Narrow selection

​​​​​​​কিডনি রোগের লক্ষণ ও করণীয় - Symptoms of kidney disease


07:17:54 12/11/2023

কিডনি রোগের লক্ষণ ও করণীয় : আমাদের দেশে বর্তমানে কিডনি রোগীর সংখ্যা কম নয়। শিশু থেকে বয়স্ক সকলেই কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কিডনি রোগের কারণ ও প্রাথমিক উপসর্গগুলো প্রথম পর্যায়ে নির্ণয় করা সম্ভব হলে এবং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা হলে কিডনি রোগ নিরাময় এবং কিডনি বিকল হওয়া রোধ করা সম্ভব হবে।

কিডনি রোগের উপসর্গ

তাহলে জেনে নেয়া দরকার কিডনি রোগের প্রাথমিক উপসর্গগুলো কি কি? ছোট বাচ্চাদের বেলায় চোখের চারপাশে ফুলে যাওয়া। দৈনিক প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া বা লাল হওয়া, পা ও পেট ফুলে যাওয়া ও শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হওয়া ইত্যাদি কিডনি রোগের লক্ষণ। বড়দের বেলায় এসব লক্ষণসমূহ ছাড়াও রক্তশূন্যতা, উচ্চরক্তচাপ, বমিভাব, বমি, হেঁচকি ওঠা ত্বকের রং কালো হয়ে যাওয়া, ত্বক চুলকানো, রাতে তিন চার বার উঠে প্রসাব করা এবং পেটের নিম্নভাগের দুপাশে ব্যথা হওয়া, ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি হতে পারে ।

কিডনি রোগের কারণ ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা

ছোট বাচ্চাদের বেলায় ডায়রিয়া, পানিশূন্যতা, বারবার বমি হওয়া ও ঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা না করা এবং স্কাবিস বা চুলকানি, টনসিলাইটিস ইত্যাদি থেকে নেফ্রাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এসব ক্ষেত্রে শিশুদের সঠিক চিকিৎসা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। বড়দের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, নেফ্রাইটিস, কিডনিতে পাথর হওয়া, মূত্রনালী প্রদাহ এগুলো থেকে কিডনি বিকল হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের যেহেতু কিডনি বিকল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে তাই তাদেরকে অত্যন্ত সর্তকতার সাথে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীকে সুষম খাবার খেতে হবে ও নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে এবং তার সাথে প্রয়াজনমতো ওষুধ সেবন ও তাতেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না হলে ইনসুলিন নিতে হবে।

উচ্চরক্তচাপের রোগীদেরকে নিয়মিত রক্তচাপের ওষুধ খেতে হবে। লবণ কম খেতে হবে এবং অন্যান্য নিয়ম মেনে চলতে হবে। উচ্চরক্তচাপের রোগীদের একথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, কিডনি বিকল হওয়া প্রতিরোধের জন্য তাদেরকে নিয়মিত চিকিৎসকের নির্দেশমতো ওষুধ খেয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে ওষুধ সেবন বন্ধ করা যাবে না।

মূত্রনালীর প্রদাহ নারীদের সাধারণত বেশি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকাও প্রয়োজন এবং সে সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তার চিকিৎসা করতে হবে। কিডনিতে পাথর হলে তলপেটের দু পাশে বা কুচকিতে তীব্র ব্যাথা অনুভব হতে পারে। নানা কারণে কিডনিতে পাথর হতে পারে। যেমন—অতিরিক্ত পরিমাণে দুধ খাওয়া, কম পানি খাওয়া, টক জাতীয় ফল ও খাবার, যেমন— আমলকি, টমেটো, পালং শাক বেশি পরিমাণে খাওয়া ইত্যাদি । একদম দুধ না খাওয়া কিডনিতে পাথর হতে সাহায্য করে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুই গ্লাস পানি খাওয়া প্রয়োজন এবং মাঝরাতে প্রস্রাব করার পর দুইগ্লাস পানি খাওয়া উচিৎ। কারণ মাঝ রাতে কিডনির পাথরগুলো তৈরি হয়। তাই এই নিয়মে পানি খেলে ভালো। অনেক রোগী যে কোনো ধরনের ব্যথায় হুট করে ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে ফেলেন। ব্যথানাশক ওষুধ থেকেও কিডনি বিকল হতে পারে। সুতরাং ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

নিরাময় থেকে রোগ প্রতিরোধ করা সহজ ও কম ব্যয়বহুল। তাই কিডনি রোগ প্রতিরোধের জন্য সচেষ্ট হতে হবে। কিডনি বিকল হলে যদিও চিকিৎসা করা সম্ভব, কিন্তু তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও রোগীর জন্য কষ্টসাধ্য। প্রাথমিক লক্ষণসমূহ সম্পর্কে সচেতনতা, সঠিক খাদ্যাভাস, উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে আমরা কিডনি রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগ ধরা পড়লে ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। এক্ষেত্রে অবহেলা করা ঠিক না। দেশের বাইরে কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। প্রতিবছর রোগীরা বাংলাদেশে থেকে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে যেমন— ব্যাংককে কিডনি রোগের চিকিৎসার জন্য যান। বাংলাদেশে স্বল্পব্যয়ে কিডনি রোগের সকল প্রকার আধুনিক চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে। তাই প্রয়োজনে বাংলাদেশেও চিকিৎসা নেয়া সম্ভব। আমাদের মতো গরিব দেশে কিডনি বিকল যাতে না হয় সে চেষ্টা করাই কাম্য ।

 

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color