হুদায়বিয়া সন্ধি ও বাইয়াতে রিযওয়ানের ঘটনা
হুদায়বিয়া সন্ধি ও বাইয়াতে রিযওয়ানের ঘটনা
ষষ্ট হিজরীর যিকাদার শুরুতে নবী কারীম সা. মক্কা মুয়ায্যামা গমনের ইচ্ছা করলেন এবং উমরার ইহরাম বাঁধলেন। সাহাবীদের একটি বড় দলও যাদের সংখ্যা চৌদ্দ শত বর্ণনা করা হয়-মহানবী সা. এর সাথে রওয়ানা হল । [সীরাতে মুগলতাঈ]
হুদায়বিয়া মক্কা মুয়ায্যামা থেকে এক মনজিল দূরে অবস্থিত একটি কূপ। সেই কূপের নামেই গ্রামের নাম হুদায়বিয়া প্রসিদ্ধ । মহানবী সা. সেখানে পৌঁছে অবস্থান করলেন।
সাস্থসম্মত উপায়ে তৈরি ১০০%-খাঁটি-ঘি
মহানবী সা. এর মুজেযা: একটি কূপ একেবারে শুষ্ক ছিল। মহানবী সা. এর মু'জেযার কারণে তাতে এত পানি এসে গেল যে, সকলেই পরিতৃপ্ত হয়ে গেল।
মহানবী সা. এখানে পৌঁছে হযরত উসমান রা. কে এই মর্মে মক্কায় প্রেরণ করলেন যে, তিনি কুরাইশদেরকে অবগত করিয়ে দিবেন যে, মহানবী সা. এ সময় শুধু বায়তুল্লাহর যিয়ারত এবং উমরা পালনের জন্য তাশরীফ এনেছেন। অন্য কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়। হযরত উসমান রা. মক্কায় পৌঁছলে কাফেররা তাকে আটকিয়ে ফেলে। এদিকে এ খবর ছড়িয়ে পড়ল যে, কাফেররা হযরত উসমান রা. কে হত্যা করে ফেলেছে। নবী কারীম সা. এর নিকট এ খবর পৌঁছলে তিনি একটি বাবুল গাছের নিচে বসে সাহাবীদের থেকে জিহাদের জন্য বাইয়াত নিলেন। যার আলোচনা কুরআন মজিদে রয়েছে। এটাকে বাইয়াতে রিদওয়ান বলা হয়।
পরবর্তিতে জানা গেল যে, খবরটি ছিল ভুয়া। বরং কুরাইশরা সুহাইল ইবনে আমরকে সন্ধির শর্ত নির্ধারণ করার জন্য পাঠিয়েছে। নিম্ন লিখিত শর্তসমূহ গৃহীত হয়ে অঙ্গীকার নামা লিখা হল এবং দশ বছরের জন্য পারষ্পরিক সন্ধি হল। মুসলমানগণ এ সময় ফিরে যাবে। আগামী বৎসর শুধু তিন দিন অবস্থান করে চলে যাবে। অস্ত্র সজ্জিত হয়ে আসবে না। তরবারি সাথে আনলেও তা কোষে পুরে রাখবে। মক্কা থেকে কোন মুসলমানকে নিজেদের সাথে নিয়ে যেতে পারবে না। যদি কোন মুসলমান মক্কায় থাকতে চায় তাহলে তাকে নিষেধ করবে না। যদি কোন ব্যক্তি মক্কা থেকে মদীনায় চলে যায় তাহলে আপনি তাকে ফিরিয়ে দিবেন। যদি মদীনা থেকে কেউ আসে তাহলে কাফেররা তাকে ফিরিয়ে দিবে না ।
এ সমস্ত শর্ত যদিও বাহ্যিক মুসলমানদের বিপক্ষে ছিল এবং বাহ্যিক এ সন্ধি পরাভূতজনিত সন্ধি ছিল কিন্তু আল্লাহ তায়ালা উহাকে বিজয় নাম রেখেছেন এবং এই সফরে সূরা ফাতাহ অবতীর্ণ হয়ছে। এভাবে দমে গিয়ে সন্ধি করা সাহাবীগণ অত্যাধিক নারাজ ছিলেন। হযরত উমর রা. মহানবী সা. এর দরবারে বারবার আবেদনও করলেন, কিন্তু মহানবী সা. ইরশাদ করলেন, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আমার এটাই নির্দেশ। এতেই আমাদের ভবিষ্যতের সকল কল্যাণ নিহিত রয়েছে । সুতরাং পরবর্তী ঘটনাগুলো এসব সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে। কেননা, এই সন্ধির বদৌলতে মক্কা এবং মদীনার মাঝে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে যাতায়াত শুরু হল। কাফেররা নবীজীর দরবারে এবং মুসলমানদের নিকট আসা যাওয়া করতে লাগল ।
এদিকে ইসলামী চরিত্রের চম্বুকার্ষণ তাদেরকে ইসলামের দিকে আকর্ষণ করতে লাগল। ঐতিহাসিকদের বর্ণনা, সেই সময়ে মানুষ এত অধিক পরিমাণে ইসলামে প্রবেশ করল যে, তত কোন সময় হয়েছিল না। মূলত: এই সন্ধি মক্কা বিজয়ের ভূমিকাস্বরূপ ছিল।