বিবাহ সম্পর্কে জরুরী জ্ঞাতব্য
06:37:16 01/04/2025
বহু বিবাহ সম্পর্কে জরুরী জ্ঞাতব্য
একজন পুরুষের জন্য একাধিক স্ত্রী রাখা ইসলামের পূর্বে পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মে বৈধ মনে করা হত। আরব, হিন্দুস্থান, ইরান, মিসর, ইউনান (গ্রীস) ব্যাবিলন, অস্ট্রিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রের প্রতিটি জাতির মাঝে অধিক বিবাহের প্রথা ছিল এবং তার স্বভাবজাত প্রয়োজনীয়তাকে আজও কেউ অস্বীকার করতে পারে না। বর্তমান যুগে ইউরোপ তাদের পূর্বসূরীদের বিপরীত অধিক স্ত্রী রাখাকে অবৈধ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা উদ্দেশ্যে পৌছতে পারেনি। অবশেষে সহজাত কানুনই বিজয় হয়েছে। এখন এটা চালু করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।
মিঃ ডিওনপোর্ট প্রসিদ্ধ খৃষ্টান পণ্ডিত বহু বিবাহের স্বপক্ষে ইঞ্জিলের অনেক আয়াত উল্লেখ করার পর লিখেন-এ সকল আয়াত দ্বারা এ কথার প্রমাণ মিলে যে, বহু বিবাহ শুধু পছন্দনীয় নয়; বরং আল্লাহ তায়ালা এর মধ্যে বিশেষ বরকত রেখেছেন। -দেখুন জন ডিনওনপোর্ট লিখিত লাইফ গ্রন্থ পূ: ১৫৮ দ্রঃ
তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, ইসলামের পূর্বে অধিক বিবাহের কোন সীমা ছিল না। একেক জনের অধীনে হাজার হাজার স্ত্রী ছিল। খৃষ্টান পাদ্রীগণ রীতিমত বহু বিবাহে অভ্যস্থ ছিলেন। খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দি পর্যন্ত জার্মানে এর ব্যাপক প্রচলন ছিল। কনষ্টান্টিপলের সম্রাট ও তাঁর উত্তরাধিকারীগণের বহু স্ত্রী ছিল। এমনিভাবে বেদ শাস্ত্রেও অসীমাবদ্ধ বহু বিবাহ বৈধ করেছে। এতে একই সময় দশজন,তেরজন এমনকি সাতাশ জন করে স্ত্রী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ রাখার অনুমতি বোধগম্য হয়।
মোটকথা, ইসলামের পূর্বে অসীমাবদ্ধ বহু বিবাহর প্রচলন ছিল। যতটুকু বিভিন্ন ধর্ম ও রাষ্ট্রের ইতিহাস থেকে জানা যায়, কোন ধর্ম এবং আইন এর উপর কোন সীমা নির্ধারণ করেনি। ইয়াহুদী, খৃষ্টান, হিন্দু, আরিয়া এবং ফরাসী কেউ তাতে সীমা বেধে দেয়নি।
ইসলামের প্রাথমিক যুগেও এই প্রথা অসীমাবদ্ধভাবে চালু ছিল। কোন কোন সাহাবীর বিবাহে চারের অধিক স্ত্রী ছিল। হযরত খাদীজা রা. এর পর ইসলামের বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনের ভিত্তিতে রাসূলুল্লাহ সা. এর বিবাহ বন্ধনে দশ জন স্ত্রী একত্রিত হন। অতঃপর যখন বহু বিবাহের কারণে স্ত্রীদের অধিকার খর্ব হতে লাগল। লোকজন প্রথমতঃ লোভের বশবর্তী হয়ে অধিক বিবাহ করত। কিন্তু পরে এদের অধিকার আদায় করতে সক্ষম হত না। তখন পবিত্র কুরআনের চিরাচরিত বিধান, যা পৃথিবী থেকে অন্যায়-অনাচারকে উৎখাতের জন্যই অবতীর্ণ হয়েছিল। কুরআন স্বভাবজাত প্রয়োজনীয়তার প্রতি লক্ষ্য রেখে একাধিক বিবাহকে একেবারেই নিষেধ তো করেনি। কিন্তু তার অনিষ্টতার সংশোধন একটি সীমা রেখার মাধ্যমে করে দিয়েছে। মহান আল্লাহর এ নির্দেশ অবতীর্ণ হয়েছে যে, এখন শুধুমাত্র চারজন নারী একত্রে বিবাহ করা যাবে। এটাও এই শর্তে যে, তোমরা চারজনের অধিকার সমানভাবে পুরণ করতে পারবে। আর যদি এতটুকু সাহস না হয় তাহলে একের অধিক রাখা অন্যায় হবে।
এই নির্দেশের পর উম্মতের ঐক্যমতে একই সঙ্গে চারের অধিক স্ত্রী রাখা হারাম। যেসব সাহাবীর অধীনে চারের অধিক স্ত্রী বিবাহ বন্ধনে ছিল তাঁরা চারজনকে রেখে বাকীদের তালাক দিয়েছিলেন। হাদীস শরীফে রয়েছে, হযরত গাইলান রা. মুসলমান হয়েছিলেন তখন তার বিবাহ বন্ধনে দশজন স্ত্রী ছিল। রাসূলুল্লাহ সা. তাকে নির্দেশ দিলেন চারজনকে রেখে বাকীদের তালাক দিয়ে দাও। এমনিভাবে হযরত নওফল বিন মুয়াবিয়া রা. ইসলাম গ্রহণ করলেন, তখন তার বিবাহ বন্ধনে পাঁচজন স্ত্রী ছিল। মহানবী সা. একজনকে তালাক দেওয়ার নির্দেশ দিলেন।-তাফসীরে কাবীর ৩/১৩৭
চারের অধিক স্ত্রী মহানবীর একটি বৈশিষ্ট্য ছিল তার কারণ কি নিচে উল্লেখ করা হলো:
কুরআনে কারীমের বাণী,
হে নবীর সহধর্মনীগণ, তোমরা অন্যান্য নারীদের ন্যায় নও।
তারা তো সকল উম্মতের জননী। মহানবী সা. এর পর তারা কারো বিবাহের অধীনে আসতে পারবে না। এখন যদি সাধারণ আইনের অধীনে চারজন রেখে বাকীদেরকে তালাক দিয়ে পৃথক করা হত তাহলে তাদের উপর কত বড় জুলুম হত যে, সারা জীবনের জন্য পরিত্যাক্ত হয়ে থাকতেন। রহমাতুল্লিল আলামীনের কিছু দিনের সান্নিধ্য তাদের জন্য এক শাস্তি হয়ে যেত, একদিকে মহানবী সা. এর সান্নিধ্য ছুটে যেত অন্য দিকে তাদের জন্য এরও অনুমতি থাকত না যে, অন্য কোথায় গিয়ে নিজ চিন্তাকে দূর করতে পারবেন।
এজন্য কোনভাবে উচিত ছিল না যে, (মহানবী সা.) এর পবিত্র স্ত্রীগণ এই সাধারণ আইনের অধীনে থাকবেন। বিশেষ করে সেসব রমণীগণ যাদেরকে এজন্য বিবাহ করেছিলেন যে, তাদের স্বামী জিহাদে শহীদ হয়েছিলেন এবং তারা সহায় সম্বলহীন ছিলেন। মহানবী সা. সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তাদেরকে বিবাহ করেছিলেন। যদি তাদেরকে তালাক দিতেন তাহলে তাদের উপর কি অবস্থা অতিবাহিত হত। তারা সারা জীবনের তরে বিবাহ বঞ্চিত হতেন।