তালিম কাকে বলে? তালিম অর্থ কি?
06:11:11 06/16/2024
তালিম কাকে বলে? তালিম অর্থ কি? তালীমঃ তালীম মসজিদে নববীর বিশেষ একটি আমল।
সকাল-বিকাল মিলে মোট চার ঘন্টা তালীম হবে, তালীমের অংশ তিনটি
১. কিতাবী তালীম, ২. সূরা-কেরাত সহীহ্ করার মশ্ক,৩. ছয় নাম্বার মুযাকারা।
তালীমের উদ্দেশ্যঃ-
ফাযায়েলে আমলের বর্ণনা দ্বারা দিলে আমলের এক্বীন পয়দা করা,অর্থ্যাৎ আল্লাহ তায়ালা যে আমলের সহিত যে ওয়াদা করেছেন তা অবশ্যই দিবেন একথার এক্বীন করা, বা ফাযায়েলে আমলের বর্ণনা দ্বারা দিলে আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা ও অয়ীদের এক্বীন পয়দা করা, বা ফাযায়েলে আমলের বর্ণনা দ্বারা দিলে আমলের শওক্ব পয়দা করা।
তালীমে বসার আদবঃ
আদবের সহিত বসা, অজুর সহিত বসা,অর্ধ চন্দ্র আকারে বসা,খুশ্বু লাগিয়ে বসা,মিলে মিলে বসা, জরুরত থেকে ফারেগ হয়ে বসা,বা জরুরত দাবিয়ে বসা,যে তালীম করে তার সামনে বসা পিছনে না বসা আগ্রহের সহিত বসা,হিদায়েতের নিয়তে বসা।
তালীম শুনার আদবঃ
দিলের কানে শুনা অর্থ্যাৎ খুব মনযোগ দিয়ে শুনা, আমলের নিয়তে শুনা, অপরের নিকট পৌছানোর নিয়তে শুনা,যে তালীম করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে শুনা।
এফিলিয়েট মার্কেটিং করে উপার্জন
তালীম শুনার হক্ব
আল্লাহর নাম শুনলে সুব্হানাহু ওয়াতায়ালা বলা বা জাল্লা শানুহু বলা। আমাদের নবীজীর নাম শুনলে দুরূদ শরীফ পড়া, যেমনঃ- সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলা। অন্যান্য নবী বা ফেরেশতাদের নাম শুনলে আলাইহিস্ সালাম বলা। একজন পুরুষ সাহাবীর নাম শুনলে রাযিয়াল্লহু তায়ালা আনহু বলা, একজন মহিলা সাহাবীর নাম শুনলে রাযিয়াল্লহু তায়ালা আনহা বলা, দুইজন পুরুষ বা মহিলা সাহাবীর নাম শুনলে রাযিয়াল্লহু তায়ালা আনহুমা বলা, এবং দুয়ের অধিক হলে রাযিয়াল্লহু তায়ালা আনহুম বলা। মৃত বুযুর্গদের নাম শুনলে রহিমাহুমুল্লহ বা রহমাতুল্লহি আলাইহি বলা বা বার্রদাল্লহু মারকাদাহু বলা, ইত্যাদি।
আর জীবিত বুযুর্গদের নাম শুনলে দামাত বারকাতুহুম , হাফিজাহুল্লহু, উফিয়া আনহু বা বারকাল্লহু ফি হায়াতিহি বলা। আশ্চর্য্য জনক কোন কিছু শুনলে সুব্হানাল্লহ বলা, গুরুত্ব পূর্ণ বা বড় কোন বিষয় শুনলে আল্লাহু আকবার বলা, খারাপ কোন কিছু শুনলে নাউযুবিল্লাহ বলা, কোন সু-সংবাদ শুনলে আলহামদুলিল্লাহ বলা এবং কোন দুঃখ সংবাদ শুনলে ইন্নালিল্লাহি ও ইনাœইলাইহি রাযিউন বলা।
তালীমের লাভঃ
আমলের আগ্রহ পয়দা হয়, কোরআন ও হাদীসের নূর হাসিল হয়, তালীমের মজলিসে রহমত নাযিল হয়, অজ্ঞতা দুর হয়, বদদ্বীনি দুর হয়, যে ঘরে তালীম হয় সে ঘরের সন্তান-সন্ততি নেককার হয়,জাহেলের ঘরে আলেম পয়দা হয় এবং কোরআন ও হাদীসের জ্ঞান হাসিল হয়।
তালীমের অংশ তিনটি। যার বিস্তারিত এই,
১. কিতাবী তালীমঃ- অর্থ্যাৎ ফাযায়েলে আমল, ফাযায়েলে ছাদাকাত ও ফাযায়েলে হজ্জ ইত্যাদি পড়বে।
সকাল-বিকাল যখনই তালীম করবে তখনই সময়কে তিন ভাগে ভাগ করে নিবে। ১ম. ভাগ কিতাবী তালীম, ২য়. ভাগ সুরা-কেরাত মশ্ক, ও ৩য়. ভাগ ছয় নাম্বার মুযাকারা। কিতাবী তালীম শুরু করার পূর্বে তালীমের উদ্দেশ্য, বসার আদব, শুনার আদব, শুনার হক ও তালীমের লাভ ইত্যাদি আলোচনা করবে। কিতাবের প্রত্যেকটি অধ্যায় থেকে যেমনঃ ফাযায়েলে তাবলীগ,ফাযায়েলে কুরআন, ফাযায়েলে জিকির ইত্যাদি পড়বে।
কুরআন কারীমের আয়াত ও হাদীস শরীফের মূল অর্থ একাধিক বার পড়বে এবং ফায়দা ইত্যাদি একবার পড়বে। তালীমের শুরুতে ফাযায়েলে কুরআন থেকে কিছু পড়ে কুরআনের মশ্ক করবে। অর্থ্যাৎ সুরা-কেরাত সহীহ করার মশ্ক করবে। অতপর তালীম পুরা করে অবশেষে ছয় নাম্বার মুযাকারা করবে।
উলামায়েকেরাম ব্যতীত অন্য কেউ কুরআন-হাদীসের মূল আরবী ইবারত পড়বে না, কারণ ভূল হতে পারে বরং শুধু অর্থ পড়বে। সুন্দর মত ধীরে ধীরে এহ্তেমামের সহিত তালীম করবে। এবং শ্রতাদের প্রতি খেয়াল রেখে পড়বে। উলামায়েকেরাম ব্যতিত সাধারণ সাথীরা নিজের থেকে বেশী ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবে না। সকালে ফাযায়েলে আমল, বিকালে ফাযায়েলে সাদাকাত, হজ্বের সময় ফাযায়েলে হজ্ব, ইশার পর হায়াতুস সাহাবা ইত্যাদি পড়বে, বা কাকরাইল থেকে যখন যে হেদায়েত হয় সে অনুযায়ী পড়বে।
২. সুরা-কেরাত সহীহ করার মশ্কঃ
কুরআন শরীফ আল্লাহ তায়ালার কালাম, আমাদের জন্য হেদায়েতের প্রদ¦ীপ। নামায, যা আল্লাহ তায়ালার মহান হুকুম তা সহীহ হওয়ার জন্য সুরা-কেরাত সহীহ ভাবে পড়া অন্যতম একটি শর্ত, যা না হলে নামাযই সহীহ হয় না
সুরা-কেরাত মশ্ক করার নিয়মঃ
প্রথম দিন জামাতের সকল সাথী এক হালকায় বসে সুরা-কেরাত শুনাবে জামাতের মধ্যে যে কয় জন পূর্ণ সহীহ করে কুরআন পড়তে পারে পরবর্তিতে সে কয়টি হালকায় মশ্ক করবে। এক এক শব্দ করে মশ্ক করবে, এক আয়াত সহীহ না হওয়া পর্যন্ত সামনের আয়াতে যাবে না। সুরা ফাতেহা থেকে মশ্ক শুরু করে কমছেকম আরো চারটি সুরা সহীহ করার চেষ্টা করবে। এবং তাশাহহুদ ইত্যাদিও সহীহ করার প্রতি মনযোগ দিবে।
এমন যেন না হয় যে সফরের পূর্বে যেভাবে অশুদ্ধ পড়া হত এখনও প্রতিদিন সব কয়টি সুরা সে ভাবেই অশুদ্ধ তেলওয়াত করা হয়। সুরা-কেরাত এজ্তেমায়ী ভাবে মশ্ক করবে আর তাশাহহুদ, দরূদ শরীফ, দোয়া ইত্যাদি ইন্ফেরাদী সময়ে শিখে নিবে।
৩. ছয় নাম্বার মুযাকারাঃ ছয় নাম্বার: হযরত সাহাবায়েকেরাম রাযিআল্লাহু তায়ালা আনহুম আজমাইন হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহবতে থেকে অনেক গুণে গুণান্যিত হয়েছিলেন, তম্যধ্য থেকে কয়েকটি গুণের উপর মেহনত করে আমল করে চলতে কারলে দ্বীনের উপর চলা অতি সহজ, গুণ কয়টি হলো এই, কালেমা, নামায, ইল্ম ও জিকির , ইকরামুল মুসলিমীন, তাসহীহে নিয়ত, দাওয়াত ও তাবলীগ।
যখন বয়ানে বা মজমাতে ছয় নাম্বার বলবে তখন ছয় সিফাত এক সাথে গদ আকারে বলবে না বরং এক একটির ব্যাখ্যা করতে করতে সামনের দিকে যাবে, আগে ছয় সিফাতের নাম একসাথে বলেনিবে না।
কালেমাঃ
কালেমার মধ্যে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়।
১. কালেমা শরীফ সহীহ-শুদ্ধ করে পাঠ করা। যেমন:
لا اله الا الله محمد رسول الله
২. কালেমার অর্থ সহীহ-শুদ্ধ করে বলা। যেমন:
আল্লাহ তায়ালা ব্যতিত আর কোন মাবূদ নেয়, হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালার রসূল।
৩.কালিমার হাক্বীক্বতঃ
আমরা দু চোখে যা কিছু দেখি বা নাদেখি, আল্লাহ ছাড়া সব মাখলূক,মাখলূক কিছ্-ই করতে পারে না আল্লাহ তায়ালার হুকুম ছাড়া আর আল্লাহ তায়ালা সব কিছুই করিতে পারেন মাখলূক ছাড়া। একমাত্র হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরীকায় দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি ও কামিয়াবী। অন্য কোন তরীকায় শান্তি ও কামিয়াবী নেই।
৪. কালিমার লাভঃ
১.আল্লাহ তায়ালা এরশাদ ফরমান,
الم تر كيف ضرب الله مثلا كلمة طيبة كشجرة طيبة اصلها ثابت و فرعها فى السماءتؤتى
اكلها كل حين باذن ربها و يضرب الله الامثال للناس لعلهم يتذكرون-
অর্থঃ- আপনি কি জানেন না যে, আল্লাহ তায়ালা কালেমায়ে ত্বয়্যিবার কেমন সুন্দর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন? উহা একটি পবিত্র বৃক্ষের সাদৃশ্য বা মত, যার শিখড় মাটিতে গেড়ে আছে আর উহার শাখা-প্রশাখা আসমানে, এই বৃক্ষটি আল্লাহর হুকুমে প্রত্যেক মৌসুমে ফল দেয় (অথ্যাৎ খুব ফল ধরে) আল্লাহ তায়ালা এই সকল দৃষ্টান্ত এজন্য বর্ণনা করেন যাতে মানুষ খুব ভালরূপে বুঝতে পারে। (সুরা ইব্রাহীমঃ ২৪-২৫)
২.নবীজী (স.) এরশাদ করেন,
قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من قال لا اله الا الله دخل الجنة او وجبت له الجنة-
অর্থঃ- হুযুর (স.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে,
সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে বা তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
৩. হযরত আনাস (রা.) হুযুর (স.) হতে নকল করেন, যে ব্যক্তি দিনে বা রাত্রে যে কোন সময় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ে, তার আমলনামা হতে গুনাহ সমূহ ধৌত হয়ে যায়।
৪.এক হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি প্রতিদিন একশত বার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়িবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন অবস্থায় উঠাবেন যে, তার চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জল হবে।
৫.قال رسول الله صلى الله عليه و سلم مفاتيح الجنة شهادة ان لا اله الا الله –
অর্থঃ- জান্নাতের চাবি সমূহ হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর সাক্ষ্য প্রদান করা (মিশকাত:-মুসনাদে আহমাদ)
৬.قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ما من عبد قال لا اله الا الله فى ساعة من ليل او نهارالا طمست مافى الصحيفة من السيأت حتى تسكن الا مثله
অর্থঃ-যে কোন ব্যক্তি যে কোন সময় দিনে বা রাত্রে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ে তার আমলনামা হতে গোনাহ সমূহ মিটিয়ে যায় এবং উহার স্থলে নেকীসমূহ লিখিয়ে দেওয়া হয়।
৭. قال صلى الله عليه و سلم ان لله تبارك و تعالى عمودا من نور بين يدى العرش فاذا قال العبد
لا اله الا الله اهتز ذلك العمود فيقول الله تبارك و تعالى اسكن فيقول كيف اسكن و لم يغفر لقائلها
فيقول انى قد غفرت له فيسكن عند ذلك
অর্থঃ-হুজুর (স.)ইরশাদ করেন ,আরোশের সামনে একটি নূরের খুঁটি আছে, যখন কোন ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে তখন ঐ খুঁটি দুলিতে থাকে, তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন থেমে যাও, সে বলে আমি কিভাবে থামবো অথচ উহার পাঠকারীকে এখনো ক্ষমা করা হইনি, তখন আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আমি তাকে মাফ করেদিলাম, তখন সে থেমে যায়।
৮.قال صلى الله عليه و سلم افضل الذكر لا اله الا الله و افضل الدعاء الحمد لله-
অর্থঃ- হুযুর (স.) এরশাদ করেছেন, উত্তম জিকির হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লহ, এবং উত্তম দোয়া হলো আলহামদুলিল্লাহ বলা। (মিশকাত, তিরমীযী, ইবনে মাযাহ)
৯.সহীহ হাদিসে বর্ণিত আছে, যতদিন পর্যন্ত দুনিয়ার বুকে একজনও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলনে ওয়ালা থাকিবে ততদিন পর্যন্ত কিয়ামত হবে না।
১০.قال صلى الله عليه و سلم قال موسى عليه السلام يا رب علمنى شيئا اذكرك به و ادعوك به
قال قل لا اله الا الله قال يا رب كل عبادك يقول هذا قال قل لا اله الا الله قال انما اريد شيئا تخصنى به قال يا موسى لو ان السموت السبع و الارضين السبع فى كفة و لا اله الا الله فى كفة مالت بهم لا اله الا الله-
অর্থঃ- হুযুর (স.) এরশাদ করেন, হযরত মূসা (আ.) বললেন হে আমার রব আমাকে এমন কোন বাক্য শিখিয়ে দিন যার দ্বারা আপনার জিকির করবো এবং আপনাকে ডাকবো, আল্লাহ তায়ালা বললেন, তুমি বলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ হযরত মূসা (আ.) বললেন হে আমার রব আপনার সকল বান্দাই তো এই কালেমা পাঠ করে, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করলেন তুমি বলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, হযরত মূসা (আ.) বললেন আমি এমন জিনিস চাচ্ছি যা আপনি আমাকেই দিবেন, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করলেন হে মূসা যদি সাতত্ববক আসমান ও সাতত্ববক জমিন এক পাল্লায় রাখা হয় আর অপর পাল্লায় এই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর পাল্লায় ঝুকে যাবে।
কালেমা হাসিল করার তরীকা
এই কালেমার লাভ জেনে আমি বেশী বেশী কালেমা পাঠ করবো, অপর ভাইকে দাওয়াত দিবো এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করবো যে, আল্লাহ এই কালেমার হাক্বীক্বত তুমি আমাকে দান করো এবং সমস্ত উম্মতে মুহম্মাদীকে দান করো।
দলীলঃ- ১.
قال رسول الله صلى الله عليه و سلم جددوا ايمانكم قيل يا رسول الله و كيف نجدد ايماننا قال
اكثروا من قول لا اله الا الله-
অর্থঃ- হুযুর (স.) এরশাদ করেন, তোমরা তোমদের ঈমানকে তাজা করতে থাক, কেহ জিজ্ঞাসা করলো, ইয়া রসূলুল্লাহ আমরা আমাদের ঈমানকে কিভাবে তাজা করবো? নবীজী (স.) বললেন, লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ বেশী বেশী বলতে থাকো।
২. قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ان الايمان ليخلق فى جوف احدكم كما يخلق الثوب
الخرق فاسئلوا الله ان يجدد الايمان فى قلوبكم-
অর্থঃ- হুযুর (স.) এরশাদ করেন তোমাদের অন্তরে ঈমান এমনিভাবে পুরানা (ও দুর্বল) হয়ে যায়, যেমন কাপড় পুরানা হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করো যেন তিঁনি তোমাদের অন্তরে ঈমান তাজা করেদেন।
২. নামাযঃ-
আমরা যখন কালেমা পড়লাম তখন আল্লাহ তায়ালার সমস্ত হুকুম মানা আমাদের উপর জরুরী হয়ে গেলো। আর কালেমার পর আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে বড় হুকুম হলো নামায নামায আল্লাহ তায়ালার খাজানা থেকে নেওয়ার একটি বড় মাধ্যম।
হুযুর (স.) যেভাবে নামায পড়েছেন এবং হযরত সাহাবায়েকেরামকে যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, সেভাবে নামায পড়ার যোগ্যতা অর্জন করার চেষ্টা করা।
নামাযের লাভঃ
১. আল্লাহ তায়ালার এরশাদ,
ان الصلوة تنهى عن الفحشاء و المنكر-
অর্থঃ- নিশ্চই নামায অশ্লীল এবং অশোভনীয় কাজ থেকে বিরত রাখে। সূরা- আনকাবূত, ৪০
২. অন্য আয়াতে এরশাদ করেন,
اقم الصلوة طرفى النهار و زلفا من الليل ان الحسنات يذهبن السيئات ذلك ذكرى للذاكرين-
অর্থঃ- দিনের উভয় অংশে এবং রাতের একাংশে নামায কায়েম করুন। নিশ্চই নেক আমলসমূহ গুনাহসমূহকে দূর করে দেয়। ইহা নছীহত কবুল কারীদের জন্য নছীহত। (সূরা-হুদ, ১১৪)
৩. হুযুর (স.) এরশাদ করেন,
قال رسول الله صلى الله عليه و سلم قال الله تبارك و تعالى انى افترضت على امتك خمس
صلوات و عهدت عندى عهدا انه من حافظ عليهن لوقتهن ادخلته الجنة فى عهدى و من
لم يحافظ عليهن فلا عهدله عندى-
অর্থঃ- হুযুর (স.) এরশাদ করেন আল্লাহ তায়ালা ফরমান আমি আপনার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করেছি এবং আমি নিজের উপর এই প্রতিজ্ঞা করেছি যে, যেব্যক্তি এই পাঁচ ওয়াক্ত নামায সময় মত গুরুত্বসহকারে আদায় করবে আমি তাকে নিজ জিম্মায় জান্নাতে প্রবেশ করাবো। আর যেব্যক্তি গুরুত্বসহকারে এই নামাযসমূহ আদায় করবেনা তার ব্যাপারে আমার কোন জিম্মাদারী নেই। (আবু দাউদ)
৪. قال بعضهم ورد فى الحديث ان من حافظ على الصوة اكرمه الله تعالى بخمس خصال يرفع عنه
ضيق العيش و عذاب القبر و يعطيه الله كتابه بيمينه و يمر على الصراط كالبرق و يدخل الجنة
بغير حساب- او كما قال صلى الله عليه و سلم-
অর্থঃ-এক হাদিসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি নামাযের এহ্তেমাম করে আল্লাহ তায়ালা তাকে পাঁচ প্রকারে সম্মানিত করবেন।
(১) তার উপর থেকে রুজি-রোজগারের অভাব দূর করে দেওয়া হবে।
(২) তার কবরের আযাব হটায়ে দেওয়া হবে।
(৩) কিয়ামতের দিন তার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে।
(৪) সে ব্যক্তি পুলসিরাতের উপর দিয়ে বিদ্যুতের ন্যায় পার হয়ে যাবে।
(৫) বিনা হিসেবে বেহেশতে প্রবেশ করবে ।
৫.قال رسول الله صلى الله عليه وسلم مفتاح الجنة الصلوة-
অর্থঃ-নামায বেহেশ্তের চাবি।
৬. قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من حافظ عليها كانت له نورا و برهانا و نجاة يوم القيامة-
অর্থঃ- হুজুর (স.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নামাযের এহ্তেমাম করবে নামায তার জন্য কিয়ামতের দিন নূর হবে, এবং হিসাবের সময় দলীল হবে, এবং নাজাতের উপায় হবে।
নামায হাসিল করার তলীকাঃ
ফরজ নামাযগুলো আমরা মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করবো, সুন্নাত ও ওয়াজিবের পাবন্দি করবো, নফল নামায বেশী-বেশী পড়বো এবং উমরি কাযাগুলো খুজে-খুজে আদায় করবে। এবং নামাযের লাভ জেনে নিজে বেশী-বেশী নামায আদায় করবো এবং অন্যকে দাওয়াত দিবো এবং আল্লাহর নিকট দোয়া করবো, হে আল্লাহ যেভাবে নামায পড়লে তুমি রাযি ও খুশি হও সেভাবে নামায পড়ার তওফীক তুমি আমাকে দান করো আবং সমস্ত উম্মতে মুহাম্মাদীকে দান করো।
৩. ইলম ও জিকিরঃ-
যখন আমরা নামায পড়বো তখন আমাদের নামায সহীহ হওয়ার জন্য ইলম প্রয়োজন।
ইলমের উদ্দেশ্যঃ
আল্লাহ তায়ালার কখন কোন আদেশ ও নিষেধ তা জেনে হুযুরে পাক (স.) এর তরীকায় আমল করা।
ইলমের লাভঃ
১.আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,
يرفع الله الذين امنوا منكم و الذين اوتوا العلم درجت-
অর্থঃ-আল্লাহ তায়ালা তোমাদের মধ্যে ঈমানদারদের এবং যাদের দ্বীনের জ্ঞান দান করা হয়েছে, তাদের উচ্চ মর্যাদা দান করবেন। সূরা, মুজদালা- ১১
২.আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,
قل هل يستوى الذين يعلمون و الذين لا يعلمون-
অর্থঃ- (হে নবী) আপনি বলে দিন যাহারা জ্ঞানী এবং যাহারা মূর্খ তারা কি সমান হতে পারে? সুরা, যুমার-৭৯
৪. নবী করীম (স.) এরশাদ ফরমানঃ-
من سلك طريقا يلتمس فيه علما سهل الله له به طيقا الى الجنة-
অর্থঃ-যে ব্যক্তি ইলমে দ্বীন শিক্ষা করার জন্য কোন রাস্তা অবলম্বন করে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য এর বিনিময়ে জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন। (আবু দাউদ)
৪. নবীজী আরো এরশাদ ফরমান,
و ان الملئكة لتضع اجنحتها رضا لطالب العلم-
অর্থঃ- এবং ফেরেশতাগণ ইলমে দ্বীন শিক্ষাকারীদের সন্তুষ্টির জন্য আপন পাখা বা পর বিছিয়ে দেন। (আবু দাউদ)
৫.আরো এরশাদ ফরমান,
و ان العالم ليستغفر له من فى السموت و الارض و الحيتان فى جوف الماء-
অর্থঃ-এবং আসমান জমিনের সকল মাখলূক এমনকি পানির মাছ পর্যন্ত আলেমের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করে। আবু দাউদ-
৬. হুযুর (স.) আরো বলেন.
عن ابى امامة الباهلى رض قال ذكر لرسول الله صلى الله عليه و سلم رجلان احدهما عابد
و الاخر عالم فقال ص فضل العالم على العابد كفضلى على ادناكم ثم قال ص ان الله و ملئكته
و اهل السموت و الارضين حتى النملة فى جحرها و حتى الحوت ليصلون على معلم الناس
الخير-
অর্থঃ- হযরত আবু উমামা বাহেলী রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ
(স.) এর সম্মুখে দুই ব্যক্তির আলোচনা করা হলো, তন্মধ্যে একজন আবেদ ও অপরজন আলেম ছিল, রসূলুল্লাহ (স.) এরশাদ করলেন, আলেমেন মর্যাদা আবেদের উপর এমন, যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের মধ্য হতে একজন সাধারন ব্যক্তির উপর। অতপর নবী করীম (স.) এরশাদ করলেন, যারা লোকদেরকে ভাল কথা শিক্ষাদেয় তাদের উপর আল্লাহ তায়ালা রহমত নাযিল করেন,তার জন্য ফেরেশতাগণ, আসমান-জমিনের সমস্ত মাখলূক এমনকি পিঁপড়া আপন গর্তে এবং মাছ ( পানির ভিতর আপন আপন প্রদ্ধতিতে) রহমতের দোয়া করে। – তিরমিযী
ইলম হাসিল করার তরীকা
এই এলম আমরা কয়েক ভাবে শিক্ষা করবো,ফাযায়েলে ইলম তালীমের হালকায় বসে শিক্ষা করবো, আর মাসলা-মাসায়েলের ইলম উলামায়েকেরামের নিকট জিজ্ঞাসা করে শিক্ষা করবো।
এবং এই ইলমের লাভ জেনে আমি বেশী-বেশী ইলম শিক্ষা করবো এবং অপর ভাইকে দাওয়াত দিবো এবং আল্লাহর নিকট দোয়া করবো যে, হে আল্লাহ যেভাবে ইলম শিক্ষা করলে তুমি রাযি-খুশি হও সেভাবে বেশী-বেশী ইলম শিক্ষা করার তওফীক আমাকে দান করো এবং সমস্ত উম্মতে মুহাম্মাদিকে দান করো।
জিকির:
জিকিরের হাক্বীক্বতঃ হার-হালতে বা সর্বাবস্থায় আল্লাহ তায়ালার ধ্যান ও খেয়াল অন্তরে পয়দা করা।
জিকিরের লাভঃ
(১) আল্লাহ তায়ালার এরশাদ,
الا بذكر الله تطمئن القلوب-
অর্থঃ-খুব ভাল করে বুঝে লও যে, আল্লাহ তায়ালার জিকির দ্বারা অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়। সুরা রাদ-২৮
২. হুযুর (স.) এরশাদ করেন,
عن ابى موسى رض قال قال النبى صلى الله عليه و سلم مثل الذى يذكر ربه و الذى لا يذكر
ربه مثل الحى و الميت-
অর্থঃ-হযরত আবু মুসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন ,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার জিকির করে আর যে ব্যক্তি করে না এই দুই জনের উদাহরণ জীবিত ও মৃতের মত। যে জিকির করে সে জীবিত আর যে জিকির করেনা সে মৃত। (বুখারী,মুসলিম)।
৩. নবীজী (স.) আরো এরশাদ করেন,
عن معاذ بن جبل رض قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ما عمل ادمى عملا انجى له من
عذاب القبر من ذكر الله-
অর্থঃ-হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুূল্লাহ (স.) এরশাদ ফরমান, আল্লাহর জিকির হতে বড় মানুষের আর কোন আমল কবর আজাব হতে অধিক নাজাত দানকারী নেই। (দুররে মানসুর, মোসনাদে আহমাদ)
৪. عن انس رض ان رسول الله صلى الله عليه و سلم قال اذا مررتم برياض الجنة فارتعوا قال
و ما رياض الجنة؟ قال حلق الذكر-
অর্থঃ-হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ (স.)এরশাদ ফরমান, তোমরা যখন জান্নাতের বাগান সমূহের নিকট দিয়ে যাও তখন খুব বিচরণ কর। কেহ আরজ করলো ইয়া রসূলুল্লাহ (স.) জান্নাতের বাগান সমূহ কি? এরশাদ করলেন জিকিরের হালকাসমূহ। (মোসনাদে আহমাদ,তিরমিযী)
৫. নবীজী (স.) আরো ফরমান,
হযরত আবু দারদা (রা.) বলেন, যাদের জিব্বা আল্লাহর জিকির দ্বারা তরু-তাজা থাকে তারা কাল কিয়ামতের দিন হাসতে হাসতে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (ফাজায়েলে আমল,জিকির-৩০)
৬. এক হাদিসে এসেছে, এক মুহূর্ত জিকির করা সত্তর বছর ইবাদত করার চেয়ে ও উত্তম। (ফাজায়েলে আমল ,জিকির-৩৩)
৭. হুযুর (স.) এরশাদ ফরমান যদি তোমরা সব সময় জিকিরে মশগুল থাক তবে ফেরেস্তাগণ তোমাদের বিছানায় ও পথে তোমাদের সহিত মোসাফাহা করতে শুরু করবে। (ফাজায়েলে আমল-৩৪)
৮. হযরত ইবনে আব্বাস (র.) বলেন জান্নাতের আটটি দরজা আছে। তন্মধ্যে একটি দরজা শুধু জিকিরকারীদের জন্য রয়েছে (ফাজায়েলে আমল-জিকির-৩৪)
৯. অন্য হাদিসে আছে ,যে ব্যক্তি বেশী বেশী আল্লাহর জিকির করে সে মুনাফেক হতে মুক্ত। (ফাজায়েলে আমল-জিকির-৩৪)
১০. অন্য হাদিসে আছে আল্লাহ তায়ালা জিকিরকারীকে মহব্বত করেন। (ফাজায়েলে আমল জিকির-৩৪)
জিকির হাসিল করার তরীকা
জিকির আমরা কয়েক ভাবে করব, সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির লা ইলাহা ইল্লাল্লহ বলা, উত্তম জিকির কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা, জায়গা বিশেষ মাসনূন দোয়া পড়া, কোন হক্কানী পীর সাহেবের ওয়াযীফা থাকলে তা সময় মত আদায় করা। এই জিকিরের লাভ জেনে আমরা বেশী বেশী জিকির করবো এবং অপর ভাইকে দাওয়াত দিবো এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করবো যে, হে আল্লাহ এই জিকির বেশী বেশী করার তাওফিক আমাকে দাও, এবং সমস্ত উম্মতে মুহাম্মাদীকে দাও।
৪. একরামুল মুসলিমীনঃ-
একরামুল মুসলিমীনের হাক্বীক্বতঃ
হার মাখলূকের উপর এহসান করা, মুসলমান ভায়ের কী¡মত বুঝে ক্বদর করা। এই একরামুল মুসলিমীনের দ্বারা আমলের হেফাযত হয়।
একরামুল মুসলিমীনের লাভঃ
১. হুযুর (স.) এরশাদ করেন,
عن ابن عباس رض عن النبى صلى الله عليه و سلم قال من مشى فى حاجة اخيه وجه لله تعالى كان خيرا له من اعتكافه عشر سنين و من اعتكف يوما ابتغاء وجه الله جعل الله
بينه و بين النار ثلاث خنادق كل خندق ابعد ما بين الخافقين-
অর্থঃ-হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (র.) হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স.) এরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি যদি তার ভায়ের উপকার করার জন্য পায়ে হেঁটে যায় তবে তার এ কাজ দশ বছরের এতেকাফের চেয়েও উত্তম বিবেচিত হবে, আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে রাযী করার জন্য একদিন এতেকাফ করে আল্লাহ তায়ালা তার নিকট হতে দোযখ তিন খন্দক পরিমান দূরে সরিয়ে দেন। আর প্রতি খন্দক আসমান ও জমিনের দূরত্বের চেয়েও অধিক প্রসারিত। (তাবারানী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ)
২. হুযুর (স.) আরো ফরমান,
عن سالم عن ابيه رض ان النبى صلى الله عليه و سلم قال من كان فى حاجة اخيه
كان الله فى حاجته-
অর্থঃ-হযরত সালেম (রা.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (স.)এরশাদ ফরমান যদি কোন ব্যক্তি তার মুসলমান ভায়ের প্রয়োজন পূরণ করে আল্লাহ তায়ালা তার প্রয়োজন পূরণ করেন।
৩. আরো এরশাদ ফরমান,
عن ابى هريرة رض قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من وسع على مكروب كربة
فى الدنيا وسع الله عليه كربة فى الاخرة و من ستر عورة مسلم فى الدنيا ستر الله عورته
فى الاخرة و الله فى عون المرء ما كان فى عون اخيه-
অর্থঃ-হযরত সালেহ (রা.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন রসূলুল্লাহ (স.) এরশাদ করেন, কোন ব্যক্তি যদি দুনিয়াতে বিপদগ্রস্ত মানুষের বিপদ দূর করে তবে আল্লাহ তায়ালা তার আখেরাতের বিপদ দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন মানুষের দোষ গোপন করবে আল্লাহ তায়ালা আখেরাতে তার দোষ গোপন করবেন। আর মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত তার মুসলমান ভায়ের সাহায্য করবে, আল্লাহ তায়ালা ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে সাহায্য করতে থাকবেন। (মুসনাদে আহমাদ)
৪.এক হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের একটি হাজত পুরা করে, আল্লাহ তায়ালা তার তেহাত্তরটি হাজত পুরা করবেন, তন্মধ্যে সবচেয়ে হালকা বস্তুু হলো তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। (ফাজায়েলে ছাদাকাত-১০৭ )
৫.অন্য হাদিসে আছে, আল্লাহ তায়ালা তার সত্তরটি হাজত পূর্ণ করবেন উহার মধ্যে সর্ব নিম্ন হলো গুনাহ মাফ করা। (ফাজায়েলে ছাদাকাত-১১৫)
একরাম হাসিল করার তরীকা
এই একরাম আমরা কয়েক ভাবে করবো :
১.বড়দের সম্মান করবো।
২. ছোটদের স্নেহ করবো।
৩. আলেমদের তাযীম বা শ্রদ্ধা করবো।
কেননা রসূলুল্লাহ (স.) এরশাদ করেন,
عن عبادة بن الصامت رض ان رسول الله صلى الله عليه و سلم قال ليس من امتى
من لم يجل كبيرنا و يرحم صغيرنا و يعرف لعالمنا حقه-
অর্থঃ-হযরত ওয়াবাদা ইবনে সামেত (রা.) হতে বর্ণিত রসূলুল্লাহ (স.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি বড়দের সম্মান করে না, ছোটদের স্নেহ করে না আর আলেমদের হক বুঝে না সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত না। (মুসনাদে আহমাদ,তাবারানী,মাজমাউয যাওয়ায়েদ) আর সবচেয়ে বড় একরাম হলো, আল্লাহ ভুলা মানুষকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করে দেওয়া।
এই একরামের লাভ জেনে আমরা বেশী-বেশী একরাম করবো এবং অপর ভাইকে দাওয়াত দিবো এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করবো যে, হেআল্লাহ এই একরাম বেশী বেশী করার তাওফিক আমাকে দান কর এবং সমস্ত উম্মতী মুহাম্মাদীকে দান কর।
৫. তাসহীহে নিয়ত বা নিয়ত বিশুদ্ধ করাঃ
আল্লাহর দরবারে আমল কবুল হবে নিয়তের বিশুদ্ধতার দ্বারা।
তাসহীহে নিয়তের হাক্বীক্ব
আমরা যে কোন নেক আমল করবো তা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে রাযী-খুশি করার জন্যই করবো।
তাসহীহে নিয়তের গুরুত্ব
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
و ما امروا الا ليعبدوا الله مخلصين له الدين-
অর্থঃ- তাদেরকে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকেই ইবাদত করার জন্য আদেশ করা হয়েছে। সূরা বায়্যিনা,
তাসহীহে নিয়তের লাভঃ-
১. হুযুর (স.) এরশাদ করেন,
اخلص دينك يكفيك العمل القليل-
অর্থঃ-তোমরা দ্বীনকে খাঁটি কর,অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ঠ হবে। ২.হুজুরে পাক (স.) এরশাদ করেন,যে ব্যক্তি হালাল পবিত্র মাল হতে একটি খুরমা-খেজুরও (আল্লাহর জন্য) দান করে, কেননা হক তায়ালা শুধুমাত্র পবিত্র মালই কবুল করেন, তবে তিঁনি সেইরূপ ছদকাকে প্রতিপালন করে বাড়াতে থাকেন, যেমন নাকি তোমরা গরুর বাচ্চাকে প্রতিপালন করে থাক এমন কি সেই ছদকা বর্ধিত হতে হতে পাহাড় সমতুল্য হয়ে যায়।
৩. অন্য হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি একটি খেজুর আল্লাহর রাস্তায় দান করল আল্লাহ পাক উহার ছওয়াব এত বেশী বাড়িয়ে দেন যে উহা উহুদ পাহাড় সমতুল্য হয়ে যায়। (ফাযায়েলে সাদাকাত-২৩)
তাসহীহে নিয়ত হাসিল করার তরীকাঃ
এই তাসহীহে নিয়তের লাভ জেনে আমরা বেশী বেশী নিয়তকে সহীহ করবো এবং অপর ভাইকে দাওয়াত দিবো এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করবো যে, হে আল্লাহ তুমি আমাদের নিয়তকে সহীহ করে দাও এবং সমস্ত উম্মতে মুহাম্মাদীর নিয়তকে সহীহ করে দাও।
৬.দাওয়াত ও তাবলীগঃ
পূর্বে উল্লেখিত গুনাবলী আমার মধ্যে ঐ সময় আসবে যখন আমি আল্লাহর দেওয়া জান আল্লাহর দেওয়া মাল আল্লাহর দেওয়া সময় নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে জান,মাল ও সময়ের সঠিক ব্যবহার শিক্ষা করবো এবং ঐ গুনাবলীর উপর মেহনত করবো।
আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার লাভ
১. হুযুর (স.) এরশাদ ফরমান,
عن انس رض قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لغدوة فى سبيل الله او روحة
خير من الدنيا و ما فيها-
অর্থঃ-হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (স.) এরশাদ ফরমান, আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল অথবা এক বিকাল দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম। (বুখারী)
ফায়দাঃ- অর্থ্যাৎ দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তা যদি সম্পূর্নই আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা হয় তবুও আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় এক সকাল অথবা এক বিকাল অবস্থান করাই অধিক উত্তম।
(মেরকাত)
২. এক হাদীসে আছে,
عن ابى هريرة رض قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا يجتمع غبار فى سبيل الله
و دخان جهنم فى جوف عبد ابدا و لا يجمع الشح و الايمان فى قلب عبد ابدا-
অর্থঃ- হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (স.) এরশাদ ফরমান, আল্লাহর রাস্তার ধুলা-বালি এবং দোযখের ধোঁয়া কোন বান্দার পেটে কখনো একত্র হবে না। এবং কৃপণতা ও ঈমান কোন বান্দার অন্তরে একত্র হবে না। (নাসাঈ)
৩. এক হাদীসে আছে,
عن ابى هريرة رض عن النبى صلى الله عليه وسلم قال لا يجمع غبار فى سبيل الله عز و
جل ودخان جهنم فى منخرى مسلم ابدا-
অর্থঃ- হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলল্লাহ (স.) এরশাদ ফরমান, আল্লাহর রাস্তার ধুলা-বালি এবং দোযখের ধোঁয়া কোন মুসলমান বান্দার নাকের ছিদ্রে একত্র হবে না। (নাসাঈ)
৪. হাদীসে আছে,
عن عبس رض يقول قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من اغبر قدماه فى سبيل الله
عز و جل حرمهما الله عز و جل على النار-
অর্থঃ- হযরত আবু আব্স (রা.) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (স.) এরশাদ ফরমান, আল্লাহর রাস্তায় যে ব্যক্তির উভয় পা ধুলিযুক্ত হবে তার উপর আল্লাহ তায়ালা দোযখের আগুন হারাম করে দিবেন। (মুসনাদে আহমাদ)
৫. অন্য হাদীসে আছে,
عن عثمان بن عفان رض قال سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول يوم فى سبيل الله خير من الف يوم فيما سواه-
অর্থঃ- হযরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রসূল (স.) কে একথা বলতে শুনেছি যে, আল্লাহর রাস্তার এক দিন আল্লাহ রাস্তা ব্যতিত হাজার দিনের চেয়েও উত্তম। (নাসাঈ)
৬. এক হাদীসে আছে,
عن انس بن مالك رض قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من راح روحة فى سبيل الله كان له بمثل ما اصابه من الغبار مسكا يوم القيامة-
অর্থঃ- হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, রসূল (স.) এরশাদ ফরমান, কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর রাস্তায় এক বিকালও বাহির হয়, তার দেহে বা শরীরে যে পরিমাণ ধুলা-বালি লাগবে, কেয়ামতের দিন সে সেই পরিমাণ মেশক-খুশবু লাভ করবে। (ইবনে মাজা)
৭. এক হাদীসে আছে,
عن عبد الله بن عمر رض ان رسول الله صلى الله عليه و سلم قال من صدع رأسه فى سبيل الله فاحتسب غفر له ما كان قبل دلك من دنب-
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বর্ণনা করেন, রসূল (স.) এরশাদ ফরফান, আল্লাহর রাস্তায় গিয়ে যার মাথা ব্যথা হয় এবং এই মাথা ব্যথার কারণে সে ছওয়াবের আশা রাখে তার পূর্ববর্তী সকল পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (তাবারানী)
৭.হাদীস শরীফে আছে,
مقام احدكم فى سبيل الله افضل من صلوته فى بيته سبعين عاما-
অর্থঃ-হুযুর (স.) এরশাদ ফরমান, তোমাদের কাহারো আল্লাহর রাস্তায় কিছু সময় দাড়িয়ে থাকা নিজের ঘরে ৭০ বছর নামায আদায় করার চেয়েও উত্তম।(তিরমিযী)
৮.এক হাদীসে আছে,
عن سهيل رض يقول سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول مقام احدكم فى سبيل الله ساعة خير له من عمله عمره فى اهله-
অর্থঃ-হযরত সোহাইল (র.) বর্ণনা করেন, আমি রাসূল (স.) কে একথা বলতে শুনেছি যে, আল্লাহর রাস্তায় তোমাদের কাহারো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা তার পরিবার পরিজনের মধ্যে অবস্থান করে জীবনভর নেক আমল করার চেয়েও উত্তম। (মোস্তাদরাকে হাকেম)
৯.এক হাদীসে আছে,
عن ابى امامة رض ان رسول الله صلى الله عليه و سلم قال ثلاثة كلهم ضامن على الله ان
عاش رزق و كفى و ان مات ادخله الله الجنة من دخل بيته فسلم فهوضامن على الله-
ومن خرج الى المسجد فهو ضامن على الله- و من خرج فى سبيل الله فهو ضامن على الله-
অর্থঃ-হযরত আবু উমামা হতে বর্ণিত, রাসূল (স.) এরশাদ ফরমান, তিন ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার দায়িত্বে¡ রয়েছে। যদি তারা বেচে থাকে তবে রিজিক দেওয়া হবে এবং তাদের কাজে সাহায্য করা হবে। আর যদি তারা মারা যায় তবে আল্লাহ তায়ালা তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন,
১. যে ব্যক্তি নিজের ঘরে প্রবেশ করে গৃহবাসীকে সালাম দেয়।
২. যে ব্যক্তি মসজিদে গমন করে।
৩. যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় বের হয়। (ইবনে হিব্বান)
১০.হাদীস শরীফে আছে,
عن ابى هريرة رض قال سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول موقف ساعة فى
سبيل الله خير من قيامه ليلة القدر عند الحجر الاسود-
অর্থঃ- হযরত আবু হুরায়রা (র.) বর্ণনা করেন যে, আমি রসূল (স.)
কে একথা বলতে শুনেছি যে, আল্লাহর রাস্তায় কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকা ক্বদরের রাত্রে হাজারে আসওয়াদের সামনে এবাদত করার চেয়েও উত্তম কাজ। (ইবনে হাব্বান)
১১. এক হাদীসে আছে,
عن خريم بن فاتك رض قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من انفق نفقة فى سبيل الله
كتب له سبعمأة ضعف-
অর্থঃ- হযরত খোরাইম ইবনে ফাতেক (রা.) বর্ণনা করেন, রসূল (স.) এরশাদ ফরমান, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোন কিছু খরচ করে তা সেই ব্যক্তির আমলনামায় সাতশতগুণ লেখা হয়। (তিরমিযী)
১২.অন্য হাদীসে আছে,
عن معاد رض قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ان الصلوة و الصيام و الدكر يضاعف
على النفقة فى سبيل الله عز وجل بسبع مأة ضعف-
অর্থঃ- হযরত মোয়াজ (র.) বর্ণনা করেন, রসূল (স.) এরশাদ ফরমান, আল্লাহর রাস্তায় অর্থ-সম্পদ খরচ করার চেয়ে নামায, রোযা এবং জিকিরের ছওয়াব সাতশতগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। (আবূ দাউদ)
১৩. হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে,
عن معاد رض عن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال ان الدكر فى سبيل الله يضعف فوق
النفقة بسبع مأة ضعف و فى رواية بسبع مأة الف ضعف-
অর্থঃ- হযরত মোয়াজ (রা.) বর্ণনা করেন, রসূল (স.) এরশাদ ফরমান, আল্লাহর রাস্তায় জিকিরের ছওয়াব আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ খরচ করার চেয়ে সাতশতগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এক বর্ণনায় উল্লেখ আছে, সাত লক্ষগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। (মোসনাদে আহমদ)
১৪.এক হাদীসে আছে,
عن ابى سعيد الخدرى رض قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من صام يوما فى سبيل الله باعد الله بينه و بين النار بدلك اليوم سبعين خريفا-
অর্থঃ- হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণনা করেন, রসূল (স.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একটি রোযা রাখবে এই এক দিনের রোযার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তি এবং দোযখের মধ্যে সত্তর বছরের ব্যবধান সৃষ্টি করে দিবেন। (নাসাঈ)
১৫.অন্য হাদীসে আছে,
عن عمرو بن عبسة رض قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من صام يوما فى
سبيل الله بعدت منه النار مسيرة مأة عام-
অর্থঃ- হযরত আমর ইবনে আবাসা (রা.) বর্ণনা করেন, রসূল (স.) এরশাদ করেন, আল্লাহর রাস্তায় যে ব্যক্তি এক দিন রোযা রাখবে তার এই রোযা রাখার কারণে তার নিকট হতে দোযখের আগুন একশত বছরের দূরত্বে চলে যাবে। (তাবারানী)
তাশকীল কি?
ছয় নাম্বার দিয়ে বয়ান করার পর তাশকীলের সময় এই কথা বলা যে, মুরুব্বীরা বলেন এই কাজ শিখতে হলে জীবনে একাধারে তিন চিল্লা দিয়ে শিক্ষা করা এবং মৃত পর্যন্ত এই করতে থাকা, ইনশাআল্লাহ আমার তো তিন চিল্লা দেওয়ার নিয়ত আছে, এখন আপনাদের কার কি নিয়ত বলি, বলি ইনশাআল্লাহ বলি, ভাই দাঁড়িয়ে যায়, মাশাআল্লাহ।
নবী রাসুলগণ কিভাবে অর্থ উপার্জন করতেন?
সাহাবাগণ কিভাবে অর্থ উপার্জন করতেন