Narrow selection

​​​​​​​মে'রাজ ও আধুনিক বিজ্ঞান - Me'raj and modern science


05:07:24 12/04/2023

মে'রাজ ও আধুনিক বিজ্ঞান : এখানে মেরাজ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল, পরবর্তীতে এসংক্রান্ত একটি অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। যুক্তিবাদী বিজ্ঞানীদের ধারণা, জড়-জগতের নিয়ম শৃঙ্খলায় আবদ্ধ স্থুলদেহী মানুষের পক্ষে আকাশের বায়ুশূন্য স্তরে ভ্রমণ করা অসম্ভব। তা ছাড়া পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি মহাশূন্য মন্ডলের যে কোন স্থুল বস্তুকে নীচের দিকে আকর্ষণ করে। সুতরাং স্থুল দেহী মানব মুহাম্মদ (সাঃ)-এর শারীরিক মেরাজ বা আকাশ ভ্রমণের কাহিনী সত্যের অপলাপ মাত্র।

বর্তমান বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার যুগে মধ্যাকর্ষণ শক্তির ব্যাখ্যা উল্লেখিত বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বর্তমান যুগের একটি পরীক্ষিত সত্য হচ্ছে মহাশূন্যমন্ডলে অবস্থিত যে কোন স্থুল বস্তুকে মধ্যাকর্ষণ শক্তি সব সময় সমান ভাবে আকর্ষণ করতে পারে না।

প্রত্যেক গ্রহেরই নিজস্ব একটা আকর্ষণ শক্তি আছে। সে শক্তির বলেই সূর্য ও পৃথিবী পরস্পর পরস্পরকে টানছে। এ দুটি গ্রহের মধ্য বিন্দুতে কিন্তু কোন আকর্ষণ বিকর্ষণ নেই। পৃথিবীর কোন বস্তু যদি মধ্যবিন্দুতে পৌঁছে অথবা কোন একটি গ্রহের সীমানায় চলে যেতে পারে তাহলে অপর গ্রহের আকর্ষণ তাকে টানতে পারবে না।

গতি-বিজ্ঞানের যুক্তিতে পৃথিবী হতে কোন স্থুল বস্তুকে যদি প্রতি সেকেণ্ডে ৭ মাইল বেগে আকাশের দিকে ছোড়া হয় তবে তার পক্ষে নীচে চলে আসা সম্ভব হবে না।

আধুনিক বিজ্ঞানী আর্থার ক্লার্ক এর মতে, পৃথিবী হতে কোন স্থুল বস্তুর দূরত্ব যতো বাড়তে থাকবে, তার ওজন ততই কমতে থাকবে। এক পাউন্ড ওজনের পৃথিবীর কোন বস্তুকে ১২০০০ মাইল উর্ধে নিয়ে গেলে ওখানে তার ওজন কমে হবে মাত্র ১ আউন্স। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবী হতে যে যতো ঊর্ধ্বে গমন করবে, তার অগ্রগতি ততোই সহজতর হবে। গতি-বিজ্ঞানের হিসাবে মুক্তিগতি বলে একটা হিসাব রয়েছে যেমন। ঘণ্টায় ২৫০০০ মাইল বেগে ঊর্ধ্বলোকে ছুটতে পারলে পৃথিবী থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। গতি-বিজ্ঞানের এসব নব নব আবিষ্কারের ফলেই মানুষ আজ চাঁদে যেতে পেরেছে। চেষ্টা চলছে মঙ্গল গ্রহে যাবার। সুতরাং মধ্যাকর্ষণ শক্তির যুক্তি এখানে অচল।

বৈজ্ঞানিকদের আরেকটি যুক্তি হলো মুহাম্মদ (সাঃ)-এর দেহ ছিলো জড়-পদার্থের তৈরী আর যে কোন জড়-পদার্থের পক্ষে উর্ধ্বলোক ভ্রমন অসম্ভব। সব পদার্থেরই প্রকারভেদ রয়েছে। তাছাড়া সব পদার্থের ধর্ম সবখানেই এক নয় যেমন কাঁচ একটি জড়-পদার্থ। কাঁচকে ভেদ করে কোন কিছু যেতে পারে না। কিন্তু কোন আলোকরশ্মিকে কাঁচ বাধা দিতে পারে না। সে কাঁচ ভেদ করে চলে যাবেই।

আবার অনেক অস্বচ্ছ পদার্থের ভিতর দিয়ে সাধারণ কোন আলো প্রবেশ করতে পারে না। যেমন- শরীরের ভিতর কোন সাধারণ আলো প্রবেশ করতে পারে না কিন্তু এক্সরে-র রশ্মি শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভেদ করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ স্থানেও চলে যেতে পারে।

প্রত্যেক পদার্থও আবার স্থান-কাল-পাত্র ভেদে রূপান্তরিত হয়। যেমন পানি যখন কঠিন অবস্থায় থাকে তখন হয় বরফ। যখন তরল অবস্থায় থাকে তখন হয় পানি। আবার অবস্থাভেদে যখন বাস্পাকারে পরিণত হয় তখন আমাদের অলক্ষ্যে বাতাসে উড়ে বেড়ায়। কাজেই কোন পদার্থকে এক অবস্থায় দেখে এটাই পদার্থের একমাত্র রূপ, তা বলা যায় না।

মুহাম্মদ (সাঃ) জড় দেহী হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি জড় ধর্মী ছিলেন না। সর্বোপরি তিনি ছিলেন নূরের তৈরী। এ কারণে তাঁর দেহের কোন ছায়া ছিল না। সৃষ্টি সম্পর্কে হুযুর (সাঃ) নিজেই বলেছেন- আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন, তা আমার নূর।

এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনেও বলা হয়েছে, অবশ্যই তোমাদের কাছে আল্লাহর নূর ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। (সূরা : মায়িদা, আয়াত : ১৫)

নূরের যেহেতু কোন ওজন নেই তাই নূরের তৈরী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পক্ষে উর্ধ্বভ্রমণ সম্ভব। সন্দেহবাদীদের আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে এ স্বল্প সময়ের মধ্যে এত পথ ভ্রমণ, এত স্থান দর্শন এবং আল্লাহ তাআলার সাথে কথাবার্তা বলে আবার মক্কায় ফিরে আসা কি করে সম্ভব?

বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে গতির তারতম্যের সাথে সময়ের তারতম্য ঘটে থাকে। আলোকের যে গতি আছে, তার যতো কাছে যাওয়া যাবে সময়ও ততোই শ্লথ হয়ে আসবে। একসময় দেখা যাবে যে, আলোকের গতির চেয়ে বেশি গতিবেগে চলতে পারলে সময় তখন পিছনের দিকে ধাৰিত হবে অর্থাৎ উল্টাদিকে বইবে। বিভিন্ন অবস্থার উপর সময় বিভিন্ন রূপ ধারণ করে থাকে। তাছাড়া সময়ের প্রভাবও সবার উপর সমানভাবে পড়ে না। আইনস্টাইনের ভাষায় স্টান্ডার্ড টাইম বলে কোনো টাইম নেই, সব টাইমই লোকাল অর্থাৎ স্থানীয়ভাবে প্রযোজ্য।

নভোমন্ডল সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বলেন- সে অপার্থিব জগতে সময় এ জগতের মতো বয়ে চলে না। সেখানে মধ্যাকর্ষণ নেই, পদার্থ নেই। আলোকের কার্যকারিতা নেই।

অপরদিকে মানুষের স্থুল দেহ ছাড়াও একটি অ-জড় দেহ রয়েছে ইথারি ক দেহ, যা স্থল দেহের সাথেই মিশে থাকে। ইথারিক দেহ গঠিত হয় জ্যোতি বা ইথার দিয়ে যা সহজে আদ্যাত্মিক জগতে বিচরণ করতে পারে।

অধূনা পাশ্চাত্যে আধ্যাত্মিক জগতের অনেক কিছু আবিষ্কৃত হয়েছে। সে আধ্যাত্মিক বিদ্যার নাম দেয়া হয়েছে থিউসফী (কদণগ্রমযদহ)। সে আধ্যাত্ম্যবিদ্যার মতে ইথারিক দেহ নিয়ে মানুষ যে কোন সময় যে কোন দূরবর্তী স্থানে অপর কারো সম্মুখে উপস্থিত হতে পারে।

কোন স্থুল দেহী মানুষ যদি তার ইথারিক দেহের উপর সম্পূর্ণ ক্ষমতা রাখে তবে সে যে কোন সময়ে তার জড় দেহ পরিত্যাগ করে দূরবর্তী কোন বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারে।

এ ধরনের শক্তি সম্পন্ন মানুষের কাছে তখন স্থান, কাল, গতির কোন বন্ধন থাকে না। স্কুল দেহটি তখন ইথারিক দেহের বাহন হয়ে আধ্যাত্মিক জগতে বাধাহীন বিচরণ করতে পারে। --এটাই আধুনিক বিজ্ঞানের ভাষ্য। সুতরাং মহানবী (সাঃ)-এর মে'রাজ কোরআন হাদীসের দৃষ্টিতে যেমন সত্য তেমনি তা বিজ্ঞান সম্মতও।

 

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color