শক্ত হয়ে গেল। সকল সৈন্য পরিতৃপ্ত হয়ে পানি পান করল, জানোয়ারদেরকে পানি পান করালো এবং নিজেদর সব পাত্র ভরে রাখল । জমিনের অবশিষ্ট পানি হাউয বানিয়ে আটকিয়ে রাখল। ওদিকে সেই বৃষ্টি কাফেদের জমিনে এমন কাঁদা সৃষ্টি করল যে, চলা ফেরা কঠিন হয়ে গেল। যখন উভয় বাহিনী পরস্পর মুখোমুখী হল, তখন নবী কারীম সা. যুদ্ধের সারি ঠিক করার জন্য নিজেই দাঁড়ালেন। সুতরাং আল্লাহর এই বাহিনী সুদৃঢ় প্রাচীরের ন্যায় দাঁড়িয়ে গেল।
মুসলমানদের ওয়াদা পূরণঃ সে সময় যেহেতু তিন শত অস্ত্র-শস্ত্রহীন মানুষের মোকবেলায় এক হাজার অস্ত্রে- শস্ত্রে সজ্জিত যুবক ছিল। একথা স্পষ্ট যে, যদি এক ব্যক্তিও সে সময় তাদের সাহায্যে আসত তাহলে সেটা কেমন গনীমত মনে করা হত। কিন্তু ইসলামে অঙ্গীকার পূর্ণ করা ছিল এসব কথার ঊর্ধ্বে। ঠিক যুদ্ধের ময়দানে হযরত হুযাইফা, আবু হাসল দুই সাহাবী জিহাদে অংশ গ্রহণের জন্য পৌঁছলেন। কিন্তু এসে নিজেদের রাস্তার ঘটনা বর্ণনা করলেন যে, আমাদেরকে রাস্তায় কাফেররা আটক করেছিল এ বলে যে, তোমরা মুহাম্মাদ সা. এর সাহায্য করার জন্য যাচ্ছ। আমরা অস্বীকার করলাম এবং যুদ্ধে শরীক না হওয়ার ওয়াদা করলাম। মহানবী সা. যখন তাদের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে অবগত হলেন, তখন তাদের উভয়কে জিহাদে অংশ গ্রহণ করতে বাধা দিয়ে বললেন, আমরা সর্ববস্থায় প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করব। আমাদের আল্লাহর সাহায্যই যথেষ্ট।-সহীহ মুসলিম
মোটকথা: কাতার সোজা হল। সর্বপ্রথম কুরাইশ বাহিনী হতে তিনজন বীর বের হল। মুসলমানদের মধ্য হতে হযরত আলী রা., হামজা বিন আব্দুল মুত্তালিব এবং হযরত উবায়দা ইবনুল হারেস রা. তাদের মোকবেলা করলেন। তিনজন কাফেরই নিহত হল। মুসলমানদের মধ্যে শুধু উবায়দা রা. আহত হলেন। হযরত আলী রা. তাকে কাঁধে করে মহানবী সা. খেদমতে পৌঁছালেন। মহানবী সা. তাকে নিজ পা মুবারকে মাথা লাগিয়ে শুয়িয়ে দিলেন। তার চেহারার ধুলো-বালু নিজ হাত দিয়ে পরিস্কার করে দিলেন।
আঁচল দিয়ে দিলেন তিনি অশ্রু মুছে ।
ক্রন্দনের স্বাদই আছে ভিন্ন আজই ।
উবায়দা রা. হুঁশ ফিরতেই মহানবী সা. কে জিজ্ঞেস করলেন আমি কি শাহাদত থেকে বঞ্চিত? মহানবী সা. বললেন, না, তুমি শহীদ। আমি এর উপর সাক্ষী। এখন উবায়দা রা, আনন্দে বলতে লাগলেন, আজ যদি আবু তালিব বেঁচে থাকত তাহলে তার মেনে নিতে হত যে, আমিই তার কবিতার যথার্থ হকদার। যখন হযরত উবায়দা রা. এর মৃত্যু হয়ে গেল মহানবী সা. নিজেই তাঁর কবরে নামলেন এবং নিজ পবিত্র হাতে তাকে দাফন করলেন। এই বিশেষ মর্যাদা সাহাবীদের মধ্য হতে একমাত্র উবায়দা রা. এর ভাগ্যে ছিল।
স্বগৌরবে পরম হরষে ছাড়ছে জগৎ তারা
প্রিয়ের চরণে যে সপিবারে রাখতে পেরেছি মাথা..
সাহাবা কেরামের বিস্ময়কর আত্মত্যাগ এবং বীরত্বপনা
সে সময় যখন উভয় বাহিনী মুখোমুখী হল, তখন দেখা গেল অনেকেরই কলিজার টুকরা তরবারির নিচে। কিন্তু এই আল্লাহর বাহিনীর আকীদা ছিল- শত-সহস্র আত্মীয় মোর যারা আল্লাহ হতে দূরে -
উৎসর্গ সব, তার তরে যে প্রভুকে মোর স্মরে।
সুতরাং, হযরত সিদ্দিকে আকবর রা. এর পুত্র, যে তখনও মুসলমান হয়নি ময়দানে আসল তখন স্বয়ং সিদ্দিকে আকবরের তরবারি তার দিকে অগ্রসর হল। উতবা সামনে আসল তখন তার পুত্র হযরত হুযাইফা রা. তরবারি উঁচু করে তার দিকে বাড়লেন। হযরত উমর রা. এর মামা ময়দানে আসলে ফারুকী তরবারি তার সমাধা করল। (সীরাতে ইবনে হিশাম ও ইস্তেআবে ইবনে আব্দুল বার)
এরপর তুমুল যুদ্ধ শুরু হল। এদিকে যুদ্ধের ময়দান উত্তপ্ত হল । ওদিকে সায়্যিদুর রুসূল সা. সেজদায় পড়ে সাহায্যের দুআ করছিলেন। অবশেষে অদৃশ্যের সুসংবাদ তাকে আশ্বস্ত করল।
আবু জেহেলের ধ্বংস: যেহেতু আবু জেহেলের অনিষ্টতা এবং ইসলামের সাথে তার শত্রুতা সবার মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিল। এজন্য আনসারদের মধ্য থেকে হযরত মুয়াওয়ায ও মুয়ায ভ্রাতৃদ্বয় অঙ্গীকার করেছিলেন যে, তারা যখন আবু জেহেলকে দেখবে তখন হয়ত তারা তাকে হত্যা করবে নতুবা তারা নিহত হবে। ঐ সময় এই দুই ভাই অঙ্গীকার পূর্ণ করার জন্য বের হলেন। কিন্তু আবু জেহেলকে তারা চিনতেন না। এজন্য তারা আব্দুর রাহমান ইবনে আউফ রা. কে জিজ্ঞেস করলেন, আবু জেহেল কে? তিনি ইঙ্গিতের মাধ্যমে বলে দিলেন। তার বলা মাত্রই তারা বায পাখীর ন্যায় তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। আবু জেহেল সে সময়ই মাটি ও রক্তের মাঝে গড়াগড়ি করছিল। আবু জেহেলের পুত্র ইকরিমা (তিনি তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি) পেছন থেকে এসে মুয়াযের বাহুতে তরবারি চালাল । ফলে তার বাহু কেটে গেল। কিন্তু ফিতার ন্যায় সামান্য অবশিষ্ট ছিল। মুয়ায রা. ইকরামার পশ্চাদ্ধাবণ করলেন। অতঃপর মুয়ায রা. সে অবস্থাতেই জিহাদে লিপ্ত হয়ে গেলেন। কিন্তু হাত ঝুলন্ত থাকার কারণে কষ্ট হচ্ছিল। তাই হাত পায়ের নিচে রেখে চাপ দিয়ে টান দিলেন। সেই ফিতার ন্যায় অংশটুকু আলাদা হয়ে গেল । অতঃপর জিহাদে লিপ্ত হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ (সীরাতে হালবিয়া ১/৫৫৪)
এক মহান মুজেযা: এক মুষ্ঠি কঙ্করে সমস্ত বাহিনী পরাজিত হওয়া এবং ফেরেশতাদের সাহায্য:
মহানবী সা. আল্লাহর আদেশে এক মুষ্ঠি কঙ্কর নিয়ে শত্রুসেনাদের দিকে নিক্ষেপ করলেন। অতঃপর সাহাবা কিরামকে বললেন, একযোগে তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়।
এদিকে বাহ্যিক উপকরণ নিয়ে সাহাবীদের ক্ষুদ্র দল তাদের দিকে অগ্রসর হলেন। ওদিকে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের বাহিনীকে মুসলমানদের সাহায্যের জন্য প্রেরণ করলেন এবং স্বীয় সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করলেন। কুরাইশদের বড় বড় নেতা মারা পড়ল। অন্যদের পা উপড়ে গেল। ভাগতে শুরু করল। মুসলমানগণ তাদের পশ্চাদ্ধাবন করলেন। তাদের মধ্য হতে কাউকে হত্যা আর কাউকে বন্দী করলেন। সত্তরজন নিহত হল আর সত্তরজন বন্দী হল। কুরাইশদের বড় বড় সরদার উতবা, শায়বা, আবু জেহেল, উমায়্যা ইবনে খালফ ও উকবা সকলেই এক এক করে মারা গেল। এদিকে মুসলমানদের মাত্র চৌদ্দজন লোক শহীদ হল। ছয় জন মুহাজির আর আট জন আনসার ।
স্মর্তব্যঃ এ যুদ্ধটি মূলতঃ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইসলামের প্রকাশ্য মু'জিযা ছিল। অন্যথায় এ যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ের কোন কারণ ছিল না। কেননা এতে একদিকে এক হাজার যুবকদের বিশাল বাহিনী। আর অপর দিকে মাত্র তিন শত চৌদ্দ জন মানুষ। এক দিকে বড় বড় ধনী, সম্পদ ওয়ালা নেতা যার একজন সমস্ত সৈনিকদের রসদ পত্রের খরচ বহন করতে পারে। অপর দিকে নিঃস্ব গরীব লোক। একদিকে শত ঘোড় সাওয়ারের বিশাল দল। অপর দিকে সমগ্ৰমুসলিম বাহিনীতে মাত্র দুটি ঘোড়া। একদিকে সব ধরনের হাতিয়ার ও অস্ত্রে ভরপুর। অপর দিকে শুধু গণা কয়েকটি তরবারি।
ইউরোপীয় ঐতিহাসিকরা হতভম্ভ এটা কি করে হল? তাদের খবর নেই বিজয় ও সাহায্য, সফলতা ও ব্যর্থতা ঘোড়া, তরবারি বা ধন সম্পদের আয়ত্বে না। বরং তাতে অন্য হাতের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এসব বাহ্যিক উপকরণের পিছনে মত্ত বিদ্যুত বাস্পের পূজারীরা কিভাবে এই বাস্তবতা পর্যন্ত পৌঁছতে
পারবে।
কবি আকবর চমৎকার বলেছেন-
ছাড়িয়া বসিছে ইউরোপ নভোস্থ পিতাকে-
দিয়েছে আসন আল্লাহ তায়ালার বিদ্যুত আর বাষ্পকে
যুদ্ধবন্দীদের সাথে মুসলমানদের আচরণ,
সভ্যতার দাবীদার ইউরোপীয়দের জন্য শিক্ষা
যুদ্ধবন্দীরা যখন মদীনায় পৌঁছল তখন মহানবী সা. দুই দুই চার চার জন করে সাহাবীদের মাঝে বন্টন করে দিলেন। সকলকে আদেশ করলেন, তাদেরকে আরামের সাথে রাখবে। যার প্রতিক্রিয়া এই ছিল যে, সাহাবা কিরাম তাদেরকে খানা খাওয়াতেন আর নিজেরা শুধু খেজুর খেয়ে দিন গুজরান করতেন।
হযরত মুসআব ইবনে উমাইর রা. এর ভাই আবু আজীজও সেই বন্দীদের মধ্যে ছিলেন। তার বর্ণনা, আমাকে যে আনসারীকে হাওয়ালা করা হল যখন তিনি খাদ্য আনতেন তো রুটি আমার সম্মুখে রাখতেন এবং নিজে শুধু খেজুরের উপর দিনাতিপাত করতেন। যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে সাহাবীগণ পরামর্শ করার পর এই সিদ্ধান্ত হল যে, মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হোক। সুতরাং চার চার হাজার দিরহাম মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়া হল ।
ইসলামী সাম্যতা এসব বন্দীদের মাঝে মহানবী সা. এর চাচা হযরত আব্বাস রা. ও ছিলেন। (যিনি পরবর্তীকালে ইসলাম গ্রহণ করেন) হযরত আব্বাস রা.কে শক্ত করে বাঁধার কারণে রাতে কাতরাচ্ছিলেন। তার আওয়াজ মহানবী সা. এর কানে পৌঁছলে নিদ্রা উড়ে গেল। লোকজন নিবেদন করল ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনার নিদ্রা আসল না কেন? ইরশাদ করলেন, আমি কিভাবে ঘুমাতে পারি, যখন আমার সম্মানিত চাচার কাতরানের আওয়াজ আমার কানে আসে ?
- কাণ্ডুল উম্মাল ৫/292 এসব কিছু হচ্ছিল। কিন্তু ইসলামী সাম্যতা এটার অনুমতি দিচ্ছল না যে, নিজের সম্মানিত বয়োঃবৃদ্ধ চাচাকে বন্দীত্ব থেকে মুক্তি দিবেন। যেমনিভাবে সকলের থেকে মুক্তিপণ নেয়া হয়েছিল তাঁর থেকেও সেরূপ নেয়া হল। বরং সাধারণ বন্দী থেকে আরো কিছু বেশী নেয়া হল। কেননা, সাধারণ বন্দীদের থেকে চার হাজার দিরহাম আর ধনীদের থেকে কিছু বেশী নেয়া হয়েছিল। হযরত আব্বাস রা.ও ধনী ছিলেন। তাকেও চার হাজার থেকে বেশী দিতে হয়েছে।
আনসারগণ আবেদনও করেছিলেন যে, আব্বাস রা. এর মুক্তিপণ মাফ করে দেয়া হোক। কিন্তু ইসলামী সাম্যনীতিতে প্রিয় ও নিকটতম, শত্রু-মিত্র সকলেই সমান । আনসারদের আবেদনের পরেও তা কবুল করা হল না। এমনিভাবে মহানবী সা. এর জামাতা আবুল আসও যুদ্ধবন্দী হয়ে আসেন। তার নিকট মুক্তিপণের অর্থ ছিল না। এ জন্য তার স্ত্রী অর্থাৎ মহানবী সা. এর মেয়ে হযরত যয়নাব রা.কে –যিনি মক্কায় অবস্থান করতেছিলেন-বলে পাঠান হল যে, মুক্তিপণ পাঠিয়ে দাও। তার গলায় একটি হার ছিল, যা তার জননী হযরত খাদীজা রা. তাকে উপঢৌকন স্বরূপ দিয়েছিলেন। তিনি তা গলা থেকে খুলে দিলেন। যখন মহানবী সা. সেই হার দেখলেন তখন অনিচ্ছায় তাঁর চোখ অশ্রুতে ভরে এলো । সাহাবীদেরকে বললেন, যদি তোমরা সকলেই রাজি থাক তাহলে যয়নবের নিকট এটা তার মায়ের স্মৃতি, তাকে ফেরত দাও, সাহাবা কেরাম সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিয়ে ফেরত দিলেন এবং আবুল আসকে বলে দিলেন যয়নাবকে মদীনায় পাঠিয়ে দাও। –মেশকাত, আবু দাউদ ও আহমদ ৩৪৬
আবুল আসের ইসলাম গ্রহণ : আবুল আস মুক্ত হয়ে মক্কায় পৌঁছলেন। শর্তানুযায়ী হযরত যয়নাবকে মদীনায় পাঠিয়ে দিলেন। আবুল আস ছিলেন একজন বড় ব্যবসায়ী। ঘটনাক্রমে দ্বিতীয়বার সিরিয়া হতে মাল নিয়ে মক্কায় প্রত্যাবর্তনের সময় (পুনরায় মুসলামনদের হাতে) পাকড়াও হলেন। অতঃপর তাকে পূর্বের ন্যায় ছেড়ে দেয়া হল। এবার মুক্তি পেয়ে মক্কায় আসলে সকল
অংশীদারকে হিসাব পরিস্কার করে বুঝিয়ে দিয়ে ইসলামে দীক্ষিত হলেন। লোকদেরকে বললেন, আমি এজন্য এখানে এসে ইসলাম গ্রহণ করলাম, যাতে লোকজন এটা বলার সুযোগ না পায় যে, আমাদের মাল নিয়ে চাওয়ার ভয়ে মুসলমান হয়ে গেছে অথবা জবরদস্তি অথবা বাধ্য করে মুসলমান বানানো
হয়েছে।-তারিখে তাবারী
বদরের বন্দীদের নিকট কাপড় ছিল না। রাসূলুল্লাহ সা. তাদের সবার জন্য কাপড়ের সুব্যবস্থা করলেন। কিন্তু হযরত আব্বাস রা. এর দৈহিক উচ্চতা এত দীর্ঘ ছিল যে, কারো জামা তার গায়ে লাগছিল না। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই (মুনাফিকদের নেতা) নিজের জামা দিয়ে দিল। মহানবী সা. আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এর কাফনে যে জামা দান করেছিলেন তাতে উপকারের বদলাও লক্ষ্যণীয় ছিল।-সহীহ বুখারী
ইসলামী রাজনীতি ও শিক্ষার উন্নতি
যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে যারা মুক্তিপণ দিতে পারেনি তাদের মধ্যে যারা কিছু লেখা-পড়া জানত তাদেরকে বলা হল তোমরা দশজন করে শিশুকে লেখা পড়া শিক্ষা দাও। এটাই তোমাদের মুক্তিপণ। হযরত যাইদ ইবনে সাবেত সেভাবেই লেখা-পড়া শিখেছিলেন।
এ বছরের বিক্ষিপ্ত ঘটনা : এই বছরেই রবিবার মহানবী সা. বদর যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। তখন লোকজন মহানবী সা. এর কন্যা হযরত রুকাইয়্যা রা. কে দাফন করে হাত ঝাড়ছিল । সীরাতে মুগলতাঈ পৃ ৪৫
এ বছরই বদর যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর প্রথম বার ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়া হয়। রমযানের রোযা এবং সদকায়ে ফিতর এ বছরই ওয়াজিব হয়। ঈদুল আযহার নামায এবং কুরবানীও এ বছরই ওয়াজিব হয়। সীরাতে মুগলতাঈ
এ বছরেরই যিল হজ্ব মাসে হযরত ফাতিমা রা. এর বিবাহ সম্পন্ন হয়।
এফিলিয়েট মার্কেটিং করে উপার্জন
নবী রাসুলগণ কিভাবে অর্থ উপার্জন করতেন?
সাহাবাগণ কিভাবে অর্থ উপার্জন করতেন