হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন - Jihadi Life of Prophet Muhammad
15:12:04 12/09/2023
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জিহাদী জীবন
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ وَالصَّلوةُ وَالسَّلَامُ عَلَى سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ وعلى اله وَأَصْحَابِهِ أَجْمَعِينَ - أَمَّا بَعْدُ! فَأَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِـ بِسمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِينَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْ وَمَأْوَهُمْ جَهَنَّمَ - صَدَقَ اللَّهُ الْعَظِيمُ
জনাব সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী ও সম্মানিত উপস্থিতি। আমি নির্ধারিত বিষয়বস্তুর ওপর আপনাদের সম্মুখে সুচিন্তিত ও সারগর্ভ আলোচনা তুলে ধরার প্রয়াস চালাবো ইন্শাআল্লাহ ।
জিহাদী কাফেলার বন্ধুরা!
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পুরো জীবনটাই ছিল জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর উজ্জ্বল নমুনা। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নবুয়তী জীবনের একটি বিরাট অংশ জিহাদের ময়দানে ও জিহাদী কর্মকাণ্ডে অতিবাহিত করেছেন। কারণ তিনি নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন - -
জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) কোন সময় নিজেই জিহাদী অভিযান পরিচালনা করেছেন। আবার কখোনো তিনি কাউকে শত্রুর গতিবিধির ওপর নজর রাখার জন্য বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করেছেন। আমরা ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই যে, তিনি নিজে ২৭ টি জিহাদে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর ৭০ টির মত জিহাদ অন্যদের মাধ্যমে তার দিক নির্দেশনায় পরিচালিত হয়েছে। মোটামুটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্বয়ং নবী (সা.) ১০০ টির মত জিহাদ (যুদ্ধ) পরিচালনা করেছেন।
রক্ত পিচ্ছিল পথের সহযাত্রী বন্ধুরা!
নবীজী (সা.) এর জিহাদী জীবন এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের দাবীদার। যা পৃথিবীর অন্য কোন মহামানবের জীবনীতে পাওয়া যায় না। তিনি যেমন ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ সমরবিদ; ঠিক তেমনিভাবে জিহাদের ময়দানে এক অসীম সাহসী বীর মুজাহিদ। তিনি জিহাদের ময়দানে স্থির থাকার নিমিত্তে প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে শিরস্থান ও দুইটি লোহার পোশাক (লৌহবর্ম) একত্রে পরিধান করেছেন। জিহাদের উত্তপ্ত ময়দানে দ্বিধাহীন ভাষায় কবিতা পাঠ করেছেন। জিহাদের তামান্না পেশ করতঃ বলিষ্ঠ কন্ঠে ঘোষণা দিয়েছেন-
أنَا النَّبِيُّ لَا كَذِبُ - أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبُ - رواه البخاري
অর্থাৎ, আমি মিথ্যা নবী নই, আমি আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান। -বুখারী এছাড়াও বহু হাদীসে জিহাদের প্রান্তরে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কর্মতৎপরতা তাঁর দূরদর্শিতা ও বীরত্বের স্বাক্ষর বহন করে।
জিহাদী চেতনায় উজ্জীবিত ভাইয়েরা আমার!
দৃষ্টান্ত স্বরূপ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম'-এর জিহাদী জীবনের খণ্ড চিত্র তুলে ধরছি। গাযওয়ায়ে বুয়াতের ক'দিন পরই কুরজ বিন জাবের যোহরী চারণভূমি আক্রমন করায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সেনাপতিত্বে মুজাহিদীন কাফেলা এদের দমনার্থে রওনা করলে তারা পালিয়ে যায়। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বদরের সাথাওয়াল ওয়াদী পর্যন্ত তাদের পিছু ধাওয়া করেন।
জিহাদী কাফেলার সাথী ও বন্ধুগণ!
এমনিভাবে নবী জীবনের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখতে পাই তিনি ওহুদ, বদর, বনু নজীর, দাওমাতুল জানদাল, খন্দক ইত্যাদি জিহাদে স্বশরীরে অংশগ্রহণ করে জিহাদের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার বিরাট স্বাক্ষর রেখেছেন। বলিষ্ঠ কন্ঠে ভাষণ দিয়েছেন, জিহাদের জন্য লোকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন।
মুজাহিদ ভাইয়েরা আমার!
খন্দক থেকে ফিরে এসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনার সনদ ভঙ্গকারী বিদ্রোহী কোরাইশদের দুর্গ অবরোধ করেন। আক্রমনের তীব্রতা বৃদ্ধি করা হলে তারা বশ্যতা স্বীকার করতে রাজী হয়। তদুপরী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ২৫ দিন পর্যন্ত জিহাদের ময়দানে অবস্থান করেন। গাযওয়ায়ে তাবুক ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের শেষ জিহাদ বা অভিযান। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোমানদের বিরুদ্ধে ৩০ হাজার মুজাহিদসহ এ জিহাদে অংশগ্রহণ করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উপস্থিতি জানতে পেরে রোমক বাহিনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে সাহস পায়নি।
সংগ্রামী সাথী ও বন্ধুগণ!
বিশ্বনবী জনাবে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখন আর পৃথিবীতে নেই। অথচ তাঁর জীবনের অনুপম আদর্শ আজও কুরআন ও হাদীসে বিদ্যমান রয়েছে। তিনি দ্বীন ইসলামকে দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমরণ সংগ্রাম করে গেছেন। দান্দান মোবারক শহীদ করেছেন। জিহাদের ময়দানে পেটে পাথর বেঁধেছেন। কিন্তু কুফরী শক্তির সামনে মাথা নত করেননি। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের মুলোৎপাটন ছিল তাঁর অভিযান ও জিহাদের মূল লক্ষ্য। সন্ত্রাসমুক্ত শান্তিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় তিনি সফল হয়েছিলেন।
আমি আপনাদের জিজ্ঞাসা করতে চাই, বর্তমানে যখন সাম্রাজ্যবাদী কুফরী শক্তি দেশ দখল ও উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলমানদের রক্ত ঝরাচ্ছে, এখন কি জিহাদের হুকুম ও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পরম লক্ষ্য শাহাদাতের মৃত্যু রহিত হয়ে গেছে? কস্মিনকালেও নয়। তাই আজ আমাদের জিহাদের জন্য মযবৃত নিয়ত করতে হবে। আধুনিক অস্ত্রভাণ্ডার ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি গড়ে তুলতে হবে। জ্ঞান বিজ্ঞান,
কম্পিউটার, ইন্টারনেটে ব্যাপক দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ঈমানী তাগিদে জিহাদী চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে বিশ্ব মুসলিমের সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। মুসলমানদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদার করতে হবে। সর্বোপরি জিহাদের নামে পাগলামী নয়; বরং সত্যিকার অর্থে জিহাদের আহ্বান বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই হবে আজকের আলোচনা সার্থক।
জেগে ওঠো মুসলিম
হাঁকো হায়দারী হাঁক, শহীদদের খুনে সব
লালে লাল হয়ে যাক ।
نَصْرٌ مِّنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ