শিরক কাকে বলে? - Shirk Kake Bole?
04:15:38 06/16/2024
শিরক কাকে বলে ওকত প্রকার?
اِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ اَنْ يُّشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذَالِكَ لِمَن يَّشَاءُ وَمَنْ يُّشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى اِثْمًا عَظِيْمًا–
অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তাঁহার সহিত শরিককারীকে ক্ষমা করবেন না। এটা ব্যতিত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাকের সহিত কাউকে শরিক করে সে এক মহা অপরাধ করল। সূরা নিসা-আয়াত নং- ৪৮।
সংক্ষিপ্ত তাফসীর : যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাকের জাত ও ছিফাতের সহিত কাউকে শরিক করবে অর্থাৎ অংশীদার বানাবে তাকে শাস্তি দিয়েও আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করবেন না বরং তাকে সর্বদা শাস্তির মধ্যে গ্রেফতার করে রাখবেন। কেননা শিরক হচ্ছে সব চাইতে মহাপাপ যা ক্ষমার অযোগ্য।
এফিলিয়েট মার্কেটিং করে উপার্জন
শিরকের অর্থ ও সংজ্ঞা
শিরকের আভিধানিক অর্থ অংশীদার সাব্যস্ত করা। ইসলামী পরিভাষায় উহার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্ পাকের সত্তা ও গুণাবলীর ব্যাপারে যে আক্বিদা ও বিশ্বাস রাখা জরুরী উক্ত আক্বিদা ও বিশ্বাসের সহিত মাখলুকের মধ্য হতে কাউকে সামিল করাকে শিরক বলা হয়। যার বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ-
আল্লাহ্ পাক তাঁর সত্তা এবং গুণাবলীতে এক ও অদ্বিতীয় এবং তুলনাবিহীন মনে করাকে তৌহিদ বলা হয়। এখন যদি কেউ আল্লাহ্ পাকের সহিত সত্তাগত অথবা ছিফাতগত ভাবে মাখলুক হতে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করে তাহাকে মুশরিক বলে। যেমন- শিয়াদের এক অংশের দাবী হল আল্লাহ্ পাকের বিবি ও সন্তান আছে (নাউযুবিল্লাহ্)
বর্তমান কোন এক ভন্ড পীর তার মুরিদদেরকে বলেছে “তোমরা ইল্লিনের মধ্যে আল্লাহর সংগে আমাকে বসা অবস্থায় দেখতে পাবে” যা সুষ্পষ্ট শিরক। মক্কার কাফেরগণ তৎকালীন যুগে মুর্তিকে সিজদা করত যা শিরক হিসাবে গণ্য ছিল। বর্তমানে কেউ যদি পীর অথবা মাজার বা করবরকে সিজদা করে, যে নিয়তেই করুক না কেন উহা স্পষ্ট শিরক হিসাবে গণ্য হবে।
মোট কথা আল্লাহ্ পাকের সত্তার মধ্যে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে একাধিক স্রষ্টা/খোদা মেনে নেয়া। যেমন খ্রিষ্টানরা তিন খোদায় বিশ্বাসী হওয়ার কারণে তারা মুশরিক সাব্যস্ত হয়েছে এবং অগ্নি পুজারিরা দুই খোদা সাবস্ত করায় মুশরিক সাব্যস্ত হয়েছে। একই ভাবে মুর্তি পুজারীরা বহু খোদা সাব্যস্ত করায় মুশরিক বলে গণ্য হয়েছে। সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখিত বর্ণনায় যা বলা হল তাহা শিরক ফিযযাত অর্থাৎ আল্লাহ্ পাকের সত্তার সহিত অংশীদার বানানো উহাকে শিরকে জলিও বলা হয়, যা মারাত্বক গুণাহ্ ।
শিরকের প্রকার ভেদ
শিরক প্রথমতঃ দুই প্রকার। যেমন- ১) শিরক বিল্লাহ্ অর্থাৎ আল্লাহ্ পাকের সহিত কাউকে শরিক বা অংশীদার সাব্যস্ত করা ২) শিরক ফিন্নবুওয়াত অর্থাৎ নবী করিম (সা.) এর নবুওয়াতের মধ্যে শরিক বা অংশীদার করা যাকে বেদআত বলে।
প্রথম প্রকার শিরিক দুই প্রকার। যথা- ১) শিরক ফিযযাত অর্থাৎ আল্লাহ্ পাকের সত্তার সহিত কাউকে শরিক করা বা অংশীদার করা যার বর্ণনা ইতিপূর্বে করা হয়েছে ২) শিরক ফিচ্ছিফাত যা আল্লাহ্ পাকের গুণাবলীর সহিত অংশীদার করা। শিরক ফিচ্ছিফাতের প্রকার অনেক। যার মধ্যে হতে কিছু বিবরণ নিম্নে পেশ করা হলো।
১) আল্লাহ্ পাকের গুণাবলী নামের মূল সংখ্যা নিরানব্বই। উক্ত নামসমূহ হতে কোন একটির সহিত কাউকে অংশীদার স্থাপন করা। যেমন-
القديرক্বাদীর একটি আল্লাহ্ পাকরে গুণবাচক নাম। যার অর্থ ক্ষমতাবান। যার ব্যাখ্যা হচ্ছে নবমন্ডল, ভূমন্ডল তথা সৃষ্টি জগতে যা কিছু ঘটে সব কিছুর উপর এক মাত্র আল্লাহ্ পাকই ক্ষমতার অধিকারী। তিনিই সকল ক্ষমতার মালিক। তার ক্ষমতার মধ্যে কেউ অংশীদার নেই। যদি কেউ কাউকে অথবা কিছুকে উপকার, লাভ-ক্ষতি, সুস্থ-অসুস্থ, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ইত্যাদির মালিক সাব্যস্ত করে অথবা যদি কারো নিকট কাঙ্খিত বস্তু কামনা করে কিংবা জীবিকা অথবা সন্তান-সন্ততি প্রার্থনা করে, নিঃসন্দেহে সে মুশরিক বলে বিবেচিত হবে।
কিছু মানুষ মুসলমান দাবীদার, সুখ-দুঃখ, ধনী-গরীব, সন্তান দাতা সকল হাজত পুরাকারী একমাত্র আল্লাহ্ পাকের হাতে মুখে স্বীকার করে, কিন্তু কোন পীর-বুজর্গের মাজারে গিয়ে সিজদা করতেও দেখা যায়। আবার কোন ভন্ড লোকের দরবারেও কাঙ্খিত বস্তু প্রার্থনা করতে দেখা যায়। যা শিরক বলে গণ্য। রাসুলুল্লাহ্ (সা.) এর ঘোষণা কোন কিছু চাইতে হলে আল্লাহ্ পাকের নিকট চাও এবং সাহায্য প্রার্থনা করতে হলেও আল্লাহ্ পাকের নিকটই সাহায্য প্রার্থনা কর।
২) العليم (আল আলিমু) অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক সর্বকালের, সর্ব যুগের, সর্ব বিষয়ের জ্ঞানী। সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক সর্ব অবস্থায় অবগত আছেন। বিশ্বজগের সৃষ্টির সংখ্যা ও পরিমাণ এবং অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ, ক্ষুদ্র, বৃহৎ, মানুষের অন্তরযামী, জাহির, বাতেন ইত্যাদি সব কিছুই আল্লাহ্ পাক জ্ঞাত। বিন্দু কণা থেকে শুরু করে সর্ব বৃহৎ সব কিছু আল্লাহ্ পাকের নখদর্পনে। সৃষ্টি জগতের সব কিছুই তাঁর এলমের অন্তরভূক্ত।
যদি কেহ আল্লাহ্ ব্যতিত অন্য কাউকে সর্ববিষয়ে জ্ঞানী রূপে বিশ্বাস করে যেমন- কাহার ব্যাপারে এরূপ বিশ্বাস করে যে অমুক ব্যক্তি আমাদের কাছের বা দূরের অথবা অন্তরের বিষয় সম্পর্কে অবগত আছে এবং অমুক ব্যক্তি আমাদের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম বিষয় এমন কি অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ এবং সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, সম্পর্কে অবগত আছে। এমন আক্বিদা বা বিশ্বাস রাখাকে শিরক বলে এবং এমন আক্বিদা পোষণকারীকে মুশরিক বলা হয়। উক্ত আক্বিদা বা বিশ্বাস কোন নবী-রাসূল (সা.) অথবা কোন পীর-বুজুর্গ ব্যক্তির ব্যাপারে পোষণকারীকেও মুশরিক বলা হয়।
ইবাদতের মধ্যে শিরক
আল্লাহ্ পাকের ন্যায় কাউকে ইবাদতের উপযুক্ত মনে করে সিজদা করা, মান্নত করা, কসম করা ইত্যাদি যেমন মাজার বা কবর অথবা পীরকে সিজদা করা বা রুকু করা অথবা আল্লাহ্ ব্যতিত কাহারও নামে রোজা রাখা, দান-সদকা করা, কুরবাণী করা, হালাল প্রাণী জবাই করা ইত্যাদি সুষ্পষ্ট শিরক। কিছু নামধারী মুসলমান পীরকে সিজদা করে এবং তারা বলে আমরা পীরকে তাজিমী সিজদা করি, অথচ নবী-রাসূল (সা.) দের জন্যও তাজিমী সিজদা বৈধ ছিল না এবং বর্তমানেও কোন পীর, ওলি, কুতুব, আবদাল, জিন্দা-মুর্দা কাহারো জন্য তাজিমী সিজদা বৈধ নয়। কোন পীরের ঘর-বাড়ী, কবর, আসন, আস্তানা, দরবার তাহার ব্যবহারকৃত আসবাব পত্র, কাবা শরীফের ন্যায় প্রদক্ষিণ করা সুস্পষ্ট ইবাদতের মধ্যে শিরক বলে গণ্য।