মিলাদ পড়লে কি গুনাহ হয়? - Milad Porle ki Gunah Hoy?
03:49:57 06/16/2024
বর্তমান সমাজে প্রচলিত মিলাদ ও কিয়াম
বর্তমান সমাজের মিলাদ ও কিয়াম বিদআত এবং অতি ভয়াবহ গুণাহের একটি কাজ। একদিকে এ বিদআত, কুফর, শিরক এর পরেই যা সর্বাধিক মারাত্মক বড় গুণাহ। অপর দিকে এ বিদআত হতে তাওবাও নসীব হয় না।
কেউ সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়াতে লিপ্ত হলে অথবা মিথ্যা বলার অভ্যাস থাকলে এগুলিকে কেউ হালাল বা বৈধ মনে করে না। বরং যে ব্যক্তি এগুলিতে লিপ্ত হয় সেও উহাকে গুনাহ্ মনে করে। বিধায় যখন বুঝে আসে বা অন্তরে আযাবের ভয় পয়দা হয়, তখন সে তওবা করে নেয় বা তাওবা করার প্রয়োজন মনে করে।
কিন্তু বিদআত বর্তমান সমাজে বিশেষ করে মিলাদ-কিয়াম যে পদ্ধতিতে চালু আছে, তাহা নাজায়েজ ও কবিরা গুনাহ হাওয়া সত্ত্বেও বাহ্যিক দৃষ্টিতে নেক আমল মনে করে তাহা সওয়াবের নিয়তে করা হয়।
বিধায় উহা থেকে তওবা করার চিন্তা বা প্রয়োজন মনে না করায় গুনাহকে নেকী মনে করে কুফরির দ্বারপ্রান্তে গিয়ে উপনিত হওয়া সত্ত্বেও তাওব নসীব হয় না। মনে মনে ভাবে সওয়াবের কাজই তো করছি।
এর জন্য আবার তওবা কিসের? পরিশেষে তওবা করা ছাড়াই তার মৃত্যু হয়। যে ব্যক্তি গুনাহের কাজকে নেকীর কাজ মনে করে তার পরিণাম জাহান্নাম। এ জন্য বিদআত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখা এবং উহা থেকে সম্পূর্ণ রূপে বেঁচে থাকা সকলের জন্য একান্তই জরুরী।
কেননা রাসূলে আকরাম (সাঃ) বিদআত থেকে বিরত থাকার জন্য কঠোর ভাবে উম্মতকে হুশিয়ার করেছেন এবং বিদআতের পরিণাম যে কঠিন ভয়াবহ তাহাও উম্মতকে জানিয়েছেন। যার বর্ণনা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
এফিলিয়েট মার্কেটিং করে উপার্জন
মিলাদের অর্থ
মিলাদ শব্দটি আরবি مَوْلُوْدٌ = مَوْلِدٌ مِيْلَادٌ- ولادة وولاد আরবি মাসদার মূলধাতু হতে নির্গত। আরবি ভাষার যুগ শ্রেষ্ঠ অভিধান আলকামুস, মিসবাহ, লিসানুল আরব, আল মুনজিদে এবং উর্দুসহ বিভিন্ন আরবি ডিকশনারীতে ولادة শব্দের অর্থ জন্ম দেয়া, ভূমিষ্ট করা।
আর মিলাদ ميلاد মাওলিদ مولدএবং মাওলুদ مولود শব্দের অর্থ জন্ম কাল, জন্মদিন, ভূমিষ্টের সময়।
অতএব হুজুর (সা.) এর মিলাদুন্নবী অর্থাৎ বিশ্বনবীর জন্মকাল বা সময় এবং তার জন্ম বৃন্তান্ত উম্মতের জন্য শুধু জানার বিষয়। যার মধ্যে মানার কোন বিষয় নেই। কিন্তু সিরাতুন্নবী পুরাটাই জানা এবং মানার বিষয়।
সেহেতু মিলাদুন্নবী অর্থাৎ বিশ্ব নবীর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনার গুরুত্ব হতে সিরাতুন্নবী অর্থাৎ বিশ্বনবীর জীবন আদর্শ আলোচনা করা ও তা জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা উম্মতের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
আল মুনজিদ- ১১০৬ পৃষ্ঠা, মিসবাহ পৃষ্ঠা ৯৬৬।
তাহলে মিলাদুন্নাবীর অর্থ হল হযরত রাসুল আকরাম (সা.) এর ভুমিষ্ট হওয়ার শুভ সময়, জন্ম কাল বা জন্ম দিন।
প্রচলিত মিলাদ ও কিয়াম শরীয়তে ভিত্তিহীন
কোন কাজ বা নিয়ম ইবাদত হওয়ার জন্য শরীয়তে তার কোন না কোন ভিত্তি বা দলিল থাকতে হবে। তা না হলে প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ খেয়াল খুশিতে বিভিন্ন কর্ম পদ্ধতি আবিস্কার করে সেটাকেই ইবাদত এবং শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত বলে দাবী করে বসে, তখন শরীয়ত একটি খেলনা বস্তুতে পরিণত হয়ে যাবে। জমির মালিকানা সঠিক হওয়ার জন্য যেমন দলিল পত্র থাকতে হয়। আর দলিল সম্পাদন হয় খতিয়ান, দাগ নং মৌজা ইত্যাদির দ্বারা।
ঠিক তেমনি ভাবে শরীয়তের কোন আমল সঠিক বা সহি প্রমাণিত হতে হলে শরীয়তের দলিল তথা কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াস দ্বারা অবশ্যই প্রমাণিত হতে হবে এবং কোন কাজ বা আমল ইবাদত হিসাবে প্রমাণিত হতে হলে তা খতিয়ান তথা রাসূলে কারিম (সা:) এবং তার সাহাবাগণ,
অতঃপর তায়েবীগণ ও তাবে তাবেয়ীন এই তিন যমানার সহিত মিলতে হবে তথা উল্লেখিত সোনালী যুগে উক্ত কাজের প্রমাণ থাকতে হবে। শরীয়তের যে কোন কাজ কর্ম পদ্ধতিগত ভাবে চার ভাগে বিভক্ত। যথা- হানাফি, মালেকী, শাফী ও হাম্বলী। যা শরীয়তের মৌজা হিসাবে ধরে নেওয়া যায়।
এখন দেখতে হবে বর্তমান সমাজে প্রচলিত মিলাদ ও কিয়াম শরীয়তের কোন দলিল অথবা খতিয়ান বা মৌজাভূক্ত কিনা। ৩০ পারা পবিত্র কুরআনের কোন আয়াতে উল্লিখিত মিলাদ ও কিয়ামের কথা ষ্পষ্ট অথবা ইশারা-ইঙ্গিতেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সহি হাদিসে তো দূরের কথা কোন জয়িফ হাদিস বা দুর্বল হাদিস দ্বারাও কেউ উক্ত প্রচলিত মিলাদ ও কিয়ামের পক্ষে দলিল দেখাতে পারবে না।
ইজমা কিয়াস দ্বারাও সম্ভব নয়
উক্ত প্রচলিত মিলাদ ও কিয়াম শরীয়তের খতিয়ানভূক্ত নয়, কেননা রাসূলে আকরাম (সা.) নিজ জীবনে কখন প্রচলিত মিলাদ ও কিয়াম করেন নাই এবং সাহাবাদের করতেও বলেন নাই। লক্ষাধিক সাহাবায়ে কেরামগণের মধ্যে হতে ছোট বড় এমন কি আদনা দরজার কোন সাহাবা থেকেও উহার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।
অতঃপর তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, আয়িম্মায়ে মুজতাহিদীন, মুহাদ্দিসীন, মুফাস্সিরীনগণ, চার মাযহাবের ইমামগণ তথা ইমাম আবু হানিফা (রা:), ইমাম মালেক (রা:), ইমাম শাফী (রা:), ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্মল (রা:), হাদিস জগতের ইমাম বুুখারী (র:), ইমাম মুসলিম (র:) ইমাম আবু দাউদ (রা:), ইমাম তিরমিজী (র:), ইমাম নাসায়ী (র:), ইমাম ইবনে মাজা (র:), ইমাম বাইহাকী ও ইমাম কানযুল উম্মাল (র:) গণ হতেও প্রচলিত মিলাদ ও কিয়ামের কোন প্রমাণ নেই।
ইমাম তহাবী, ইমাম দারমী, আল্লামা জুনায়েদ বাগদাদী এমন কি কোন ফিকাহ্বিদ হতেও উহার কোন প্রমাণ নেই। তাছাউফের ইমাম বড় পীর হযরত শাহ আব্দুল কাদের জিলানী (র:), হযরত শাহ মুঈন উদ্দিন চিশতি (র:), হযরত শাহ বাহা উদ্দিন নক্শাবন্দী (র:) এবং হযরত শায়খ আহমাদ সারহান্দী, মুজাদ্দাদে আলফেসানী (র:) থেকেও এর কোন প্রমাণ নেই।
প্রচলিত মিলাদের সূচনা
প্রচলিত মিলাদের সমর্থক এবং বিরোধী সকলেই এক মত যে, ইসলামের সুচনা কাল থেকে শুরু করে সুদীর্ঘ ছয়শত বৎসর পর্যন্ত এই মিলাদের কোন অস্তিত্ব ছিল না। ৬০৪ হিজরী ১২ রবিউল আউয়ালে এই মিলাদের আয়োজন করা হয়। বারাহীনে কাতেয়া- পৃষ্ঠা- ১০৩, তারিখে মিলাদ, পৃষ্ঠা- ১৩, ফতুয়া রাশিদীয়া- পৃষ্ঠা-১১৪
আনুষ্ঠানিক ভাবে মিলাদের প্রচলন
৬০৪ হিজরীতে ইরাকের মুসল শহরে বাদশাহ আবু সাঈদ মুজাফ্ফর উদ্দিন কাওকারী (মৃত-৬৩০ হি:) এবং আবুল খাত্তাব ওমর ইবনে মোহাম্মদ ইবনে দেহিয়া নামক জনৈক দরবারী আলেম দ্বারা সর্ব প্রথম এ প্রচলিত মিলাদের গোড়া পত্তন হয়।
১২ রবিউল আওয়াল ভিত্তিক এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্য ছিল আনন্দ উৎসব এবং নবী করিম (সা:) এর জন্য ইসালে সাওয়াব ও জিয়াফতের ব্যবস্থা। তারিখে ইবনে কাছির খন্ড নং- ১৩, পৃষ্ঠা নং- ১৩৬, তারিখে ইবনে খালকান, খন্ড- ৪, পৃষ্ঠা নং- ১১৭, ইখতিলাফে উম্মত ও সিরাতে মুস্তাকিম, খন্ড-১, পৃষ্ঠা নং- ৮৩।
মোট কথা বিশ্বনবী (সা:) এর ২৩ বছর নবুওয়্যাতের যুগের পর ১১ হিজরী হতে ৪০ হিজরী ১৭ রমজান পর্যন্ত আনুমানিক ৩০ বৎসর খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগের পর প্রায় ১১০ হিজরী পর্যন্ত সাহাবায়েকেরামের শেষ যুগ। এরপর প্রায় ২২০ হিজরী পর্যন্ত তাবেঈন, তাবে তাবেঈন-এর যুগের পর ৪০০ হিজরী পর্যন্ত ইমাম ও মুজতাহিদীনের যুগ।
অতএব ৬০৩ হিজরী পর্যন্ত মহামনিষী ও সুফী সাধকদের যুগেও প্রচলিত মিলাদের অস্তিত্ব ছিল না। সর্ব প্রথম ৬০৪ হিজরী মোতাবেক ১২১৩ খৃষ্টাব্দে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ মিলাদের প্রচলন হয়। সুতরাং প্রচলিত মিলাদ অনুষ্ঠানটি নিঃসন্দেহে বিদআত ও নাজায়েজ।
মিলাদের হাকিকত ও প্রকৃত মিলাদ
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِىْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ –
তোমাদের জন্য আল্লাহ্র রাসূলের জীবনে রয়েছে উত্তম, অনুপম নমুনা ও আদর্শ। সূরা আহযাব, আয়াত- ১১।
হযরত রাসূলে আকরাম (সা:) এর শিশুকাল, যৌবন কাল, বৃদ্ধকাল, ব্যক্তিগত জীবন, সাংসারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, অর্থনৈতিক জীবন, তার আচার ব্যবহার, খাওয়া-দাওয়া, উঠা-বসা, চাল-চলন, লেন-দেন, চলা-ফেরা, কথা-বার্তা, হাসি-কান্না, শাসন-বিচার, দয়া-মায়া, ওজু-গোসল,
নামাজ-রোজা, হজ্ব-যাকাত, আরাম-আয়েশ, দুঃখ-কষ্ট, লেবাস-পোশাক, বিবাহ-সাদী, দাওয়াত-জিহাদ, ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির মোট কথা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র নিয়ে উম্মতের মাঝে আলোচনা পর্যালোচনার মাধ্যমে তার আদর্শ বাস্তবায়ন সম্ভব হতে পারে।
অতএব, রাসূলে কারীম (সা:) এর জীবন আদর্শ বর্ণনা করে মানব জীবনে তা প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়নের চেষ্টার নাম প্রকৃত মিলাদ বা মিলাদের হাকিকত বলে। এতে প্রচুর সাওয়াব ও নেকী রয়েছে। এই আলোচনা দ্বারা মানুষ তাদের জীবনে অনেক কিছু শিখতে পারে। একে আমরা সিরাত মাহফিলও বলে থাকি।
এ ধরণের মিলাদকে কেউ বিদআত বলবে না। কারণ এ ধরণের মিলাদ বা সিরাত মাহফিল রাসূলে কারীম (সা.) এর যুগ থেকেই চলে আসছে।
কিন্তু এক শ্রেণির স্বার্থপর অর্থলোভী উলামায়েছু এই সহীহ্ মিলাদকে বাদ দিয়ে নিজেদের খেয়াল খুশিমত আরবি ও উর্দু ভাষায় কিছু দুর্বোধ্য ও কঠিন গদ্য-পদ্য, কুরআন শরীফের এক দুটি আয়াত, এক দুটি দরুদ, দু-একটি দোআ-কালাম কিছু কাওয়ালী, তাওয়াল্লাদ ইত্যাদি মিলিয়ে কোন রকম একটা জোড়াতালি দিয়ে পাঁচ মিশালী খিচুরী মার্কা একটি সংক্রীর্ণ প্রথাগত মিলাদ আবিস্কার করেছে।
যার মধ্যে মনগড়া আরবি, উর্দূ, ফার্সী ও বাংলা ভাষায় কবিতা আকারে সুরালু কণ্ঠে মানুষের সামনে পেশ করে নাম দেওয়া হয়েছে মিলাদ শরীফ। নাউযুবিল্লাহ
অথচ প্রচলিত মিলাদ মাহফিলে রাসূলে আকরাম (সা.) এর জীবন আদর্শ নিয়ে কোন আলোচনাই হয় না। ফলে যুগ যুগ ধরে সরলমনা
মুসলমান মিলাদ মাহফিলে যাওয়া আসা করে। কিন্তু তারা বিশ্বনবী (সা.) এর আলোকিত উজ্জল জীবন আদর্শ থেকে কিছুই শিক্ষা অর্জন করতে পারে না।
আসল জিনিস
অর্থাৎ প্রকৃত মিলাদ বাদ দিয়ে নকল মিলাদ আবিস্কার করে মুসলিম সমাজকে আজ অন্ধকারে নিমজ্জিত করা হয়েছে। মানুষ নকলকে আসল মনে করে দুনিয়া ও আখিরাত বরবাদ করছে। আসল টাকা আর জাল টাকা দেখতে তেমন পার্থক্য বুঝে আসে না। কিন্তু ব্যাংকে গেলে ঠিকই ধরা পড়ে যায়।
জাল টাকার আবিস্কারক যদি প্রশাসনের হাতে ধরা পরে তাহলে তো আর রেহাই নাই, সাথে সাথে জেলখানায় তার স্থান হয়ে যায়। তেমনি ভাবে শরীয়তের কোন আসল আমল বাদ দিয়ে যদি কেউ নকল আমল আবিস্কার করে তার ঠিকানাও জাহান্নামে হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
كل بدعة ضلالة وكل ضلالة في النار-
সমস্ত নব আবিস্কৃত জিনিস বিদআত এবং সকল বিদআতী জাহান্নামী হবে। আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে আসল ও প্রকৃত মিলাদ বুঝে আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
প্রচলিত মিলাদ আবিস্কারকের হালাত
প্রচলিত মিলাদ আবিস্কারক ওমর বিন মহাম্মদ ইবনে দেহিয়া কোন মুজতাহিদ, মুহাদ্দিস বা ফকিহ কোনটাই ছিল না। ইলেম জ্ঞান ও সম্মানের দিক দিয়ে একজন সম্মান ও মর্যাদাহীন ব্যক্তি ছিল। তার পরিচিতি মূলত বাদশাহ আরবাল আবু সাঈদ কাউকারীর মাধ্যমেই হয়েছে।
বিজ্ঞ আলেমে দ্বীন ও মহা মনীষিগণ তাকে তীব্র ও কঠিন ভাষায় সমালোচনা করেছেন। আল্লামা তাজ উদ্দিন ফাকেহানী (রা.) যিনি মিলাদ আবিস্কারের যুগের একজন প্রখ্যাত আলেম ছিলেন। তিনি বলেন, প্রচলিত মিলাদ আবিস্কারক ওমর বিন মুহাম্মদ ইবনে দেহিয়া একজন ভ্রষ্ট ও চিত্ত পুজারী এবং পেট পুজারী ছিল। তারিখে মিলাদ- পৃষ্ঠা- ১৮
প্রচলিত মিলাদ সর্ব প্রথম বাদশাহ্ আরবাল ও ওমর বিন মুহাম্মদ ইবনে দেহিয়া আবিস্কার করেছে। তারা দুজনেই বিজ্ঞ আলিমদের নিকট অবিশ্বাস যোগ্য এবং অগ্রহণ যোগ্য ছিল। কারণ তারা উভয়েই গান-বাদ্য বাজাত। তাউযিহুল মারাম ফি বায়ানিল মাওলিদি ওয়ালকিয়াম- পৃষ্ঠা- ১৮
উল্লেখিত বর্ণনা থেকে জানা গেল, মিলাদ আবিস্কারক ওমর বিন মুহাম্মদ ইবনে দেহিয়া এবং বাদশা আরবাল আবু সাঈদ কাওকারী দুজনেই বিদআতি ছিল। যারা তাদের নিজের যুগের গ্রহণ যোগ্য উলামাদের নিকট অগ্রাহ্য ছিল, তাদের আবিস্কৃত আমল বর্তমান যুগে কিভাবে গ্রহণ যোগ্য হতে পারে। ব্যক্তি ভাল তো কাজ ভাল। আল্লাহ্ পাক আমাদের বিবেকের রুদ্ধদ্বার খুলে দিন। আমিন
কিয়ামের বিবরণ
ক্বিয়াম قيامশব্দের আভিধানিক অর্থ দাঁড়ান। সামাজিকতার পরিভাষায় কোন সম্মানিত ব্যক্তির আগমনে দাঁড়ানকে কিয়াম বলে। আর মিলাদ পন্থীদের নিকট মিলাদ অনুষ্ঠানে বিশেষ ধরণের তাওয়াল্লুদ ও কাসিদা পাঠ করার পর রাসূলে আকরাম (সা.) মিলাদ মাহফিলে হাজির হয়েছেন ধারণা করে অথবা ধারণা না করে তার সম্মানে ইয়ানবী সালাম আলাইকা বলার সময় দাঁড়িয়ে যাওয়া এবং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রথাগত সালাম পাঠ করাকে ক্বিয়াম বলা হয়।
সামাজিকতায় ক্বিয়ামের হুকুম
কোন বুযুর্গ বা সম্মানিত ব্যক্তি যখন স্বশরীরে আগমন করেন, তখন কোন কোন মুহুর্তে কোন ধরণের বাড়াবাড়ী ছাড়া ক্বিয়াম করা (আগন্তকের সম্মানে দাঁড়িয়ে যাওয়া) বৈধ। এ ব্যাপারে ইমাম নববী (রহ:) قوموا الى سيدكم-
অর্থাৎ তোমরা তোমাদের নেতার কাছে গিয়ে দাঁড়াও। হাদিস দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন। তবে এ বিষয়ে অন্যান্য উলামাগণের বিভিন্ন মতামত আছে। কিন্তু বিশেষ কথা হলো সম্মানিত ব্যক্তির স্বশরীরে আগমন, শায়খে কামেলের আগমন, পুত্রের সামনে স্বশরীরে পিতা-মাতার আগমন ও ছাত্রের সামনে ওস্তাদের আগমনে ইত্যাদিতে সম্মান প্রদর্শনের জন্য দাঁড়ান মুবাহ পর্যায়ে জায়েজের পক্ষে কিছু উলামাগণ মতামত পেশ করেছেন।
এ তো গেল সামাজিক ব্যাপার, শরয়ী কোন ব্যাপার নয়। কেননা উল্লেখিত সম্মানসূচক দাঁড়ানকে কেউ ইবাদত মনে করে না। কিন্তু যার জন্যে দাঁড়ান হচ্ছে সে যদি এটাকে গর্বের কারণ অথবা বড়ত্ব বোধ করে, এমন কি না দাঁড়ালে সে রাগান্বিত বা অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য উহা মারাত্বক ক্ষতির কারণ হবে এতে কোন সন্দেহ নাই।