Narrow selection

রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া কাকে বলে? - What is anemia?


07:00:12 12/11/2023

রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া কাকে বলে? রক্তস্বল্পতা হচ্ছে দেহের এমন একটি অবস্থা যখন বয়স ও লিঙ্গভেদে রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘনত্ব স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়।

রক্তে স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা

প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ১৩-১৮ গ্রাম / ডেসিলিটার, প্রাপ্তবয়স্ক নারী ১১.৫-১৬.৫ গ্রাম / ডেসিলিটার, নবজাতক ২০ গ্রাম/ডেসিলিটার, শিশু ১৬-১৯ গ্রাম / ডিসিলিটার

লৌহের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা

রক্তস্বল্পতার বিভিন্ন প্রকারের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

কারণসমূহ

১. রক্তপাত হওয়া, কৃমির আক্রমণে ক্রমাগত উদর-গহ্বরে রক্তক্ষরণ খাদ্যনালি থেকে রক্তক্ষরণ, মাসিকে অত্যধিক রক্ত যাওয়া ইত্যাদি।

২. দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং এক বছরের কম বয়সী শিশুদের খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ লৌহ উপাদানের অভাব।

৩. লৌহের যথাযথ শোষণ না হওয়া

৪. বাড়ন্ত শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের শরীরে বাড়তি লৌহের চাহিদা।

উপসর্গসমূহ

ক. সাধারণ উপসর্গ : দুর্বল লাগা, অবসন্ন বোধ করা, মাথাব্যথা, অনিদ্রা, প্রশ্বাসের সময় শ্বাসকষ্ট, চোখে অন্ধকার দেখা, ক্ষুধামান্দ্য, সেই সাথে অ্যানজাইনার অ্যাটাক, বুক ধরফর করা এবং হৃদকম্পন বাড়তে পারে।

খ. নির্দিষ্ট উপসর্গসমূহ : জিহ্বার প্রদাহ, ঠোঁটের কোনায় ঘা হওয়া, নখ চামচের মত হয়ে যাওয়া, প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া, নখ ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া, প্লামার ভিনসন সিনড্রোম। 

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

১. রক্তের পরীক্ষা

  • হিমোগ্লোবিন পার্সেন্টেজ (হিমোগ্লোবিনের শতকরা হার) লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কমে যাওয়া।
  • মীন করপাসকুলার ভলিউম কমে যাওয়া (৫০-৮০ ফেমটোলিটার) মীন করপাসকুলার হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া (১৫-২৬ পিকো গ্রাম)
  • মীন করপাসকুলার হিমোগ্লোবিন কনসেনট্রেশন কমে যাওয়া (২৪-৩০ গ্রাম/ ডেসিলিটার) পেরিফেরালরাডফিলা (PBF) মাইক্রোসইটিক হাইপোক্রোমিক অ্যানিসোসাইটোসিস, পয়কিলোসইটোসিস ইত্যাদি।
  • রোটিকুলোসাইট কাউন্ট বাড়তে পারে।

২. ব্লাড বায়োকেমিস্ট্রি (রক্তের রাসায়নিক পরীক্ষা)

  • সিরাম আয়রন লেভের ৬০ মিলিগ্রাম / ডেসিলিটার এ কম হবে।
  • সিরাম আয়রন বাউন্ডিং ক্যাপাসিটি বেড়ে যাবে।

৩. অস্থিমজ্জার পরীক্ষা : হাইপোসেলুলার এবং হাইপারপ্লাশিয়া। অস্থি মজ্জার আয়রন কনটেন্ট কমে যাওয়া অথবা অনুপস্থিত থাকা।

  • লৌহঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতার কারণ জানার জন্য পরীক্ষা। চিকিৎসা জাতীয় খাবার যেমন- পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ, মাংস, কলিজা এবং ডিম খেতে হবে।
  • যখন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গিয়ে শতকরা ৪০-৬০% লৌহ থাকবে তখন মুখে খাওয়ার জন্য আয়রন ট্যাবলেট দিতে হবে। সাধারণত ফেরাস ফিউমারের বা ফেরাস গ্লুকোনেট ২০০-৩০০ মি.গ্রা. দিনে ৩ বার খাওয়ার পর খেতে হবে, যত দিন না হিমোগ্লোবিনের শতকরা ভাগ সন্তোষজনক হয়। এক সপ্তাহ পর থেকে প্রতি সপ্তাহে দেহে হিমোগ্লোবিন শতকরা ১ ভাগ করে বাড়বে।
  • যদি শতকরা ৪০ ভাগের কম হিমোগ্লোবিন থাকে তাহলে রোগীকে রক্ত দিতে হবে অথবা আয়রন ইনজেকশনের মাধ্যমে দিতে হবে।

মুখে খাওয়া ছাড়া অন্য যেভাবে আয়রন দেয়া যায়

১. আয়রন ডেক্সট্রান ইমফেরন শিরাপথে বা মাংসপেশিতে।

২. আয়রন সরবিটাল সাইট্রিক এসিড কমপ্লেক্স (জেকটোফার) প্রতিদিন ২. সি. সি. করে মাংসপেশীর গভীরে ইনজেকশন দিতে হবে যতদিন না সম্পূর্ণ ঘাটতি পূরণ হয়। প্রায় ২৫০ মি.গ্রা. আয়রন ১ গ্রাম/ডি. এল. হিমোগ্লোবিন লেভেল বাড়াতে প্রয়োজন। হয়। কিন্তু সম্পূর্ণ ডোজ ২.৫ গ্রাম আয়রনের বেশি হওয়া উচিত নয়।

কখন কখন ইনজেকশনের মাধ্যমে আয়রন গ্রহণযোগ্য

১. আয়রন ট্যাবলেট মুখে খেলে যদি তা সহ্য না হয়। ২. ডায়রিয়া এবং আয়রনের শোষণ পরিমিত পরিমাণ না হলে

৩. সেই সব রোগী যারা ৩ মাস ঠিকমত ওষুধ খায় না।

৪. যেসব রোগের ক্রমাগত রক্ত পড়ে যেমন- জরায়ুতে ফাইব্রয়েড থাকলে। ৫. লৌহ ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা যদি হুকওয়ার্ম বা কৃমির জন্য হয়ে থাকে তবে কৃমিনাশক ওষুধ দিতে হবে।

অ্যাপ্লাসটিক এনিমিয়া

এই ধরনের এনিমিয়াতে অস্থিমজ্জার অ্যাপ্লাশিয়া অথবা হাইপোপ্লাশিয়ার জন্য রক্তের লৌহকণিকা, শ্বেতকণিকা ও অণুচক্রিকা তিন ধরনের কোষের সংখ্যাই কমে যায় ।

কারণসমূহ

১. প্রাথমিক কোনো কারণ জানা যায়নি।

২. ওষুধ ক্লোরামফেনিকল, এসিটাজোলামাইড, নাইট্রোজেন মুসাটার্ড, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, সালফোনামাইড ইত্যাদি ।

৩. তেজস্ক্রিয়তা যেমন- রেডিও থেরাপি।

৪. রাসায়নিক বিষয়সমূহ যেমন : চুলের রং, বেনজিন, হি.ডি.টি.

৫. সংক্রমণ যেমন- ভাইরাল হেপাটাইটিস, মিলিয়ারী টিউবারকুলোসিস।

উপসর্গসমূহ

এই এনিমিয়াতে রক্তের লোহিত কণিকা, শ্বেতকণিকা ও অনুচক্রিকা তিনটাই কমে যায়। এজন্য তিন ধরনের উপসর্গ দেখা যাবে-

১. লোহিত কণিকা কমে যাওয়ার জন্য দুর্বলতা, ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেবে।

২. শ্বেত কণিকা কমে যাওয়ার জন্য

সোর থ্রোট (গলায় ইনফেকশন), মুখে ক্ষতযুক্ত আলসার, ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া, কাঁপুনির সাথে জ্বর আসা, শরীরের নানা জায়গায় সংক্রমণ (ইনফেকশন) হওয়া।

৩. অনুচক্রিকা কমে যাওয়ার জন্য : চামড়ার নিচে ও অন্যান্য জায়গায় রক্তপাত হওয়া।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

১. রক্ত পরীক্ষা : প্যানসাইটোপেনিয়া পাওয়া যাবে। কোনো এনিসোসাইটোসিস, পায়কিলোসাইটোসিস পাওয়া যাবে না, পেরিফেরাল ব্লাড ফিল্মে কোনো নরমোরান্ট পাওয়া যাবে না । এম. সি. এইচ. সি. নরমাল। লোহিত কণিকার পরিমাণ কমে যাবে। সাধারণ ১.৫ মিলিয়ন/ ঘন মি.মি. হতে পারে ।

শ্বেত কণিকার পরিমাণ ১০০০-২০০০/ ঘন মি.মি. হতে পারে। পলিমরফ ১০%, রিমফোসাইট ৯০%, অনুচক্রিকার পরিমাণ ১০,০০০/ ঘন মি.মি. বা তার কম হতে পারে।

২. অস্থিমজ্জা পরীক্ষা : লোহিত অস্থিমজ্জা কমে গেছে এবং চর্বিযুক্ত কোষ বেড়ে গেছে-এ ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে।

চিকিৎসা

১. যে সকল ওষুধের কারণে অ্যাপ্লাসটিক এনিমিয়া হয় সে রকম কোনো ওষুধ যদি রোগী সেবন করতে থাকে তাহলে তৎক্ষণাৎ সেটা বন্ধ করতে হবে।

২. বারবার ব্লাড ট্রানসফিউশন (হোল ব্লাড) দেয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

৩. মুখে খাওয়ার জন্য ব্রড স্পেকট্রামে এন্টিবায়োটিক চালু করতে হবে, যাতে সেকেন্ডারি ইনফেকশন কম হয়।

৪. স্টেরয়েড যেমন- প্রেডনিসোলোন দৈনিক ৪০-৬০ মি. গ্রা. সেবন করা যেতে পারে। ৫. অস্থিমজ্জা উদ্দীপক দ্রব্য অক্সিমেথোলন থেরাপি প্রতি কেজি দৈনিক ওজনের জন্য ২.৫ মি.গ্রা. হিসেবে ৩-৬ মাস দেয়া যেতে পারে।

৬. অস্থিমজ্জা, গ্রাফটিং এবং পুনঃ প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে।

৭. রক্তপাতের জন্য অনুচক্রিকা ট্রানসফিউশন দেয়া যেতে পারে।

৮. কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্লীহা কেটে ফেলে দেয়া ফলদায়ক হতে পারে।

 

 


No comments yet


Leave a comment

 


Name *:



Design theme color

Primary color


Alternative color