Narrow selection

ওহুদ যুদ্ধের ইতিহাস


ওহুদ যুদ্ধের ইতিহাস

গাতফান যুদ্ধ এবং মহানবী সা. এর মহান চরিত্রের মুজেযা

৩য় হিজরীতে সাড়ে চার শত সৈন্য নিয়ে দু'সুর ইবনে হারেস মুহারেবী মদীনা তায়্যিবায় আক্রমণের জন্য চলল। মহানবী সা. প্রতিরোধের জন্য গমন করলে সবাই পলায়ন করে পাহাড়ের আশ্রয় নেয়। নবী কারীম সা. নিশ্চিন্তে ময়দান থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন। তখন ঘটনাক্রমে বৃষ্টিতে নবী কারীম সা. এর কাপড় ভিজে গেল। মহানবী সা. শুকানোর জন্য তা খুলে এক গাছের উপর মেলে দিয়ে তার নিচে শয়ন করলেন। এদিকে পাহাড়ের উপর থেকে দু'সুর সব কিছু দেখতেছিল। যখন সে দেখল যে, নবী কারীম সা. নিশ্চিন্তে শুয়ে গেছেন তখন সে সোজা নবী কারীম সা. এর শিয়রের নিকটে পৌঁছে তরবারি উঁচু করে সামনে এসে বলল, বল এখন তোমাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে? কিন্তু বিপরীতে ছিলেন আল্লাহর রাসূল।

 

সাস্থসম্মত উপায়ে তৈরি ১০০%-খাঁটি-ঘি

 

কোন ভয়ভীতি ছাড়াই উত্তর দিলেন,  হ্যাঁ, আল্লাহ তায়ালাই বাঁচাবেন। এই বাণী শোনা মাত্রই দুসুরের শরীরে কম্পন সৃষ্টি হল এবং তরবারি হাত থেকে পড়ে গেল। তখন মহানবী সা. তরবারি উত্তোলন করে বললেন, তুমি বল এখন তোমাকে কে রক্ষা করবে? তার নিকট এটা ছাড়া আর কোন উত্তর ছিল না যে, কেউ বাঁচাতে পারবে না। তার অসহায়ত্বের উপর নবী কারীম সা. এর দয়া হল এবং তাকে ক্ষমা করে ছেড়ে দিলেন। সীরাতে মুগলতাঈ পৃ৪৯

 

দু'সুর সেখান থেকে উঠল এবং এই প্রতিক্রিয়া নিয়া উঠল যে, শুধু সে নিজেই মুসলমান হল না; বরং তার স্বজাতির মাঝে ইসলামের এক মহান প্রচারক হয়ে গেল । মহাপ্রলয়ের অনল জ্বলিছে হৃদয়ে আমার দুর্নিবার কারো চোখে চোখে থাকিয়া কেবল দিবস দু'তিন চার হযরত হাফসা ও যয়নবের বিবাহ:

৩য় হিজরীর শাবান মাসে উম্মুল মু'মিনীন হযরত হাফসা রা. এবং রমযানে হযরত যয়নাব বিনতে খুযাইমা রা. মহানবী সা. এর বিবাহ বন্ধনে আসেন। -সীরাতে মুগলতাঈ

 

উহুদ যুদ্ধ

উহুদ মদীনার নিকবর্তী একটি পাহাড়। যে স্থানে যুদ্ধ হয়েছে সেখানে হযরত হারুন আ. এর কবর অবস্থিত। এ জিহাদটি সর্বসম্মতিক্রমে তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু দিন তারিখের ব্যাপারে কিতাবে বিভিন্ন উক্তি রয়েছে । 

 

বদর যুদ্ধে পরাজিত মুশরিকরা এক বছর পর যখন কিছু হুশ ফিরে আসল তখন প্রতিশোধের স্পৃহার অগ্নি জ্বলে উঠল। এবার তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মদীনা আক্রমণের ইচ্ছা করল। এ লক্ষ্যে তিন হাজার যুবকের বাহিনী পূর্ণ অস্ত্রে- শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মদীনার দিকে অগ্রসর হল। তাতে সাত শত বর্ম ছিল। দুই শত অশ্ব এবং তিন হাজার উট, চৌদ্দজন নারীও এই উদ্দেশ্যে সাথে চলল যে, পুরুষদের আত্মমর্যাদাবোধ বাড়িয়ে তুলবে। আর যদি পলায়ন করে তাহলে অভিসম্পাত ও ভর্ৎসনা দিয়ে লজ্জা দিবে।

 

এদিকে মহানবী সা. এর চাচা হযরত আব্বাস রা.-যিনি তখন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু তখনও তিনি মক্কায় অবস্থান করতেছিলেন- সকল অবস্থা লিখে এক দ্রুতগামী দূতের মাধ্যমে মহানবী সা. এর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। মহানবী সা. অবগত হলে তৎক্ষণাৎ দুই জন লোককে অবস্থা যাচাই করার জন্য সম্মুখে পাঠিয়ে দিলেন। তারা এসে খবর দিল কুরাইশদের বাহিনী মদীনার কাছে পৌছে গেছে। যেহেতু শহরে আক্রমণের আশংকা ছিল, তাই চতুর্দিকে পাহারা বসানো হল। সকালে মহানবী সা. সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করার পর সাহাবীদের এক হাজারের একটি বাহিনী সাথে নিয়ে মদীনার বাইরে তাশরীফ আনেন। 

 

তাতে মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এবং তার সমমনা তিন শত মুনাফিকও শামিল ছিল। কিন্তু তারা সবাই রাস্তা থেকে ফিরে আসল। এখন মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা মাত্র সাত শত রয়ে গেল ।

 

সৈন্য বিন্যাস এবং সাহাবীদের ছেলেদের যুদ্ধের স্পৃহা

 

মদীনা থেকে বের হয়ে যখন সৈন্যদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হল তখন কম বয়স্ক বালকদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হল। কিন্তু বালকদের মাঝে জিহাদের আগ্রহ- উদ্দীপনার অবস্থা এমন ছিল যে, যখন রাফে ইবনে খাদিজ রা. কে বলা হল, তোমার বয়স কম। তুমি ফিরে যাও। তখন তিনি পায়ের পাতার উপর ভর করে দাঁড়ালেন, যাতে উঁচু মনে হত লাগল। সুতরাং তাকে জিহাদে নিয়ে যাওয়া হল। সামুরা ইবনে জুন্দুব যিনি তার সমবয়স্ক ছিলেন। যখন তিনি ইহা দেখলেন তখন আবেদন করলেন, আমি রাফেকে কুস্তিতে পরাজিত করি। যদি তাকে জিহাদে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে আমি যাওয়ার অধিক উপযুক্ত। তার বলা অনুযায়ী তাদের দু'জনের মাঝে কুস্তি লাগানো হল। সামুরা রাফেকে কুস্তিতে পরাজিত করল। তাকেও জিহাদে নেয়া হল। -তারিখে তাবারী খণ্ড ৩

 

ইসলাম তরবারির জোরে প্রচার লাভ করার প্রবক্তরা এসব আত্মত্যাগ দেখে কি নিজেদের মিথ্যা অপবাদ থেকে লজ্জা পাবে না?

 

মোটকথা, নবী কারীম সা. যুদ্ধের স্থানে গিয়ে সারিবদ্ধ করলেন। উহুদ পাহাড় পিছনের দিকে ছিল। এজন্য সে দিক থেকে শত্রু আক্রমণের সম্ভবনা ছিল । মহানবী সা. পঞ্চাশ জন লোককে পাহাড়ের পাদদেশে পাহারার জন্য দাঁড় করিয়ে দিলেন এবং দিক নির্দেশনা দিলেন যে, মুসলমানদের বিজয় হোক বা পরাজয় তোমরা তোমাদের স্বীয় স্থান ত্যাগ করবে না।

 

যুদ্ধ শুরু হল। দীর্ঘড়াণ তুমুল যুদ্ধের পর যখন মুশরিক বাহিনী পিছপা হতে লাগল তখন মুসলমানদের পাল্লা ভারি ছিল। কুরাইশরা জ্ঞান শূন্য হয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল। মুসলমানরা গনীমতের মাল কুড়াতে শুরু করে দিল। তাদের দেখা দেখি ঐ সব লোকও নিজেদের স্থান ত্যাগ করে এখানে এসে গেল, যাদেরকে পশ্চাদ দিকে পাহাড়ের উপর পাহারার জন্য মুতায়েন করেছিলেন। তাদের আমীর আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর অনেক নিষেধ করলেন। কিন্তু তারা এটা মনে করে যে, এখন এখানে থাকার প্রয়োজন নেই। সেখান থেকে সরে এলেন। সেখানে মাত্র কিছু সাহাবী রয়ে গেলেন। ইহা দেখে খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. (যিনি তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি এবং কাফেরদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করে যাচ্ছিলেন) পশ্চাদ দিক থেকে হঠাৎ আক্রমণ করে বসলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. এবং তার অবশিষ্ট কয়েকজন সঙ্গী অত্যন্ত জানবাজির সাথে তাদের প্রতিরোধ করলেন। অবশেষে সকলেই শহীদ হয়ে গেলেন। এখন রাস্তা পরিষ্কার হয়ে গেল। খালিদ তার বাহিনী নিয়ে মুসলমানদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। উভয় বাহিনী এমন ভাবে মিলে গেল যে, স্বয়ং মুসলমানের হাতে মুসলমান মারা পড়তে লাগল ।

 

মুসআব ইবনে উমাইর রা. শহীদ হয়ে গেলেন। তিনি যেহেতু মহানবী সা. সদৃশ ছিলেন, তার শাহাদাতের কারণে একথা ছড়িয়ে পড়ল যে, মহানবী সা. শহীদ হয়ে গেছেন। কতক বর্ণনাতে রয়েছে, কোন শয়তান বা মুশরিক উচ্চস্বরে এ আওয়াজ দিয়েছিল যে, মুহাম্মদ সা. নিহত হয়ে গেছেন।

যুরকানী শরহে মাওয়াহের ২/৩৩ এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই মুসলিম বাহিনীর মাঝে নৈরাশ্যতা বিরাজ করতে লাগল। বড় বড় বাহাদুরের পা উপড়ে গেল। কিন্তু অনেক প্রাণ উৎসর্গকারী সাহাবী তখনও প্রচণ্ড লড়াই করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সকলের দৃষ্টি মহানবী সা. কেই আগ্রহের সাথে অনুসন্ধান করছিল। 

 

সর্বপ্রথম হযরত কা'ব বিন মালেকের দৃষ্টি মহানবী সা. এর উপর পড়ল। তিনি আনন্দে আহবান করতে লাগলেন মুবারক হোক মহানবী সা. এখানে সুস্থ এবং নিরাপত্তার সাথে অবস্থান করছেন। ইহা শোনা মাত্রই সাহাবায়ে কিরাম তাঁর দিকে দৌড়ালেন। সাথে সাথে কাফেররাও সব দিক থেকে সরে সেই দিকেই রুখ করল। কয়েকবার মহানবী সা. এর উপর আক্রমণ হল, কিন্তু মহানবী সা. নিরাপদ ছিলেন। একবার যখন কাফেররা ভীড় করল তখন মহানবী সা. ইরশাদ করলেন কে আমার জন্য জান দেবে? হযরত যিয়াদ ইবনে সাকান চার সঙ্গীসহ অগ্রসর হয়ে অত্যন্ত বীরত্বের সাথে প্রাণোৎসর্গ করে শহীদ হয়ে গেলেন। যখন যিয়াদ আহত হয়ে পড়লেন তখন মহানবী সা. ইরশাদ করলেন তার লাশ নিকটে নিয়ে এস। লোকজন উঠিয়ে আনলেন। তখন পর্যন্ত কিছু প্রাণ অবশিষ্ট ছিল পায়ের উপর মুখ রেখে দিলেন। সে অবস্থাতেই জান দিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ

 

মহানবী সা. এর মুবারক চেহারা আহত হওয়া: কুরাইশদের বিখ্যাত বীর আব্দুল্লাহ ইবনে কুমাইয়্যা কাতার বিদীর্ণ করতে করতে সামনে আসল এবং মহানবী সা. এর মুবারক চেহারার উপর তরবারি চালাল। যার কারণে শিরস্ত্রাণের দু'টি কড়া চেহারা মুবারকে ঢুকে গেল এবং একটি দাঁত মুবারক শহীদ হয়ে গেল। তখন হযরত সিদ্দিকে আকবার রা. শিরস্ত্রাণের কড়াটা ক্ষত স্থান থেকে বের করার জন্য অগ্রসর হলেন। হযরত আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ রা. শপথ দিয়ে বললেন, আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে এই খেদমতটুকু করতে দাও।

নিজে সম্মুখে অগ্রসর হয়ে হাতের পরিবর্তে মুখ লাগিয়ে সেই কড়াগুলো টানলেন। প্রথম বার একটি কড়া বের হল; কিন্তু উহার সাথে সাথে হযরত আবু উবায়দা রা. এর একটি দাঁতও পড়ে গেল। ইহা দেখে দ্বিতীয় কড়াটা বের করার জন্য হযরত আবু বকর রা. সামনে বাড়লেন। এবারও হযরত আবু উবায়দা রা. তাকে কসম দিয়ে বাধা দিলেন এবং নিজেই দ্বিতীয় বার মুখ লাগিয়ে দ্বিতীয় কড়াটা বের করলেন। যার কারণে আবু উবায়দা রা. এর আরেকটি দাঁত পড়ে গেল । ইবনে হিব্বান, তাবারানী, দারাকুতনী, কাঞ্জুল উম্মাল ৫/২৭৪ 

 

মহানবী সা. একটি গর্তে পড়ে গেলেন, যা কাফেররা এই উদ্দেশ্যে বানিয়েছিল যে, যাতে মুসলমানরা তাতে পড়ে যায় ।

 

সাহাবীদের আত্মত্যাগ: ইহা দেখে প্রণোৎস্বর্গকারী সাহাবা কিরাম মহানবী সা.কে ঘিরে ফেললেন। তীর ও তরবারির বৃষ্টি হতে লাগল। কিন্তু সাহাবায়ে কিরাম এগুলো নিজেদের উপর নিচ্ছিলেন। হযরত আবু দুজানা ঝুকে মহানবী সা. এর ঢাল হয়ে গেলেন। যে তীরই আসত সেটা তার পিঠে লাগত। হযরত তালহা রা.তীর ও তরবারি নিজের উপর আটকিয়ে দিতেন। যার ফলে তার হাত কেটে পড়ে গেল। বুখারী

যুদ্ধের পর দেখা গেল তার শরীরে সত্তর থেকেও অধিক আঘাত। ইবনে হিব্বান, কাঞ্জ ৫/২৭৪ 

 

আবু তালহা একটি ঢালের দ্বারা মহানবী সা. কে হিফাজত করতেছিলেন। মহানবী সা. যখন ঘাড় উঠিয়ে সৈন্যদের দিকে তাকাতেন তখন আবু তালহা রা. বলতেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি মাথা উঠাবেন না। শত্রুদের সম্ভাব্য কোন তীর না লাগে। উহার জন্য আপনার পূর্বে আমার বক্ষদেশ বিদ্যমান। - (বুখারী গাযওয়ায়ে উহুদ) 

 

এক সাহাবী আবেদন করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমি নিহত হই তাহলে আমার ঠিকানা কোথায় হবে? মহানবী সা. বললেন, জান্নাতে। তার হাতে কিছু খেজুর ছিল, যা তিনি খাচ্ছিলেন। এটা শোনা মাত্রই সেগুলো নিক্ষেপ করে সোজা যুদ্ধের ময়দানে পৌঁছে যান এবং প্রচণ্ড যুদ্ধ করে শহীদ হয়ে গেলেন ।

 

কুরাইশ হতভাগারা মহানবী সা. এর উপর নির্দয়ের সাথে তীর, তরবারির -বুখারী বৃষ্টি বর্ষণ করতেছিল। কিন্তু রহমাতুল্লিল আলামীন এর পবিত্র মুখে এ শব্দগুলো উচ্চারিত হচ্ছিল । হে আমার প্রতি পালক! আমার জাতিকে মাফ করে দিন। কেননা, তারা জানে না। ফতহুল বারী

 

নবীজীর মুবারক চেহারা থেকে রক্ত ঝরছিল। রহমাতুল্লিল আলামীন তা কাপড় দিয়ে মুছছিলেন এবং বলছিলেন, যদি এ রক্তের এক ফোঁটা জমিনে পড়ত তাহলে সকলের উপর আল্লাহর শাস্তি অবতীর্ণ হত। -ফতহুল বারী

এই যুদ্ধে কাফেরদের মাত্র বাইশ বা তেইশজন মারা যায়। আর মুসলমানদের মধ্য হতে সত্তর জন ।

 

এফিলিয়েট মার্কেটিং করে উপার্জন

নবী রাসুলগণ কিভাবে অর্থ উপার্জন করতেন?

সাহাবাগণ কিভাবে অর্থ উপার্জন করতেন

আমাদের ইউটিউব ইউটিব চ্যানেল

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color