বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের সূচনা - The beginning of World Human Rights Day
00:52:30 12/04/2023
বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের সূচনা
১৯৪৮ সনে জাতিসংঘ তার সাধারণ পরিষদে একটি ঘোষনা প্রচার করেছে । সে ঘোষণার নাম হলো বিশ্ব মানবাধিকার বা সার্বজনীন মানবাধিকার পত্র। ১৯৪৮ সনে এই ঘোষণার পর থেকে ১০ই ডিসেম্বর সারা পৃথিবীতে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে পরিচিত ও পালিত হয় । ১৯৪৮ সনে জাতিসংঘ বিশ্বমানবাধিকার ঘোষণা করার পর, মানবাধিকার শব্দটি মানুষের মুখে মুখে ও দেশে দেশে উচ্চারিত হচ্ছে। এটি একটি প্রিয় শব্দ, মানুষ এই শব্দ বহুলভাবে ব্যবহার করে । ইংরেজীতে বলা হিউম্যান রাইট্স Human Rights। আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পর্যায়ে অনেক সংগঠন, সংস্থা এ ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে।
আমাদের আলোচনার উদ্দেশ্য হবে, কোরআন-সুন্নাহর আলোকে মানবাধিকার কি? জাতিসংঘ মানবাধিকার ঘোষণা করার আগে ইসলামের আগমন ঘটেছিল ইসলাম মানবাধিকারের কোন ঘোষণা দিয়েছে কিনা? ইসলাম মানবাধিকার সম্পর্কে কি ধরণের ব্যাখ্যা পেশ করে? জাতিসংঘের ব্যাখ্যা ও ঘোষণা এবং কোরআন-সুন্নাহর মানবাধিকারের ঘোষণা বিষয়ে তুলনা মূলক পর্যালোচনা (Comparative Study) পেশ করতে চাই। জাতিসংঘের মানবাধিকারের ঘোষণা ৩০টি ধারা এবং ৩২টি উপধারায় বিন্যস্ত ।
মানবাধিকার অর্থ কি?
বাংলা ব্যাকরণ অনুযায়ী মানব-অধিকার = মানবাধিকার। মানুষ হিসেবে মানুষের যে অধিকার ও ন্যায্য প্রাপ্য সেই অধিকার সমূহকে বলা হয় মানবাধিকার। মানুষের বহুবিধ অধিকার রয়েছে : অর্থনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার। এই অধিকার গুলো তার ন্যায্য পাওনা। এ জাতীয় সব অধিকার হচ্ছে মানবাধিকার। জাতিসংঘের মানবাধিকারের ৩০টি ধারাকে ২টি সূচীতে বিভক্ত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। একটি সূচীতে পেশ করা হয়েছে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার, আর অন্য সূচীতে রাজনৈতিক অধিকার ও রাষ্ট্রীয় অধিকার ।
ইসলামের মানবাধিকার ঘোষণা :
আমরা বিশ্বাস করি, প্রত্যেক মুসলমান বিশ্বাস করে যে, ১৯৪৮ সনে জাতিসংঘের মানবাধিকারের ঘোষণার অনেক আগে, ৯ম হিজরীতে জ্বিলহজ্বের নয় তারিখ জুমার দিন আরাফা প্রান্তরে 'জবলে রহমত' পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে মহানবীর কণ্ঠে যে ভাষণ পুরো মানবজাতির জন্য উচ্চারিত হয়েছে, সে ভাষণ হচ্ছে মানবতার জন্য সর্বপ্রথম মানবাধিকারের ঘোষণা। কাজেই আমরা বলব, জাতিসংঘের ঘোষণার ১৪শ বৎসর আগে আল্লাহর নবী আরাফার ময়দানে দাঁড়িয়ে বিদায় হজ্বের সময় সকল মানবতার জন্য সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা করেছেন। আল্লাহর নবী বলেছেনঃ মানুষের মর্যাদা সবচেয়ে বেশী। কোরআনে কারীমের মধ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,
لقد خلقنا الانسان في احسن تقويم
মানুষ হচ্ছে সৌষ্ঠবের দিক হতে সর্বশ্রেষ্ঠ ও চমৎকার। মানুষের মর্যাদাও সবার উপরে। সারা পৃথিবীর সকল প্রাণী জগৎসহ সব কিছু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানবতার সেবার জন্য তৈরী করেছেন। মানুষকে আল্লাহ সবচেয়ে বেশী মর্যাদা দান করেছেন। আল্লাহর নবী আরাফার ময়দানে যা ঘোষণা করেছেন তার সারমর্ম হলো, মানুষে মানুষের কোন ভেদাভেদ নেই। সকলে সমান। দুনিয়ার সকল মানুষ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, মুসলমান, সকল বর্ণের লোক লাল, কালো, সাদা ও সকল ভাষার লোককে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-
يايها الناس انا خلقناكم من ذكر وانثى
“হে মানুষ, আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক নর ও এক নারী হতে। * মানবতার গোড়ার ইতিহাস যদি তুমি পর্যালোচনা কর তাহলে দেখতে পাবে তোমাদের গোড়া বা তোমাদের শিকড়ে আছে একজন নর এবং একজন নারী। আদম (আঃ) ও তাঁর স্ত্রী হাওয়া (আঃ)। এই দুইজন থেকে মানবজাতির বিকাশ সাধিত হয়েছে। মানুষের জন্ম এবং এই পর্যন্ত সকল মানুষ তাঁদেরই সন্তান । হিন্দু হোক সে বনী আদম, খ্রীষ্টান হোক আদমের সন্তান, কালো হোক আদমের সন্তান, লাল হোক আদমের সন্তান, কালো হোক আদমের সন্তান । কাজেই দুনিয়ার সব মানুষ একই মায়ের সন্তান, একই বাবার সন্তান । এক মা এবং এক বাবা থেকে যতগুলো সন্তান জন্ম লাভ করে, তারা মর্যাদার দিক থেকে সমান হয়ে থাকে। কোন পার্থক্য থাকেনা ।
وجعلناكم شعوبا وقبائل
হ্যাঁ, আদম এবং হাওয়া থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করার পর আমি তোমাদের পরিচয়ের জন্য এলাকা ভিত্তিক, গোত্রভিত্তিক পরিচিত দান করেছি। পুরো মানবগোষ্ঠীকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিভিন্ন জাতি এবং গোত্রে বিভক্ত করেছেন । কেউ আরব, কেউ অনারব, কেউ কোরাইশ বংশের । কেউ চৌধুরী বংশ, কেউ ভূঁইয়া বংশ । নানান্ ধরনের বংশ, গোত্র এবং জাতিতে তোমাদেরকে আমি বিভক্ত করেছি কেন? I sigail তোমাদের পরিচয়ের জন্য । আমার বাড়ি কোথায়? আমার জাতীয়তা থেকে সেটার প্রকাশ ঘটে।
একমাত্র পরিচয়ের মানদণ্ড হিসেবে আমি জাতি এবং গোত্রে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি। এই জাতি এবং গোত্র শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি নয় । শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি কি? আমি আরব হলে শ্রেষ্ঠ, তিনি অনারব হলে নিকৃষ্ট কিংবা আমি আমেরিকান বলে শ্রেষ্ঠ তুমি বাঙালী বলে নিকৃষ্ট, আমি ইংরেজ বলে উৎকৃষ্ট আর তুমি অ-অংরেজ বলে নিকৃষ্ট তা হতে পারেনা । আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন ঃ এভাবে শ্রেষ্ঠত্ব নির্ণয় করা যাবেনা । কাফের নেতা আবু জাহেল আরবে জন্মলাভ করেছে, আরব হলেই শুধু মর্যাদা পাবে এমন কথা ইসলাম বলেনি। কারণ বড় কাফেররা যথা আবু জেহেল, আবু লাহাব, তারা ছিল আরব।
আবার বেলাল, ছুহাইব কালো, নিগ্রো, দেখতে অসুন্দর, কুশ্রী । ঈমান এনেছে। হযরত ওমর (রাঃ) বেলালকে বলেছেন UDH Lay বেলাল হলো আমাদের নেতা, আমাদের সরদার। ° কোরাইশ বংশের ওমর বেলালের মত একজন নিগ্রো দাস, গোলামকে বলেছেন 'আমাদের নেতা ।' অর্থাৎ ইসলাম আরব হলেই সে শ্রেষ্ঠ এ ধারণাকে স্বীকৃতি দেয়নি। আরব হলেই শ্রেষ্ঠ হলেতো আবু জেহেল শ্রেষ্ঠ। আরব হলেই শ্রেষ্ঠ হলে তো আবু লাহাব শ্রেষ্ঠ। আর অনারব হলে যদি নিকৃষ্ট হতো তাহলে বেলাল নিকৃষ্ট হত অথচ বেলালের মর্যাদা ইসলামে অনেক বেশি ।