Narrow selection

​​​​​​​কালাজ্বরের লক্ষণ - Symptoms of black fever


07:10:59 12/11/2023

কালাজ্বরের লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয় : কালাজ্বর নামক মারাত্মক রোগের সাথে বাংলাদেশের মানুষ বহু আগে থেকে কমবেশি পরিচিত। লেইশমেনিয়া ডোনোভানি নামক পরজীবী জীবাণুর কারণে এ রোগ হয়। এ জীবাণুর বাহক হচ্ছে বেলে মাছি বা স্যান্ড ফ্লাই।

কালাজ্বরের লক্ষণসমূহ হচ্ছে দু সপ্তাহের বেশি জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, খেতে অনিচ্ছা, তলপেটে ব্যথা, ত্বক কালো হয়ে যাওয়া, পেট ফুলে যাওয়া, কাশি, জন্ডিস, দাঁতের মাড়ি বা নাক থেকে রক্ত পড়া। উপসর্গসমূহ হচ্ছে সঙ্গীন বা প্লীহা বেড়ে যাওয়া, যকৃত বড় হয়ে যাওয়া এবং জন্ডিস ও পেট বড় হয়ে যাওয়া।

বাংলাদেশের প্রায় ২ কোটি মানুষ কালাজ্বর প্রবণ এলাকায় বাস করে। ময়মনসিংহ, পাবনা, টাঙ্গাইল এবং গাজীপুর জেলায় সর্বাধিক কালাজ্বর রোগী পাওয়া গেছে। সংক্রমিত স্ত্রী বেলে মাছির কামড়ে লেইশমেনিয়া জীবাণু মানুষের মাঝে ছড়ায়। কালাজ্বরের সুপ্তিকাল বিভিন্ন মেয়াদের হয়ে থাকে। এ রোগের জীবাণু শরীরে ঢোকার পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ প্রায় সাধারণত ২ থেকে ৬ মাসের মধ্যে। কিন্তু লক্ষণ কয়েক বছর পরেও প্রকাশ পেতে পারে। কালাজ্বরের কারণে অস্থিমজ্জার বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং লিউকোপেনিয়া হয়, মা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

এর ফলে কালাজ্বরের রোগীর যক্ষ্মা, ব্যাকটেরিয়া নিউমোনিয়া এবং সেপসিসের মতো রোগের ঝুঁকি থেকে যায়। এছাড়া এসব রোগীর রক্তশূন্যতা দেখা দেয় এবং থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়াও হতে পারে। চিকিৎসা শুরুর আগে ও পরে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা হতে পারে। কালাজ্বর রোগীদের ত্বক কালো হয়ে যাওয়া একটি পরিচিত লক্ষণ। এজন্য এর নাম হিন্দিতে বলা হয় কালা-আরে বা কালাজ্বর। কিন্তু কীভাবে ত্বকের এই রং পরিবর্তন হয়, তা এখানো জানা যায়নি।

কালাজ্বর নির্ণয় করার জন্য মজ্জার সেইশমেনিয়া এমাল্টিপোট অথবা প্লীহা এসপিরেট করে জীবাণুর উপস্থিতি দেখা যায়। কিন্তু গ্রামে বসবাসকারী রোগীদের পক্ষে এই সুবিধা পাওয়া সম্ভব নয়। স্বল্প ব্যয়ে তাই সিরাম পরীক্ষা করা হয়। কালাজ্বর নির্ণয়ে ডাইরেক্ট অ্যাগ্লুটিনেশন টেস্ট (DAT) খুবই কার্যকরী পদ্ধতি। মাঠ পর্যায়ে ব্যবহার করা সহজ বলে কালাজ্বর সন্দেহকৃতদের রোগ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করার জন্য 139 dipstick ব্যবহার করা হয়। কালাজ্বর নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে এ পরীক্ষা খুবই কার্যকরী। কালাজ্বরের চিকিৎসায় কমপক্ষে ২০ দিনে শিরাপথে ওষুধের প্রয়োজন।

 বাংলাদেশে সোডিয়াম স্টিবোগুকোনেট ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেয়া হয় রোগীর প্রতি কেজি ওজনের জন্য ২০ মিগ্রা. করে দিতে হয়। তবে ৩০ দিন ওষুধ দেয়ার পরেও কাজ না হলে এক্ষেত্রে ওষুধ প্রতিরোধক বলা হয়। সোডিয়াম স্টিরোগ্লুকোনেট অকার্যকর হলে অ্যামফোটেরিসিন দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়। বর্তমানে মিন্টাফোসাইন নামে মুখে খাবারযোগ্য একটা নতুন ওষুধ পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে ব্যবহৃত হচ্ছে।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিনা চিকিৎসায় কালাজ্বরে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। কালাজ্বরে আক্রান্ত রোগী আরো বিভিন্ন জটিলতায় মারা যায় । কালাজ্বর নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে মৃত্যুহার কমিয়ে আনা সম্ভব। যথেষ্ট সতর্কতার সাথে কালাজ্বরের সঠিক চিকিৎসা করলে এ রোগের হার অনেক কমে যাবে। প্রাথমিক লক্ষণগুলো ধরা পড়ার পর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে তাই রোগ নির্ণয় করা প্রয়োজন।

 

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color