দেশ প্রেমের অর্থ কি? - What is the meaning of love of country?
15:50:20 12/03/2023
ইসলামে দেশ প্রেম: আজ ১৬ই ডিসেম্বর, বাংলাদেশের মানুষের জন্য আনন্দের দিন। আজ স্বাধীনতার বিজয় দিবস। মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হল তার দেশকে ভালবাসতে হবে, এটা রাসূলের (সাঃ) আদর্শ। মহানবী (সাঃ) যখন মক্কার নাগরিক ছিলেন, আর মক্কা ত্যাগ করে হিজরত করছেন ইয়াসরিবের প্রতি তাঁর চোখ দিয়ে পানি টপটপ করে ঝরছিল এবং মনে মনে বলছিলেন- হে মক্কা, আমি তোমাকে ভালবাসি, তোমার এই মাটিতে আমার জন্ম, তোমার এই মাটিতে আমার পূর্বসূরীরা আছেন। তোমার এই মাটিতে আল্লাহর ঘর, তোমাকে আমি ভালবাসি।
কাফেররা নির্যাতন করে যদি আমাকে বের করে না। দিত, হে মক্কা, কখনো তোমাকে আমি ত্যাগ করে যেতাম না। মদীনায় যখন এসেছেন, মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র যখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মদীনাকে তিনি ভালবাসতেন । হাদীসের বর্ণনায় আছে, যখন তিনি অন্য কোন স্থানে সফর করতেন, মদীনার জন্য তাঁর মন কাঁদত। সফর শেষ করে যখন ফিরে আসতেন, মদীনার সীমান্তে ওহুদ পাহাড় আছে, দূর থেকে যখন উহুদ পাহাড় দেখতেন, আল্লাহর নবীর অন্তর উল্লাসিত হত, চেহারাতে আনন্দের আভা ফুটে উঠত । তিনি বলতেন-
احد جبل يحبنا ونحبه
এই যে মদীনার সীমান্তে উহুদ পাহাড় দেখা যায়। “এই ওহুদ পাহাড় আমাদেরকে ভালবাসে, আমরাও এই ওহুদকে ভালবাসি। আমার ভূখন্ডকে আমার রাষ্ট্রকে আমি ভালবাসি। তাহলে একজন মুসলমানের জন্য তার রাষ্ট্রকে, তার মাটিকে ভালবাসা আল্লাহর নবীর আদর্শ। দেশ প্রেম, রাষ্ট্রের প্রতি ভালবাসা হচ্ছে মুসলমানদের চরিত্র। রাষ্ট্রের সাথে কোন ঈমানদার গাদ্দারী করতে পারেনা । নিজের মাটির সাথে কেউ গাদ্দারী করতে পারেনা । এটাই ইসলামের শিক্ষা। ইসলাম আমাদেরকে শিক্ষা দেয়, নিজের দেশকে ভালবাসতে হবে । যে দেশের আলো বাতাসে, যে দেশের সূর্যের কিরণ ভোগ করে আমি বড় হচ্ছি, সে দেশকে ভালবাসা আল্লাহর নবীর আদর্শ ।
দেশ প্রেমের অর্থ
তবে দেশকে ভালবাসার মানে এই নয়, অন্য রাষ্ট্রের মানুষকে ঘৃণা করতে হবে। দুইজন লোক আমার কাছে চাকুরির ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য আসল, একজন লোক আমার দেশী। আরেকজন লোক বিদেশী। দুই জনের ইন্টারভিউ নেওয়ার পর আমার কাছে মনে হল, ভারত, পাকিস্তান বা অন্য রাষ্ট্রের নাগরিক যোগ্যতা বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ। এখন আমি বাংলাদেশকে ভালবাসি, এটার অর্থ এটা হবেনা, এই চাকুরীর জন্য বেশী যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি আমার দেশী না হওয়ার কারণে তাকে বাদ দিয়ে তুলনামূলক কম যোগ্যতা সম্পন্ন আমার দেশীকে চাকরী দেয়া। এটা দেশ প্রেম নয়, এটা অন্যায়। ইসলাম দেশ প্রেমের জন্য উদ্বুদ্ধ করে, রাষ্ট্রকে নাগরিককে ঘৃণা করতে হবে । অন্য দেশের নাগরিক যদি যোগ্যতা সম্পন্ন হয়, তাকে প্রাধান্য দেয়া যাবেনা। এটা ইসলাম বলেনা। দেশকে ভালবাসা এক কথা, ন্যায়- নীতিকে অনুসরণ করা অন্য কথা। কাজেই আমরা যারা বাংলাদেশী নাগরিক, আমাদের প্রত্যেককে বাংলাদেশের মান-মর্যাদা, দেশের অখন্ডতা, দেশের |
সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য যদি প্রয়োজন হয় বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এই দেশকে হেফাজত করতে হবে। এটা শুধু দেশ প্রেমের কারণে নয়, ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও আমাদের উপর ফরজ । যদি দেখা যায়, বাংলাদেশের উপর আরেকটি রাষ্ট্র আঘাত করেছে, দখল করেছে বাংলাদেশকে, তখন বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের উপর ফরজে আইন, হয়ে যাবে, এই দেশের অখন্ডতাকে রক্ষা করার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া। এটা ইসলাম আমাদের উপর ফরজ করে দিয়েছে। বছরের চাকা ঘুরে যখন ২৬শে মার্চ, ১৬ ই ডিসেম্বর আসবে, আমাদের বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস যখন আসবে, তখন সে দিনগুলোতে কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে আমাদের করণীয় কি?