আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক ও কামারের ঘটনা
04:15:52 06/15/2024
আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক ও এক কামারের গল্প:
বিখ্যাত আলেম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.)। তিনি ছিলেন ফকীহ, মুজাহিদ, মুহাদ্দিস ও সুফি। উচ্চ পর্যায়ের আলেম বুযুর্গ হিসাবে সমকালীন উলামা মনিষীগণ তাকে পরম শ্রদ্ধার সাথে দেখতেন। তিনি ইন্তিকাল করলে তার সময়ের এক বুযুর্গ তাকে সপ্নে দেখলেন।
জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার অবস্থা কি? হযরত আব্দুল্লাহ বিন মোবারক (রহ.) বললেন, আল্লাহ তায়ালা আমার প্রতি অনেক দয়া ও অনুগ্রহ করেছেন। তবে আমার ঘরের সামনেই এক কামার বাস করতো, তাকে আল্লাহ তায়ালা আমার চাইতে উচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিত করেছেন। যখন সেই বুযুর্গের ঘুম ভাঙলো, তখন তার মনের মধ্যে এ চিন্তার উদয় হলো, আচ্ছা।
হযরত আবদুল্লা ইবনে মোবারক (রহ.) এর চাইতে উচ্চ স্তরের অধিকারী হয়েছে যে কামার, তার একটু খোঁজ খবর নিয়ে দেখা দরকার। সে কি এমন আমল করতো যে কারণে মর্যাদায় সে আব্দুল্লাহ বিন মোবারককে ছাড়িয়ে গেছে? অবশেষে তিনি আব্দুল্লাহ বিন মোবারক বাড়িতে গেলেন, খোঁজ খবর নিলেন।
আসলেই কি সেখানে কোন কামার বাস করতো কি না। জানতে পারলেন, সত্যিই তার ঘরের পাশে এক পাশে এক কামার বাস করতো। সেও মারা গেছে। বুযুর্গ সেই কামারের ঘরে গিয়ে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাস করলেন, তোমার স্বামী দুনিয়াতে কি কাজ করতো? স্ত্রী বলল, আমার স্বামী তো একজন সাধারণ কামার ছিলেন। সারাদিন লোহা পেটাতো, এ ছিল তার কাজ।
বুযুর্গ বললেন, তোমার স্বামী নিশ্চয় বিশেষ কোন আমল করতো। যে কারণে আমি স্বপ্নে দেখেছি যে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মোবারক (রহ.) এর চাইতেও অনেক উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হয়েছে। স্ত্রী বললো, আমি যতটুকু জানি আমার স্বামী লোহার কাজ করতেন। তবে একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি, আমাদের ঘরের পাশেই আব্দুল্লাহ বিন মোবারক (রহ.) এর বাড়ি।
রাত্রে তিনি তার বাড়ির ছাদের উপর দাঁড়িয়ে এমনভাবে তাহাজ্জুদ পড়তেন যে, দূর থেকে মনে হতো স্থির একটি কাষ্ঠ খ-। তিনি কোনোরুপ নড়াচড়া করতেন না, আমার স্বামী ঘুম থেকে উঠে যখনই দৃশ্য দেখতেন, তখন তিনি আক্ষেপ করে বলতেন, আহ! আল্লাহ তায়ালা তাকে অবসর দান করেছেন, তিনি রাতভর কতো সুন্দর ইবাদত করেছেন।
মনে ঈর্ষা জাগে, যদি আল্লাহ আমাকে এ কামার র্কম থেকে পরিত্রাণ দিতেন তাহলে আমিও তার মতো তাহাজ্জুদের মধ্যে রাত কাটিয়ে দিতাম। আমি রীতি তাকে এভাবে আক্ষেপ করতে দেখতাম। দ্বিতীয় আর একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি, আমার স্বামী লোহা পেটাতো, এরই মধ্যে যদি আযানের ধ্বনি কানে আসতো, তৎক্ষণাথ কাজ বন্ধ করে দিতেন।
উঁচু করা হাতুড়িটি আরেকবার মারতে পছন্দ করতো না। বরং হাতুড়িটা উপর থেকে ছেড়ে দিতেন এবং বলতেন, আযানের শব্দ কানে আসার পর হাতুড়ি মারা আমার জন্য বৈধ নয়। একথা বলে সোজা মসজিদে যেতেন। বুযুর্গ বললেন, এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা তাকে এতো উচ্চ মর্যাদান দান করেছেন।