শব্দ যুক্ত করে লেখার নিয়ম - Rules for writing by adding words
05:01:17 12/04/2023
শব্দ যুক্ত করে লেখার নিয়ম
গত আলোচনায় যুক্ত শব্দ লেখার নিয়ম আলোচনা করেছি। এ সম্পর্কে একটি মজার ঘটনা বলি। আমাদের পুরোনো পাঁচশত টাকার নোটগুলোতে এ রকম লেখা ছিলো- 'বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ শত টাকা চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে।'
মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ বললেন, আমার বিবেচনায় ‘পাঁচশত' এবং 'চাহিবামাত্র' কথাটি এক সঙ্গে লেখা উচিত। কিছুদিন পূর্বে আলোচনা প্রসঙ্গে কথাটা আমার পরিচিত এক লেখক ভদ্রলোককে বললাম, যিনি জন্মসূত্রে বিশ্বাস করেন যে, 'হুজুর মাওলানারা' আর যা হোক বাংলা জানেন না । তিনি আমার মন্তব্য 'পত্রপাঠ' প্রত্যাখ্যান করে বললেন, টাকার গায়ে যেভাবে লেখা আছে সেটাই ঠিক।
সম্প্রতি সেই ভদ্রলোক এসে হাজির তিনি নতুন ছাপা পাঁচশত টাকার একটা নোট আমার হাতে দিয়ে বললেন, আপনার কথাই দেখা যাচ্ছে ঠিক। এই দেখুন নতুন নোটে সংশোধন করে, 'পাঁচশত' এবং 'চাহিবামাত্র' যুক্তরূপে লিখেছে। হাসতে হাসতে নোটটা পকেটে চালান করে বললাম, 'হুজুর-মাওলানা' হয়েও আমি ভুল ধরতে পেরেছি, সুতরাং এটা আমার পুরস্কার।
এখানে একটি ঘটনা আছে, ঘটনা হলো, এর কিছুদিন আগে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক মজলিসে বাংলাদেশ ব্যাংকের জনৈক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ হয়েছিলো এবং আমি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম, এরপরই টাকার গায়ের লেখায় এই পরিবর্তন।
তোমরাও পুরোনো ও নতুন পাঁচশত টাকার নোট মিলিয়ে বিষয়টা দেখতে পারো। আমার কথার উদ্দেশ্য হলো, যুক্ত শব্দ লেখার বিষয়টা ভালো ভালো লোকেরাও সব সময় রক্ষা করতে পারেন না। তোমরা যদি এখন থেকেই তাতে মনোযোগী হও তাহলে ভালো ফল পাবে। 'হুজুর মাওলানারা' বাংলা জানেন না- এমন কথা অন্তত তোমাদের সম্পর্কে কেউ বলতে পারবে না। তবে সবার কাছ থেকে ওভাবে পুরস্কার আদায় করতে গেলে বিপদ হতে পারে।
নীচের বাক্যটি দেখো-
‘অতিভক্তি চোরের লক্ষণ।' ভক্তি জিনিসটা ভালো, কিন্তু অতিভক্তি দেখালে বুঝতে হবে যে, মনে কোন কুমতলব আছে। তাহলে বোঝা গেলো, অতি শব্দটা এখানে স্বতন্ত্র অর্থে ব্যবহৃত হয়নি, বরং ভক্তি শব্দটাতে নতুন অর্থ ও মাত্রা সৃষ্টি করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং শব্দদুটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত বিধায় যুক্তরূপে লিখিত হবে।
পক্ষান্তরে 'আমি আপনাকে অতি আনন্দের সহিত জানাইতেছি.... এ বাক্যে অতি শব্দটি আনন্দ শব্দটিকে অর্থের নতুনত্ব দান করেনি, শুধু আনন্দের পরিমাণ জানিয়েছে। সুতরাং শব্দদুটি অর্থগত স্বাতন্ত্র্যের কারণে আলাদাভাবে লেখা হবে।
'ভোজন দোষের নয়, কিন্তু অতিভোজন দোষের'। অর্থাৎ অতি শব্দটি এখানে ভোজন শব্দে নতুন অর্থ এনেছে। তাই যুক্তরূপে লিখিত হবে। পক্ষান্তরে 'অতি শোকে পাথর' এখানে অতি শব্দটি শুধু শোকের পরিমাণ নির্দেশ করেছে। তাই আলাদাভাবে লিখিত হবে।
এভাবেও বলা যায় যে, অতি শব্দটি যখন অনুচিত আধিক্য বোঝায় তখন একত্রে লেখা হয়। এবং যখন সীমাবহির্ভূত বোঝায় তখনো একত্রে লেখা হয়। কিন্তু প্রচুর পরিমাণ অর্থে আলাদা লেখা হয় । যথাক্রমে (ক) অতিকথা, অতিবুদ্ধি, অতিচালাকের গলায় দড়ি, অতিদর্পে পতন, অতিবৃষ্টি (খ) অতিপ্রাকৃতিক, অতিমানব, অতিমাত্রা (গ) অতি অন্যায়, সে অতি দুঃখী, অতি তাড়াতাড়ি তুমি বুঝতে পারবে।
নীচের দুটি বাক্য দেখো, এটি অতি পরিশ্রমসাপেক্ষ বিষয়। অতিপরিশ্রমে স্বাস্থ্য ভঙ্গ হয়।
অতি বাড় বেড়ো না, (কেউ আলাদা লিখেছেন, কেউ এক সাথে)
দাতা শব্দটি দানকারী অর্থে আলাদা লেখা হয়। যেমন তিনি দাতা, তুমি গ্রহীতা, বড় দাতা, অকৃপণ দাতা, কিন্তু প্রদানকারী অর্থে একসাথে লিখতে হয় যেমন পরামর্শদাতা, ঋণদাতা, সংবাদদাতা। দুই শব্দের মাঝে কোন কিছু উহ্য থাকলে একসঙ্গে লেখা হবে, যেমন (ক) সংবাদস্বাধীনতা (সংবাদের স্বাধীনতা) সমরপ্রস্তুতি, দাঙ্গাপরিস্থিতি (খ) দেহত্যাগ (দেহকে ত্যাগ) স্বার্থত্যাগ, গৃহত্যাগ, (গ) কন্যাদান, বিনামূল্যে ঔষধদান (ঘ) সাহিত্যবিষয়ক লেখা (সাহিত্যের সাথে সম্পর্কিত লেখা)
বহুবচননির্দেশক শব্দ ও প্রত্যয় যোগ করার ক্ষেত্রে আমরা প্রায় ভুল করি। যেমন সকল ছাত্ররা ক্লাশ বর্জন করেছে। এখানে ‘সকল' হচ্ছে বহুবচননির্দেশক শব্দ। সুতরাং 'রা'- প্রত্যয়ের ব্যবহার অর্থহীন। বলা দরকার 'সকল ছাত্র' কিংবা 'ছাত্ররা সকলে'।
'শুধুমাত্র একবার তাকে দেখেছি।' বলাটাও ঠিক নয়, কিন্তু বেশ চালু হয়ে গেছে। হয় বলবে শুধু একবার দেখেছি। কিংবা মাত্র একবার দেখেছি । 'অতিথিবৃন্দরা' লিখতে দেখা যায় অনেককে। অথচ ‘বৃন্দ' ও রা দুটোই বহুবচনের প্রত্যয় । লিখতে হবে ‘অতিথিবৃন্দ’ অথবা ‘অতিথিরা'।