বিনা পারিশ্রমিকে তাবলীগ বা দাওয়াতের কাজ করা - Tabliger kaj lora
01:06:12 12/04/2023
বিনা পারিশ্রমিকে তাবলীগ বা দাওয়াতের কাজ করা : আল্লাহ তাআলা কুরআনে নবীরই ভাষায় তাঁদের দাওয়াতের পদ্ধতি ব্যক্ত করে বলেন,
وَمَا اسْتَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ الأَ عَلَى رَبِّ الْعَلَمِينَ
অর্থাৎ আমি তোমাদের কাছে এর কোন পারিশ্রমিক চাই নি, বরং চাইলে একমাত্র বিশ্ব জগতের রবের কাছেই চাই। তা বেতন/ হাদিয়া/ চাঁদা/ ভাড়া/ বখশিশ ইত্যাদি যে নামেই হোক না কেন ?
(খ) আখেরাতমুখী দাওয়াত দেয়া : সমস্ত নবীগণই আখেরাতমুখী দওয়াত দিতেন । জাগতিক কোন ব্যক্তি বা স্বার্থের দিকে দাওয়াত দেননি
إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ آمِيْنَ - فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ - الشعراء
অর্থ : অবশ্যই আমি তোমাদর বিশ্বস্ত রাসূল, সুতরাং, আল্লহকে ভয় কর ও আমার আনুগত্য কর। আর সীমা লঙ্ঘনকারীদের আদেশ মেনো না। এ আয়াত আখেরাত মুখী দাওয়াতেরই অনন্য নজীর ।
(গ) উপকৃত হয়ে দাওয়াত দেয়া : তাঁরা মানুষের দ্বারে দ্বারে, হাটে-বাজারে, গোত্রে গোত্রে, দেশে-বিদেশে স্বয়ং হাজির হয়ে দাওয়াতও তাবলীগের কাজ করেছেন ।
(ঘ) হিজরত করা : প্রায় সকল নবীই তাবলীগ করার জন্য ঘর-বাড়ী, স্ত্রী-সন্তান ও দেশ ত্যাগ করেছেন-
১. হযরত আদম (আ.) সিংহল থেকে মক্কা হিজরত করেন ।
২. হযরত ইব্রাহিম (আ) তাবলীগের উদ্দেশ্যেই ব্যাবেল থেকে মিশর ও ফিলিস্তি ন হিজরত করেন ।
৩. হযরত নূহ (আ) হেজাজ থেকে ইরাক, মিশর, জর্দান ও সাদ্দুম এলাকায় তাবলীগের উদ্দেশ্যেই হিজরত করেন ।
৪. হযরত ইউসূস (আ.) সিরিয়া থেকে তাইগ্রীস নদের তীরবর্তী স্থান 'নিনওয়া'
সফর করেন।
৫. হযরত মুসা (আ.) মিশর থেকে মাদইয়ান, সিরিয়া, তুর পাহাড়, পারস্য, রোম ও আন্দালুস হিরজত করেন ।
৬. নবী ইউশা (আ.) সীনার ‘তীহ' থেকে ফিলিস্তিন, আন্দালুস, আইকা ও আফ্রিকা সফর করেন।
৭. হযরত দাউদ (আ) সীনার তীহ থেকে ফিলিস্তিন সফর করেন ।
৮. হযরত সোলাইমান (আ.) সারা পৃথিবী সফর করেন, একমাত্র তাবলীগের কাজে । ৯. হযরত ঈসা (আ.) দুনিয়া থেকে আসমান পর্যন্ত সফর করেছেন ।
১০. শেষতম ও শ্রেষ্ঠতম নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মক্কা থেকে মদীনা শরীফ, আর সাহাবায়ে কিরাম সারা দুনিয়ার সকল মহাদেশেই হিজরত করেছিলেন একমাত্র দাওয়াতও তাবলীগের উদ্দেশ্যেই ।
প্রমাণিত হচ্ছে যে, প্রথম নবী হযরত আদম (আ.) থেকে শেষতম নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) পর্যন্ত প্রায় সকল নবীই দ্বীনের জন্যে হিজরত কেেছন এটা নবুয়াতী কার্যকমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ।
নবুয়াতী কার্যক্রমের ৪টি বৈশিষ্ট বিশেষ করে ১ ও ২ নং মৌলিক বৈশিষ্ট্যদ্বয়ও তাবলীগ জামাতের মধ্যে নিহিত আছে।
এতএব, প্রমাণিত হচ্ছে যে, সমগ্র বিশ্বে প্রচলিত তাবলীগ মূলতঃ নবুয়াতী তাবলীগেরই অনুসারী।
এছাড়াও সাধারণভাবে নিরীক্ষিত, পরক্ষিত ও প্রমাণিত হচ্ছে যে, নবুয়াতী তাবলীগের সাথে প্রচলিত তাবলীগের যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে । যেমন- তাবলীগ জামাতের গঠন ও প্রেরণ-পদ্ধতি, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিধি, দাওয়াতের ক্ষেত্র ও পারিধি । দাওয়াত দেয়ার পদ্ধতি, আকৃতি ও প্রকৃতি' অবিকল নয়, তবে অনুরূপ নিশ্চয়। বদনিয়্যত নয়, তবে রূহানিয়াতের হ্রাস অস্বাভবিক নয় । স্বয়ং আল্লাহ তাআলার রাস্তায় বেরিয়ে যাবে দ্বীন শিখবার জন্যে। শিখে ফিরে এলে এলাকাবাসীকে শিখাতে থাকবে, আর এক জামাত বের হয়ে যাবে । এভাবে এক জামাত যাবে আর এক জামাত আসবে। তাহলেই বাচা যাবে, নচেৎ বাঁচারও উপায় নেই। এ কথাটিই মহান রাব্বুল আলামীন স্বীয় কালারে পাকে ইরশাদ করেন- আল্লাহ তা'আলার নিম্নের বাণীরই যথার্থ ফলাফল হল বর্তমানের তাবলীগ জামাত ।
فَلَوْلا نَفَرٌ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ لِيَتَفَقَهُوا فِي الدِّينِ وَالْيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا
رجَعُوْا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يُنْذِرُونَ.
আল্লাহর রাসূল (সা:) মাক্কী ও মাদানী যিন্দেগী এবং মক্কা বিজয়ের পরেও ইন্তে কাল পর্যন্ত এ পদ্ধতি পালন করে গেছেন আর প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার অনুসরণ করে আসছে ।
অতএব, বর্তমানে প্রচলিত তাবলীগ জামাত সেই নবুয়াতী তাবলীগেরই অন্তর্ভুক্ত এতে কোনও বিন্দু পরিমাণও সন্দেহ থাকতে পারে না ।