টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ কি? - What are the symptoms of typhoid fever?
06:40:12 12/11/2023
টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ কি?
আমরা কমবেশি সবাই টাইফয়েড জ্বরের সাথে পরিচিত। সালমোনেলা টাইফি (Salmonella Typhi) নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এই জ্বর হয়ে থাকে। দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। এটা কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। বলা বাহুল্য, আমরা ফুটানো পানি এবং বিশুদ্ধ খাবার গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারি। সাধারণভাবে ১ লাখ থেকে ১০ কোটি জীবাণু খাবারের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে টাইফয়েড হয় । এর চেয়ে কম জীবাণু খেলে টাইফয়েড হয় না।
প্রশ্ন জাগতে পারে একটা রোগের জন্য এত বিপুল সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া কেন প্রয়োজন। কারণ হলো এর চেয়ে কম সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া শরীরে গেলে আমাদের পাকস্থলীতে যে এসিড আছে তাতে প্রায় সব ব্যাকটেরিয়াই মারা যাবে এবং আমাদের অস্ত্রে যে ব্যাকটেরিয়াল ফ্লোরা আছে তাদের মাধ্যমে এই জীবাণুগুলো মারা যায়। কিন্তু উল্লিখিত মাত্রায় জীবাণু আমাদের দেহে প্রবেশ করলে এতসব বাধা সত্ত্বেও তা রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
মানবদেহে টাইফয়েড সৃষ্টির প্রক্রিয়া
জানা প্রয়োজন, কোনো জীবাণু দেহে প্রবেশ করা মাত্রই রোগ সৃষ্টি হয় না। তার জন্য একটা সুপ্তকাল ( Incubation period) প্রয়োজন। টাইফয়েডের ক্ষেত্রে সেটা ৭-১৪ দিন। খাবারের মাধ্যমে টাইফয়েড জীবাণু প্রথমে পাকস্থলীতে আসে এবং এখানে বেশির ভাগ জীবাণুই এসিডের মাধ্যমে মারা যায়। যেগুলো বাঁচে তারা অস্ত্রে প্রবেশ করে এবং অস্ত্র থেকে রক্তে যায়। রক্তে পৌঁছার পর জীবাণুগুলো তাদের পছন্দনীয় আবাসস্থল খুঁজতে থাকে যেখানে গিয়ে তারা বড় হবে, সংখ্যায় বৃদ্ধি পাবে এবং রোগ তৈরির ক্ষমতা লাভ করবে। সালমোনেলার পছন্দনীয় জায়গা হলো অস্থিমজ্জা, কলিজা, গলব্লাডার ইত্যাদি।
অতঃপর এই জীবাণুগুলো আবাসস্থল থেকে পুনরায় রক্তে আসে এবং তখনই রোগীর জ্বর শুরু হয়। এভাবে সপ্তাহ খানেক যাওয়ার পর তারা রক্ত থেকে গলব্লাডার, পিত্তনালী হয়ে খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে এবং খাদ্যনালীর সমস্যা ঘটায়, যার মাধ্যমে রোগীর পায়খানায় অসুবিধা দেখা দেয়, ডায়রিয়া হয় এবং খাদ্যানালী ছিদ্র হয়ে রোগী মারাও যেতে পারে। এসব অঙ্গ (organ) ছাড়া এরা ফুসফুস, কিডনি এবং স্নায়ুতন্ত্রেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
রোগের লক্ষণসমূহ
জ্বর, গা মেজমেজ করা, মাথা ব্যথা, পায়খানায় অনিয়ম (পাতলা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য দুটোই হতে পারে) এগুলো মূল লক্ষণ। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, এই জ্বর অল্পমাত্রা থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে উচ্চমাত্রায় পৌঁছে এবং আস্তে আস্তে নামে। এছাড়াও কাশি, গলা ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া, বুকে বা পিঠে গোলাপী দাগ হওয়া ইত্যাদি লক্ষণও দেখা দিতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জ্বর ৭-১০ দিন পর এমনিতে কমে যায় এবং ২ সপ্তাহ পর পুনরায় দেখা দিতে পারে।
রোগ নির্ণয়
উল্লিখিত উপসর্গ ছাড়া প্রথম সপ্তাহে ব্লাড কালচার শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে পজিটিভ হয়। পরবর্তীতে ভিডাল টেস্ট, প্রসাব এবং পায়খানা পরীক্ষা করা যেতে পারে।
জটিলতা
সময় মতো সঠিক চিকিৎসা না করালে শতকরা ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে এ রোগ মারাত্মক জটিল আকার ধারণ করতে পারে এবং তা রোগীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। জটিলতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পায়খানার সাথে রক্তক্ষরণ, নাড়ি ছিদ্র হয়ে যাওয়া, নিউমোনিয়া, প্রসাব বন্ধ হয়ে যাওয়া, গলব্লাডার প্রদাহ, মস্তিষ্কে প্রদাহ ইত্যাদি ।
প্রতিরোধের উপায়
পরিষ্কার খাবার এবং ফুটানো পানি পান করা এই রোগ থেকে মুক্ত থাকার পূর্বশর্ত। পায়খানার পর পরিবারের সবারই সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। সম্প্রতি টাইফয়েড প্রতিষেধক টীকা পাওয়া যাচ্ছে। এই টীকা নেয়ার মাধ্যমেও টাইফয়েড থেকে মুক্ত থাকা যায় ।
চিকিৎসা
টাইফয়েডের চিকিৎসা কখনোই নিজে করা যাবে না। এজন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। উপযুক্ত এবং সঠিক চিকিৎসায় এ রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। এখানে মনে রাখতে হবে, অসম্পূর্ণ চিকিৎসা রোগী নিজে এবং সমাজের জন্য হুমকি স্বরূপ। কারণ তারা resistance তৈরি করে এবং বাহক হিসেবে কাজ করে। একজন বাহক দীর্ঘদিন পায়খানার মাধ্যমে এ জীবাণু ছড়াবে এবং অসুবিধাটা হলো সে নিজে সমস্যা আক্রান্ত হবে না। ফলে সে সমাজের জন্য একজন ক্ষতিকর ব্যক্তি হিসেবে বেঁচে থাকবে।
বিভিন্ন ধরনের ঔষধ বাজারে পাওয়া যায়। এর মধ্যে Tab. Ciprofloxacin 750 mg দিনে দুবার, Tab. Cotrimoxazole 960 mg দিনে দুবার, Tab. Levofloxacin 500mg দিনে ১ বার ১০ থেকে ১৪ দিন খেতে হবে। এই মাত্রা প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য। ছোটদের ক্ষেত্রে মাত্রা বয়স ও ওজন অনুযায়ী। এছাড়া Inj. Ceftriaxone দৈনিক ২ গ্রাম হিসেবে ৫ থেকে ৭ দিন ব্যবহার করা যেতে পারে।