Narrow selection

নামাযে রফয়ে ইয়াদাইন করা কি? - Namaje rofe yadyn kora


01:00:26 12/04/2023

নামাযে রফয়ে ইয়াদাইন করা কি?

রফয়ে ইয়াদাইন মানে দুই হাত তোলা। এর দ্বারা সাধারণতঃ রুকুতে যাওয়ার সময় ও রুকু থেকে উঠার সময় হাত তোলাকে বোঝানো হয়ে থাকে। এরূপ করা সুন্নাত কি না তা নিয়ে সাহাবীগণের যুগ থেকেই মতানৈক্য চলে আসছে। ইমামদের মধ্যে ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম মালেক রহ. এর মত হল, এটা সুন্নাত নয়। শুধু তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত তোলা সুন্নাত। পক্ষান্তরে ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ উক্ত তিন সময়েই হাত তোলাকে সুন্নাত বলেছেন। যেহেতু হাদীসের বিভিন্নতার কারণে এই মতের বিভিন্নতা হয়েছে তাই তাদের মাঝে বা তাদের অনুসারীদের মাঝে এ নিয়ে কোন ঝগড়া ছিল না। ছিল না কোন ফেতনা-ফাসাদ । ফেতনা বাজিয়েছে ইংরেজ আমলে সৃষ্ট তথাকথিত আহলে হাদীস সম্প্রদায়। হাত না তোলা সুন্নাতের পরিপন্থী।

দলীল প্রমাণসহ সেই ফেতনারই জবাব দেয়া হয়েছে।

রফয়ে ইয়াদাইনের পক্ষের হাদীস:

এ ক্ষেত্রে আমরা যে হাদীসটিকে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ এবং শক্তিশালী বলে মনে করা হয়ে থাকে তা উল্লেখ করলাম,

قال ابن عمر رض رأيت رسول صلى الله عليه وسلم اذا قام في الصلاة رفع يديه حتى تكونا حذو منكبيه وكان يفعل ذالك حين يكبر للركوع ويفعل ذلك اذا رفع رأسه من الركوع الخ

অর্থাৎ ইবনে উমর রা. বলেন, আমি হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি যে, তিনি নামাজের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত উত্তোলন করেছেন এবং রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু হতে উঠার সময় একই আমল করেছেন ।

প্রিয় পাঠক! আমরা যেহেতু একথা স্বীকার করি যে, রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নামাজে হাত উঠানো সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে তাই এ প্রসঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার প্রয়োজন মনে করি না।

হ্যাঁ, সালাফী ভাইয়েরা যেহেতু বলে থাকেন, হাত না উঠানো সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় । তাই এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনার প্রয়াস পাব।

রফয়ে ইয়াদাইন না করা সম্পর্কিত হাদীস সমূহ

এক্ষেত্রে আমরা সর্বপ্রথম ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসটি উল্লেখ করলাম,

عن علقمة رض قال قال عبد الله ابن مسعود رض ألا اصلى بكم صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم فصلى ولم يرفع يديه الا فى اول مرة.

অর্থাৎ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজ পড়িয়ে দেখাব না? এরপর তিনি পূর্ণ নামাজে কেবলামত্র তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত উঠান।

এ হাদীসটি হাত না উঠানোর ব্যাপারে বিশুদ্ধ এবং সুস্পষ্ট সে কারণে উক্ত হাদীসের ব্যাপারে আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারকের উক্তি উল্লেখ করেন, لم يثبت حديث ابن مسعود ابن رض ان النبي صلى الله عليه وسلم لم يرفع ألا في

اول مرة.

অর্থাৎ ইবনে মাসউদ রা.-এর হাদীস, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু মাত্র তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত উঠিয়েছেন, তা প্রমাণিত নয় ।

জবাব, ইবনে মাসউদ রা. হতে মূলত উক্ত বিষয়ে দুটি রেওয়ায়েত বর্ণিত। একটি যা আমরা উল্লেখ করলাম । অন্যটি হল,

ان النبي صلى الله عليه وسلم لم يرفع الا في اول مرة.

অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু মাত্র তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত উঠাতেন । হযরত আবু আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারকের উক্তিটি দ্বিতীয় হাদীসটির ব্যাপারে। যার দলীল স্বয়ং ইবনে মোবারক হতে হাদীসটি এরূপ বর্ণিত হয়েছে,

عن علقمة عن عبد الله رضى الله قال الا اخبر كم بصلاة رسول الله قال فقام فر فع يديه اول مرة ثم لم يعد.

এর দ্বারা বোঝা গেল, তার উক্তিটি দ্বিতীয় হাদীসের ব্যাপার।

উক্ত সূত্রটি سلسلة الذهب (স্বর্ণ সূত্র) পর্যায়ের ।

ইমাম তিরমিযী রহ. উক্ত হাদীসের উপর মন্তব্য করে বলেন-

حديث ابن مسعود حديث حسن وبه يقول غير وا من اهل العلم من اصحاب النبي

الله عليه وسلم والتابعين وهو قول سفيان الثورى واهل الكوفة....

অর্থাৎ ইবনে মাসউদ রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি হাসান, এ হাদীস অনুযায়ী বহু সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীগণ মত পোষণ করেছেন।

কতিপয় উলামায়ে কেরাম যারা এ হাদীসের ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছেন, তাদের মতকে খন্ডন করে বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা আহমদ শাকির লিখেন-

وهذا حديث صحيح صححه ابن حزم وغيره من الحفاظ وما قالوا في تعليله ليس بعلة - 

অর্থাৎ এ হাদীসটি বিশুদ্ধ। ইবনে হাযমসহ অন্যান্য হাদীসবিশারদগণ হাদীসটিকে বিশুদ্ধ বলে মত প্রকাশ করেছেন, লোকেরা এর সনদ সম্পর্কে যে সকল দোষ-ত্রুটির কথা বলেছেন, বস্তুতঃ সেগুলো দোষ নয় । ১৬৫

২নং হাদীস:

ইমাম আবু হানিফা রহ. তার সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. প্রথম তাকবীরের সময় দুই হাত উত্তোলন করতেন। নামাজের আর কোন অংশে করতেন না এবং তিনি এ আমলটি হযরত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করতেন ।

এই হাদীসের সনদ বিশুদ্ধ। তাই এর ভিত্তিতে ইমাম আবু হানীফা রহ. নামাজে হাত না উঠানোর মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। বিস্তারিত জানার জন্য মাওলানা আবুল ওফা আফগানী বর্ণনাকৃত কিতাবুল আছারের টীকা দ্রষ্টব্য ।

৩নং হাদীস:

عن محمد ابن جابر عن حماد ابن أبي سليمان عن ابراهيم عن علقمة عن عبدالله رضی قال صليت رسول الله صلى الله عليه وسلم وأبي بكر و عمر فلم يرفعواايد يهم الاعند إفتتاح الصلوة

অর্থাৎ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে আবু বকর উমরের পেছনে নামাজ পড়েছি। তারা কেবল তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত উঠাতেন ।

উক্ত হাদীসের বিষয় বস্তু দুটি-এক. ইবনে মাসউদ রা., হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে আবু বকর, উমরের পেছনে নামাজ আদায় করেছেন। দুই. তারা তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অন্য কোথাও হাত উঠাতেন না। উক্ত দুটি বিষয়ই অকাট্যভাবে প্রমাণিত। কেননা, ইবনে মাসউদ রা. হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজের যে নকশা দেখিয়েছেন, তা বিভিন্ন সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে । কোন সূত্রের মাঝে হাত উঠানোর কথা নেই । ইবনে মাসউদ রা.-এর শিষ্যদের মাঝে কারো থেকে এর বিপরীত বর্ণিত নেই । অতএব, আমরা বলতে পারি মুহাম্মদ ইবনে জাবেরের রেওয়ায়েতের বিষয়বস্তু অকাট্যভাবে প্রমাণিত ।

৪নং হাদীস:

حدثنا الحميدي قال حدثنا الزهرى قال اخبرنى سالم بن عبدالله عن ابيه قال رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا افتتح الصلوة رفع يديه حذو منكبيه واذا ارادان

يركع وبعدما يرفع رأسه فلا يرفع ولا بين اسجدتين.

অর্থাৎ ইবনে উমর রা. বলেন, আমি নামাজের শুরুতে হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দু'হাত পর্যন্ত উত্তোলন করতে দেখেছি । তিনি যখন রুকুতে যেতেন এবং রুকু হতে মাথা উঠাতেন, তখন হাত উত্তোলন করতেন না এবং দুই সাহাবী ও তাবেয়ীদের দৃষ্টিতে রফয়ে ইয়াদাইন

عن الاسود قال صليت مع عمر رض فلم يرفع يديه في شئ من صلوة الاحين إفتتح الصلوة وقال عبدالملك ورأيت الشعبي وابراهيم وابا اسحاق لا يرفعون ايديهم الا حين افتتح الصلاة .

অর্থাৎ আসওয়াদ রহ. বলেন, আমি উমর রা.-এর সাথে নামায পড়েছি । তিনি তাকবীরে তাহরীমার সময় ছাড়া অন্য কোন স্থানে হাত উঠাতেন না । আব্দুল মালেক, আমি শা'বী, ইব্রাহীম, নাখায়ী, আবু ইসহাক প্রমুখদের দেখেছি তারা কেব তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত উঠাতেন । ১৬৯

হাদীস বিশারদগণের নিকট উক্ত বর্ণনাটি সহীহ।

عن عاصم ابن كليب عن أبيه وكان من اصحاب على رضى إن علي بن ابي طالب رض كان يرفع يديه في التكبرة الأولى التى يفتتح به الصلوة لا يرفعهما في شئ من الصلوة.

অর্থাৎ আছেম ইবনে কুলাইব তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন । তিনি ছিলেন, আলী রা. এর একজন শিষ্য। তার বর্ণনা যে, আলী রা. শুধু মাত্র তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত উঠাতেন। নামাজে আর কোথাও এর পুনরাবৃত্তি করতেন না।

উক্ত বর্ণনা সম্পর্কে নসবুর রায়া গ্রন্থে ৪০৬ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে, রোমান এই এক ও অর্থাৎ উক্ত বর্ণনাটি বিশুদ্ধ । all গ্রন্থে ইবনে হাজার রহ. উল্লেখ করেন, des এতএব এবং তা অর্থাৎ উক্ত বর্ণনাটির বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য ।

যে সমস্ত কারণে রফয়ে ইয়াদাইন না করা উত্তম

১. কোন মাসআলায় যখন পরস্পর বিরোধী রেওয়ায়েত পরিলক্ষিত হয়, সেখানে উলামায়ে আহনাফের নীতি হল, ঐ সমস্ত রেওয়ায়েতগুলোকে প্রাধান্য দেয়া, যা কোরআনের সাথে অধিক সামঞ্জস্যশীল। যেমন: আল্লাহ তাআল এরশাদ করেছেন ”নামাজে নীরব হয়ে দাঁড়াও”। এ জাতীয় আয়াতের দাবি হল নামাজে নড়াচড়া না করা। কাজেই হাত না উঠানোর হাদীসগুলো কুরআনের সাথে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে ।

২. হাদীস দ্বারা মোট সাত স্থানে হাত উঠানোর প্রামাণ পাওয়া যায়,

১ম স্থান: তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত উঠানো। (SA) i, ii)

২য় স্থান: তাকবীরে তাহরীমা এবং রুকু হতে উঠার সময় হাত উঠানো । (মুয়াত্তা মালেক)

৩য় স্থান: তাকবীরে তাহরীমা এবং রুকতে যাওয়া এবং রুকু হতে উঠার সময় হাত উঠানো।

৪র্থ স্থান : পূর্বের তিন স্থান এবং ২য় রাকাত হতে উঠার সময় হাত উঠানো

৫ম স্থান : পূর্বের চারস্থান এবং সিজদায় যাওয়ার সময় হাত উঠানে (মাআরিফুস সুনান) ৬ম স্থান : পূর্বের স্থানসমূহ এবং প্রত্যেক উঠা-নামায সময় উঠানো । (ইবনে মাজা) কিন্তু রফয়ে ইয়াদাইন এর প্রবক্তাগণ এসব ক্ষেত্রে হাত উঠানো হুকুম রহিত বলে মানেন। এতে রুকু হতে উঠার সময় হাত না উঠানোর পক্ষে জোর সমর্থন পাওয়া যায় ।

৩. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর বর্ণিত হাদীসের সকল বর্ণনাকারী ফকীহ ছিলেন। আর মুহাদ্দিসীনে কেরামের মতানুযায়ী ফকীহ বর্ণনাকারীদের বর্ণিত হাদীস প্রাধান্য পায় । কাজেই ইবনে উমর রা.-এর বর্ণিত হাদীসের (রফয়ে ইয়াদাইন হাদীসের) উপর, ইবনে মাসউদের হাদীস ( রফয়ে ইয়াদাইনের হাদীস) প্রাধান্য পাবে। এ প্রসঙ্গে আবু হানীফা ও ইমাম আওযায়ীর মাঝে সংঘটিত বিতর্কটি লক্ষণীয়।

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color