কখন প্রকাশ্যে তাওহীদের আযান শুরু হয় - The Azan of Tawheed begins
06:29:21 12/11/2023
কখন প্রকাশ্যে তাওহীদের আযান শুরু হয় : এতদিন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াতের ব্যাপারটি গোপন রাখলেন। এভাবে কেটে গিয়েছিল প্রাথমিক তিনটি বছর। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাকে সেটা মানুষের সামনে প্রকাশ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেন:
فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ
অর্থাৎ আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তা প্রকাশ করুন, আর মুশকিরদের থেকে আপনি মুখ ফিনিয়ে নিন। [সূরা হিজর: ৯৪]
আরও ইরশাদ করেন:
وأندر عشيرتك الأقربين (٢١٤) واخفض جناحك لمن اتبعك من الْمُؤْمِنِينَ (٢١٥)
অর্থাৎ আপনি নিকটতম আত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দিন। এবং আপনার অনুসারী মুমিনদের প্রতি সদয় হোন। [ সূরা শুআরা : ২১৪-২১৫]
আরও বলেন: “আর আপনি বলুন- নিশ্চয়ই আমি স্পষ্ট ভীতিপ্রদর্শনকারী [সূরা হিজর: ৮৯]”
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন ঘর থেকে বের হয়ে সাফা পাহাড়ের সানুদেশে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে ঘোষণা দিলেন- “ইয়া সাবাহাহ'! এটা ছিল কাফেরদের একটি পরিচিত শব্দ। যখনই কোনো ব্যক্তি টের পেত যে, দুশমনরা তাদের দেশ, কবীলা কিংবা শহরের ওপর অযাচিতভাবে আক্রমণ করতে যাচ্ছে তখনই সঙ্গে সঙ্গে সে এই শব্দটি বলে তাদেরকে সচেতন করে তুলত। তাই রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই ডাক শুনে তারা মুহূর্ত দেরি না করে সবাই চলে এলো। কেউ কেউ আসতে না পারায় তার পক্ষ থেকে দূত প্রেরণ করল।
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতঃপর বললেন, হে বনু আব্দুল মুত্তালিব! হে বনু ফিহির! হে বনু কা'ব। যদি তোমাদের আমি বলি- এই পাহাড়ের পেছনে একদল সৈন্য লুকিয়ে আছে আর তারা তোমাদের ওপর আক্রমণ করতে আসছে- তবে তোমরা আমার এই কথা বিশ্বাস করবে কি?
আরবরা ছিল বাস্তববাদী। তারা এমন এক ব্যক্তির কাছ থেকে এই প্রশ্নটি পেয়েছিল, আজীবন তারা যাকে সত্য, আমানতদার, ন্যায়নিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত বলেই জেনে আসছে। আজ তিনি তাদের সামনে পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি তাঁর সামনের সবকিছু দেখছেন। আবার পেছনেরও সবকিছু দেখছেন। আর তারা শুধু তাদের সামনের দিক দেখছিল। পেছনে তারা কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না। তাই তারা কালবিলম্ব না করে ইনসাফপূর্ণ জবাব দিলো- হাঁ।
দাওয়াত ও তালীমের অনুপম পদ্ধতি
এভাবে যখন মজলিসের উদ্বোধনী পর্ব শেষ হলো, শ্রোতাদের কাছ থেকে প্রাথমিক সাক্ষ্য নেওয়া হলো- তখন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নিঃসন্দেহে আমি তোমাদের সামনের প্রচণ্ড শাস্তি সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করছি।
আর এটাই ছিল নবুওতের মাকাম, ইলমে গাইব। আর অদৃশ্য ইলাহের সংক্ষিপ্ত পরিচয়। এটা ছিল স্পষ্ট ভীতিপ্রদর্শন। বস্তুত এটা হয়েছিল এমন এক পন্থায় তাবৎ দুনিয়ার ধর্ম আর নবুওতের ইতিহাসে যার কোনো নযীর নেই। আর এটার জন্য এর চেয়ে আর কোনো উত্তম পন্থা নেই। এটার জন্য এর চেয়ে স্পষ্ট আর কোনো পদ্ধতিও নেই।
তখন সবাই নীরব হয়ে গেল। কেবল আবু লাহাব বলে উঠল- তুমি ধ্বংস হও! এই জন্যই কি আমাদেরকে ডেকে এনেছ? এর মাধ্যমে রাসূলে আকরাম সা. মানুষকে দারুণ হিকমত ও অত্যাশ্চর্য বিচক্ষণতার মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, প্রকৃত ও চরম দুশমন বাহ্যিকভাবে দেখা যায় না। সে লুকিয়ে থাকে ঘরে ও গর্তে। আর তাই বাহ্যিক দুশমনের চেয়ে সে-ই বেশি মারাত্মক। তার থেকে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। আর তাই তার ব্যাপারেই অধিক সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
এই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা ও গোটা বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহ সম্পর্কে অনবগতি, তাঁর গুণাবলী আর তাঁর সুন্দর নামসমূহ না জানা, শিরক আর পৌত্তলিকতার জালে ফেঁসে যাওয়া, আত্মপূজা আর কুসংস্কারের জালে আটকে পড়া- এর সবগুলোই লুকিয়ে থাকা দুশমনের চেয়েও মারাত্মক ক্ষতিকর। মানুষের ঘরের দুশমনের চেয়েও অধিক ধ্বংসাত্মক। আর তাই এগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া আর তার বিরুদ্ধে অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।