চেহারা ঢাকার বিধান কি? - What are the rules for covering face?
02:08:37 12/04/2023
চেহারা ঢাকার বিধান কি?
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يدنين عليهن من جلابيبهن
তারা যেন জিলবাব পরিধান করে (জিলবাব) বড় কাপড়কে বলা হয়। এর ব্যাখ্যা আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস বলেন- এ শব্দের অর্থ হল, চাঁদরের চেয়ে বড় বস্ত্র, মু'মিন মহিলারা বড় কাপড়কে যেন ঝুলিয়ে দেন। কিভাবে ঝুলাতে হবে? তার ব্যাখ্যায় তাফসীরের কিতাবের মধ্যে বলা হয়েছে ।
ان تر بطى فوق الجبين وتشده و ان ظهرت عينها لكنه يسقط
الستر وتهجم الوجه
মাথার উপর দিয়ে কাপড়টিকে ঝুলিয়ে দিবে। ওটা যাতে মাথা থেকে পড়ে না যায় বেঁধে রাখবে। নাক পর্যন্ত এনে চোখকে বাইরে রেখে ঢেকে দেবে। যাতে চোখ বাইরে থাকে। এভাবে যদি কাপড়টিকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় চেহারা অধিকাংশ আবৃত থাকবে। কাপড়-চোপড় পরিধানের পরে অতিরিক্ত এই পোষাককে আরবীতে বলা হয় জিলবাব এই জিলবাবকে ঝুলিয়ে দেওয়ার জন্য আল্লাহ পাক নির্দেশ দান করেছেন ।
তাহলে এর দ্বারা একথা স্পষ্ট হল, মু'মিন মহিলাদের উচিৎ, তাদের চেহারাকে চোখ ব্যতীত আবৃত করে রাখবে, পুরো চেহারা যদিও সতর নয়। একজন মহিলার জন্য ছতর হল পুরা শরীর তিনটা অংশ ছাড়া। (১) চেহারা, (২) পা, পায়ের টাখনু থেকে পায়ের পাতা (৩) দু হাত কব্জি পর্যন্ত। এগুলো খোলা থাকতে পারে। যাতে সে কোন জিনিষ ধরতে পারে, পা দিয়ে সে স্বাচ্ছন্দে হাঁটতে পারে । কিন্তু বাইরে যাওয়ার সময় তাদের জন্য নির্দেশ হল, সে সব বাদ দিয়ে পুরা শরীরকে যাতে ঢেকে দেয়। চেহারা ঢাকার ব্যাপারে ফেকাহবিদদের মাঝে বিতর্ক রয়েছে । কারো মতে, চেহারা অবশ্যই আবৃত করতে হবে । কারো মতে, চেহারা অবৃত করা বেদাত। আবার মধ্যপন্থীদের মত হল চেহারা ঢেকে রাখা সুন্নাত ।
আমরা যদি পর্দার দার্শনিক ভিত্তি সম্পর্কে চিন্তা করি তাহলে বুঝতে পারি যে, একজন নর-নারীকে আরেকজনের যৌন প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার জন্যই আল্লাহ পর্দার বিধান নাযিল করেছেন। চেহারা যদি খোলা রাখা হয়, চেহারার প্রতি মানুষ দৃষ্টিপাত করে বেশি। চেহারা সবচেয়ে বেশী আকৃষ্ট করে। আল্লাহপাক মু'মিন-দেরকে বলেছেন তোমাদের অক্ষিযুগলকে নিচের দিকে রাখ, চেহারার দিকেও যেন না তাকায় সে ব্যাপারে আল্লাহ পাক নির্দেশ দান করেছেন ।
মানুষ যখন পাত্রী দেখতে যায়, অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখেনা, চেহারা বেশী দেখে । কাজেই চেহারাকে যদি খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে যে ফেতনাকে বন্ধ করার জন্য পর্দার বিধান দেয়া হল, এই ফেতনা বন্ধ হবেনা। এজন্য ফেকাহবিদদের বক্তব্য হল, সব চেয়ে বড় তাওয়া হল চেহারাকে আবৃত রাখা ।
পর্দার উদ্দেশ্য:
তারপরে আল্লাহ পাক বলেন- আমি এই বিধান মহিলাদেরকে কেন দিলাম-
ذالک ادنی ان يعرفن فلا يؤذين
মহিলারা যখন বাইরে যায়, যারা এই পোষাক পরিধান করবে পুরুষরা বুঝতে পারবে এই মহিলা একজন দ্বীনদার মহিলা। এই পোষাক ভদ্রতার একটি প্রতীক । তখন আল্লাহ পাক বিশেষভাবে পুরুষদের অন্তরের মধ্যে এমন একটা ভীতির সঞ্চার করে দেবেন, যাতে পুরুষরা আর মহিলাকে উত্যক্ত করতে না পারে । আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্পষ্ট করে দিলেন পর্দার বিধানের কল্যাণ কি?
কাজেই বুঝা যায়, এই বিধান হল, মহিলাদের সম্মানকে রক্ষা করার জন্য একটি বিশেষ বিধান । যদি তোমরা পর্দার এই বিধানকে লঙ্ঘন কর পরে আল্লাহর কাছে 'তাওবা' কর এবং এই বিধানকে গ্রহণ করে নাও তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দয়ালু। দেখা যায়, সূরায়ে নুরের পর্দার আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে- কারণ আল্লাহ পাক জানেন, কোন মহিলা ও তার অভিভাবক পর্দার এই বিধানকে লংঘন করতে পারে । যখনই এই বিধান তারা পালন করে অতীতের জন্য অনুতপ্ত হবে তখনই আল্লাহপাক তাদেরকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। আগামী দিনে যাতে অকাট্য এই বিধান লংঘন না হয় সে ব্যাপারে আমাদেরকে সতর্ক হতে হবে।
মহিলাদের কণ্ঠ
সূরা আহযাবের আরেকটি আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন-
واذا سئلتمو هو متاعا فاسئلو هن من وراء حجاب
তুমি যদি কারো বাসায় যাওয়া এবং সে বাসার পুরুষ যদি না থাকে, তখন বাসার মহিলা পর পুরুষের সাথে কিভাবে কথা বলবে । ই সম্পর্কে আল্লাহ পাক একটি বিধান জারি করেছেন । তোমরা যখন কারো বাসায় যাবে সে বাসায় যদি কোন পুরুষ না থাকে, তাহলে মহিলাদের সাথে সরাসরি দেখা করবেনা। বরং মাঝখানে আবরণ রেখে ওপাশ থেকে মহিলা কথা বলবে এবং কোন কিছু চাওয়ার থাকলে, জিজ্ঞাসা করার থাকলে বাইর থেকে জিজ্ঞেস করবে, চাইবে আর মহিলারা ভিতরে থাকবে । সূরা আহযাবের ত্রিশ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন (হে নবীর স্ত্রীরা) তোমরা সাধারণ মহিলাদের মত নও, তোমাদেরকে কয়েকটি বিধানের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে।