হুনাইনের যুদ্ধের ইতিহাস
হুনাইনের যুদ্ধের ইতিহাস
মক্কা বিজয়ের পর আরবরা ব্যাপকভাবে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। কেননা, তাদের অধিকাংশ এমন সব লোক ছিল, যারা ইসলামের সত্যতা পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও কুরাইশদের দাপটের ভয়ে মুসলমান হতে বিলম্ব এবং মক্কা বিজয়ের অপেক্ষা করতেছিল। এ সময় তারা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করল। অবশিষ্ট আরবদের সাহস রইল না যে, এখন ইসলামের বিরোধিতা করবে।
সাস্থসম্মত উপায়ে তৈরি ১০০%-খাঁটি-ঘি
তবে হাওয়াযিন ও সাকিফ গোত্র দু'টি আত্মমর্যাদাবোধের কারণে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে মক্কা মুয়ায্যামার দিকে অগ্রসর হল মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য। রাসূলুল্লাহ সা. খবর পেলেন। তখন তিনি বার হাজারের একটি বাহিনী যুদ্ধের জন্য একত্রিত করলেন। যাদের মধ্যে দশ হাজার তো মুহাজির ও আনসার ছিল, যারা মদীনা থেকে এসেছিলেন। আর দু' হাজার নও মুসলিম ছিল, যারা মক্কা বিজয়ের সময় ইসলাম গ্রহণ করেছে। (এবং এটা এ পর্যন্ত ইসলামী সৈন্যদের সংখ্যা থেকে সবচেয়ে বেশী সংখ্যা ছিল।)
৮ম হিজরীর শাওয়াল মাসের ৬ তারীখে আল্লাহর এই বাহিনী যাত্রা করলেন। যখন হুনাইন উপত্যকায় পৌঁছলেন তখন শত্রু পাহাড়ের ঘাঁটিতে আত্মগোপন করেছিল। তারা তৎক্ষণাৎ মুসলমানদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। যেহেতু এখনো পর্যন্ত মুসলমানগণ কাতারবদ্ধ হননি। এজন্য মুসলিম বাহিনীর সম্মুখ অংশ পিছু হটতে লাগল ।
এই পিছু হটার বাহ্যিক কারণ তো (কাতার) অবিন্যাসই ছিল। কিন্তু প্রকৃত কারণ তাই ছিল, যার দিকে কুরআনে কারীম ইঙ্গিত করেছে। অর্থাৎ মুসলমানরা সে সময় নিজেদের অভ্যাসের বিপরীত নিজেদের সংখ্যাধিক্য এবং রণ-সামগ্রী দেখে খুশী হচ্ছিল। কোন কোন সাহাবী এমনকি হযরত আবু বকর রা. এর মুখ থেকে এ বাক্যগুলো বের হয়ে পড়েছিল যে, আজ আমরা পরাজিত হব না। এজন্য অমুখাপেক্ষী প্রভু তাদেরকে সতর্ক করার জন্যে এ অবস্থা সৃষ্টি করে দিলেন, যাতে মুসলামনরা বুঝে নেয় যে, আমাদের বিজয়-পরাজয় আমাদের হাত, তীর ও তরবারির খেলা নয়, বরং শরাবের এসব শক্তি কোথা মত্ত- পাগল করবে সে মোরে- প্রিয়ের তরে করেছি যা তা করেছি মত্ত নার্গিসে
বদরে রণ সামগ্রী না থাকা সত্ত্বেও সুস্পষ্ট বিজয় এবং হুনাইনে এ পরিমাণ রণসামগ্রী থাকা সত্ত্বে পরাজয়ের গুপ্ত রহস্য এটাই ।
মহানবী সা. সে সময় দু'টি যুদ্ধের পোশাক পরিহিত অবস্থায় একটি সাদা খচ্চরে আরোহিত ছিলেন। যার নাম ছিল দুলদুল। গোত্রগুলোকে পিছপা হতে দেখে মহানবী সা. এর আদেশে হযরত আব্বাস রা. এক বীরত্বপনা আওয়াজ দিলেন। যার কারণে লোকদের পদস্খলন হবার পর পুনরায় পা জমে গেল। উভয় বাহিনীর মাঝে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল।
এক মহান মুজেযা: এক মুষ্ঠি মাটি দ্বারা সমস্ত শত্রু বাহিনী পরাস্ত
এদিকে মহানবী সা. জমিন থেকে এক মুষ্ঠি মাটি নিয়ে শত্রু বাহিনীর দিকে নিক্ষেপ করলেন। আল্লাহ তাআলা নিজ কুদরতে শত্রু বাহিনীর প্রত্যেকের চোখে এমনভাবে পৌছিয়ে দিলেন যে, কোন একটি চক্ষু তা থেকে রক্ষা পেল না । -সীরাতে মুগলতাঈ পৃ: ৭২ অবশেষে শত্রুরা ভীত-সন্ত্রস্থ ও পরাজিত হয়ে পলায়ন করল। মুসলমানদের চারজন আর শত্রু বাহিনীর সত্তর জন থেকেও বেশী মারা পড়ল। মুসলমানরা প্রতিশোধের স্পৃহায় শিশু ও নারীদের দিকে হাত বাড়ালেন। তখন মহানবী সা.
নিষেধ করলেন। [মুগলতাঈ পৃ: ৭২]