কারাবন্দীর অধিকার কি? - What are the rights of prisoners?
00:42:19 12/04/2023
কারাবন্দীর অধিকার কি?
এভাবে অমুসলিমদের মর্যাদা, অমুসলিমদের অধিকার । ইসলাম জাতিসংঘের অনেক আগেই ঘোষণা করেছে এবং বাস্তবায়ন করেছে। বদরের প্রান্তরে যখন কিছু সংখ্যালঘু কাফের জিম্মি হলো, আল্লাহর নবী তাঁদের সাথে কি আচরণ করেছিলেন? সাহাবায়ে কেরামকে ভাগ করে দিয়ে বললেন, হে আমার সাহাবীগণ, আজকে কিছু কাফের আমাদের হাতে ধরা পড়ে বন্দি হয়েছে, আমি আনসার-দেরকে দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছি এই কয়েদীগুলোকে দেখাশুনা করবে। সত্তর জনকে সত্তর জন আনসারের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছে।
বদরের প্রাঙ্গণ থেকে মদীনা অনেক দূরে, কিভাবে যাবে? মুসলমানদের কাছে তো অত যানবাহন নেই, এই কাফের গুলোকে কি করে আনা হবে? ইতিহাসের সোনালী পাতায় লেখা আছে, মুসলমানরা হেঁটে আসছে আর কয়েদীগুলোকে যানবাহনের উপর আরোহন করে আরামে আরামে মদীনার মধ্যে পৌঁছে দিয়েছে। মদীনায় পৌঁছার পর, সাহাবায়ে কেরামের অবস্থা দূর্দশা জর্জরিত ছিল, দারিদ্র ছিল, টাকা পয়সা ছিল না, খাবার ছিল না।
একজন বন্দির স্বীকারোক্তি ইতিহাসে আছে- বন্দী বলল : আমাকে মহানবী একজন আনসারি সাহাবীর ভাগে দিল, আমি তার বাড়িতে গেলাম । তখন কোন জেলখানা নির্মাণ করা হয়নি। সে আমাকে রুটি এবং গোস্ত দিল, আমি আরামে খেয়ে ফেললাম। তারপর আমি খেয়াল করলাম যে, সে কি খায়? আমি দেখতে পেলাম, তার ঘরে আর কোন রুটি নেই, তরকারি নেই। সে দু'টা খেজুর খেল, রাত্র বেলায় একইভাবে সে আমাকে গোস্তরুটি দিল, আর তার খাবার জন্য কিছু ছিলনা । আমি তাঁকে বললাম, ভাই, আমি একজন অপরাধী, তোমাদের দৃষ্টিতে আমি কয়েদী, আমি বন্দি, আমাকে গোস্ত এবং রুটি দিয়ে আরামে খাওয়াচ্ছ আর তুমি মালিক হয়ে শুধুমাত্র খেজুর খেয়ে জীবন যাপন করছো। কয়েকদিন পর্যন্ত আমি এই অবস্থা দেখলাম। ইতিহাসের পাতায় এ ধরনের উদারতা আপনি খুঁজে পাবেন না।
আধুনিক কালের সর্বশেষ যে নজীর ইরাকের আবুগারিব কারাগারে আমরা দেখেছি, সভ্যতার দাবিদার মানবাধিকারের ঘোষণাকারীরা, যে রাষ্ট্রে সব চেয়ে বেশী মানবাধিকার সংস্থা আছে, সে রাষ্ট্রের বাহিনী ইরাকের আবুগারিব কারাগারে বন্দিদের সাথে কি আচরণ করেছে, সারা পৃথিবীর ইলেক্ট্রানিক মিডিয়া ও প্রিন্টেড মিডিয়া এবং ওয়েব সাইট গুলোতে তাদের নির্যাতনের ছবিগুলো প্রচার করা হয়েছে। সে ছবিগুলো দেখার পর আমাদের মনে হয়েছে আধুনিক কালের কোন ছবি আমরা দেখছিনা, মনে হচ্ছে সে লোহার যুগ, তামার যুগ, অসভ্যতার যুগের ছবি যেন আমরা দেখছি।
যারা মানবাধিকার ঘোষণা করেছে, ৩০টি ধারা ঘোষণা করেছে। তারাই আবুগারিব কারাগারে মুসলমান কয়েদীদেরকে নির্যাতন করেছে। ইদানিং নির্যাতনের আরো ছবি প্রকাশিত হচ্ছে। লজ্জাস্থানে জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে নির্যাতন করছে। মুখে পেশাব করে দিয়েছে, মহিলা সৈনিকের আন্ডারওয়ার মুখের মধ্যে আবৃত করে রেখেছে, যৌন হয়রানি করেছে, ছোট ছোট বালকদেরকে মহিলা সৈনিকরা যৌনকাজ করার জন্য উৎপীড়ন করেছে।
এই হল আধুনিক কালের মানবাধিকারের যুগে, জাতিসংঘের যুগে, ১০ই ডিসেম্বরের এই যুগে কারা বন্দিদের সাথে আচরণ। আর ১৪শ বৎসর আগের সেই সোনালি পাতাকে এবং আজকের পাতাকে পাশাপাশি রাখলে আপনার বিবেক বলবে, না আজকের এই যুগ হচ্ছে জাহেলিয়ার যুগ, আধুনিকতার নামে ও সাদা চামড়ার আবরণে কালো যুগ, অন্ধকার যুগ, আর সেই যুগ ছিল যেটাকে তারা বলে মধ্যযুগ, যেটাকে তারা বলে বর্বর যুগ, যেটাকে তারা বলে পাচাঁদপদ যুগ, সেই যুগ ছিল সত্যিকার অর্থে মানবতার জন্য আলোর যুগ ।
আমি বলতে চাই, ১০ই ডিসেম্বর মানবাধিকারের এই দিবসে নানা জায়গায় সেমিনার, সেম্পোজিয়াম, র্যালি ইত্যাদি কর্মসূচী পালন করা হবে। তবে একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের এতটুকু আত্মবিশ্বাস থাকা দরকার যে, জাতিসংঘের মানবাধিকারের ঘোষণার অনেক আগেই আমাদের প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আরাফাতের প্রান্তরে সর্বপ্রথম মানবাধিকারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ কৃতিত্ব জাতিসংঘের নয়, এ কৃতিত্ব আমেরিকা এবং বৃটেনের নয়, এ কৃতিত্ব এ কৃতিত্ব হচ্ছে ইসলাম এবং মুসলমানদের। মুসলমানরাই মানবাধিকারের সবুজ ও শুভ্র পতাকা সর্বপ্রথম উত্তলন করেছে, পতপত উড়িয়েছে এবং মুসলমানরাই হচ্ছে সেই পতাকার গর্বিত সৈনিক ।
মহানবী (সাঃ) বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেন, আজকের এ নগরী, এ দিবস, এ মাস যেমন পবিত্র তোমাদের জান-মালও তেমন পবিত্র। জাহেলী সকল বিষয়কে আমার দু'পায়ের নীচে পদদলিত করছি। জাহেলী যুগের সকল রক্তপাত রহিত হল। আমার বংশের রবিয়া বিন হারিছের রক্তকে প্রথমে আমি রহিত করছি। তার প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবেনা। রবিয়া ছিল বনী সা'দ গোত্রের দুগ্ধপয়ী, হুজাইলের লোকেরা তাকে হত্যা করেছিল। জাহেলী যুগের সুদ রহিত হল। আমি প্রথম যার সুদ রহিত ঘোষণা করছি তিনি হলেন আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব। তার সব সুদ রহিত, বাতিল। মহিলাদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহর নিরাপত্তার মাধ্যমে তোমরা তাদের গ্রহণ করেছো। আল্লাহর নামে তাদের শ্রীলতাকে তোমরা বৈধ করেছ।
তাদের উপর তোমাদের হক্ব হল, তারা তোমাদের বিছানাকে এমন কাউকে দিয়ে দণিত করবেনা যাকে তোমরা পছন্দ করনা। যদি তারা তা করে তাদেরকে হালকা শাসন কর। তাদের ব্যাপারে তোমাদের দায়িত্ব হল, তাদের অন্ন, বস্ত্রের সু-ব্যবস্থা করা। তোমাদের মাঝে আমি এমন কিছু রেখে গেলাম যা আঁকড়ে ধরলে তোমরা পথচ্যুত হবেনা। তাহল আল্লাহর কিতাব। আমার ব্যাপারে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে তখন তোমরা কি বলবে? তারা বলল: আমরা সাক্ষ্য দেব যে, আপনি পৌঁছে দিয়েছেন, দায়িত্ব পালন করেছেন এবং সদুপদেশ দিয়েছেন। তখন তিরি তার তর্জনীকে আকাশের দিকে উত্তোলন করে মানুষের প্রতি ঝুঁকিয়ে বললেন, হে আল্লাহ, তুমি সাক্ষী থাক, হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক। তিনবার।