Narrow selection

​​​​​​​হৃদরোগ থেকে বাঁচার উপায় - Ways to avoid heart disease


06:36:21 12/11/2023

হৃদরোগ থেকে বাঁচার উপায় : প্রতিবছর হাজার হাজার লোক মারা যান হার্ট অ্যাটাকে। এর মধ্যে মহিলাদের সংখ্যাও কম নয়। বংশগত ব্যাপার হৃদরোগের ব্যাপারে ভূমিকা রাখে। কিন্তু আপনি ইচ্ছা করলে তা এড়াতে পারেন। আপনার পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস থাকলেও আপনি তার ঝুঁকি কমাতে পারেন বৈকি। বংশগত কারণ ছাড়াও হৃদরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপান, স্থূলতা এবং মানসিক চাপ। একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল চেক আপ-এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কোনটি আপনার জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

একটি কথা মনে রাখবেন, হৃদরোগ প্রতিহত করতে চাই সুস্থ হৃৎপিণ্ড। কিন্তু আপনার হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখবেন কিভাবে? যদি আপনার চিকিৎসক আপনাকে বলেন, আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে, আপনি মোটেই দমে যাবেন না। আপনার ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়সমূহ পরিবর্তন করার ক্ষমতা আপনার নিশ্চয়ই আছে। এখানে কিছু জীবন-যাপন পদ্ধতি আলোচনা করা হলো যা অনুসরণ করলে সুস্থ থাকবে আপনার হৃৎপিণ্ড এবং আপনি রক্ষা পাবেন হৃদরোগ থেকে।

১. কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনুন

কোলেস্টেরল হলো প্রাণীদেহের রক্তে বিদ্যমান চর্বি জাতীয় পদার্থ। কোষের উন্নয়ন এবং ক্রমবৃদ্ধিতে কোলেস্টেরল অপরিহার্য। কিন্তু বেশিমাত্রায় তা ক্ষতিকর এবং আপনার ধমনীর ভেতরের দেয়ালে তা জমা হয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, যার ফলে আপনার হৃদ্যন্ত্রে রক্ত  সরবরাহ কমে যায়। ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের নাম হলো এলডিএল বা লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন। এলডিএল কোলেস্টেরল মাত্রার ব্যাপকতা ধমনীতে প্রতিবন্ধকতার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা আপনার হৃদরোগের জন্য বিরাট হুমকি। অপরপক্ষে এইচডিএল বা হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন ধমনীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি থেকে রক্ষা করে হৃদরোগের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

তাই এইচডিএলকে বলে 'ভালো কোলেস্টেরল'। ২০০-এর নিচে একটি পরিপূর্ণ কোলেস্টেরল মাত্রাকে কাঙ্ক্ষিত হিসেবে বিবেচনা করা যায়। ২০০-২৩৯ হলো সীমানা নির্দেশক রেখা— উচ্চ। ২৪০-এর বেশি হলে তা উচ্চমাত্রা হিসেবে বিবেচিত। যদি আপনি আপনার কোলেস্টেরল মাত্রা কাঙ্ক্ষিত সীমানার মধ্যে রাখতে পারেন তাহলে আপনি সুস্থ হৃৎযন্ত্র নিয়ে চমৎকার জীবন যাপন করতে পারেন। কারো যদি উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল থাকে অথবা যাদের মাত্রা সীমানা রেখা-উচ্চ এবং ইতিমধ্যে হৃদরোগে ভুগছেন কিংবা দুটো বা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় রয়েছে তাদের পুনরায় এলডিএল মাত্রা পরীক্ষা করাতে হবে।

অতঃপর চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে খাদ্য পরিবর্তন করে রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা নামিয়ে আনতে হবে। আপনি কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার খেলে রক্তে এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। খাদ্যের কোলেস্টেরল পাওয়া যায় কেবলমাত্র প্রাণিজাত দ্রব্য যেমন গরু, হাঁস, মুরগি, মাছ, ডিম এবং সকল দুগ্ধজাত পণ্যে। সবচেয়ে বেশি কোলেস্টেরল থাকে ডিমের কুসুম, কলিজা, বাছুর বা ভেড়ার অগ্নাশয় ও মগজে। উদ্ভিদ থেকে উৎপন্ন খাদ্য যেমন সবজি, ফলমূল এবং বাদামে কোলেস্টেরল থাকে না। দৈনিক ২০০-৩০০ মিলিগ্রামের বেশি কোলেস্টেরল গ্রহণ করা উচিত নয় । কেবলমাত্র বড় একটি ডিমের কুসুমেই থাকে ২৭৪ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল।

২. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন

রক্তচাপের দীর্ঘস্থায়ী উত্তোলন ও রক্তকর্তৃক ধমনীর দেয়ালের বিরুদ্ধে ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ ধমনীর দেয়ালে চর্বির জমাট বৃদ্ধি করে। রক্তচাপ সর্বদা তাই নিয়ন্ত্রণে রাখুন। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে খাদ্যে লবণ কমাতে হবে, ওজন হ্রাস করতে হবে এবং খাদ্য ও ব্যায়ামের সমন্বয়ে রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা কমাতে হবে। রক্তচাপের ওষুধ যখন গ্রহণ করবেন তখন চিকিৎসকের নির্দেশ মতো তা অব্যাহত রাখবেন।

৩. ধূমপান পরিহার করুন

যেসব ব্যক্তি দিনে এক প্যাকেট সিগারেট খান তারা অধূমপায়ীদের তুলনায় দ্বিগুণ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। সিগারেটের নিকোটিন ধমনীসমূহের দেয়ালের ক্ষতিসাধন করে। যেসব মহিলা ধূমপান করেন এবং গর্ভনিরোধ বড়ি ব্যবহার করেন তারা যেসব মহিলারা এসব করেন না তাদের চেয়ে ৩৯ গুণ হৃদরোগের এবং ২২ গুণ স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকেন। ধূমপান ত্যাগ করলে ১০ বছরের মধ্যে একজন প্রাক্তন ধূমপানকারী তার হৃদযন্ত্রকে একজন অধূমপায়ীর মতোই সুস্থ রাখতে পারেন ।

৪. ব্যায়াম করুন

হৃদরোগের জন্য ব্যায়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিয়মিত ব্যায়াম ওজনবৃদ্ধি প্রতিরোধ করে, রক্তচাপ কমায় ও হৃদস্পন্দন শান্ত রাখে। ব্যায়াম সম্পূর্ণ কোলেস্টেরল মাত্রা কমায় এবং ভালো ও ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের অনুপাতের উন্নতি সাধন করে। কোন ধরনের ব্যায়াম আপনি পছন্দ করবেন সেটা আপনার ব্যাপার, তবে ব্যায়ামের জন্য কিছু কিছু ব্যাপার অপরিহার্য। প্রথমত ব্যায়াম অবশ্যই খোলা বাতাসে করতে হবে। এর ফলে আপনার হৃদস্পন্দন ৬০ থেকে ৭০ শতাংশে উন্নয়ন করবে।

প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিনবার ২০ থেকে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালনা এবং সাঁতার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ব্যায়াম। আপনার বয়স যদি ৩৫-এর নিচে হয় এবং হৃদরোগের জন্য কোনো ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় নাও থাকে তবু নিজের ভালোর জন্য আপনার ব্যায়াম শুরু করা উচিত। যদি আপনি বয়স্ক হন এবং এমন কাজের সঙ্গে জড়িত যা বসে বসে করতে হয় তাহলে আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৫. ক্যাফিন ও এলকোহল পরিত্যাগ করুন

যখন আপনি ক্যাফিন কিংবা এলকোহল অতিরিক্ত পান করেন, উভয়ই আপনার হৃদযন্ত্রের ক্ষতি সাধন করে। বেশিমাত্রায় ক্যাফিন, রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। যদিও কিছু কিছু গবেষক উল্লেখ করেন যে, স্বল্প পরিমাণ এলকোহল, দৈনিক এক থেকে দু আউন্স, কোলেস্টেরল মাত্রা কমাতে পারে, কিন্তু এর ক্ষতিকর দিক এত বেশি যে এসব উক্তি তখন বাতিল হয়ে যায়। ক্যাফিনের মতো বেশিমাত্রার এলকোহল রক্তচাপ বাড়ায় এবং হৃৎস্পন্দনও বাড়িয়ে দেয় যা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

৬. মানসিক চাপ কমান

মানসিক চাপ হৃদরোগের জন্য সাংঘাতিক ঝুঁকিপূর্ণ। মানসিক চাপের ফলে শরীরে রাসায়নিক উপাদানের বৃদ্ধি ধমনীর ভেতরের পায়ের ক্ষতি সাধন করে যার ফলে রক্তনালী বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বৈরীভাবাপন্ন এবং নৈরাশ্যবাদীদের হৃদরোগের দারুণ ঝুঁকি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নারীপুরুষ উভয়ের ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন আনতে হবে। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যারা এই মানসিক চাপের কারণে অকাল মৃত্যুবরণ করেছেন। মানসিক চাপ কমাতে আপনাকে যা করতে হবে তা হলো-

  • বাস্তববাদী হতে হবে। কোনো প্রকার অন্ধ আবেগকে প্রশ্রয় দেবেন না।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
  • জীবনটাকে উপভোগ করতে শিখুন।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন ।
  • উপযুক্ত পুষ্টি গ্রহণ করুন।
  • শিথিলায়ন পদ্ধতি শিখুন।

৭ ওজন কমান

যদি স্বাভাবিক ওয়ানের চেয়ে আপনার ওজন বেশি হয় তাহলে তা হৃদযন্ত্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। একজন মোটা মানুষের উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি।

৮. সুষম খাবার খান

আপনার হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে খাবারের ওপর বিশেষ মানোযোগ দিতে হবে। সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার হৃদরোগকে দূরে সরিয়ে রাখে। এসব খাবার রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রাখে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।

এমন স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিতে হবে যার সঙ্গে চর্বি ও কোলেস্টেরলের ব্যাপারটা জড়িত। খাদ্যে সম্পৃক্ত চর্বি আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। অথচ অতি অসম্পৃক্ত চর্বি তা কমিয়ে দেয়। আপনি স্রেফ আপনার খাদ্য তালিকা থেকে সম্পৃক্ত চর্বি বাদ দিন, এতে আপনার এলডিএল কোলেস্টেরল কমে যাবে। যেসব খাদ্যে সম্পৃক্ত চর্বি বেশি থাকে তার মধ্যে রয়েছে গরুর মাংস, দুগ্ধজাত পণ্য যেমন মাখন, পনির। সাধারণভাবে প্রাণীর চর্বিতে অধিক সম্পৃক্ত চর্বি রয়েছে এবং উদ্ভিজ্জ চর্বিতে তা রয়েছে স্বল্প। সুতরাং, এমন খাদ্য খান যাতে সম্পৃক্ত চর্বি এবং কোলেস্টেরল কম থাকে।

আপনি একটি খাদ্য তালিকা তৈরি করবেন যাতে আপনার দৈনিক সমস্ত ক্যালরির ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে, ৩০ শতাংশ চর্বি থেকে এবং ১০-১৫ শতাংশ প্রোটিন থেকে। মনে রাখবেন, আপনার হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে হলে আঁশযুক্ত খাবার অপরিহার্য। উদ্ভিদ আঁশ, ফলমূলের অপাচ্য অংশ, শাকসবজি এবং খাদ্যশস্য আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। দৈনিক ২০-৩০ গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। এই খাবারের আরেকটি সুবিধাজনক দিক হলো আপনি অল্প খেলেই মনে হবে পেট ভরে গেছে, এতে করে আপনি অতিরিক্ত আহারের হাত থেকে বাঁচবেন।

দু ধরনের আঁশযুক্ত খাবার রয়েছে। একটি হলো পানিতে দ্রবণীয় আঁশযুক্ত খাবার যেমন যব, যবের ভুসি, ফলমূল, শুকনো কলাই, শিম। অপরটি হলো পানিতে অদ্রবণীয় আঁশযুক্ত খাবার যেমন- সমগ্র খাদ্যশস্য, ফলমূল, শাকসবজি । কিছু খাবার আছে আপনার হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে হলে তা পরিহার করবেন। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে- হ্যামবার্গার, পনির, মাংসের রুটি, হট ডগস, তেলে ভাজা খাবার, ডিমের কুসুম, গরুর মাংসের কাবাব প্রভৃতি।

 

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color