নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম - Islam in establishing women's rights
15:38:25 12/04/2023
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম - Islam in establishing women's rights
نَحْمَدُهُ وَنُصَلِّي عَلَى رَسُولِهِ الْكَرِيمِ أَمَّا بَعْدُا فَقَدْ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى وَإِذَا الْمَوْلُودَةُ سُئِلَتْ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الدُّنْيَا كُلُّهَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةٌ صَالِحَةٌ صَدَقَ اللهُ
العَظِيمُ وَصَدَقَ رَسُولُهُ النَّبِيُّ الْكَرِيمِ
“নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম' শীর্ষক সেমিনারের মুহতারাম সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী ও ইলমে দ্বীনের ধারক-বাহক আমার প্রাণপ্রিয় ছাত্র ভাইয়েরা! বিশ্ব ভুবন যখন জাহেলী আঁধারে আচ্ছন্ন, অশান্ত ধরনীর চারিদিকে হাহাকার, আর এ হাহাকার বাতিল শয়তানিয়্যাতের দুর্দান্ত দাপটে পৃথিবী মুহ্যমান, ভয়ংকর নারী জাতির অবস্থান। অথচ মহান সৃষ্টিকর্তার রহস্যময় সৃষ্টি দ্বারা সুসজ্জিত এ নিখিল বসুন্ধরা। এ ধরাকে আল্লাহ তা'আলা সুশোভিত করেছেন সৃষ্টি দ্বারা, আর মানুষকে সর্বোত্তম জাতি হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। মানব জাতিকে নর-নারী দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। এ বিভক্তি সত্ত্বেও নৈতিকতার দিক থেকে উভয়ের মাঝে কোন বিভেদ রাখেননি। এ মর্মে ইরশাদ হচ্ছে-
هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ -
অর্থাৎ, তারা তোমাদের পোশাকস্বরূপ, আর তোমরা তাদের পোশাক স্বরূপ।
অতএব, সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে নারী ও পুরুষের মধ্যে মানুষ হিসেবে কোন বিভেদ নেই।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, যে ইসলাম নারীকে সম্মান-মর্যাদা, স্বাধীনতা ও অধিকারের সুউচ্চ আসনে স্থান দিয়েছে, অধুনা বিশ্বের নারীরা সেই ইসলামকেই নিজেদের অধিকার আদায়ের অন্তরায় মনে করছে। ইসলামের বিধি-নিষেধের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাস্তায় নেমেছে, বিভিন্ন অধিকার আদায়ের আন্দোলনের তারা আজ বল্গাহীন ঘোড়ার মত যেখানে সেখানে নিজের খেয়াল খুশি মত ঘুরে বেড়াচ্ছে। লাজ লজ্জার মাথায় পদাঘাত করে তারা বের হয়ে এসেছে রাস্তা-ঘাটে, হোটেল-রেস্তোরা আর হাটে-বাজারে। স্বামীর চোখে ধূলো দিয়ে, ধর্মের বিধান লঙ্ঘন করে পিতা-মাতার স্নেহ-মায়া পরিত্যাগ করে বখাটে যুবকদের হাতে হাত রেখে অবাধে চলাফেরা করে যাচ্ছে।
এটাই কি নারী স্বাধীনতা?! অথচ এতে নারীরা তাদের স্বাধীনতা লাভ তো দূরের কথা; বরং তারা তাদের স্বাধীনতার নামে মান-সম্মান সবই হারাচ্ছে। লাঞ্ছিত-বঞ্চিত হচ্ছে পথে পথে। ধর্ষণ-অপহরণ, এসিড নিক্ষেপ ইত্যাদির শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত ।
এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের সামনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কেন নারী আজ অধিকার বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, নির্যাতিত। আর ইসলামই বা নারীর কি অধিকার দিয়েছে।
প্রিয় সুধীমণ্ডলী!
অন্ধকার যুগে যে নারীকে ঘৃণাভরে জীবিত কবরস্ত করা হত, সে নারীকে ইসলাম শুধু বাঁচার অধিকার দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। বরং করেছে তাকে মানব জাতির শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত। করেছে অতুলনীয় ভূষণে ভূষিত । নারী জন্মের সুচনালগ্ন হতে তার জীবন যবনিকা পর্যন্ত প্রতিটি পর্বেই ইসলাম তাকে অধিকার দিয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন
يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَنْ يَّشَاءُ الذُّكُورِ
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা কন্যা সন্তানের কথা পুর্বে বলেছেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- 'যার প্রথম সন্তান কন্যা সে সীমাহীন বরকতের অধিকারী। এমনিভাবে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর নিকট প্রিয় সে আল্লাহর নিকট প্রিয়। নারীর অধিকার বর্ণনা করতে গিয়ে হযরত মুআবিয়া (রা.) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বামীর ওপর স্ত্রীর কি কি অধিকার আছে? উত্তরে তিনি বললেন, 'তার অধিকার হলো, যখন তুমি খাবে তখন তাকেও খাওয়াবে, তুমি যখন যে মানের পোশাক পরিধান করবে তাকেও সেই মানের পোশাক পরিধান করাবে। তার মুখমণ্ডলে আঘাত করবে না। অশ্লীল ভাষায় তাকে গালি দিবে না। গৃহ ব্যতীত অন্য কোথাও তার সঙ্গ ত্যাগ করবে না। ইসলাম নারীকে অন্যান্য অধিকারের সাথে সাথে সম্পত্তির অধিকার প্রদান করেছে। এই মর্মে আল কুরআনুল কারীমে ঘোষিত হচ্ছে
يُوصِيكُمُ اللهُ فِي أَوْلَادِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ
১৭৯
অর্থ : আল্লাহ তোমাদেরকে তাকিদী হুকুম দিচ্ছেন; যে তোমাদের ছেলে সন্তানদের জন্য দুই মেয়ের সমান অংশ নির্ধারিত। -সূরা নিসা : ১১
ইসলাম নারীকে নিজ বাসস্থান ও জীবিকা নির্বাহের দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়নি। দেয়নি নিজ সন্তান-সন্ততি লালন পালনের ব্যয়ভার বহনের গুরুদায়িত্ব। অথচ সম্মান ও অধিকার প্রবক্তাদের দাবি অনুযায়ী এ সব দায়িত্ব তাদের নিজেদের উপরেই বর্তানো যুক্তিযুক্ত ছিল।
কিন্তু ইসলাম নারীকে এসব কঠিন দায়িত্ব থেকে পরিত্রাণ দিয়ে নারীর প্রতি যে দয়া করেছে, পৃথিবীর অন্য কোন ধর্ম তা পারেনি। অথচ পুরুষকে তার স্ত্রী পুত্র পরিজনের ব্যয়ভার বহন করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়। কতই না কঠিন পরিশ্রম করতে হয়। মানব জীবনের কঠিন দায়িত্ব ইসলাম নারীকে দেয়নি। কারণ নারী কোমল ফুলেল সৌন্দর্যের আধার। তাই নারীর উপর দুরূহ বোঝা চাপানো হয়নি ।
প্রিয় বন্ধুরা আমার !
উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা কুরআন-হাদীসের আলোকে এ কথা স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়ে উঠে যে, ইসলাম নারীর সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। নারীর সার্বিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু তথাকথিত প্রগতিশীল নারীরা ইসলামের এই অসাধারণ নারী মূল্যায়নকে তুচ্ছ মনে করেছে। তাই আসুন গন্তব্যহীন ধ্বংসের দিকে চলমান এই নারী সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসি। তাদের সঠিক বুঝ দান করার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন 1